![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
হাজার বছর পথ চলা শেষে,পাঁজিতে পুরাণে চেপে ; আমারা এসেছি নদীতে-নায়েতে, বেনো জল মেপে মেপে।।
কমলা কাকি
আদুরে দুই হাতে বুকে টেনে নিয়ে
তোমার জর্দা আর পানের ভুরভুরে গন্ধ মিশ্রিত ঠোঁটে
যখন
রুয়ে দিতে পটাপট কয়েকটা চুম
এলোমেলো
আমার কাপালে দুই গালে
না নারী না ঈশ্বর বোঝা ঐ শাবক বয়সের আমি
কী করে যে
বুঝে যেতাম মাতৃ-গন্ধি নদীর পরণ-কথা
কী করে যে টের পেতাম- সব খাল-বিল মরে যায়,
মরে গেলেও মামাবাড়ির
"মইন্নার জোড়" ; মরে না দুগ্ধবতী প্রেম
শাঁখা-সিঁদুরে
একাকার ছোট্ট গড়নের তুমি কাঁসার এক বাটি
গাই-দুধ হাতে নিয়ে
যখন বলতে- নে, খা ; আমার মনে হত
যেন জগৎ-মাতা
কোজাগরী পূর্ণিমায় বিলিয়ে দিচ্ছেন
চাকতির মতো
এক খাবলা চাঁদ- সন্তানের গোঁয়ার
আবদারে
প্রায়ই বলতে তুমি- তোর জন্য এনে দেব চন্দ্রাবতী কলাবউ
কমলা কাকি
বউ এলো- গেরস্থালি ভরে উঠল
কলাবতী ধানে
গোবর-জল দেয়া দুরন্ত উঠোনে আমার-ই
সন্তানের সাথে
খেলা করে বেতাল বাছুর
খেত থেকে
আনতে গিয়ে ধানকাটা খড়ের আটি- দেখি তুমি নেই
অথচ তুিম ছিলে
অস্তিত্বের অন্তমূলে একাকার
তোমার সমতল সোহাগী পোঁতায় এখন রশীদদের
লকলকে সরিষার চাষ
তোমার পানা-পুকুরের জল এখন ধুয়ে দেয় তাহাদের
বর্জ ও মল
আমাদের আত্মঘাতী সাম্প্রদায়িক শিশা-বিষে
ক্রমাগত
দমবন্ধ তুমি চলে গেলে কাঁটাতার দিয়ে-
শ্বাসমূলে নিতে শ্বাস
এদিকে বইছে তখন ব্যাপক বিষাক্ত বাতাস
কাঁটাতারের কাঠঠোকরা
ফাঁক গলে কিছুতেই এখন এদিকে পৌঁছুতে
পারে না
ও'পাশের গাই-দুধ-বাটি
তুমি চলে গেলে
চলে গেল আমাদের বটতলা-ছায়া, দুধেল গাই
কাঁসার বাটি, উলুধ্বনি
আর জর্দাগন্ধি মুখের সন্ধ্যামঙ্গল গান
চলে গেল
কল্পনা সূতার- যে বালিকাকে প্রলোভিত
করতে গিয়ে
ইশকুলের হাই-জাম্পে সেবার ছুড়ে দিয়েছিলাম
আমার প্রাণ পর্যন্ত দম
মঙ্গলী পিসি
দুপুর বেলায় কলাই শাক তুলতে গিয়ে যে
আমাকে
লেপ্টে রেখেছিল তাঁর সোনপাপড়ি বুকে
আর আমি তাঁর
বকরঙা বুকে কোমল কইতরের মতো মিশে
যেতে যেতে ভাবলাম-
মানবী এত সুন্দর হয় ! এত সুঘ্রাণ ধরে কনকচাঁপা
ফুলে !
এভাবে পাপড়ি দেয় খুলে !
মঙ্গলী পিসিও চলে গেছে, কমলা কাকি ; পাপড়ির সুঘ্রাণ নিয়ে।
তুমি চলে যাওয়ার
পর চলে গেছে আমাদের বাড়ির ইশ্কুলের
ফি-বারের কালী পূজোর
ঢাকের বাদ্যি আলোচালের প্রসাদ ইন্দ্র কাকার
হারমোনিয়াম আর
নারু নাগের পাঠশালা বরই গাছ
তুমি চলে যাবার কিছু পর লালু মহিষ উচ্চ বংশের
শ্লাঘায় যে পরান্ন স্পর্শও
করত না পর্যন্ত উপর্যুপরি অনাহার স্বত্বেও
তীব্র শীতের এক ভোরে
নিঃশব্দ মরে পড়ে থাকলো আমাদের ইশকুলের হা-করা বারান্দায়।
কমলা কাকি
তুমি চলে গেলে বলে
চলে গেল চাঁদ সদাগরের নৌকো সনকার মুখ
বুকের পুকুর
চোখের আকাশ
বিস্তর লুটপাট হয়ে গেল হৃদয়হীনতার দাঙ্গায়
লালু মহিষের মতো ঠাস করে মরে গেল আমাদের বেতরা গ্রাম।।
১৫/০১/১৫
বেতাগী, বরগুনা।
©somewhere in net ltd.