নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পড়াশোনা

ছোটন

ছোটন › বিস্তারিত পোস্টঃ

“মা-র ছেলেকে বড়ো করে দেখা ও মেয়েকে ছোট করে দেখার মনোভাবের পরিবর্তন”

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ দুপুর ২:২৩

ফিনিক্স সাহিত্য



দাদার প্রতি আমার মার বরাবরই ছিল একচোখোমি, সবতাতে দাদার কথাই তিনি ভাবতেন। আমার জন্য কখনো মাথা ঘামাতেন না।

খেতে বসলে, মা বরাবর দাদার বাটিতেই খাবার তুলে দিতেন। কখনো আমার বাটিতে দিতেন না, যেন আমি তার নিজের সন্তান না। এরকম দেখলে আমার খুব রাগ হতো। আমি ভাবতাম: দাদা এমন কি অসাধারন ব্যক্তি। ব্যাটাছেলে বইতো আর কিছু নয়! সবাই বলে: “আকাশটা ধরে আছে অর্ধেক পুরুষ, আর অর্ধেক নারী”। আমি সর্বদাই বিশ্বাস করতাম, বড় হলে আমার ক্ষমতা দাদার থেকে কোন অংশে কম হবে না। মাও একদিন না একদিন এ কথা বুঝতে পারবেন।

একদিন, স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে এসে খবরের কাগজ খুলতেই একটা কার্টুন আমার চোখে পড়ল। তাতে দেখানো হয়েছে, একটা দাড়িপাল্লার বা দিকে একটি ছেলে হাতে অনেক রকম ফল ও পুষ্টিকর খাবার নিয়ে গ্যাট হয়ে বসে আছে। আর দাড়িপাল্লার ডান দিকে একটি মেয়ে খুব মনমরা হয়ে বসে আছে, তার মা-বাব তার প্রতি গালিবর্ষন ও মারধরের অঙ্গভঙ্গি করছে। কার্টুনটির নিচে লেখা রয়েছে: “ কদাপি পুত্রকে অমূল্য মনে করে কন্যাকে অবজ্ঞা করবেন না”। কার্টুনটি দেখে আমার নিজের অবস্থার কথা মনে পড়ে। মনে হলো, আমি যেন দাড়িপাল্লার ওই ডান দিকের মেয়ে। একথা ভেবে আমি খবরের কাগজ থেকে কার্টুনটি কেটে দেয়ালে লাগিয়ে দিলাম যাতে সেটা সহজে মা-র চোখে পড়ে।

সেদিন লেপ মুড়ি দিয়ে শুয়ে আমি অনেকক্ষণ কার্টুনটির দিকে তাকিয়ে রইলাম। রাত গভীর হয়ে তবুও আমার চোখে ঘুম নেই। হঠাৎ দরজা খুলে গেল , মা সন্ধ্যার শিফটের কাজ সেরে কারখানা থেকে বাড়ি ফিরলেন। তিনি খেতে বসবেন এমন সময় দেয়ালে লাগানো কার্টুনটি তার নজরে পড়লো। অমনি তিনি রেগে গিয়ে একটানে কার্টুনটি খুলে নিয়ে মাটিতে ছুড়ে ফেললেন। আমি ভয়ে আমার মাথাটা লেপের তলায় টেনে নিলাম। ঘরে আর টু শব্দটি নেই, চারদিকে নিস্তব্ধ। কিছুক্ষন পর আমি লেপটা একটু ফাক করে তাকালাম মা যে কখন মাটি থেকে কার্টুনটি কুড়িয়ে নিয়েছেন তা টের পাইনি, দেখলাম তিনি তা খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছেন। আমার ভয় হলো এবার মা নিশ্চয় আমাকে দারুন পিটুনি দিবেন। কার্টুনটি দেয়ালে না লাগালেই বোধ হয় খুব ভাল হতো। আমার আফসোস হতে লাগল। আমি একদৃষ্টে মা-র দিকে তাকিয়ে রইলাম। দেখলাম মা-র মুখে হাসি ফুটেছে আর তার কুচকে থাকা ব্রুটিও আবার টানটান হয়েছে। একটু পর তিনি কার্টুনটি টেবিলের উপরে রেখে হাতে চাপ দিয়ে তার ভাজগুলো সমান করে দিলেন এবং তাতে আঠা লাগিয়ে আবার দেয়ালে লাগিয়ে দিলেন। তখন আমি একটু দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম, যেন আমার বুক থেকে বিরাট পাথর নেমে গেল।

আমি যা ভেবেছিলাম ঠিক তাই হলো। সত্যিই মা-র মনে ভাবের পরিবর্তন দেখা দিল। পরের দিন, আমি স্কুল থেকে বাড়ি ফিরে এসে ঘরে ঢুকতেই দেখলাম, টেবিলের উপর বড় এক বাটি গরম ভাত আর তার উপর ছড়ানো হয়েছে অনেক তরকারী। মা হাসি মুখে আমাকে বললেন: “ উ শুয়াং, এখনি খেতে বোসো, নইলে খাবার ঠান্ডা হয়ে যাবে”। খাবার শেষ হয়ে গেল আমি বাটি ধুতে গেলে মা আমাকে স্নেহের সংগে বললেন: “ তোমার ধুতে হবে না। তাড়াতাড়ি হোম-ওর্য়াক শেষ করো। পরে ঘরের সব কাজ তুমি আর দাদা শেষ করে নিও ভাগাভাগি করে”। মা-র কথা শুনে আমার প্রান জুড়িয়ে গেলো।

আমি হাতে কলমটা নিয়ে লিখতে বসতেই দাদাও হোমওর্য়াক করতে এলো আর একলাই টেবিলের অর্ধেকটার বেশি জায়গা দখল করে নিলো। ঠেলা-ঠেলিতে আমার আর বই খাতা রাখার জায়গা রইলো না। রেগে অধৈর্য হয়ে দাদার সাথে ঝগড়া শুরু করে দিলাম। ঝগড়া যখন বেশ তুংগে, তখন মা রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন। ঝগড়ার কারনটা শুনে তিনি বেশ কড়া ভাবে দাদাকে বললেন: “ তুমি হলে ওর দাদা, বোনের কথা তোমার শুনা উচিত”। তিনি আরও বললেন আমার হোমওর্য়াক শেষ করার জন্য দাদা যেন আমাকে জায়গা ছেড়ে দেন।

এই প্রথমবার মা ন্যায্য কথা বললেন। খুশিতে আমার মুখ থেকে কোন কথা বের হলো না। আমি ভালোভাবেই বুঝলাম মা-র মধ্যে পরিবর্তন এসেছে। এর পর অনেক ব্যাপারে আমি দেখেছি মা-র আগের মতন নেই একচোখোমি মনোভাব নেই।



লিখেছেন: উ শুয়াং(ষষ্ঠ শ্রেনী)

অনুবাদ: কাও ছেংছুয়ান


মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.