![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
(পূর্বের লেখাটির পর)
আমরা কী? এর উত্তরে যা পাওয়া যায় তা আমাদের সংস্কৃতি। আর আমাদের কী আছে? এর উত্তরে যা পাওয়া যায় তা আমাদের সভ্যতা। আমাদের মুল্যবোধ,বিশ্বাস সবই সংস্কৃতির অন্তর্ভুক্ত।আর তাই আমাদের সভ্যতা আমাদের সংস্কৃতি অনুযায়ী গড়ে উঠে। সংস্কৃতি আপনা আপনি গড়ে উঠতে পারে,আবার সচেতন প্রয়াসের মাধ্যমেও তাকে গড়ে তোলা যেতে পারে। এ জন্য সংস্কৃতিকে যেমন সমৃদ্ধ করা যায়,তেমনি একে বিকৃতও করা যায়।আর এ কাজের অন্যতম মাধ্যম হচ্ছে শিক্ষা।শিক্ষার মাধ্যমে কোন ব্যক্তির বিশ্বাস, মূল্যবোধের পরিবর্তন আনয়ন সম্ভব।
বর্তমান পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ কিংবা বিভিন্ন অঞ্চলের জীবন-যাপনের যে ধরন তা তাদের ভৌগোলিক অবস্থা,তাদের বিশ্বাস নির্ধারণ করে দিয়েছে।এর মধ্যে এর বিপরীত কিছু প্রবেশ করাতে হলে অবশ্যই দীর্ঘদিন ধরে কাজ করতে হবে।কিন্তু তবুও তা সহজসাধ্য হবে না।আমাদের দেশে প্রায় ২ শ বছর বিদেশীদের শাসন ছিল।এ সময় শাসকগোষ্ঠী ধীরে ধীরে আমাদের সংস্কৃতি পরিবর্তনের প্রয়াস চালায়।শাসকগোষ্ঠী যেহেতু শিক্ষানীতি নির্ধারন করত,তাই সহজেই তারা সংস্কৃতিকে পরিবর্তনের সুযোগ পায়।যদিও আজ অবধি পুরোপুরি তা সম্ভব হয় নি।কিন্তু একেবারে যে হয়নি তাও নয়।
আজকে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির যে প্রধান উপাদান, গান-বাজনা ও নৃত্য এগুলো প্রাচীন গ্রীক,রোম ও হিন্দু সমাজের ধর্মীয় পূজা অর্চনার অবিচ্ছেদ্য অংশ।দেবতার সামনে সুন্দরী রমণী বা যুবতী হাতে পূজার অর্ঘ্য নিয়ে নৃত্যরত অবস্থায় মোহনীয় কন্ঠে গান গেয়ে দেবতার পদতলে অর্ঘ্যের ঢালি যপে দেয়া হিন্দু সমাজের এক বিশেষ পূজার অনুষ্ঠান। উত্তরকালে এ পূজা অনুষ্ঠানকেই মন্দির থেকে এনে বিশাল হল ঘরের সুসজ্জিত ও সুউচ্চ মঞ্চে প্রতিষ্ঠিত করেছিল,যা ছিল দেবতার সম্মুখে নিজেকে পূর্ণমাত্রায় নিবেদিত করার প্রধান মাধ্যম।
কালক্রমে সংস্কৃতি পূজারীরা উম্মুক্ত মঞ্চে প্রতিষ্ঠিত করে তাকেই বানায় চিত্তবিনোদন তথা রস পিপাসু মানুষের সম্মুখে উপভোগ্যরূপে নিজেকে নিবেদন করার মাধ্যম। অতঃপর নাচ-গান ও বাজনার এ অনুষ্ঠান মঞ্চের উপর ক্রমবিকাশ ও উৎকর্ষ লাভ করতে করতে বর্তমান রূপ পরিগ্রহ করেছে।
ইংরেজদের প্রায় দু'শ বছর শোষণের সময় তারা এমন শ্রেনীর শিক্ষিত লোক তৈরী করেছিল যাদের মধ্যে এসব আনুষ্ঠানিকতা প্রচার ও প্রসার লাভ করে। সেকালে শিক্ষা,সমাজ ও পরিবেশ থেকেই এর সমর্থন পাওয়া গিয়েছিল।ফলে মুসলমানদের ঘরেও এমন সব লোক জন্ম নিয়েছে যারা সংীত,যুগল নৃত্যসহ অভিনয় ও প্রেমাভিনয়ে কোন দোষ মনে করে না।ফলে যুবক-যুবতীরা যুগ্ম ও সমবেতভাবে প্রায় নগ্ন অবস্থায় রৌদ্রোজ্জ্বল উম্মুক্ত প্রান্তরে রৌদ্রস্নান এবং সমুদ্র সৈকতে সমুদ্রস্নান উৎসব পালন করছে।ফ্যাশন শো,ভ্যালেন্টাইনস ডে,থার্টিফার্স্ট নাইট,বৈশাখী মেলা ইত্যাদির নামে সংস্কৃতির মঞ্চে বেহায়াপনা,নির্লজ্জতা ও নগ্নতা প্রদর্শনের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছে।আর যে যতবেশি দেখাতে পারছে,সে তত বেশি সার্থক শিল্পীরূপে পরিচিত হচ্ছে।এতে নেই কোন লজ্জা,নেই কারো আপত্তি।বরং সমগ্র শিক্ষা ও পরিবেশ থেকেই তা বাহবা পাচ্ছে। এভাবে পাশ্চাত্য দর্শন আজকের মানুষকে পশুর পর্যায়ে নামিয়ে দিয়েছে।কেননা এই দর্শন মানুষকে পশু ছাড়া অন্যকোন স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যমন্ডিত সৃষ্টি মনে করে না।এই পশুকে মনুষ্যত্ব এ রূপান্তরিত করার কোন চিন্তাই এখানে করা হয়নি।প্রকৃত মনুষ্যত্ব অর্জন করার কোন খেয়ালই জাগেনি এই পশুত্ববাদিদের সংস্কৃতি চর্চায়।আমাদের মত গরীব দেশে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে যেসব মেলা,মহোৎসব,অশ্লীল সিনেমা,নাটক ও কামোদ্দীপক পপ সংগীতের কন্সার্ট হচ্ছে তা দিয়ে আমাদের পূর্বসূরীদের গ্রন্থপঞ্জি চাপা হলে জাতি এবং আমাদের জরাগ্রস্থ বর্তমান তরুণ সমাজ পেছনে ফিরে আয়নায় মুখ দেখতে পারত।
(চলবে)
©somewhere in net ltd.