নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রূপসাগরে ডুব দিয়েছি অরূপ রতন আশা করি

মোঃ ইয়াসিন আরাফাত অর্নব

অবচেতনার খেরোখাতা

মোঃ ইয়াসিন আরাফাত অর্নব › বিস্তারিত পোস্টঃ

কয়েকটি নীল পালক অথবা একজন লিনার গল্প

২৫ শে জুন, ২০১৬ ভোর ৫:০৫




মেয়েটাকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে লিনা বেডরুমে ফিরল । নিন্তির বাবা ঘুমিয়ে পড়েছে । লোকটার মুখ ক্লান্ত হয়ে আছে । আজ অফিসে জুন ফাইনাল ছিল , অনেক রাত করে ফিরেছে শাহিন । সরকারি অফিসের অডিটরদের এ সময়টাতে কাজের চাপ থাকে অনেক বেশি । শাহিনের ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে লিনা । ও যখন ঘুমিয়ে থাকে কি নিষ্পাপ লাগে মুখটা । এই মাসে বাসা ভাড়া দেওয়া হয়নি । বাড়িওয়ালা আজও নিন্তিকে দেখতে এসে চা খেয়ে যাওয়ার ফাঁকে এ নিয়ে একটা ইঙ্গিত দিয়ে গেছে । অনেকগুলো টাকা জলের মতো চলে গেলো এ কয়েকটা দিন । গত মাসে নিন্তির এপেন্ডিসাইটিস অপারেশন হল , ছোট মেয়েটা অনেক দিন হাসপাতালে ভর্তি ছিল । এক সপ্তাহ হল বাসায় এসেছে নিন্তি । এখন হাঁটতে পারছে । ব্যাথা অনেক কমেছে । পরের মাস থেকে স্কুলে যেতে পারবে নিয়মিত ।

আজ সারাদিন এই ফ্ল্যাটে বারবার লোডশেডিং হচ্ছে । বাথরুমের কলটা নষ্ট । টপ টপ করে পানি পড়ছে । লিনা ঘুমাতে পারছে না । কিছুক্ষণ এপাশ ওপাশ করে উঠে গেল । দুশ্চিন্তা হচ্ছে । নিন্তিকে একবার দেখে আসবে । ঘুমাতে পারছে তো ? ওপাশ ফিরতে গিয়ে ব্যাথায় কঁকিয়ে উঠছে না তো ? হাসপাতালে নিন্তি যতদিন ছিল , প্রতিদিন লিনা ওর পাশে ঘুমাত । মেয়েটা বই পড়তে ভালবাসে । হাসপাতালের বেডে নিন্তি শুয়ে থাকত , উঠতে গেলেই প্রচণ্ড চাপ লাগতো এপেন্ডিসাইটিসের জায়গাটিতে । তাই লিনা ওকে গল্পের বই পড়ে পড়ে শুনাত । কত মজার মজার গল্প গুলি , মা মেয়ে হাসতে হাসতে সময়গুলো চলে যেত । হাসির দমকে অপারেশানের জায়গাটিতে চাপ লাগতো , চঞ্চল নিন্তির হাসি তবু থামত না ।

লিনা উঁকি দিল নিন্তির ঘরে । মেয়েটা ঘুমে কাদা হয়ে আছে । আস্তে করে মেয়ের পাশে শুয়ে পড়লো সে ।

ঘুম আসছে না লিনার । মেয়ে এখন সুস্থ আছে ঠিকই , লিনা শুয়ে আছে পাশে । ঐ তো মেয়েটা মিষ্টি সুর করে নাক ডাকছে । লিনা দেখে হেসে ফেলল । মনে মনে ভাবল, সংসারের অবস্থাটা যদি আরেকটু ভালো হতো , মেয়েটার ছয় বছর বয়স, অনেকদিন তো হল... মেয়েটার সঙ্গ দেবার জন্যে একটা ভাই বা বোন দরকার ।

লিনার ঘুমাতে ইচ্ছে করেনা । লিনা অনেক রাত না ঘুমিয়ে কাটিয়েছে । এটা ওর অদ্ভুত একটা স্বভাব , ওর মা ছাড়া কেউ এটা জানে না , শাহীনও কখনোই টের পায়নি, লিনা ঘুমায় না । মানে , ও যখন জেগে থাকে ওর ইচ্ছের বিপরীতে ওর কখনোই ঘুম আসে না । ও চাইলেই যেকোনো সময় চোখ বন্ধ করে সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়তে পারে , কিন্তু লিনা তা করে খুবই কম ।

লিনা ঘুমালে প্রায়ই ঘুরিয়ে ফিরিয়ে অদ্ভূত তিনটি স্বপ্ন দেখে । আর স্বপ্ন গুলো দেখতে তার অস্বস্তি লাগে ।

লিনার এই স্বপ্নগুলো একটু অন্যরকম । সে প্রায়ই পুরনো একটা শহরের স্বপ্ন দেখে । শহর জুড়ে দালানগুলোর ফাঁকে ফাঁকে অনেক অনেক গাছপালা । মাঝারি আকৃতির লম্বা ল্যাম্পপোস্টের মতো দেখতে দণ্ডগুলির মাথায় অদ্ভুত রকমের পিরামিড আকৃতির আলোর উৎস । আলোটা জোছনার মতো শ্বেতশুভ্র , কেমন নরম একটা আলো, সব দেখা যায়, আবার কিছুই দেখা যায়না । আলোটা ছড়িয়ে পড়ে চারপাশের রাস্তাঘাট আর পরিবেশটাকে আরও সৌম্য , শান্ত আর মায়াময় করে তুলেছে । ইট বিছানো পাকা রাস্তা দিয়ে মধ্যরাতে জনমানব আর প্রাণীহীন ঘুমন্ত এক শহরে সে হাঁটতে থাকে । এ গলি , ও গলি পার হয়ে যায় , একটা মানুষও নেই । কোন কোন জানালা হাট করে খোলা থাকে , সেই জানালাগুলো থেকে কিছু ছায়ার নড়াচড়া দেখা যায় , এছাড়া জীবনের আর কোন চিহ্ন নেই । ছায়াগুলোকে জীবন মনে করাটা ঠিক কিনা , লিনা বুঝতে পারে না, লিনা কখনোই তাদের কাউকে দেখেনি ।

আবার মাঝে মাঝে কোন কোন রাতে সে বিশাল একটা সর্পিলাকার সিঁড়ি বেয়ে একটা অন্ধকার সুড়ঙ্গের গভীর থেকে আরও গভীরে যেতে থাকে , সেটা কোথায় গিয়ে শেষ হয়েছে লিনা বলতে পারে না । খালি দেখতে পায় , চারপাশে কোন দেয়াল নেই , বিশাল অন্তহীন সিঁড়ির সর্পিলাকৃতিটার কেন্দ্রে অনেক অনেক নিচ থেকে ক্ষুদ্র একটা আলোর ফুটকি দেখা যাচ্ছে । ওখানেই কি গন্তব্য? কি আছে ওখানে? লিনা জানে না । মানুষ যা জীবনেও দেখেনি, শোনেনি, সেটা তার মস্তিষ্কও কখনোই কল্পণা করতে পারেনা বা স্বপ্নে আবির্ভূত হয় না । কিন্ত লিনা যেসব স্বপ্ন দেখে , এসব পরিবেশ সে আগে কখনোই দেখেনি বা কাউকে নিয়ে এসব জায়গায় যায়নি । তবুও প্রতিটা স্বপ্ন সে খুব স্পষ্ট দেখে বা তাকে দেখানো হয় । এবং এ ধরণের প্রত্যেকটা স্বপ্নে একটা সাধারণ ব্যাপার থাকে । লিনা সবসময় অনুভব করে তার সাথে কেউ একজন আছে । অপরিচিত জনমানবহীন শহরটার অলিতে গলিতে যে তাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে যায় , অন্ধকার সুড়ঙ্গের বিশাল সিঁড়িটা বেয়ে সে যখন নিচে নামতে থাকে তখন কেউ পিছন থেকে আলো দিয়ে তাকে পথ দেখিয়ে দিতে থাকে । তার সাথে লিনার কখনোই কথা হয়না । লিনার মনে হয় , কথা বললে বা হাত ধরলে লিনা ভয়ে জেগে উঠতে পারে তাই হয়তো সে নীরব হয়ে থাকে । লিনার কিন্ত কখনো একটিবারের জন্যেও তাকে ভয় লাগেনি । লিনার শুধু মনে হয় , সে খুব আপন একজন , তার কাছে সবকিছু বলা যায় , লুকোনোর কিছুই নেই । অনেকদিনের হারিয়ে যাওয়া পুরনো একজন বন্ধু , যে শুধু চায় লিনা তার কাছে থাকুক । কিন্তু লিনার অস্বস্তিবোধ হয় । এক ধরণের অপরাধবোধ কাজ করে তার মধ্যে । কি এমন অপরাধ করেছে লিনা?

এ দুটো স্বপ্নের শেষ সে কখনোই দেখে না কিংবা মনে রাখতে পারে না । তার সবচেয়ে ব্যাখ্যাতীত লাগে তার তৃতীয় স্বপ্নটা ।

এ স্বপ্নে সে থাকে একটা ডিঙ্গি নৌকোয় । আর এই স্বপ্নে সে বারো-তেরো বছর বয়সী ছোট একটা মেয়ে। ওর আশেপাশে খুব পরিচিত একটা গ্রামের দৃশ্য । দুপাশে কাশবন , বাতাসে কাশ উড়ছে । আর নৌকোর এপাশ থেকে লিনা দেখে নৌকোর ওপাশে….নৌকোর ওপাশে , আর একজন লিনা বসে আছে । এই লিনাও ঠিক তার বয়সী , নৌকার ওপাশ থেকে তার দিকে তাকিয়ে হাসছে । চরম দুরন্তপনা আর বিজয়ের আনন্দ সে হাসিতে, কাউকে কিছু না জানিয়ে নৌকো চুরি করে মাঝনদীতে চলে আসার মধ্যে যেন রাজ্যজয়ের আনন্দ নিহিত । ছোটবেলায় লিনা যেমনটি ছিলো, মেয়েটা যেন তার ঠিক বিপরীত । লিনা প্রশ্ন করে, "তোমার নাম কি?"
আরেকজন লিনা জবাব দেয়, "আমি লিনা! আজব তো! ফাজলামি পাইছিস?"
একথা বলে মেয়েটা হঠাৎ নদী থেকে তুলে লিনার মুখে পানি ছিটিয়ে মেরে খিলখিল করে হেসে ওঠে । লিনা খুব মজা পেয়ে যায় । সেও নৌকোর একদিকে ঝুঁকে নদীতে হাত ডুবিয়ে মেয়েটাকে অবিরাম পানি ছুঁড়ে মারে । এভাবে পানি ছোঁড়াছুঁড়ি খেলা চলতে থাকে । লিনার খুব ভাবতে ইচ্ছে হয়, এটা কোন স্বপ্ন না , এটা স্মৃতি । ভুলে যাওয়া কোন স্বপ্নের মতো পুরনো কোন স্মৃতি ।

কিন্তু এ স্বপ্নটার প্রতিবার একটা ভয়ংকর পরিণতি ঘটে ।

এ স্বপ্নের একপর্যায়ে সে একটা অদৃশ্য টানে পানির নিচে ডুবে যেতে থাকে । পানির নিচে শ্বাস বন্ধ হয়ে আসে তার , কিছু একটা আঁকড়ে ধরার জন্যে সে আকুল হয়ে থাকে , এ সময় কেউ একজন তাকে জড়িয়ে ধরে শক্ত করে । সে শ্বাস নেওয়ার জন্যে মুখ খুলতে গিয়ে চিৎকার করে জেগে ওঠে দেখে শাহীন তাকে আঁকড়ে ধরে আছে । চোখেমুখে উদ্বিগ্ন একটা ভাব ।

শেষবার এ স্বপ্নটা দেখার সময় শাহীন তার পাশে ছিলো । সে শান্ত হয়ে শাহীনকে বলেছিলো , "কিছু হয়নি , দুঃস্বপ্ন দেখেছিলাম । তুমি ঘুমোও ।" প্রতিবারই এ স্বপ্নটা লিনা দেখে জীবনের বড়সড় ধরণের হয়রানির সময় যখন মানসিকভাবে প্রচণ্ড বিপর্যস্ত থাকে বা কোন অসহনীয় বিপদ কাটিয়ে ওঠার সময় । স্বপ্নটা সে দেখে খুবই কম । এ পর্যন্ত মাত্র তিনবার দেখেছে সে এ স্বপ্ন । শেষবার দেখেছিলো যখন তার প্রথম সন্তান মারা যায় , তারও মুমূর্ষু অবস্থা, ঐ সময় । এর আগে দেখেছিলো তার পুরনো এক বন্ধু মারা যাবার সময় । ছেলেটাকে সে খুব ভালোবেসেছিলো । ছেলেটা শুধুমাত্র বন্ধু হয়ে সারাক্ষণ লিনার পাশে থাকতো । ওর প্রতি প্রচণ্ড দুর্বলতাটা লিনা বুঝতে পারে দুর্ঘটনায় ছেলেটা হঠাৎ মারা যাবার পর । বুঝতে পেরে লিনাকে ভয়ানক ট্রমার সম্মুখীন হতে হয়েছিলো । কয়েকরাত সে ঠিকমতো ঘুমোতে পারেনি । তারই কোন এক রাতে এই দুঃস্বপ্নটা দ্বিতীয়বারের মতো দেখে সে । প্রথমবার দেখেছিলো অনেক ছোট থাকতে । তখন তার মা বেঁচে ছিলেন । তখন কি এমন বিপদ হয়েছিলো সে মনে করতে পারে না ।

আজ রাতে নিন্তির পাশে শুয়ে থেকে লিনা অনেকবারের মতো আবারও অবাক হয়ে ভাবলো , তার ছোটবেলার অনেক স্মৃতিই কিন্ত তার মনে নেই । তার মাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করতেই তিনি সবসময় এড়িয়ে যেতেন । লিনাদের গ্রামে একটা অনেক পুরনো অশ্বত্থ বৃক্ষ ছিলো । এই বৃক্ষটার কথা অবশ্য তার মনে আছে । ছোটবেলায় লিনা নাকি একবার হারিয়ে গিয়েছিলো , সারা রাত খোঁজাখুঁজির পর ভোরবেলায় এই গাছটার ডালে নাকি তাকে অচেতন অবস্থায় পাওয়া যায় । লিনার এসবের কিছুই মনে নেই । ঘটনার কয়েকদিন পর এসব সে শুনেছে তার দাদীর কাছ থেকে । দাদী খালি জানতে চেয়েছিলেন , তার কিছু মনে পড়ে কিনা । এগুলো লিনাকে বলে ফেলার জন্যে তার মা কেন জানি দাদীর সাথে ভীষণ রাগারাগি করেছিলেন । লিনা কিন্তু আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলো এসব মনে করতে, পারেনি । তার শুধুমাত্র মনে পড়েছিলো, অন্ধকার রাতে সে একাকী কোথায় যেন যাচ্ছে । কোথায় যাচ্ছে?

এ ঘটনা শোনার পর ছোট লিনা গাছটার দিকে লক্ষ্য রাখা শুরু করেছিলো । অবাক করার মতো প্রথম যে ঘটনা চোখে পড়ে তার, সেটা আশেপাশের মানুষদেরকে নিয়ে । কেন যেন এ গাছটার প্রতি অন্যরকম একটা মায়া কাজ করে তাদের ।

আক্কাস চাচা , কয়েকদিন আগে যার নৌকা হারিয়ে গেছে, সে বাজারে যাওয়ার সময় এই গাছটার সামনে দিয়ে যেতে চায় । তার বাসা থেকে বাজার কিন্তু খুব কাছে, কিন্তু সে এমন একটা পথ খুঁজে নেয় , যেন এ গাছটার সামনে দিয়ে যেতে হয় । করিম ভাই, তার কলেজে যত দেরী হোক না কেন, এ গাছটার সামনে দিয়ে যে পথ গেছে, তাকে সাইকেল চালিয়ে ঘুরে সে পথ দিয়েই যেতে হবে । ওরা কি ক্ষণিকের জন্যে আসল পথটা ভুলে যায়? অনেক সময় হাটবারের পরদিন গ্রামের বাইরের মানুষ এ গাছের নিচে আসে হারানো জিনিস খুঁজে পেতে । তাদের কেন জানি দৃঢ় বিশ্বাস জন্মায়, এ গাছের নিচেই তাদের হারানো চাবি, হারানো যেকোন জিনিস খুঁজে পাওয়া যাবে । খুঁজে না পেয়ে ক্লান্ত হয়ে গাছের ছায়ায় বসে । তারপর কেমন মন্ত্রমুগ্ধের মতো গাছটার দিকে তাকিয়ে থাকে মূর্তির মতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকে । যেন গাছ মনোমুগ্ধকর কোন গল্প বলছে আর ওরা মন দিয়ে শুনছে । সবকিছু ভুলে গিয়ে ।

পরে কোন প্রশ্ন করা হলে কেউ গাছটার কোন কথা মনে রাখতে পারে না । আচ্ছা, মনে পড়লে কি হবে ? ওরা কি আর বেঁচে থাকবে না? নাকি প্রকৃতির অসাধারণ অথচ অসহনীয় কোন সৌন্দর্যের মুখোমুখি হবে, যা সহ্য করবার ক্ষমতা হয়তো সবার থাকে না ।

দ্বিতীয় ঘটনা হলো নীল রঙ্গের পালক দেখতে পাওয়া । লিনা হিসেব করে দেখেছে প্রতি পূর্ণিমার রাতের পরদিন সকালে গাছটার নিচে কতগুলো নীল রঙ্গের পালক দেখতে পাওয়া যায় । পালকগুলো লম্বায় পূর্ণবয়স্ক মানুষের একহাত হবে । উজ্জ্বল নীল রঙ্গের । সূর্যের আলো লাগলে চিকচিক করে বাতাসে মিলিয়ে যায় । লিনা এসব কথা কাউকে বলে না । এসব অদ্ভুতুড়ে ব্যাপার কি গ্রামবাসী কারোরই চোখে পড়ে না ? নাকি তাদেরকেও ভুলিয়ে দেয়া হয়? তবে তাকে এই ব্যাপারগুলি দেখানো হচ্ছে কেন ? সে মনে রাখতে পেরেছে কিভাবে? তাকে কি কিছুই ভোলানো হয়নি? লিনার হঠাৎ করে খেয়াল হয়, তাকে গাছের ডালে অচেতন অবস্থায় পাওয়ার আগের অনেক ঘটনাই সে মনে করতে পারছে না । কি যেন নেই । কি নেই? লিনা বুঝতে পারে তাকেও কিছু একটা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে । খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু । লিনা এসব কথা কখনো কাউকে বলে নি । এমনি তো সবাই কেমন করে যেন তাকায় । দাদীর কাছে শোনার পর থেকে বুঝতে পারে ওকে গাছে অচেতন অবস্থায় পাওয়ার পর থেকেই সবার এমন দৃষ্টি । আর এসব বললে কেউ বিশ্বাস তো করবেই না , তাকে পাগল ভাবা শুরু করতে পারে । মাকেও কেন জানি বলতে ইচ্ছে হয় নি । বরং একদিন সে গাছটার কাছে গিয়েছে শুনেই মা ওকে চড় মেরেছিলেন । কিন্তু পরক্ষণেই ওকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠেছিলেন । অনুরোধ করেছিলেন, কখনোই লিনা যেন ঐ গাছটার ধারেকাছে না যায় । লিনা এরপর আর কোনদিন ওদিকে যায়নি । এর কয়েকদিন পরই পড়ালেখার জন্যে মায়ের অনুরোধে লিনা শহরে মামার বাসায় চলে আসে । লিনা পরে একদিন খবর পায়, গাছটি কেটে ফেলা হয়েছে । এসব অবশ্য অনেকদিন আগের কথা ।


গতবছর মা মারা যাবার পর গ্রাম থেকে মায়ের অনেক জিনিসপত্র এখানে নিয়ে আসে সে । তার মধ্যে মায়ের কাছে থাকা তার একটা বড়সড় এলবামও ছিলো । অনেক আগেকার ছবি ওগুলো , ওর চাচাতো , মামাতো ভাই বোনদের ছোটবেলায় তোলা অনেকগুলো ছবি । আশ্চর্য কথা হলো, তার মায়ের কাছে থাকা এই এলবামে তার নিজের ছবি কিন্ত খুব কম । পুরো এলবামে সব মিলিয়ে লিনার মাত্র পাঁচটা ছবি । লিনা পাতা উলটিয়ে দেখতে থাকে । এইতো কোনটাতে ছোট্ট লিনা শান্তভাবে হেসে তাকিয়ে আছে , কোনটাতে হাস্যোজ্জ্বল । মাঝের দশ বারোটা পাতায় কিছু নেই । তারপর আবার অন্যান্য ছবি শুরু । তাদের পরিবারের একসাথে কোন ছবিই কি নেই? তার মা , বাবা আর সে একসাথে কোন ছবি কি তোলেনি? আগে অনেকবার চোখ বুলিয়ে যাওয়া একটা গ্রুপ ফটো আবারও চোখে পড়ল । লিনা খেয়াল করল, এখানে বলতে গেলে তাদের সব কাজিন, ভাই, বোনরা আছে । একে একে দেখতে লাগল মুখগুলো । তার চাচাতো ভাই বোনদের চোখে পড়ল । লিনা ছিলো ওদের সবার থেকে বড় । ছবিতে আরেকটা বড় মেয়েকে দেখা যাচ্ছে । লিনাই তো । আরেকজন লিনা । এই ছবিটাতে দুইপাশে দু'জন লিনা দাঁড়িয়ে আছে । একজনের শান্তশিষ্ট হাসি । আর একজন সব দাঁত বের করে হাসছে, চোখেমুখে লাগামহীন দুরন্তপনা ।

লিনার ঠোঁট কাঁপছে । লিনা চিনতে পেরেছে এই মেয়েটাকে । বাইরে মৃদুমন্দ বাতাস আর একটা পাখা ঝাপটানির শব্দ শোনা গেল । অজ্ঞান হবার ঠিক আগ মুহূর্তে লিনা হাতে ধরা ছবিটার দিকে তাকিয়ে অনেক পুরনো একটা প্রশ্নের উত্তর পেয়ে কান্না ধরা গলায় অবাক স্বগতোক্তি করল, "লিনা?!"

ওরা দুইজন সবাইকে বোকা বানিয়ে বেড়াতো । দু'জন একদম একই রকম পোশাকে একইরকম বেণী করে বের হতো । ওদের দু'জনের চেহারায় কোন অমিল ছিল না । কেউ ওদের পার্থক্য ধরতে পারতো না । অবশ্য ওদের মা ছাড়া । মাকেও মাঝে মাঝে দ্বিধান্বিত করে ফেলত তারা । কি যে মায়া লাগে ওদের মায়াকাড়া চেহারা দুটো দেখলে ! অথচ প্রথমে দুটো 'মেয়ে'র জন্ম দেয়ায় শাশুড়ির থেকে অনেক কটু কথা শুনতে হয়েছে মায়ের । ওরা দু'জন ছিল দুজনের সবচেয়ে কাছের বন্ধু , একে অপরকে ছাড়া কিছু সময় একা কাটানোর কথা কল্পণাও করতে পারতো না , পুরোটা গ্রাম জুড়ে ওরা দু'জন মিলে খুনসুটি করে বেড়াতো । স্রোতের মুখে 'আংতা' লাগিয়ে মাছ ধরা, শিলাবৃষ্টির মধ্যে দৌড়ঝাঁপ করে শিল সংগ্রহ করা, কালবৈশাখী ঝড়ে কারো বাগানে চুপি চুপি গিয়ে আম কুড়ানো , এগুলোতো ছিলই । গাছে গাছে উঠে পাখির ছানা দেখা, পিঁপড়ার বাসা ভেঙ্গে ফেলে পিঁপড়ার অবস্থা দেখা, কারও বাগানের মৌচাকে ঢিল মেরে ভোঁ দৌড় দেওয়া - এসব তারা দৌরাত্ম্যের সাথে করে বেড়াতো ।

একটা মেয়ে ছিলো ভীষণ দুরন্ত । আর একজন তার সম্পূর্ণ বিপরীত । দুরন্ত মেয়েটার সাথে শান্ত মেয়েটা সবসময় ঘুরঘুর করত । ওর সব কথায় রাজি হয়ে যেত । কাজেই যখন একদিন দুরন্ত মেয়েটা প্রস্তাব করে আক্কাস চাচার নৌকোটায় করে নদীতে অনেক দূর ঘুরতে যাবে , অন্য মেয়েটার কোন আপত্তিই থাকে না । মাছ ধরার ঠেলা জাল আর খলুইটা সঙ্গে নিয়ে একদিন সুযোগ বুঝে ঠিকই ওরা দুজন ঐ নৌকোটায় উঠে পড়ে ।

তখনকার সময়ে নদীতে হাত ডুবালেই মাছের দেখা মিলত । ওরা কিছুক্ষণ খেলতে খেলতে ঠেলা জালের এক কোণা ধরে রেখে মাছ ধরে । বাঁশের তৈরি খলুইটা অল্পক্ষণের মধ্যেই মাছে ভর্তি হয়ে যাবার পর ইচ্ছেমতো একে অপরকে পানি ছিটিয়ে যায় । দুপাশে কাশবন । স্রোতের সাথে সাথে ভালোই বাতাস বইছে এদিকটাতে । বাতাসে কাশ উড়ছে । একসময় কাশবন শেষ হয়ে গেলো, নদীর অনেক গভীরে চলে এল তারা । অদ্ভূত আনন্দময় সময় কাটছে তাদের । খেলা, হাসাহাসিতে এত মশগুল ছিলো যে দূর থেকে ওদের কারোরই ব্যাপারটা চোখে পড়েনি । শান্ত মেয়েটার চোখে প্রথম ধরা পড়ে ঘূর্ণিটা ।

ওদের থেকে অল্প একটু দূরেই একটা ঘূর্ণির সৃষ্টি হয়েছে । ওদের খেয়াল করতে অনেক দেরী হয়ে গেছে । ততক্ষণে দুরন্ত মেয়েটা স্রোতের দিকে নৌকো চালিয়ে দিয়েছে । স্রোতের বিপরীতে আর যাওয়া যাচ্ছে না । টের পাওয়ার সাথে সাথেই দুরন্ত মেয়েটা তার বোনকে নিয়ে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়ে । দুইজন আপ্রাণ সাঁতরানোর চেষ্টা করে । দুরন্ত মেয়েটা অনেক দূর এগিয়ে পিছে ফিরে দেখে তার বোনকে দেখা যাচ্ছে না । ধ্বক্ করে ওঠে বুকটা । ডুবসাঁতারে কিছুদূর স্রোতের দিকে এগিয়ে যায় সে । যাক, পাওয়া গেছে বোনটাকে । আরেকটু হলেই ঘূর্ণির কবলে পড়তো । শরীরটা কেমন ছটফট করছে, শ্বাস নিতে পারছে না । দুরন্ত মেয়েটা ওকে জাপটে ধরে পানির উপর উঠে আসে । এই সময় শান্ত মেয়েটা টের পায় যে, সে পানির উপরে উঠে আসছে । অনেকক্ষণ ধরে শ্বাস নিতে পারেনি সে, এখন শ্বাস নিতে মরিয়া হয়ে সামনে যা আছে সেটার উপর ভর করে পিছনে জোরে ধাক্কা দিয়ে তাড়াতাড়ি উপরে উঠে আসে । জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে হাঁপায় সে । তারপর শরীরের সমস্ত শক্তি সঞ্চয় করে তীব্রবেগে সাঁতরাতে থাকে শান্ত মেয়েটা, তাকে বাঁচতে হবে । ঠিক তখন তার মনে পড়ে, তার বোন কোথায়?

এদিক ওদিক তাকিয়ে সাঁতরায় সে, দেখতে পায়না কোথাও । বেশ কিছুক্ষণ পর পাড়ের দেখা পায় সে । ওর দুরন্ত বোনটা কি আগেই সাঁতরিয়ে পাড়ে উঠে গেলো? সে পাড়ে উঠে কিছুক্ষণ হাঁপায় । দূরে আক্কাস চাচার ডিঙ্গি নৌকোটা উল্টো হয়ে ভাসছে দেখা যাচ্ছে । সেদিকে তাকিয়ে ভয়ানক একটা জিনিস মনে পড়ল তার । সে যখন হাপুসহুপুস করে পানির উপরে ভেসে ওঠে, ঠিক তখন কিছু একটাকে ভর করে তাকে ধাক্কা দিয়ে সে পানির উপর উঠেছিলো । কি বা কে ছিলো সেটা?

ঘটনা বুঝতে পেরে শান্ত মেয়েটা বাকরুদ্ধ হয়ে যায় । এ কি করেছে সে !
মাথা চেপে হড়হড় করে বমি করে দেয় ।

কিছুক্ষণ পর তাদের গ্রামের এক মাঝি রহমান ঐ পথ দিয়ে নৌকো বেয়ে যাচ্ছিলো । মেয়েটাকে পাড়ে অসুস্থ দেখতে পেয়ে তাকে তার নৌকোয় তুলে নেয় । তাকে গ্রামে পৌঁছে দেয় । ঘটনার পর থেকে গ্রামে ফিরে আসা পর্যন্ত সে একটা কথাও বলেনি ।

রহমান মাঝি তাকে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে যায় । সবাই মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করে কি হয়েছে ? পাড়ে একা কেন দাঁড়িয়ে ছিল সে ? তার বোন কোথায় ?

পাঠক, বেঁচে ফিরে আসা মেয়েটিই আমাদের গল্পের লিনা, পরবর্তীতে নিন্তির মা । তার আসল নাম মিনা , তার দুরন্ত যমজ বোনটার আসল নাম ছিলো লিনা । তাকে বাঁচাতে গিয়ে তার দুরন্ত বোনটা বাঁচতে পারেনি । আহারে, তার বোনটাতো বেঁচে যেত , তাকে উদ্ধারের সময় সে যদি আরো একটু শান্ত থাকত । হ্যাঁ, একটা উপায় সে ঠিকই বের করে , তার দুরন্ত বোনটাকে ঠিকই বাঁচায় । এছাড়া আর কিভাবে সে এই জীবনের ঋণশোধ করবে? সে সবাইকে শান্ত স্বরে বলে, "আমি লিনা । আমাদের নৌকা ডুবে গিয়েছিলো, আমি সাঁতরে আসতে পারসি, মিনা পারে নাই।" তার মা তখন শোকে পাথর । তবুও তিনি মিনাকে ঠিকই চিনতে পেরেছিলেন । তিনি এ নিয়ে কাউকে কখনো কোন কথাই বলেননি । খোদা দু'টি যমজ সন্তানের একটিকে নিয়ে গেছেন, আরেকটিকে যে দিয়ে দিয়েছেন, এই বা কম কি !

নিজেদের পরিচয় নিয়ে সবাইকে সবসময় বোকা বানানো লিনা আর মিনার সর্বশেষ , চিরস্থায়ী আর করুণ এই মিথ্যাটা ওর মা ছাড়াও উপরওয়ালা বোধহয় ঠিকই বুঝতে পেরেছিলেন ।

মেয়েটাকে সবাই এরপর থেকে লিনা নামেই ডাকতে থাকে । মেয়েটা একটিবারের জন্যেও তার বোনের জন্য কাঁদেনি, খাওয়া দাওয়া করতেই চাইতো না, প্রায় দুইমাস বলতে গেলে কোন কথাই বলেনি । মা ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন এই মেয়েটারও যদি কিছু হয়ে যায় ! তারপর হঠাৎ একরাতে সে নিখোঁজ হয় । সারারাত খোঁজার পর সকালে তাকে অশ্বত্থ বৃক্ষের একটা ডালে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করা হয় । জ্ঞান ফেরার পর থেকে সে তার বোনকে সম্পূর্ণ রূপে ভুলে যায় । সে সবার সাথে স্বাভাবিকভাবে কথা বলা শুরু করে, যেন কিছুই হয়নি । ওর মা কিছুটা হলেও স্বস্তি পান । তিনি তার দুরন্ত মেয়েটার সমস্ত ছবি, সমস্ত স্মৃতি বাড়ি থেকে সরিয়ে ফেলেন । যেন কোনভাবে বেঁচে যাওয়া মেয়েটা তার মৃত বোনকে আর মনে করতে না পারে । তাদের সিঙ্গেল কোন ছবি থাকলে সমস্যা নেই, কেউ বুঝতে পারবে না । একসাথে দুই বোনের তোলা কোন ছবিই রাখলেন না তিনি । কিন্ত কোন একটা গ্রুপ ফটো লুকোতে তাঁর মনে থাকে না । এরপর থেকে বুকে পাথর চেপে মেয়েটার বাবা মা চুপ করে যান ।

মেয়েটা এখন বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে । জ্ঞান ফিরে সে দেখেছে, রাত শেষ হতে শুরু করেছে । ভোরবেলাটা তার খুব ভালো লাগে , মানুষ জন্মের পর যেমন নিষ্পাপ থাকে, দিনের শুরুর সময়টাও তার তেমনি নিষ্পাপ লাগে । নিন্তি, শাহীন এখনও ঘুমিয়ে । রাত শেষের আলো পূব আকাশে একটু একটু দেখা যাচ্ছে । কলোনী এলাকা , গাছপালা এখানে একটু বেশী । অল্প বাতাসে গাছের পাতা নড়ছে । ভোরের পাখির একটা দুটো ডাক শোনা যাচ্ছে । এই রাতে অনেকগুলো প্রশ্নের অনেক উত্তর পেয়ে গেছে সে । হয়ত কেউ তাকে মনে করিয়ে দিয়েছে ।

প্রায় পনের বছর পর মিনা তার দুরন্ত মিষ্টি বোন লিনার জন্যে ডুকরে কেঁদে উঠল ।

সুবহে সাদিকের আবছা আলোয় মেয়েটা দেখতে পায় তার চোখের পানির রং নীল । মাথা উঠিয়ে দেখে তাদের বাসাটার সামনের বড় বৃক্ষটাতে শ'য়ে শ'য়ে নীল রঙ্গা পাখি । তাদের পালক উজ্জ্বল নীল রঙ্গের । একটুও নড়াচড়া করছে না, এক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে আছে । একটা নীলচে আভা এসে ওর উপর পড়ছে গাছটা থেকে ।

এরা কারা? মেয়েটা জানে না । এরাই হয়তো তার স্মৃতি ভুলিয়ে দিয়েছিলো , আজ রাতে এরাই তাকে সব মনে করিয়ে দিয়েছে । মেয়েটা তাদের নিয়ে কোন আগ্রহ দেখায় না । অনেক ছোটবেলা থেকেই সে বাস্তব আর কল্পণার পার্থক্য ধরতে পারে না । সে শুধু এটা জানে তার তৃতীয় স্বপ্নটা স্বপ্ন নয় , অনেক পুরনো একটা স্মৃতি । আর তার বোন তার উপর একটুও রাগ করেনি । এখন স্বপ্নে বোনটা তার সাথে কথা বলে ! অন্ধকার সুড়ঙ্গের সর্পিলাকার সিঁড়ি বেয়ে সে যখন নামতে থাকে , তখন পিছন থেকে তার বোনটা আলো ধরে তার পথ দেখিয়ে দিতে দিতে অবিরাম কথা বলে যায় । তার বোনটা এত কথা বলতে পারে ! তাকে অনেক গল্প বলে - অদেখা শহরের গল্প , পৃথিবীর বৃক্ষদের রহস্যে ঘেরা গল্প , আলোর গল্প, অন্ধকারের গল্প । এখন সে খুব ভালো করে জানে , তাদের গন্তব্য অন্ধকার সুড়ঙ্গের একেবারে নিচে কি আছে । কখন ওখানে পৌঁছুবে সেই প্রশ্নটা আসলে অবশ্য তার বোন এড়িয়ে যায় । তবু তার ভয় করে না । সে জানে , সে যেখানেই যাক, যত বড় সত্যের মুখোমুখি হোক, তার বোনটা হাতে ধরা আলোর উৎসটা দিয়ে তাকে ঠিকই পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে ।

লিনার চোখে এখন রাজ্যের ঘুম । অনেকদিন সে ঘুমোয়নি ।





গল্পটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল এই লিঙ্কে -
facebook.com/notes/md-yasin-arafat-arnab/কয়েকটি-নীল-পালক-অথবা-একজন-লিনার-গল্প/1104844452868516








মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.