পাগলামি

০৯ ই মে, ২০১৫ সকাল ১১:৫১

আসলে স্বাভাবিক মানুষের আদলে
আমি যে একটা আস্ত পাগল
তা আমার মা ছাড়া আর কেউ জানে না।
প্রথমবার পাগলামির
লক্ষণ ধরা পড়ে এক চৈত পূর্ণিমায়। আমি
মায়ের সাথে রিক্ত চৌচির
জমি দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম।
হঠাৎ মা দেখলেন, আমি দুহাত দিয়ে
জোছনা ধরছি আর
খাচ্ছি গপাগপ। মুঠো ভর্তি
চুইয়ে পড়া জোছনা
পকেটে ঢুকাচ্ছি হন্যে হয়ে । মা আমার আঁতকে
উঠেছিলেন সর্পাঘাতের মতো।
সেই থেকে মা-ই কেবল জানেন আমি
পাগল হয়ে জন্মেছি।
মেয়ের প্রথম বিয়ের কথা যেমন
সতর্ক লুকিয়ে
দ্বিতীয় বিবাহ দেন
নিরুপায় গার্জেন, মা আমার এই পাগলামি লুকিয়ে আমার বিয়ে দিলেন।

মাঝে মাঝে আমি
পাগলের মতো হেসে উঠি যুক্তিযুক্ত
কারণ ছাড়া-ই। কাঁদবার মতো হৃদয়বিদারক
দৃশ্যে আমি অটিস্টিক শিশুর
মতো নির্বিকার বসে থাকি। মানুষ দেখলে
আমার খামচে
দিতে ইচ্ছে করে । মানুষের সুস্থতাকে
আমার মহামারীর মতো
ছোঁয়াচে প্রাণঘাতী বার্ডফ্লু মনে হয়।
রূপসি নারী দেখলে
আমার ভয় লাগে। মনে হয় যেন একপাল
যৌবনবতী ইঁদুর দাঁত দিয়ে কুটকুট করে কেটে দেবে বুকের সবগুলো গিঁট ।

পাগল না হলে,
মানুষের রক্ত দেখলে অজ্ঞান হই কেন?
বেঘোরে মৃত্যু দেখলে
কেন আমার সবকিছু
ভেঙে মিছমার করে দিতে ইচ্ছে করে?
অনিয়ম দেখলে
কেন মজদুরের পাশে দাঁড়াতে ইচ্ছে করে কোদাল কাঁধে ?
অভুক্ত কেউ খাবার
চাইলে কেন কলিজা ছিঁড়ে দিতে ইচ্ছা করে ?
সুস্থ মানুষদের ভয়াবহতম
আত্মঘাতী নির্বিকার
বিকার দেখলে কেন মন চায়, পাগলদের মিছিল নামাই চেতনার রাজপথে ?

পাগল না হলে,
কেন সংসারকে মনে হয়
গঞ্জের মাছবাজার ?
কেন বুকের মাঝে লালনের একতারা
গুমরে ওঠে মাঝরাত্তিরে ?
কেন আমি এখনও মানুষ খুঁজতে যাই
এই ধূসর জনারণ্যে ?
পাগল না হলে,
কেন তোমাকে এখনও পাগলের মতো
ভালোবাসতে ইচ্ছে করে ?
তোমার নির্মম প্রাণাঘাতের পরও, পাগল বলেই, দিব্যি বেঁচে আছি আজও !!



##আমবাগান, বরিশাল।
০৭/০৩/১৫ খ্রিঃ।##

২ টি +১/-০