নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যের সন্ধানে ও শান্তির অন্বেষায় ...

জোবাইর

বিনয়ী মূর্খ অহংকারী বিদ্বান অপেক্ষা মহত্তর।

জোবাইর › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাঙালির ঐতিহাসিক সর্বজনীন স্লোগান - ১ : বন্দে মাতরম

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:০৯


কোনো একটি ধারণা, প্রেরণা, বিশ্বাস, আদর্শ বা উদ্দেশ্য পুনরাবৃত্তিমূলক অভিব্যক্তি হিসাবে প্রকাশের সুবিধার জন্য ব্যবহৃত একটি সংক্ষিপ্ত নীতিবাক্য বা শব্দগুচ্ছকে স্লোগান বলে। এটি দলীয়, সংগঠনিক, রাজনৈতিক, বাণিজ্যিক, ধর্মীয়, এবং অন্যান্য বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে ব্যবহৃত হয়। ব্যবসা-বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত স্লোগানকে বিপণন স্লোগান বা ট্যাগলাইন বলে। যুদ্ধ, বিপ্লব, আন্দোলন, মতবাদ, ধর্ম, উৎসব ইত্যাদি বিভিন্ন উদ্দেশ্যে আকর্ষণীয় শব্দ, বাক্য বা বাক্যাংশ দিয়ে সৃষ্ট এসব স্লোগানের বেশিরভাগ প্রবাহমান কালের গর্ভে হারিয়ে গেলেও কিছু স্লোগান ঐতিহাসিক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ইতিহাসে স্থায়ীভাবে টিকে থাকে। বাঙালির রাজনৈতিক ও আর্থ-সামাজিক ইতিহাসে উল্লেখযোগ্য পটপরিবর্তনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল এমন অনেক ঘটানার সাথে জড়িয়ে আছে অনেক স্লোগান। বাংলা ও বাঙালির ইতিহাসে যেসব স্লোগান দল-মত নির্বিশেষে সর্বজনীন গ্রহনযোগ্যতা পেয়েছিল সেইসব স্লোগান নিয়ে এই সিরিজ।

পাক-ভারত উপমহাদেশে কখন থেকে স্লোগান ব্যবহারের সূত্রপাত তা নিশ্চিতভাবে জানা যায় না। স্লোগান ব্যবহারের সূত্রপাত যে মোটামুটি ব্রিটিশ আমলেই হয়েছে তাতে কোনো দ্বিমত নেই। তবে শুরুতে খুবই সীমিত পরিসরে কিছু জমিদারি প্রথার বিরুদ্ধে কিংবা খাজনা আদায়ের বিরুদ্ধে কোনো কোনো এলাকায় স্লোগান ব্যবহার হয়েছে। বাঙালি জাতির ইতিহাসে আন্দোলন, দাবী, বিপ্লব, প্রতিবাদ, উৎসব, উদযাপন, নির্বাচন ইত্যাদি কারণে যেসব স্লোগান দল-মত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের মধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছিল সেগুলোর মধ্যে কালক্রমে প্রথমটি হল 'বন্দে মাতরম'।



১। বন্দে মাতরম

বন্দে মাতরম মূলত একটি গান হলেও গানটির প্রথম শব্দ দুটি 'বন্দে মাতরম' ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে বিশেষ করে সশস্ত্র বিপ্লবীদের স্লোগানে পরিণত হয়েছিল। ১৮৮২ সালে বঙ্কিমচন্দ্রের আনন্দমঠ উপন্যাসে প্রথম এই গানটি প্রকাশিত হয়। সংস্কৃততে- ‘বন্দে মাতরম’ কথার অর্থ ‘বন্দনা করি মায়ের’। সংস্কৃত-বাংলা মিশ্রভাষায় লিখিত এই গানটিতে দেবী দুর্গার বন্দনাগীতি এবং সেইসাথে মাতৃভুমির সৌন্দর্য্য ও দেশপ্রেমের কথা বলা হয়েছিল।

১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ ও স্বদেশী আন্দোলনের সময়েই বাঙ্গালি সর্বপ্রথম এই গানটি নিয়ে মেতে উঠেছিল। ভারতবর্ষের ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের সশস্ত্র বিপ্লবীদের বিশেভাবে আকৃষ্ট করেছিল এই স্লোগানটি। তারা প্রতিটি অভিযানে এই স্লোগান দিয়ে বিজয় দযাপন করতো। একদিকে বন্দে মাতরম সঙ্গীত, অন্যদিকে মানুষের মুখে মুখে গগনবিদারি বন্দে মাতরম স্লোগানে ব্রিটিশ সরকার এতই বিচলিত হয়ে পড়েছিল যে সভা-সমাবেশে 'বন্দে মাতরম' স্লোগানটিকে নিষিদ্ধ করেছিল। বঙ্গভঙ্গ রদ আন্দোলন চলেছিল ১৯১১ সাল পর্যন্ত। এই আন্দোলনের সময়েই বাঙালি 'বন্দে মাতরম' স্লোগানকে দেশাত্ম মূল্যবোধের মন্ত্র এবং 'বন্দে মাতরম' সঙ্গীতকে জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে গ্রহণ করেছিল। মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে শুরু হওয়া অসহযোগ আন্দোলনে কংগ্রেসও সমগ্র ভারতে জনপ্রিয় 'বন্দে মাতরম' ধ্বনি ও সঙ্গীত নিয়ে মেতে উঠে। ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে মুসলীম লীগপন্থী কয়েকজন মুসলমান প্রথম ধুয়া তুলল যে, 'বন্দে মাতরম' সঙ্গীতটি পৌত্তলিকতা বিশ্বাসের ওপর রচিত। যেহেতু কংগ্রেসেও অনেক মুসলমান নেতা-কর্মী ছিলেন, তাই অনেক তর্ক-বিতর্কের পর অবশেষে ১৯৩৮ খ্রিস্টাব্দে হরিপুর কংগ্রেসে 'বন্দে মাতরম' সঙ্গীতের সমস্ত শেষাংশ বাদ দিয়ে শুধু প্রথমাংশটাকে জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। বিভিন্ন কাটছাট ও অদলবদল করে জাতীয় সঙ্গীত হিসাবে 'বন্দে মাতরম' সঙ্গীতটির যে রূপ হল তা হচ্ছে:

সুজলাং সুফলাং মলয়জ শীতলাম
শস্য শ্যামলাং মাতরম!

শুভ্র জ্যোৎস্না পুলকিত যামিনীম
ফুল্ল কুসুমিত দ্রুমদল শোভিনীম
সুহাসিনী সুমধুর ভাষিনীম
সুখদাং বরদাং মাতরম।

ত্রিংশ কোটি কন্ঠ কল-কল-নিনাদ করালে
দ্বিত্রিংশকোটী ভুজৈধৃত খরকর বালে,
অবলা কেন মা এত বলে।
বহুবল ধারিণীং নমামি তারিণীং
রিপুদল বারিণীং মাতরম।

স্বাধীনতার পর ভারতের জাতীয় সঙ্গীত (National Anthem) 'বন্দে মাতরম'-এর স্থলে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'জন-গণ-মন অধিনাহক জয় হে, ভারত ভাগ্য বিধাতা' গৃহীত হলেও 'বন্দে মাতরম' সঙ্গীতটি জাতীয় গানের (National Song) স্বীকৃতি লাভ করে।

সমগ্র বিংশ শতাব্দীতে গানটি প্রায় একশোটি ভিন্ন সুরে রেকর্ড করা হয়েছিল। ২০০২ সালে বিবিসি ওয়ার্ল্ড সার্ভিস সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ দশটি জনপ্রিয় গান নির্বাচনের একটি আন্তর্জাতিক সমীক্ষা চালায়। এই সমীক্ষায় ৭০০০ গানের মধ্যে থেকে এ আর রহমান সুরারোপিত বন্দে মাতরম গানটি বিশ্বের দ্বিতীয় জনপ্রিয়তম গান নির্বাচিত হয়।

আরো দেখতে পারেন:
ভিডিও - বন্দে মাতরম
ভিডিও - জন গণ মন

তথ্যসূত্র: বন্দে মাতরম প্রেরণা ও বিতর্ক - সম্পাদনা অশোককুমার রায়

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ৯:৩৬

সোবুজ বলেছেন: আমাদের স্লোগান জয় বাংলা সমদ্র জাতিকে উক্যবদ্ধ করে এবং মুক্তি যুদ্ধে জাতিকে প্রেরনা দেয়।বহু বছর পর আবার ফিরে এসেছে জয় বাংলা।

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ ভোর ৫:৩২

জোবাইর বলেছেন: আপনার সাথে সহমত। বাঙালি জাতির সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ স্লোগান জয় বাংলা।

২| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ১:৫৭

রাজীব নুর বলেছেন: জয় বাংলা এই স্লোগানটা আমাদের শক্তি দেয়। সাহস দেয়।

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৪:১০

জোবাইর বলেছেন: মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। 'জয় বাংলা' নিয়ে ৭ম পর্বে বিস্তারিত আলাপ করবো।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.