অকালে ঝরে যে জীবন...............।

০৬ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৮

২০০৯-১০ সাল হ বে। ঢাকায় মেসে থকে পড়াশুনা করি। একদিন মামা কল করে বলল তোর কাছে একটা ছেলে কে পাঠাইতেছি, সপ্তাহ দু'য়েক থাকবে। শুনে খুশি হবার কারন ছিল না। তাই স্বাভাবিক ভাবেই বিরক্ত হলাম । তবু না করতে পারলাম না। বিরক্ত হবার কারন টা সহজেই অনুমেয়। মেস লাইফ!! পানি নেই, গ্যাস নেই, খাবারের সমস্যা, ...যাহোক, ছেলেটা এক দিন আসল। কথা টথা হল। আমার বয়সি, একই ব্যাচে পড়াশুনা করে।ফিনান্সিয়াল ক্রাইসিস এর জন্য জব এ ঢুকতে হবে। তাই ঢাকায় আসা।

২ সপ্তাহ চলবে ওর ট্রেনিং। রাস্তাঘাট জানে না তাই প্রথমবার আমাকেই নিয়ে যেতে হল। বেচারা!! ঢাকার লাইফ এত সোজা না। সকালে বেড়িয়ে যেত আর বিকেলে এসে যখন দেখত পানি নাই, বসে কাঁদত। ২ দিন পরই চলে যেতে চাইল। এত কষ্ট করে এসে চলে যাবে তাই বুজাই শুনাই রেখে দিলাম। তারপর প্রতিদিন কত কাহিনী। ঢাকায় এটা সেটা দেখে অবাক হয়ে আমার সাথে এসে শেয়ার করত। বাসে মেয়েদের সাথে একসাথে বসাটাই তার কাছে অবাস্তব মনে হত। আমাকে এসে বলছিল, ঢাকার মেয়েরা বেশরম, লজ্জা নাই। কাহিনী শুনে ওকে বুঝালাম, জীবনের তাগিদে মেয়েদের বের হতে হয়। বাসে পুরুষদের ধাক্কা খেতে হয়। এটা খুব ই স্বাভাবিক। খারাপভাবে দেখার কিছু নাই।

যাহোক ওর চাকুরি ফিক্সড হয়ে গেল। চলে গেল আমার এখান থেকে। মাঝে মাঝে ফোন দিত। খুব করে বলত ওদের ওখানে বেড়াতে যাওয়ার জন্য। সময় হয়ে উঠে নাই। এক দিন শুনি ওর বাবা মারা গেছেন। পড়াশোনা শেষ করছে কিনা জানতে চাওয়া হয় না। তবু জীবনের যুদ্ধে নেমে পড়তে হল। অল্পদিনেই সে ভালভাবেই উৎরে গেল। সচ্ছলতা আসতে লাগল। অল্পদিন পরেই জীবনের নতুন অধ্যায়ের সূচনা করল। মা আর সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীকে নিয়ে ছোট্ট সংসার ওর। এক টাই আফসোস ছিল ওর। বাবা ওর সচ্ছলতা দেখে যেতে পারেননি।

২দিন আগে সকালে হঠাৎ মামার নাম্বার থেকে দেখি ২টা মিসডকল। কেন জানি ভয় লাগতেছিল। তাই মামা কে ফোন না দিয়ে আমি আমার আম্মু কে ফোন দিলাম। আম্মু কে বলতেছি মামা সকালে ফোন দিছিল ধরতে পারি নাই। তখন ই শুনলাম দুঃসংবাদ টা। সাথে সাথে মামা কে ফোন দেই। মামা ই বলল যে কিছু আওয়ামী লিগের সন্ত্রাসীরা আজ সকালে ওকে ডেকে নিয়ে মেরে ফেলছে। অনেক দিন থেকেই নাকি ওদের সামান্য জমি আওয়ামী লিগের সন্ত্রাসীরা দখল করে ছিল। তার সূত্র ধরেই...........

প্রতিদিন কত মানুষ মারা যায় খবর ও রাখি না। অথচ আজ মাত্র ২ স প্তাহের জন্য নিজের স্মৃতিতে অমলিন একটা চেহারার জন্য খারাপ লাগতেছে। সারাটা দিন এটাই ভাবছি পারলে শেখ হাসিনার কলিজা টা টনে ছিড়ে ফেলি। তোর কুলাঙ্গার গুলাই তো একটা সহজ সরল ছেলের জীবন প্রদীপ নিভিয়ে দিল। এক টা মায়ের বুক খালি করে দিল। সদ্য বিবাহিতা বধুর জীবন টা অনিশ্চয়তায় ঢেকে দিল!!!!! এভাবে আর কত জীবন নিলে তোমরা ক্ষান্ত দিবে???!!!!

০ টি +১/-০