নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সত্যের সন্ধানে ও শান্তির অন্বেষায় ...

জোবাইর

বিনয়ী মূর্খ অহংকারী বিদ্বান অপেক্ষা মহত্তর।

জোবাইর › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাঙালির ঐতিহাসিক সর্বজনীন স্লোগান - ২ : লাঙল যার জমি তার, ঘাম যার দাম তার

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ২:০০


পাক-ভারত উপমহাদেশে কখন থেকে স্লোগান ব্যবহারের সূত্রপাত তা নিশ্চিতভাবে জানা যায় না। স্লোগান ব্যবহারের সূত্রপাত যে মোটামুটি ব্রিটিশ আমলেই হয়েছে তাতে কোনো দ্বিমত নেই। তবে শুরুতে খুবই সীমিত পরিসরে কিছু জমিদারি প্রথার বিরুদ্ধে কিংবা খাজনা আদায়ের বিরুদ্ধে কোনো কোনো এলাকায় স্লোগান ব্যবহার হয়েছে। বাঙালি জাতির ইতিহাসে আন্দোলন, দাবী, বিপ্লব, প্রতিবাদ, উৎসব, উদযাপন, নির্বাচন ইত্যাদি কারণে যেসব স্লোগান দল-মত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষের মধ্যে জনপ্রিয়তা পেয়েছিল সেগুলোর মধ্যে কালক্রমে দ্বিতীয়টি হল 'লাঙল যার জমি তার, ঘাম যার দাম তার'।

২। লাঙল যার জমি তার, ঘাম যার দাম তার

১৭৯৩ সালে লর্ড কর্নওয়ালিস চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত চালু করেন। ফলে কৃষকরা জমিস্বত্ব হারায়, জমিদাররা জমির মালিক বনে যায়। জমির মালিক হওয়ায় জমিদাররা কৃষক প্রজাদের কাছ থেকে অতিরিক্ত খাজনা আদায় আদায়ের নিমিত্তে নানা ধরনের নির্যাতনমূলক ও অমানবিক ব্যবস্থাও গ্রহণ করে। এ সময় কৃষকদের আন্দোলনের মুখে বৃটিশ সরকার ১৮৮৫ সালে বঙ্গীয় প্রজাস্বত্ব আইন পাস করে। এতে কৃষক জমির স্থায়ী দখলিস্বত্ব পেলেও অনেক কৃষক এ আইনের আওতায় আসতে ব্যর্থ হয়। এ কে ফজলুল হক মুসলিম লীগের মাধ্যমে রাজনীতি শুরু করলেও কৃষকদের দুর্দশা দেখে তাদের জমিদার শ্রেণীর নির্যাতনের হাত থেকে মুক্তি ও জমির ওপর তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কৃষকদের পাশে দাঁড়ানো মনস্থ করেন। উল্লেখ্য, বিবিসি বাংলার জরিপে শ্রোতাদের মনোনীত শীর্ষ কুড়িজন বাঙালির তালিকায় চতুর্থ স্থানে আসেন এ কে ফজলুল হক। অবিভক্ত বাংলার জাতীয় নেতা আবুল কাশেম ফজলুল হক তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা এবং দূরদর্শিতার জন্য সুপরিচিতি ছিলেন। তিনি ছিলেন অবিভক্ত বাংলার প্রথম প্রধানমন্ত্রী।

কলকাতা হাইকোর্ট যেখানে ফজলুল হক প্রায় ৪০ বছর আইন প্র্যাকটিস করেছেন

১৯৩০-১৯৩৫ সালের মধ্যে বাংলার বেশ কয়েকটি জেলায় কিছুসংখ্যক কৃষক ও প্রজা সমিতি গড়ে ওঠে। ১৯৩২ সালে কৃষক সমিতি প্রজা সমিতির সঙ্গে একাত্ম ঘোষণা করে। ১৯৩৫ সালে এ কে ফজলুল হক কৃষক প্রজা সমিতির সভাপতি হওয়ার পর সবগুলো সমিতিকে একটি সংগঠনের আওতায় এনে এর নতুন নামকরণ করেন কৃষক প্রজা পার্টি বা কেপিপি। ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন অনুযায়ী অবিভক্ত বাংলা প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন পাবার পর ১৯৩৭ সালে সেখানে প্রথম সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। এই নির্বাচনে মুসলিম লীগ ও কংগ্রেসের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় অবতীর্ণ হয় নতুন রাজনৈতিক দল কেপিপি। এই নির্বাচনে প্রতিটি রাজনৈতিক দলই ভিন্ন কর্মসূচী দিয়ে জনগণকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করেছে। পল্লীগ্রামের কৃষকদের ভোট পাওয়ার জন্য সকল রাজনৈতিক দলই কৃষক প্রজাদের নানা প্রতিশ্রুতি দিলেও শুধু কৃষক প্রজা পার্টিই বিনা ক্ষতিপূরণে জমিদারি প্রথা উচ্ছেদর অঙ্গীকার করে। মুসলিম লীগ ধর্মের দোহাই দিয়ে বিনা ক্ষতিপূরণে জমিদারি প্রথা উচ্ছেদের বিরোধিতা করে। কৃষক প্রজা পার্টি তাদের নির্বাচনী অঙ্গীকারে ভুমির খাজনা হ্রাস ও নিয়ন্ত্রণ, চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত বাতিল, আবওয়াব-নজর-সেলামি বিলোপসহ নানা যুক্তিযুক্ত দাবি জনসাধারণের মধ্যে তুলে ধরে। সারা দেশেই কৃষক প্রজা পার্টির সমর্থনে জেগে উঠে মানুষ। দলের সাথে যুক্ত হয় কৃষক পরিবার থেকে উঠে আসা অসংখ্য নেতাকর্মী। কৃষক প্রজা পার্টি ‘লাঙ্গল যার জমি তার’, ‘ঘাম যার দাম তার’ শ্লোগানের মাধ্যমে জনসাধারণের মাঝে ব্যাপক প্রচারণা চালায়। এই স্লোগানটি তখন দল-মত নির্বিশেষে বাংলার সাধারণ মানুষ তথা কৃষক-শ্রমিকের কাছে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠে।


উল্লেখ্য, এই নির্বাচনে ১১৭ টি সংরক্ষিত মুসলিম আসনের মধ্যে কৃষক প্রজা পার্টি পায় ৩৬ টি আসন, যা প্রদত্ত ভোটের শতকরা ৩০.৭৬ ভাগ। অন্যদিকে মুসলিম লীগ পায় ৩৫ টি আসন, যা মোট ভোটের ২৯.৯১ শতাংশ। মন্ত্রিসভা গঠনের আমন্ত্রন পেয়ে ফজলুল হক কৃষক প্রজা পার্টির ২ জন, মুসলিম লীগের ৪ জন, সংখ্যালগু হিন্দু ও তফসিলি সম্প্রদায়ের ৫ জনকে নিয়ে ১১ সদস্য বিশিষ্ট মন্ত্রিসভা গঠন করেন। সেই মন্ত্রিসভায় ফজলুল হক মুখ্যমন্ত্রী নিযুক্ত হন এবং ৬ জন মুসলমান ও ৫ জন হিন্দু নেতাকে মন্ত্রিত্ব দেওয়া হয়। গোষ্ঠী ও ব্যক্তি হিসেবে চিন্তা করলে মন্ত্রীদের ৬ জন জমিদার, ১ জন পুঁজিপতি, ৪ জন আইনজীবী ও রাজনীতিবিদ ছিলেন।

বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগ এবং নির্দলীয় সদস্যদের সঙ্গে জোট গঠন করেই এ. কে ফজলুল হক অবিভক্ত বাংলার প্রথম নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। তাই 'বিনা ক্ষতিপূরণে জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ'-এর পদক্ষেপ গ্রহন করলেও মুসলিম লীগের বিরোধীতার কারণে কৃষক প্রজা পার্টির নির্বাচনী অঙ্গীকারের সব কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি।

আরো পড়তে পারেন:
বাঙালির ঐতিহাসিক সর্বজনীন স্লোগান - ১ : বন্দে মাতরম, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
বিবিসি বাংলার জরিপে শ্রেষ্ঠ বাঙালি: ৪ - এ কে ফজলুল হক - বিবিসি বাংলা, ১৪ মার্চ ২০২০

তথ্যসূত্র:
এ কে ফজলুল হক ও কৃষক প্রজা পার্টি - ড. মো. এমরান জাহান, বণিক বার্তা, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১
কৃষক প্রজা পার্টি: বাংলায় গণমানুষের প্রতিনিধিত্বকারী প্রথম রাজনৈতিক দল - নিউজভিউজ: রাফিজ খান, ২৮ জুন ২০২০

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ২:৪৩

প্রতিদিন বাংলা বলেছেন: ভালো লেখা
তবে বন্দে মাতরম কি বাঙালিদের নাকি হিন্দু বাঙালিদের ?

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৩:১৫

জোবাইর বলেছেন: 'বন্দে মাতরম' স্লোগানটি শুরুতে সব বাঙালির ছিল। পরে কংগ্রেসের আগ্রহে তা সর্বভারতীয় হয়েও উঠেছিল। বন্দে মাতরম গান নিয়ে কিছু মুসলমানের 'পৌত্তলিক' অভিযোগ থাকলেও স্লোগানটি নিয়ে সমস্যা ছিল না। 'বন্দে মাতরম'-এর শাব্দিক অর্থ হচ্ছে মায়ের বন্দনা করি। এই 'মা' বলতে জন্মদাত্রী মা, মাতৃভূমি মা, নাকি প্রতিমা মা দুর্গা - কে কাকে মনে করবে সেটা যার যার ব্যক্তিগত ব্যাপার।

বৃটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনের সশস্ত্র বিপ্লবীদের (সূর্যসেন, ক্ষুদিরাম, প্রীতিলতা) বেশীরভাগই হিন্দু ছিলেন। তাই অনেক অশিক্ষিত মুসলমান এই বিপ্লবীদের স্লোগানটিকে হিন্দুদের স্লোগান মনে করতেন। যার কারণে এখনও অনেক মুসলমান 'বন্দে মাতরম কি বাঙালিদের নাকি হিন্দু বাঙালিদের?' প্রশ্নে দি্বধাগ্রস্থ।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

২| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:০১

আল আমিন হাসান সাদেক বলেছেন: পৃথিবীর বুকে জেনো এক টুকরো স্বর্গ । স্বপ্নের দেশ সুইজারল্যান্ড । Switzerland । DURBEEN BANGLA ।

৩| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ রাত ১:১৭

অধীতি বলেছেন: ইতিহাস সম্পর্কে আমার জ্ঞান ও পড়াশোনা দুটোই শুন্যে।

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ২:৩৭

জোবাইর বলেছেন: অসুবিধা নেই, জানা বা শেখার ইচ্ছা থাকলে যে কোনো সময়ে, যে কোনো বয়সে শেখা যায়। দেশ-বিদেশের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক ঘটনাকে সঠিকভাবে বুঝতে হলে ইতিহাসের বেসিক কিছু ধারণা থাকতে হবে। মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।

৪| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২২ দুপুর ২:০২

রাজীব নুর বলেছেন: জানলাম অনেক কিছু।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.