![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সন ব্যবস্থাপনা এবং নিজস্ব বর্ণমালার কারণে বাংলা পৃথিবীর অন্যতম সমৃদ্ধ ভাষা। খ্রিস্টাব্দ বা ঈসায়ী সন এবং হিজরী সন এ দুটি সনের অপূর্ব সমন্বয় আমাদের সন ব্যবস্থা। এছাড়াও বাংলাদেশে আরও প্রায় ত্রিশটির মত সন খুঁজে পাওয়া যায়।এগুলো বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে গড়ে উঠেছে। 'সন' শব্দটি আরবি ভাষার শব্দ। এর অর্থ হল 'বর্ষ,' 'পঞ্জি', 'পঞ্জিকা', 'বছর','অর্থবর্ষ', 'দিনক্ষণ' ইত্যাদি। আর 'সাল' শব্দটি ফার্সি। এর অর্থ 'দিন','ইতিহাস' ইত্যাদি। বাংলাদেশে বাংলা সন প্রতিষ্ঠার আরও আগে থেকেই এ শব্দগুলো এখানকার সংস্কৃতির সাথে অঙ্গীভূত হয়।
বাংলাদেশে দীর্ঘ্যকাল যাবৎ মুসলিম শাসন কার্যকর ছিল। এ সময় হিজরী সন রাষ্টীয়ভাবে কার্যকরী ছিল।জনগণও হিজরী সন মেনে চলত। জনগন বিভিন্ন অঞ্চলভেদে বিভিন্ন ফসলি সনও মেনে চলত। সম্রাট আকবরের সময় সন ব্যবস্থাপনা নিয়ে জটিলতা পরিলক্ষিত হয়। হিজরী সন হচ্ছে চন্দ্রমাসভিত্তিক। চন্দ্রমাসভিত্তিক সন হওয়ায় হিজরী সন বছরে ১০-১১ দিন করে কমে যেত। কিন্তু জমির ফসল মৌসুমমতই উৎপন্ন হয়। ফলে সরকারীভাবে খাজনা আদায়ে সমস্যা সৃষ্টি হয়। দেখা যেত এ বছর ফসল তোলার পর যে মাসটি এসেছে কয়েকবছর পর সে মাসটি ফসল লাগানোর সময়ই চলে আসত। এতে করে নির্দিষ্ট মাসে কৃষকদের থেকে খাজনা আদায়ে সমস্যা সৃষ্টি হয়। সম্রাট আকবর তখন এ সমস্যাটি সমাধানের জন্য সৌরবর্ষের সাথে সামঞ্জস্য রেখে নতুন একটি সন প্রবর্তনের নির্দেশ দেন। নতুন সন প্রবর্তনের দায়িত্ব দেয়া হয়েছিল আমীর ফতেহ উল্লাহ সিরাজীকে। তিনি অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে এদেশের প্রধান দুই ধর্মীয় গোষ্ঠী হিন্দু ও মুসলমানদের বিশ্বাস ও মূল্যবোধকে বিবেচনায় এনে একটি সন প্রবর্তন করেন।
তখনকার রাষ্টীয় ভাবে প্রচলিত হিজরী সন ছিল মুসলমানদের একটি সন। আবার হিন্দুরাও শকাব্দ নামে একটি সনকে চন্দ্রমাসের নিয়মে গণনা করত। আমীর ফতেহ উল্লাহ সিরাজী হিজরী সনকে ভিত্তি হিসেবে ধরে এবং হিন্দুদের ব্যবহুত শকাব্দ থেকে মাসের নামগুলো নিয়ে নতুন সন প্রবর্তন করেন। তিনি আকবরের সিংহাসনে আরোহনের বছর অর্থাৎ ৯৬৩ হিজরীকে ভিত্তি বছর ধরে সন প্রবর্তনের উদ্যোগ নেন। এ ব্যবস্থায় ৯৬৩ হিজরী পূর্ববর্তী অংশ লুনার ও সোলার ক্যালেন্ডারে একই সং্খ্যা ও সময় ধরা হয়। ৯৬৩ পরবর্তী অংশকে শুধুমাত্র সোলার ক্যালেন্ডারে রূপান্তরিত ও গণনার মাধ্যমে ৯৬৩ হিজরীকে ৯৬৩ বাংলা সন ধরা হয়। আমীর ফতেহ উল্লাহ সিরাজী প্রবর্তিত নতুন সনটি এভাবে বাংলা সন হিসেবে পরিচিতি লাভ করে।
(১৪ এপ্রিল ২০০৯,১লা বৈশাখ ১৪১৬ তারিখ মঙ্গলবার 'দৈনিক রূপসী বাংলা' পত্রিকায় প্রকাশিত)।
©somewhere in net ltd.