নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যের সন্ধানে ও শান্তির অন্বেষায় ...

জোবাইর

বিনয়ী মূর্খ অহংকারী বিদ্বান অপেক্ষা মহত্তর।

জোবাইর › বিস্তারিত পোস্টঃ

উত্তর মেরুতে নিশি রাতে সূর্য দর্শন - পর্ব ৬

৩০ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১০:৫৪


সুমেরু অঞ্চলে আমাদের আজ ৫ম দিন। এর মধ্যে শহর, মহাসড়ক, উন্মুক্ত প্রাঙ্গন এবং নদী/হ্রদের তীর থেকে নিশীরাতে সূর্যের হালকা আলোতে প্রকৃতির অপূর্ব রূপ দেখেছি। হাতে সময় আছে আর একদিন। তাই আজ পাহাড়ে উঠে নিশীরাতের সূর্য দেখার প্রোগ্রাম রেখেছি।

আজকের পরিকল্পনা:
১। সকালে কিরুনা শহর থেকে ৭০ কিলোমিটার দূরে পর্বত দর্শন
২) বিকালে কিরুনা শহরে পাহাড়ের উপরে উঠে মধ্যরাতের সূর্য দর্শন

সুইডেনের উচ্চতম পর্বত কেবনেকাইসে দর্শন (Kebnekaise)

কেবনেকাইসে পর্বতে যাওয়ার রাস্তা - একই রাস্তার দুটি ছবি: গ্রীষ্ম ও শীতকালে

কেবনেকাইসে পর্বতটি সুইডিশ ল্যাপল্যাণ্ড এলাকায় অবস্থিত। এই পর্বতের দুটি চূড়া রয়েছে: দক্ষিণ চূড়া, উচ্চতা ২,১২০ মিটার (6,960 ft), উত্তর চূড়া উচ্চতা ২,০৯৭ মিটার (6,879 ft)। ৭৬০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য এই পর্বতটিতে যাওয়ার অনেকগুলো পথ আছে। মানচিত্র দেখে পর্বত যাওয়ার যে পথটি আমি পছন্দ করেছি তার দূরত্ব কিরুনা শহর থেকে ৭০ কিলোমিটার। পর্বতে উঠার মতো প্রস্তুতি, ইচ্ছা বা সময় কোনটাই নেই। যাওয়ার উদ্দেশ্য পর্বতটাকে কাছে থেকে দেখা। মানচিত্রে গাড়ির রাস্তাটি পর্বতের একদম কাছে এসে শেষ হয়েছে মনে হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে এসে দেখলাম রাস্তার শেষের অংশটুকু হাঁটা রাস্তা। অর্থাৎ গাড়ি পার্কিং-এ রেখে বেশ কিছু পথ হেঁটেই পর্বতের কাছে আসতে হবে।

আমার মেয়ে পর্বত অভিমূখে বিপুল উৎসাহে দুর্গম পথ হেঁটে যাচ্ছে

যা-ই হোক, অগত্যা আমরাও কাঁধে ব্যাগ নিয়ে হাঁটা শুরু করলাম। দেখে মনে হচ্ছে পর্বত একদম কাছেই, কিন্তু হাঁটছি তো হাঁটছিই পথ শেষ হয় না! পাহাড়ি এই কাঁচা রাস্তাটিতে এদিকে-সেদিকে বিভিন্ন সাইজের পাথর ছড়িয়ে আছে। যার কারণে হাঁটতেও কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। এর মধ্যেই আমার মেয়ে বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়েছে। সে আর যেতে চাচ্ছে না। পর্বত আর বেশি দূরে নয় বলে আশ্বাস দিয়ে তাকে হাঁটার জন্য উৎসাহিত করলাম। কিছুদূর যাওয়ার পর আমার মেয়ে ক্লান্ত হয়ে রাস্তার পাশে বসে কাঁদতে শুরু করলো। এখন কী করা যায়! এত দীর্ঘ পথ গাড়িতে ও হেঁটে এসে পর্বতের খুব কাছ থেকেই ফিরে যাবো তা কি করে হয়। এখানে আমরা কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলাম। তারপর আমার মেয়েকে কাঁধে নিয়ে আবার পর্বতের দিকে হাঁটা শুরু করলাম। পর্বত দেখে ফিরে আসা কিছু রসিক পর্যটক আমরা বাপ-বেটির অবস্থা দেখে হাততালি দিয়ে উৎসাহিত করলেন।

কেবনেকাইসে যাওয়ার হাঁটা রাস্তা, পর্বতের পাদদেশে মিনি পার্ক

অবশেষে আমরা ক্লান্ত, তৃষ্ণার্ত এবং ক্ষুধার্ত দেহ নিয়ে পর্বতের পাদদেশে এসে হাজির হলাম। এলাকাটি দেখতে পার্কের মতো খুব সুন্দর, এখানে বিশ্রামের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা আছে। কিছু পর্যটক এদিক-সেদিক ঘোরাঘুরি করছে। কিছু পরিব্রাজক (hiker) পিঠে বিরাট ব্যাগ নিয়ে পর্বতে উঠার প্রস্তুতি নিচ্ছে। একপাশে তাঁবু করে এখানকার আদিবাসী সামি লোকেরা খাবার-দাবার বিক্রি করছে। আমরা তাদের থেকে হরিণের মাংসের মেগা সাইজের দুটি বার্গার ও এক বোতল সফট ড্রিংকস কিনে পার্কের টেবিল-বেঞ্চে বসে ক্ষুধার্ত হাঙরের মতো গপাস গপাস করে গিলতে লাগলাম। হরিণের মাংস দিয়ে সদ্য তৈরি গরম গরম বার্গারগুলো ক্ষুধার্ত পেটে খাওয়ার সময় একেবারে ঝাক্কাস মজা লাগলো! আমরা বাপ-মেয়ে অনেকক্ষণ চুপচাপ থাকলেও বার্গার খাওয়ার পরে আস্তে আস্তে কথা বলতে শুরু করলাম। 'পেট শান্তি তো দুনিয়া শান্তি'।

আমরা পেট শান্তি করে আস্তে আস্তে পর্বতের পাশে গেলাম। শুরুর দিকে পর্বতে উঠার রাস্তায় হেঁটে অল্প কিছুদুর যাওয়ার পর থেমে গেলাম। শুরুর দিকে রাস্তা মোটামুটি ঢালু হলেও পাথরের অসমতল রাস্তায় হাঁটার মতো তেমন এন্যার্জি আর আমাদের ছিল না। তাছাড়া যেই কঠিন রাস্তা হেঁটে এখানে এসেছি সেটা পেরিয়েই আবার পার্কিংয়ের জায়গায় যেতে হবে এবং বিকালে কিরুনায় পাহাড়ে উঠে নিশীরাতে সূর্য দেখতে হবে। তাই পর্বত সংলগ্ন এলাকায় ঘোরাঘুরি করে কিছু ছবি তুলে এবং পরিশেষে পর্বত মহাশয়কে প্রণাম জানিয়ে ধীরলয়ে কটেজে ফিরে আসলাম।

পাহাড়ের উপরে উঠে মধ্যরাতের সূর্য দর্শন

মধ্যরাতের সূর্যের দৃশ্য পাহাড়, নদী ও মাঠ যেখান থেকে দেখি না কেন সব দৃশ্যই সুন্দর

কিরুনাতে ২৮ মে থেকে ১৫ জুলাই প্রায় দেড় মাস রাতে সূর্য অস্ত যায় না। তাই মধ্যরাতেও এখানে সম্পূর্ণ অন্ধকার হয় না। বাংলাদেশে মাগরিবের আধা ঘণ্টা আগে যে রকম আলো থাকে এখানে রাত ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত সে রকম আলো থাকে। এই আলোয় পার্কে বসে পত্র-পত্রিকা বা বই-পুস্তক পড়তে সমস্যা হয় না। তাই এই সময় রাস্তার বাতিগুলো দিনরাত নিভানো থাকে। ১টার পর থেকে সূর্য আস্তে আস্তে উপরে চলে আসে, তখন সব জায়গা থেকে সূর্য দেখা যায়। ঠিক একইভাবে রাত ১১টার সময়েও সূর্যকে সব জায়গা থেকে দেখা যায়। রাত ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত সময়ে সূর্যকে মেঘমুক্ত পরিস্কার আকাশে স্পষ্টভাবে দেখতে হলে বিশেষ কিছু ভিউ পয়েন্টে যেতে হয়। যেমন: নদীর ধারে, বিস্তীর্ণ খোলা মাঠে বা পাহাড়ের উপরে। নিশীরাতে সূর্য দেখার প্রধান ও একমাত্র অন্তরায় হচ্ছে মেঘ। তাই এখানে তিন-চার দিন থাকতে পারলে নিশীরাতে সূর্য দর্শন মিস্ হওয়ার সম্ভাবনা কম। যে দিন আকাশ পরিষ্কার থাকবে সে দিনই যে কোনো ভিউ পয়েন্টে গিয়ে নিশীরাতে সূর্য দর্শনের সুযোগ কাজে লাগাতে হবে।

পাহাড়ে উঠার রাস্তা ও পাহাড় থেকে সূর্য দর্শন

গতকালই আবহাওয়া সংবাদ দেখে নিশ্চিত হয়েছিলাম যে আজকে আকাশ পরিষ্কার থাকবে। তাই সকালে পর্বত দেখার কাজ সেড়ে বিকালে (রাত ৯টা) নিশীরাতে সূর্য দর্শনের সিডিউল রেখেছিলাম। আমরা সূর্য দর্শনের ভিউ পয়েন্ট হিসাবে কিরুনা শহরের পাহাড়কে নির্বাচন করলাম। কারণ পাহাড়টি কিরুনা শহরের মধ্যেই এবং আমাদের কটেজ থেকেও বেশি দূরে নয়। গাড়ি নিয়ে পাহাড়ের দিকে যাত্রা শুরু করলাম। পাহাড়টি খুব বেশি উঁচু নয়। পাহাড়ের উপরে উঠার রাস্তা দিয়ে গাড়ি নিয়ে উপরের দিকে উঠতে লাগলাম। আমার আগে আগে বেশ কয়েকটি গাড়ি যাচ্ছে তাদেরকে অনুসরণ করতে লাগলাম। ৩ - ৪ মিনিট উঠার পর একটা গাড়ি পার্কিংয়ের জায়গা। আমার সামনের সব কয়টি গাড়ি এখানে পার্কিং করলেও একটা গাড়ি আরো উপরের দিকে উঠতে লাগলো। আমিও তাকে অনুসরণ করতে লাগলাম। একটু পরে দেখি এই রাস্তাটা বেশ সরু, পেঁচানো এবং খুবই খাড়া। সামান্য উল্টাপাল্টা হলে গাড়ি পিছন বা পাশের দিকে গড়িয়ে পড়ে যাবে। এ ধরনের পাহাড়ি রাস্তায় আমার গাড়ি চালানোর কোনো অভিজ্ঞতা নেই। খুবই ভয় পাচ্ছি কিন্তু কিছু করার নেই সামনের দিকে যেতেই হবে। গাড়ি ব্যাক করে পিছন দিকে যেতে চাইলে আরো বেশি বিপদ! যাক, কোনো রকমে রাস্তার শেষ প্রান্তে এসে পৌঁছে গেলাম। শেষের এক থেকে দেড় মিনিটের রাস্তাটা গাড়ি নিয়ে না উঠলেই পারতাম। না জেনে না বুঝে অন্ধভাবে ঐ চালু ও অভিজ্ঞ চালককে অনুসরণ করে আমার মতো আনভিজ্ঞ গাড়ি চালকের এই বিপদ। যা-ই হোক, আপাতত গাড়ি রেখে আমরা পাহাড়ের চূড়ায় একটা নিরিবিলি জায়গায় বসলাম। রাত এখন প্রায় ১১টা, সূর্য এখনো অনেক উপরে। সবার মতো আমরাও মধ্যরাত তথা রাত বারোটার পর দিগন্তরেখার কাছে সূর্যের অবস্থান দেখার অপেক্ষায় রইলাম। এরমধ্যে দেখলাম ছোট ছোট কিছু হালকা মেঘখণ্ড আকাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাই অনেক দর্শনার্থীর চোখেমুখে কিছুটা দুশ্চিন্তার আভাস, সূর্য দেখার দুর্লভ মুহুর্তে না আবার সূর্য মেঘে ঢেকে যায়!



প্রসঙ্গত উল্লেখ করা প্রয়োজন যে এখানে দিক নিয়ে কিছুটা বিভ্রান্ত হতে হয়। যেমন: উত্তর মেরুর কেন্দ্রবিন্দুতে আমি দাঁড়িয়ে পৃথিবীর যেদিকে তাকাই না কেন সব দিকই দক্ষিণ! যদিও উত্তর মেরুর কেন্দ্রবিন্দু থেকে আমরা অনেকটা দক্ষিণে তারপরেও সূর্যের অবস্থান দেখে পূর্ব বা পশ্চিম নির্ণয় করা সহজ নয়। যা-ই হোক, সূর্যাস্ত দেখার জন্য আমরা অনেকটা উত্তরমূখী হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। সূর্য উত্তর-পূর্ব দিক থেকে অর্থাৎ আমাদের বামদিক থেকে এসে উত্তর-পশ্চিমদিক অর্থাৎ আমাদের ডানদিকে যেতে যেতে অস্ত যাবে। ঘড়িতে সময় যতই এগিয়ে যাচ্ছে সুর্যও আস্তে আস্তে নিচে নেমে আসছে এবং আকাশের রং নীল থেকে হালকা লাল হচ্ছে। এভাবে এক সময় দেখা গেল সুর্য একেবারে দিগন্তরেখার কাছাকাছি চলে এসেছে এবং আকাশ চোখ ধাঁধানো স্বর্ণালী রং ধারণ করেছে। দেখে মনে হয় কয়েক মিনিটের মধ্যেই সূর্য দিগন্তরেখার নিচে চলে যাবে। কিন্তু না! সুর্য এখন নিচেও নামে না, উপরেও উঠে না। আস্তে আস্তে ডান দিকে যাচ্ছে এবং একটু পরেই ডান দিকে সরে সরে উপরের দিকে উঠে যাচ্ছে। এই সেই দূর্লভ দৃশ্য যা দেখার জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করেছিলাম। কিরুনা শহর রাত দুটো বাজতেই আবার দিনের পূর্ণাঙ্গ আলোয় ফিরে এসেছে। নিশিরাতের সূর্যতো দেখলাম। এখন গাড়ি নিয়ে নিচে নামার পালা। উপরের ঝুঁকিপূর্ণ রাস্তাটুকু ভালো করে পর্যবেক্ষণ করে আমার মেয়েকে হেঁটে নিচের পার্কিংয়ের জায়গায় গিয়ে অপেক্ষা করতে বললাম। অগত্যা দূর্ঘটনা যদি হয়েই যায় আমি মরে গেলেও আমার মেয়েটা বেঁচে থাকবে। যা-ই হোক, গাড়ি নিয়ে আস্তে আস্তে খুব সাবধানে সহি-সালামতে নেমে গেলাম।

কেন এমন হয়

দিগন্তরেখার উপরে মধ্যরাতের সূর্যের অবস্থান ধাপে ধাপে (স্লো মোশন) দেখানো হলো - সূর্য দিগন্তরেখার কাছাকাছি এসে আবার উপরের দিকে উঠে যায়।

উত্তর ও দক্ষিণ মেরুতে বৎসরের একটা সময় দিনের ২৪ ঘণ্টা সূর্য দেখা যায় আবার আরেকটা সময় ২৪ ঘণ্টায় একবারও সূর্য দেখা যায় না - এই ব্যাপারটা কেন হয় সে ব্যাপারে অনেকের স্পষ্ট ধারণা নেই। তাই এখানে সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা করলাম।

আমরা সবাই জানি, পৃথিবী তার নিজ অক্ষে একবার পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে আবর্তন করতে সময় নেয় প্রায় ২৪ ঘণ্টা অর্থাৎ একদিন। পৃথিবীর এই আবর্তন গতির (আহ্নিক গতি) জন্য পৃথিবীর যেদিক সূর্যের সামনে আসে সেদিক সূর্যের আলোতে আলোকিত হয়। তখন ওই আলোকিত স্থানসমূহে দিন থাকে। আর আলোকিত স্থানের উল্টো দিকে অর্থাৎ পৃথিবীর যে দিকটা সূর্যের বিপরীত দিকে থাকে, সে দিকটা অন্ধকার থাকে। সেখানে সূর্যের আলো পৌঁছে না।

[বিষুবরেখা বা নিরক্ষরেখা (equator) একটি কাল্পনিক রেখা যা পৃথিবীর মাঝ বরাবর এবং উত্তর মেরু ও দক্ষিণ মেরু থেকে সমান দুরত্বে কল্পনা করা হয়। এটি পৃথিবীকে দক্ষিণ গোলার্ধ এবং উত্তর গোলার্ধে ভাগ করে। উত্তর মেরু থেকে প্রায় 23.4° দক্ষিণ পর্যন্ত এলাকা নিয়ে একটি বৃত্ত আঁকলে যে এলাকা পাওয়া যায় তাকে বলে সুমেরু বৃত্ত (arctic circle)।]

জুনের শেষ সপ্তাহে পৃথিবী ও সূর্যের অবস্থান (বামে) --- ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে পৃথিবী ও সূর্যের অবস্থান (ডানে)

পৃথিবী তার নিজ যে অক্ষে পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ২৪ ঘণ্টায় একবার আবর্তন করে সেখানে আমরা যদি একটি রেখা টানি তবে দেখতে পাব যে সেই অক্ষরেখাটি (Rotation axis) সূর্যের সাথে লম্বভাবে সমান্তরাল নয়। এটি 23.4° হেলানো। উপরের বামপাশের ছবিতে জুনের শেষ সপ্তাহে পৃথিবী ও সূর্যের অবস্থান লক্ষ্য করুন। ছবিতে পৃথিবীর বিষুররেখার আশেপাশের এলাকাগুলো যখন সূর্যের দিকে থাকে তখন সেখানে দিন, এটি আহ্নিক গতির কারণে আবার যখন সুর্যের উল্টো দিকে চলে যায় তখন সেখানে রাত। ব্যাপারটা একদম পরিষ্কার! এবার একই ছবিতে পৃথিবীর উত্তর মেরুতে সুমেরু বৃত্তের এলাকাটি দেখুন। এর ডান পাশের এলাকাটি সুর্যের দিকে তাই সেখানে দিন, এলাকাটি আহ্নিক গতির কারণে আবার যখন সুর্যের উল্টো দিকে চলে যায় তখন সেখানে রাত হওয়ার কথা! কিন্তু না, ছবিতে দেখুন সেই এলাকাতেও সূর্যের আলো তির্যকভাবে গিয়ে পড়েছে (Sunrise/Sunset: Upp all day)। কারণ পৃথিবী ডান দিকে (সূর্যের দিকে) 23.4° হেলিয়ে থেকে নিজ অক্ষে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় একবার করে ঘুরছে।

ছয় মাস পর অর্থাৎ ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে পৃথিবী বার্ষিক গতির অর্ধবৃত্ত অতিক্রম করে সূর্যের ডান দিকে চলে এসেছে। উপরের ডান পাশের ছবি লক্ষ্য করুন। পৃথিবীর ডান দিকে 23.4° হেলিয়ে থাকার কারণে সুমেরু অঞ্চলে ২৪ ঘণ্টায় একবারও সূর্যের আলো পড়ে না। অর্থাৎ এখানে এখন সব সময় অন্ধকার (Sunrise/Sunset: Down all day)। যা-ই হোক, এখনও ব্যাপারটা বুঝতে কারো অসুবিধা হলে নিচের ভিডিওতে Summer solstice এবং Winter solstice দেখতে পারেন:



কিরুনার মুসলমানদের রোজা পালন

গ্রীষ্মকালের রমজান মাসে ইফতার ও সেহরির সময় নিয়ে বিভ্রান্ত কিরুনায় বসবাসকারী মুসলিম মহিলা
(সূত্র: আল জাজিরা Ramadan where the sun never sets)

কিরুনাতে হাতেগনা কিছু অভিবাসী মুসলমান বাস করে। তাদের অনেকেই প্রাত্যহিক জীবনে ইসলাম ধর্মের চর্চা করে। কোন বছরে রমজান যদি মে থেকে জুলাই মাসের মধ্যে পড়ে তখন এখানে ২৪ ঘণ্টা সূর্য দেখা যাওয়ার কারণে সেহরি ও ইফতার নিয়ে স্থানীয় মুসলিমদের সমস্যা হয়। আবার নভেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যেও যদি রমজান পড়ে তখন ২৪ ঘণ্টায় একবারও সূর্য দেখা না যাওয়ার কারণেও সেহরি ও ইফতার নিয়ে সমস্যা হয়। তাই সমাধান হিসাবে এদের কেউ কেউ স্টকহোমের সময় অনুসরণ করে আবার কেউ কেউ মক্কার সময় অনুসরণ করে। এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে আল-জাজিরার নিচের প্রতিবেদনটি পড়তে পারেন:
Ramadan in Sweden with no dusk, no dawn

অরোরা বা মেরুজ্যোতি

সুমেরু এলাকা গ্রীষ্মকালে নিশীরাতে সূর্য দেখার জন্য যেমন বিখ্যাত তেমনি শীতকালে অরোরা বা মেরুজ্যোতি (northern-light) দেখার জন্যও বিখ্যাত।

আমার এই ভ্রমণ কাহিনী গ্রীষ্মকালের। গ্রীষ্মকালে এখানে রাতেও যথেষ্ট আলো থাকার কারণে অরোরা দেখা যায় না। আগের পর্বগুলোতে মন্তব্যে অনেকে অরোরা সম্পর্কে উৎসাহ প্রকাশ করেছেন। তাই পাঠকদের আগ্রহে অরোরা বা মেরুজ্যোতির ব্যাপারে সামান্য আলোচনা করলাম। মেরুজ্যোতি বা মেরুপ্রভা বা আরোরা বা আরোরা অস্ট্রালিস বা Northern lights হলো আকাশে একধরনের প্রাকৃতিক আলোর প্রদর্শনী। আরোরা দেখতে অত্যন্ত সুন্দর। আমরা জানি যে প্রতি মুহূর্তেই সূর্য্য আয়নিত কণা বিকিরণ করছে। বিভিন্ন সময়ে মারাত্মক সৌর ঝড়ের কারণে এই বিকিরণের তীব্রতা অনেক গুণ বেড়ে যায়। ভীষণ শক্তিশালী এই বিকিরণ সারা সৌরজগৎে তড়িৎচৌম্বক তরঙ্গ হিসেবে ছড়িয়ে যাচ্ছে এবং স্বাভাবিকভাবেই প্রতিনিয়ত এটি পৃথিবীকেও আঘাত করে। সূর্য্য আয়নিত এসব কণার (প্রধা্নত ইলেক্ট্রন, কিছু ক্ষেত্রে প্রোটন) সাথে বায়ুমন্ডলের থার্মোস্ফিয়ারে থাকা অক্সিজেন ও নাইট্রোজেন পরমাণুর সাথে সংঘর্ষের কারণে অক্সিজেন ও নাইট্রোজেনের পরমাণু বা অণুসমূহ চার্জিত কণিকাসমূহের কাছ থেকে কিছু শক্তি লাভ করে উত্তেজিত হয়। এই উত্তেজিত কণাগুলো যখন আলোর নিঃসরণ ঘটিয়ে সাধারণ অবস্থানে ফিরে আসে, তখনই মেরুজ্যোতি দেখা যায়। এসব ইলেক্ট্রন সাধারণত পৃথিবীর চৌম্বকক্ষেত্র বরাবর পরিভ্রমন করায় শুধুমাত্র মেরু অঞ্চলেই অরোরা দৃশ্যমান হয়।

আরোরাতে যা ঘটে তেমনটি ঘটে নিয়নের বাতিতেও। নিয়ন টিউবের মধ্যে নিয়ন গ্যাসের পরমাণুগুলোকে আন্দোলিত করবার জন্য ব্যবহৃত হয় বিদ্যুৎ। তাই নিয়নের বাতিগুলো এরকম উচ্চ মানের রঙ্গিন আলো দেয়। আরোরাও ঠিক এভাবে কাজ করে-তবে এটি আরো বড় মাত্রায় হয়। আরোরাগুলো মাঝে মাঝে আলোর পর্দার মতো দেখায়। তবে এরা গোলাকার অথবা সর্পিল বা বাঁকানোও হতে পারে। বেশিরভাগ আরোরাতে সবুজ রঙ এবং গোলাপী রঙ দেখা যায়। তবে অনেকসময় লাল রঙ বা বেগুনী রঙের হতে পারে। মেরুজ্যোতির রঙ নির্ভর করে কোন গ্যাসীয় পরমাণু ইলেক্ট্রন দ্বারা উদ্দীপ্ত হচ্ছে, এবং এই প্রক্রিয়ায় কত শক্তি বিনিময় হচ্ছে তার উপর। উত্তর অক্ষাংশে অরোরা সুমেরুজ্যোতি বা সুমেরুপ্রভা (Aurora Burealis/The Northern Light) নামে পরিচিত, এবং দক্ষিণ অক্ষাংশে একে বলা হয় Aurora Australis (or The Southern Light). অরোরা দর্শনের সবচেয়ে ভালো স্থান হলো সুমেরু অঞ্চল অর্থাৎ আলাস্কা, কানাডা, সুইডেন, ফিনল্যান্ড, নরওয়ে এবং আইসল্যান্ডের কিছু এলাকা । এসব স্থানে শীতকালে অন্ধকার রাতে প্রায় নিয়মিতই মেরুজ্যোতি চোখে পড়ে। মেরূপ্রভা সূর্যালোক থেকে অনেক ম্লান হওয়ায়, তা পৃথিবী থেকে দিনের বেলায় দেখা যায় না।

অরোরা বা মেরুজ্যোতি সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে চাইলে আমাদের সুপরিচিত ব্লগার ডঃ এম এ আলী ভাইয়ের এই পোস্টটি দেখতে পারেন:
উত্তরের যাত্রা - ১ম পর্ব : মেরুজ্যোতি দর্শন : ডঃ এম এ আলী

কিরুনাতে এসে অরোরা দেখতে চাইলে অরোরা স্কাই স্টেশনের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন:
Aurora Sky Station – the best place on earth to experience northern lights

ফটো গ্যালারি:

১। কেবনেকাইসে পর্বত ও নিকটবর্তী হ্রদ

২। কেবনেকাইসে পর্বতের পাথরী রূপ

৩। কেবনেকাইসে পর্বতের শীতকালীন রূপ

৪। কেবনেকাইসে পর্বতের বসন্তকালীন রূপ

৫। কিরুনার অদূরে পর্যটকদের প্রিয় এলাকা অবিস্কো (Abisko) এলাকার মধ্যরাতের দৃশ্য

৬। মেঘলা আকাশ নিশীরাতের স্বর্নালী আভাকে যখন ঢেকে দেয় প্রকৃতি তখন আরেক রূপ গ্রহণ করে

৭। নিশীরাতে সুর্য দর্শন ও ওয়াটার স্কী - এসময় অনেকে আবার শারিরীক খসরত ও খেলাধুলায় মেতে উঠে

৮। হালকা মেঘ বা অন্য কোনো প্রতিবন্ধকতার কারণে নিশীরাতে সূর্য সরাসরি দেখা না গেলেও সুর্যের স্বর্নালী আভায় উদ্ভাসিত আকাশ সব জায়গা থেকেই চোখে পড়ে

৯। নিশীরাতে সুর্যের মোলায়েম আলোয় প্রাকৃতিক হ্রদের নীরব-নিস্তব্ধ পরিবেশে স্নান করার এই বিরল সুযোগ অনেকেই মিস্ করতে চাই না

_________________________________________
তথ্য ও ছবিসুত্র: কিছু নিজের, কিছু ইন্টারনেট থেকে নেওয়া

     ◄ পর্ব ৫ - উত্তর মেরুতে নিশি রাতে সূর্য দর্শন - পর্ব ৭

মন্তব্য ২৭ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (২৭) মন্তব্য লিখুন

১| ৩০ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১১:৩৪

রাজীব নুর বলেছেন: ছবি গুলো দেখে মাথা নষ্ট।

৩১ শে জুলাই, ২০২০ বিকাল ৩:৪৬

জোবাইর বলেছেন: আনন্দ-বেদনা, সুখ-দুঃখ সব পরিস্থিতিতে মাথা ঠিক রাখতে হবে।

২| ৩১ শে জুলাই, ২০২০ সকাল ৭:৩২

ইসিয়াক বলেছেন: অসাধারণ! কি যে সুন্দর।লেখা পড়ে আর ছবি দেখে মনটা ভরে গেলো।
শুভসকাল।
ঈদের শুভেচ্ছা রইলো।

৩১ শে জুলাই, ২০২০ বিকাল ৪:৩৩

জোবাইর বলেছেন: ঈদ মোবারক!
ছবি দেখে মন ভরেছে জেনে খুশি হলাম। এবার কোরবানির মাংস খেয়ে পেট ভরার পালা। আপনার ঈদের দিনগুলো ভালো কাটুক।

৩| ৩১ শে জুলাই, ২০২০ সকাল ৯:৩৯

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: পাঠ, ছবি আর বর্ণনায় মুগ্ধতা আর বিস্ময় ঠিকরে পড়েছে
মধ্যরাতের সূর্যের মেঘের নীচে চাপা পড়া সোনালী আভার মতোই!
আহ!
কি বিস্ময়!
আর মনে গুনগুনিয়ে উঠে -

খেলিছ এ বিশ্ব লয়ে
বিরাট শিশু আনমনে
ভাঙ্গিছ গড়িছ নিতি
নিরজনে প্রভু, অনমনে . . .

স্কী, মধ্যরাতে সূর্য দর্শনে স্নান
আহা মনে মনেই ডাইভ দিয়েছি শীতল জলে :)

+++++++

৩১ শে জুলাই, ২০২০ বিকাল ৫:৪৪

জোবাইর বলেছেন: আপনার কাব্যিক মন্তব্য পোস্টের ছবির মুগ্ধতাকেও ছাড়িয়ে গেছে। পাঠ ও চমৎকার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
ঈদ মোবারক! আপনার ঈদের দিনগুলো মধ্যরাতের সূর্যের সোনালী আভার মতো সুন্দর হোক।

৪| ৩১ শে জুলাই, ২০২০ সকাল ১১:০৮

দারাশিকো বলেছেন: অসাধারণ। এবারের পোস্ট খুব মনযোগ দিয়ে পড়তে হলো। অনেক নতুন কিছু জানার ছিল। এর আগে অরোরার অনেক ছবি দেখেছি, তখন একবার এর কারণ পড়ে নিলেও বুঝতে কষ্ট হয়েছিল। এবার ধারনা মোটামুটি পরিষ্কার হলো। আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।

ছবিগুলোর জন্যও ধন্যবাদ জানাই।

৩১ শে জুলাই, ২০২০ সন্ধ্যা ৭:১৭

জোবাইর বলেছেন: খুব মনোযোগ দিয়ে পড়েছেন জেনে খুশি হলাম। এরকম পাঠক থাকলে খুব কষ্ট করে পোস্ট লেখার পরিশ্রম সার্থক হয়। অনেক ধন্যবাদ ভালো থাকুন।

৫| ৩১ শে জুলাই, ২০২০ দুপুর ১:৪৯

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: চমৎকার বর্ণনা।

যখন ২৪ ঘণ্টা দিন বা ২৪ ঘণ্টা রাত থাকে তখন মানুষের ঘুমে ও অন্যান্য অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সমস্যা হয় না?

৩১ শে জুলাই, ২০২০ রাত ৮:৪৬

জোবাইর বলেছেন: এখানে মানুষের দৈনন্দিন জীবন ও অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চলে ঘড়ির সময় দেখে। এরা ২৪ ঘণ্টা দিন বা ২৪ ঘণ্টা রাত দুটোতেই অভ্যস্থ। তবে ২৪ ঘণ্টা দিন অর্থাৎ গ্রীষ্মকাল অবশ্যই সবচেয়ে বেশি প্রিয়। পাঠ ও মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

৬| ৩১ শে জুলাই, ২০২০ রাত ৯:৫৯

শায়মা বলেছেন: ছবিগুলো যেন অপার্থীব সুন্দর!!
মুগ্ধ হয়ে যাই ভাইয়া!!! :)

০১ লা আগস্ট, ২০২০ রাত ১২:৫৭

জোবাইর বলেছেন: এখানে মানুষ এইসব অপার্থীব সুন্দর জায়গায় গ্রীষ্মের ছুটিতে তাঁবু টাঙ্গিয়ে রাত যাপন করে। এরা প্রকৃতিকে যেমন উপভোগ করে তেমনি প্রকৃতির প্রতি প্রতি যত্নও নেয়। আগে যেসব প্রাকৃতিক দৃশ্য ভঊ কার্ডে দেখেছি তা এবার বাস্তবে দেখলাম। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। ঈদ মোবারক।

৭| ৩১ শে জুলাই, ২০২০ রাত ১০:৫৮

রাজীব নুর বলেছেন: ঈদ মোবারক !
ভালো থাকুক পৃথিবীর সকল মানুষ ।

০১ লা আগস্ট, ২০২০ দুপুর ১:৩৭

জোবাইর বলেছেন: আপনাকেও ঈদ মোবারক। কোরবানির গরু ও মাংসের ছবি দিয়ে পোস্ট দেবেন। পৃথিবীর সকল মানুষ একসাথে কখনো ভালো ছিল না এবং থাকবেও না। কারো দিন ভালো যাবে আবার কারো দিন খারাপ যাবে - এটাই পৃথিবী।

৮| ২৩ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ৯:৪৪

জুন বলেছেন: অসাধারণ ছবি, প্রকৃতির রূপ যে কত অপরূপ হতে পারে তারই জ্বলন্ত প্রমান ছবিগুলো।
আমার একটি প্রশ্ন ছিল জোবাইর, আপনি ছবিগুলো বড় করলেন কিভাবে বলবেন কি? আমি পারছি না। ইমগুরে করলে আবার অস্বাভাবিক বড় হয়ে যায় :(

২৪ শে আগস্ট, ২০২০ সকাল ৭:৫৬

জোবাইর বলেছেন: আপা, এতো দূরে এসে আমার পোস্টে মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ। আমি আগে খুবই ভ্রমণ করতাম। ইদানীং পারিবারিক ঝামেলার কারণে ভ্রমণ আগের মতো হয় না। ব্লগে আপনাদের চমৎকার ভ্রমণ কাহিনীগুলো পড়ে সাহস করে নিজেরও একটা ভ্রমণ অভিজ্ঞতা সবার সাথে শেয়ার করার দুঃসাহস করে ফেললাম! আন্তরিকতার সাথে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি।

সামু ব্লগে অটোমেটিকভাবে ছবি কমপ্রেস হয়ে ছোট হয়ে যায়! ব্লক কতৃপক্ষের এই ফাংশনটা এখন বদলানো উচিত। যা-ই হোক, বিকল্পভাবে পোস্টে ছবি বড় করে দেওয়ার কয়েকটি পদ্ধতি আছে। আমি সহজ করে দুটি পদ্ধতি এখানে লেখলাম। আপনার যেটা সহজ লাগে সেটা ব্যবহার করবেন।

সাধারণত ডিজিটাল ক্যামেরায় ডিফল্ট হিসাবে ছবির সাইজ বড় হয়। ছবি এডিটের জন্য বড় সাইজের ছবি ভালো। পোস্টে ছবি বড় ও সুন্দরভাবে সেটিং হওয়ার জন্য ছবির width হতে হবে (কমপক্ষে) ৮০০ পিক্সেল, height যাই হোক কোনো ব্যাপার না। প্রথমে ক্যামেরার ছবিকে এডিট করে width ৮০০ পিক্সেল করতে হবে। আপনার কমপিউটারে ফটো এডিট প্রোগ্রাম থাকলে ছবির সাইজ পরিবর্তনের জন্য তা ব্যবহার করতে পারেন। অর্থাৎ ছবিটি সেই প্রোগ্রামে ওপেন করে রিসাইজে গিয়ে width ৮০০ করে ছবিটি সেভ করুন। height অটোমেটকভাবে পরিবর্তন হবে। এডিট প্রোগ্রাম না থাকলে অনলাইনে বা imgur-এ কাজ সাড়তে পারবেন।

বিকল্প ১:
imgur.com গিয়ে সাইন ইন করে আপনার ইউজার নেম-এ ক্লিক করে Add Images → Browse নির্বাচন করে আপনার কমপিউটার থেকে ছবিটি আপলোড করুন। ছবিটি আপলোড হওয়ার পর লিস্টে প্রদর্শিত হবে, ছবিটিতে ক্লিক করুন। ছবিটি এখন বড় করে প্রদর্শিত হবে। ছবির উপর মাউস রাখলে নিচে ডান পাশে 'edit image' দেখা যাবে, সেখানে ক্লিক করুন। ছবির উপরের ডান কর্নারে ছবির সাইজ দেখাবে (width ও height )। width-র সংখ্যাটি ৮০০ করে ছবির বাম পাশের উপরের কর্নারে 'Apply' ক্লিক করে উপরে 'Save' ক্লিক করুন। (উল্লেখ্য, ছবির সাইজ আগে থেকেই ৮০০ থাকলে ইমগুরে ছবি এডিটের প্রয়োজন নেই।)

এবার লিস্ট থেকে ছবিটি সিলেক্ট করুন, ছবিটি বড় হবে। এখন ডান পাশে Direct Link টি কপি করে পোস্টের পুরানো ছবির লিঙ্কটি সরিয়ে সেখানে বসিয়ে দিন। ছবির লিঙ্কটির শেষে '?' চিহ্ন ও সংখ্যাটি বাদ দিতে পারেন। (আউটপুট দেখার জন্য আপনার পোস্টের ২২ নম্বর মন্তব্য দ্রষ্টব্য)

বিকল্প ২:
ছবি যদি square সাইজ হয় তাহলে সামু ছবি ছোট করতে পারে না :-*। সামু ব্লগের এই দুর্বলতা যারা আবিষ্কার করেছে তাদের মধ্যে ব্লগার ওমেরাও একজন :)। ওমেরার এই পোস্টটি দেখুন: সামার ফটো ব্লগ

সুতরাং এডিট (Crop) করে ছবির দুইপাশের কিছু অংশ বাদ দিয়ে ছবির সাইজ width ও height একই সমান করে নিলে সমস্যা খতম। তখন যথানিয়মে পোস্টে ছবি আপলোড করলেই হবে। তবে প্রাকৃতিক দৃশ্যের ছবি স্কয়্যার সাইজ সুন্দর দেখায় না। (আমি একই ছবি square সাইজ করে একটি উদাহরণ আপনার পোস্টের ২৩ নম্বর মন্তব্যে দিয়েছি।)

এটা খুব একটা কঠিন নয়। প্রথমবার একটু ঝামেলা লাগলেও কয়েকবার করলে সহজ হয়ে যাবে। চেষ্টা করে দেখেন, সমস্যা হলে জানাবেন। নিরাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। যত মুশকিল, তত আহসান। শুভকামনা রইলো, ভালো থাকুন।

৯| ২৪ শে আগস্ট, ২০২০ সকাল ১০:২৮

জুন বলেছেন: আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ জোবাইর ছবির ব্যাপারে নিজের পোস্ট ছাড়াও আমার পোস্টে সহযোগীতা করার জন্য :)
অসাধারন সব ছবি আপনার । আবারো ধন্যবাদ ।

২৯ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ২:৪৫

জোবাইর বলেছেন: আপা, ওটা খুবই সামান্য ব্যাপার। আপনাকেও ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।

১০| ৩১ শে আগস্ট, ২০২০ রাত ২:২২

কবিতা পড়ার প্রহর বলেছেন: ছবিগুলো যেন জীবন্ত।

০২ রা সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:১২

জোবাইর বলেছেন: ধন্যবাদ

১১| ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ সকাল ১০:২৩

জুন বলেছেন:
জোবাইর ,
আপনি আমার পোষ্টে কিং ভুমিবল সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন তাই এখানেই তাকে নিয়ে আমার ৩ টি লেখার লিংক দিলুম । যদি সময় হয়তো চোখ বুলাতে পারেন । খারাপ লাগবে না আশাকরি ।
থাইল্যান্ডের রাজা ভুমিবল, একজন পিতা, একজন শাসকের মৃত্যু উপলক্ষে
গোল্ডেন ট্রায়াঙ্গাল ইতিহাসের এক কুখ্যাত মাদক সাম্রাজ্যে একদিন
সমগ্র থাইল্যান্ডবাসীকে আরেকবার কাঁদিয়ে বিদায় নিলেন কিম্বদন্তীতুল্য মহান রাজা ভুমিবল

০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ২:৪৫

জোবাইর বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপা। মাঝখানে কয়েক বছর ব্লগে আসা ছেড়ে দিয়েছিলাম তখনই আপনার এই লেখাগুলো দিয়েছিলেন। তাই মিস হয়েছে। পরে সময় করে পড়ে মন্তব্য করবো।

১২| ২১ শে জুন, ২০২১ সকাল ৯:৩১

খায়রুল আহসান বলেছেন: আপনি খুবই একজন অর্গানাইজড মানুষ, আপনার এ গুণটার প্রশংসা না করলেই নয়। আমি খুব কম লোককেই দেখেছি, এতটা নিখুঁত করে সফর পরিকল্পনা করে, এবং পাঠকদের কথা খেয়াল করে সে সফরের এতটা নিখুঁত লিখিত বর্ণনা অসম্ভব সুন্দর চিত্রসহ তৈরী করে। এ গুণ অর্জনের জন্য প্রথমেই আপনাকে অভিনন্দন এবং সাধুবাদ জানাচ্ছি।

দুই ভিন্ন ঋতুতে কেবনেকাইস পর্বতে যাওয়ার রাস্তাটার দুই ভিন্ন রূপ দেখে তো প্রথমেই স্তম্ভিত হয়ে গেলাম। এরকম নির্জনতা আমার পরম কাঙ্খিত। পর্বত অভিমুখে দুর্গম পথে বিপুল উৎসাহে আপনার মেয়ের হেঁটে যাওয়ার ছবিটা খুব ভাল লেগেছে। পরে তাকে কাঁধে নিয়ে আপনাদের বাপ-বেটি দুজনার পর্বতারোহণের দৃশ্যটি কল্পনা করে আমি নিজেই এত দূরে বসে ভীষণ উৎসাহিত বোধ করলাম। যারা এ দৃশ্যটি স্বচক্ষে দেখেছে, তারা তো করবেই এবং হাততালি দিবেই! পর্বতের পাদদেশের রাস্তাটা এবং মিনি পার্কটা দেখেও ভাল লাগলো। হরিণের মাংসের ফিলিংস দিয়ে বানানো গরম বার্গারের বর্ণনাটা পড়ে ক্ষুধার উদ্রেক হলো।

মধ্যরাতের সূর্যের দৃশ্যগুলো অপার্থিব সুন্দর! তবে আমার মনে হয় পাহাড়ের চূড়া থেকে সূর্যের বিদায় দৃশ্য দেখতেই বেশি ভাল লাগবে।

আপাততঃ এটুকু বলেই একটা সাময়িক বিরতি নিচ্ছি। পরে এসে বাকিটুকু পড়ে আরও কিছু মন্তব্য করবো।

পোস্টে ভাল লাগা রেখে গেলাম এবং পোস্টটিকে "প্রিয়" তে তুলে রাখলাম। + +

১৩| ২৮ শে জুন, ২০২১ সকাল ১০:৫০

খায়রুল আহসান বলেছেন: "সরু, পেঁচানো এবং খুবই খাড়া" রাস্তাটি দিয়ে দুঃসাহসিক গাড়ী চালানোর বর্ণনাটা অত্যন্ত রোয়াঞ্চকর এবং লোমহর্ষক মনে হয়েছে! তবে নামার সময় অপত্য স্নেহ বশতঃ মেয়েকে পায়ে হেঁটে নিরাপদ পার্কিং এর জায়গাটিতে গিয়ে দাঁড়িয়ে থাকার কথাটা বলার সময়ের আপনার অনুভূতির কথাটা কল্পনা করে মন টা আমার অনেকই আর্দ্র হয়ে উঠলো!

"উত্তর মেরুর কেন্দ্রবিন্দুতে আমি দাঁড়িয়ে পৃথিবীর যেদিকেই তাকাই না কেন, সবই দক্ষিণ" - বাহ, চমৎকার একটি ভাবনার বিষয় পাওয়া গেল। এরকম তো ভাবিনি কখনো! তাছাড়া দিগন্তরেখায় গিয়ে সূর্যটি না ডুবে, ডানে সরতে সরতে আস্তে আস্তে পুনরায় উপরে উঠে যাওয়ার দৃশ্যটি কল্পনা করতেও অপার্থিব সুন্দর মনে হচ্ছিল, আর ভিডিও ক্লিপটি দেখে চোখের সাধ কিছুটা মিটলো। 'কেন এমন হয়' উপশিরোনামে চিত্রের সাহায্যে বিষয়টি যেভাবে ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দিলেন, তার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনি বাল্যকালে খুব মন দিয়ে ভূগোল পাঠ করেছিলেন, তা আপনার এই ব্যাখ্যা থেকে নিশ্চিত হওয়া যায়। আপনার ভূগোল শিক্ষক আপনার এ পারদর্শিতায় গর্বিত হতে পারেন নিঃসন্দেহে। এই চিত্রটি এবং সামার সলস্টিস/উইন্টার সলস্টিস ব্যাখ্যা করার জন্য যে ভিডিও ক্লিপটি যোগ করেছেন, শুধুমাত্র এজন্যই আপনার জন্য করতালিসহ অভিনন্দন রেখে গেলাম। + + ক্ল্যাপস ক্ল্যাপস!




১৪| ২৮ শে জুন, ২০২১ দুপুর ১২:৩০

খায়রুল আহসান বলেছেন: আল্লাহ'র সৃষ্টি কত অপরূপ! তার সাথে বিজ্ঞানের ব্যাখ্যা মেলাতে পারলে আরও চমকপ্রদ, আরও বিস্ময়কর মনে হয়। সহজ করে মেরুজ্যোতি বা মেরুপ্রভার (অরোরা) কার্যকরণটা বুঝিয়ে বলার জন্য অনেক ধন্যবাদ। অরোরা কেন শুধুমাত্র মেরু অঞ্চলেই দৃশ্যমান হয়, সেটাও সঠিক বুঝতে পারলাম।

ফটো গ্যালারী'র ছবিগুলো খুব সুন্দর! বিশেষ করে ৫-৯ নম্বরের ছবিগুলো খুবই দৃষ্টিনন্দন!

ড. এম এ আলী'র চমৎকার পোস্টটির লিঙ্ক জুড়ে দেয়ার জন্য ধন্যবাদ। সে পোস্টটি আমি অনেক আগেই পড়েছি এবং সেখানে মন্তব্যও করেছি। আপনার এত চমৎকার পোস্টটি আমিসহ মাত্র ৬ জন পাঠক 'লাইক' করেছেন, এ দেখে বড় আফসোস হলো।

আপনি যেমন অত্যন্ত পরিশ্রম করে, নিষ্ঠার সাথে এ পোস্টটি পরিবেশন করেছেন, আমিও তেমনি পূর্ণ মনযোগের সাথে এটি পাঠ করে, উপভোগ করে আপনার প্রচেষ্টার প্রতি সুবিচার করার প্রয়াস পেলাম। আপনাকে আবারো অনেক ধন্যবাদ, চমৎকারভাবে এই সিরিজটি ব্লগে পরিবেশন করার জন্য। শেষের এই পর্বটি বিশেষ উল্লেখের দাবীদার।

১৫ ই আগস্ট, ২০২১ রাত ১:১১

জোবাইর বলেছেন: আপনি দীর্ঘ সময় নিয়ে পূর্ণ মনযোগের সাথে লেখাটি পাঠ করেছেন জেনে অভিভূত হলাম। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। পাঠের পাশাপাশি সমান্তরালভাবে পরপর তিনটি মূল্যবান মন্তব্যের জন্য কৃতজ্ঞচিত্তে ভবিষ্যতে আরো ভ্রমণ কাহিনী লেখার জন্য উৎসাহিত হয়েছি।

আমি সাধারণত কোনো জায়গায় ভ্রমণের আগে জায়গাটির বেসিক কিছু ঐতিহাসিক ও ভৌগোলিক তথ্য, মানচিত্র এবং সাম্প্রতিক পরিস্থিতি জেনে আগে থেকেই পরিকল্পনা করি। ভ্রমণকাহিনী লেখার সময় আমার নিজের অভিজ্ঞতার পাশাপাশি অন্যান্য প্রাসঙ্গিক তথ্য ও চিত্র সংগ্রহ করে যোগ করে দিই, কারণ উৎসাহী কোনো পাঠক যদি সেখানে ভ্রমণ করতে চায় তাদের কাজে লাগবে।

আমার মেয়ে এখন বড় হয়েছে এবং আমার মতো ভ্রমণ পছন্দ করে। সে তাঁর বন্ধু-বান্ধবী নিয়ে এখন দেশ-বিদেশে ভ্রমণ করে। এখনও সময়-সুযোগ হলে আমরা একসাথে ভ্রমণ করি এবং তার বাল্যকালের ভ্রমণকাহিনীর স্মৃতিগুলো রোমন্থন করি।

স্কুল জীবনে আমার প্রিয় বিষয়গুলোর একটি ছিল ভূগোল। এখনকার ডিজিটাল মিডিয়ায় অনেক জটিল বিষয়কে ত্রিমাত্রিক ছবি, এনিমেশন, ভিডিও ইত্যাদির মাধ্যমে সহজে বুঝানো যায়। আমাদের ছাত্রকালীন সময়ে শুধু চক আর ব্ল্যাকবোর্ড ছাড়া আর কিছু ছিল না। তখন অনেক কিছু বুঝতাম না বা শিক্ষকেরা ভালোভাবে বুঝাতে পারতেন না। আমি বিজ্ঞান বিষয়ক কোনো লেখা এমনভাবে লিখতে চেষ্টা করি যাতে "৯ বছরের নাতি থেকে শুরু করে ৯৯ বছরের নানী" পর্যন্ত সবাই বুঝতে পারে :)

বিশেষ করে নিশীত সূর্যের দেশ ও মেরুজ্যোতি নিয়ে অনেকের ভুল ধারণা রয়েছে। তাই প্রসঙ্গক্রমে এ দুটি বিষয় নিয়ে কিছুটা বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আমার লেখা কয়জনে পড়লো বা লাইক করলো সেটাকে আমি খুব একটা গুরুত্বে দেই না। দৌড়ের ওপর থাকা অনেক পাঠকের চেয়ে সমজদার পাঠক কম থাকলেও ভালো। তবে এটা ঠিক লেখার পাঠক-প্রিয়-মন্তব্যের সংখ্যা বেশি হলে লেখার উৎসাহ বাড়ে।

ব্যক্তিগত ঝামেলার কারণে দীর্ঘদিন ব্লগে আসতে পারিনি বিধায় আপনার মন্তব্যের উত্তর দিতে দেরি হওয়ায় আন্তরিকভাবে দুঃখিত। অনেক অনেক প্রীতি ও শুভেচ্ছা রইলো। যেখানেই থাকুন ভালো থাকুন।

১৫| ২৯ শে আগস্ট, ২০২২ সকাল ১১:১৯

মিরোরডডল বলেছেন:




অবিশ্বাস্য সৌন্দর্য !!!!
আমিও একজন নেচার লাভার এবং ভ্রমণ পিপাসু ।
তাই এ পোস্টগুলো যত দেখছি মুগ্ধ হচ্ছি ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.