নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

চল চল চল

আহমদ নূর

গনমাধ্যমকর্মী

আহমদ নূর › বিস্তারিত পোস্টঃ

জলপ্রপাত মানেই মাধবকুন্ড

০৩ রা মে, ২০১৫ বিকাল ৩:৫৩

একসময় বাংলাদেশের পর্যটকদের কাছে প্রাকৃতিক জলপ্রপাত মানেই ছিলো মাধবকুন্ড। এখন দেশের ভেতরে আরো অনেক জলপ্রপাতের সন্ধান মিলেছে। তবে এখনো জলপ্রপাত অনুরাগী পর্যটকদের প্রধান আকর্ষন মাধবকুন্ডই। প্রতিদিন অসংখ্য পর্যটন ভিড় জমান এই ঝরনাধারার সৌন্দর্য উপভোগে। মাধবকুন্ড থেকে ২০ মিনিটের দুরত্বে রয়েছে আরো একটি ঝর্ণা। এর নাম পরীকুন্ড। মাধবকুন্ড যাওয়ার উত্তম সময় হচ্ছে বর্ষাকাল, এই সময় ঝর্ণা পানিতে পুর্ণ থাকে। শীতকালেও এর সৌন্দর্য্যের কমতি হয় না। প্রায় ২০০ ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট মাধবকুন্ড জলপ্রপাতের অবস্থান মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা উপজেলায়। পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে দেশে-বিদেশে পরিচিত এই স্থানটিতে বর্তমানে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের রেস্টহাউজ ও রেস্টুরেন্ট নির্মাণ করা হয়েছে। ফলে বেড়েছে পর্যটন সম্ভাবনা। এছাড়া সরকারি উদ্যোগে পুরো এলাকাটিকে ঘিরে তৈরি করা হচ্ছে ‘মাধবকুন্ড ইকোপার্ক’। শ্যামল সবুজ বনরাজি বেষ্টিত মাধবকুন্ড ইকোপার্ক, নয়নাভিরাম দৃশ্য, নান্দনিক পিকনিক স্পট, সুবিশাল পর্বতগীরি, পাহাড়ী ঝরনার প্রবাহিত জলরাশির কল কল শব্দ সবমিলিয়ে মাধবকুন্ড বেড়াতে গেলে পাওয়া যাবে এক স্বর্গীয় আমেজ। মাধবকুন্ড- জলপ্রপাতের পাশেই রয়েছে কমলা বাগান। রয়েছে লেবু, সুপারি ও পানের বাগান। ফলে মাধবকুন্ড বেড়াতে গেলে সহজেই ঘুরে আসা যায় এসব বাগানে। এছাড়া মাধবকুন্ড এলাকায় বাস করে আদিবাসী খাসিয়ারা। খাসিয়ারা গাছে গাছে পান চাষ করে। মাধবছড়াকে ঘিরেই খাসিয়াদের জীবনযাত্রা আবর্তিত হয়। ফলে আদিবাসী জীবনযাত্রা আর সংস্কৃতিও উপভোগ করা যাবে এখানে। মাধবকুন্ড জলপ্রপাতে এলে চোখে পড়বে উচু নিচু পাহাড়ি টিলায় দিগন্তজোড়া চা বাগান। টিলার ভাঁজে ভাঁজে খাসিয়াদের পানপুঞ্জি ও জুম চাষ। পাহাড়ীদের সনাতনী বাড়ি ঘর জীবনযাত্রা দৃশ্য সত্যিই অপুর্ব। যা পর্যটকদের কেবল আনন্দই দেয়না, গবেষক ও কবি-সাহিত্যিকরা খোঁজে পান লেখার রসদ। মাধবকুন্ড অতীত থেকেই হিন্দু সম্প্রদায়ের তীর্থস্থান হিসাবে পরিচিত। প্রতি বছরের চৈত্র মাসে ভগবান মাধবেশ্বরের আশির্বাদ নিতে হাজার হাজার মানুষ এখানে আসে। এ সময় মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশীতে পুণ্যার্জন ও বারুনী স্নান করে পাপ মুক্তির কামনা করেন তারা। মাধবকুন্ডে মাধবের মন্দির ছাড়াও রয়েছে শিব মন্দির। বিশালাকার শিবলিঙ্গ পুজা করাও হয়ে থাকে। চৈত্রমাসের ওই সময়ে বিশাল মেলা বসে। মাধবকুন্ডের নামকরণ সম্পর্কে কথিত আছে যে শ্রীহট্টের রাজা গঙ্গাধ্বজ ওরফে গোবর্ধন পাথারিয়া পাহাড়ে একটি বিশ্রামাগার নির্মাণ শুরু করলে সেখানে ধ্যানমগ্ন অবস্থায় মাটির নীচে একজন সন্ন্যাসীকে দেখতে পান। তখন তিনি এ সন্ন্যাসীর পদ বন্দনা ও স্তুতি শুরু করলে সন্ন্যাসী তাকে নানা উপদেশসহ তাকে (সন্ন্যাসীকে) এ কুন্ডে মাধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথীতে বিসর্জন দিতে নির্দেশ দেন। রাজা তা পালন করেন। সন্ন্যাসী বিসর্জিত হওয়া মাত্র তিনবার মাধব, মাধব, মাধব নামে দৈববাণী হয়। সম্ভবতঃ এ থেকে ’মাধবকুন্ড’ নামের উৎপত্তি। আবার কারো কারো মতে মহাদেব বা শিব এর পূর্ব নাম মাধব এবং এর নামানুসারেই তার আবির্ভাব স্থানের নাম ‘মাধবকুন্ড’ । মৌলভীবাজার জেলার সীমান্তবর্তী থানা বড়লেখার ৮ নম্বর দক্ষিণভাগ ইউনিয়নের অধীন গৌরনগর মৌজার অন্তর্গত পাথারিয়া পাহাড়ের গায়ে এই জলপ্রপাতের স্রোতধারা বহমান। মাধবকুন্ড সিলেট সদর থেকে ৭২ কিলোমিটার, মৌলভীবাজার জেলা থেকে ৭০ কিলোমিটার, কুলাউড়া রেলওয়েজংশন থেকে ৩২ কিলোমিটার এবং কাঁঠালতলী থেকে ৮ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত। যাতায়াত, থাকা-খাওয়া : দেশের যে কোন জায়গা থেকে সড়ক পথে সরাসরি বাস নিয়ে আসা যায় মাধবকুন্ডে। তাছাড়া রেলপথেও সুবিধা আছে। ট্রেনে গেলে নামতে হবে কুলাউড়া স্টেশনে আর সেখান থেকে মাইক্রোবাস, অটোরিকশাযোগে যেতে হবে কাঠালতলীতে। সেখান থেকে রিক্সা, অটো রিক্সায় বা স্কুটারে মাধবকুন্ড যেতে হবে। বড়লেখা থেকে রিক্সা ভাড়া ৭০-৮০ টাকা, স্কুটার ভাড়া জনপ্রতি ৬০-৭০ টাকা। অথবা আপনি মাইক্রোবাস বা সিএনজিতে সরাসরি যেতে পারেন। সেখানে পর্যটন কর্পোরেশনের ডাক বাংলোতে পূর্বানুমতি নিয়ে রাত যাপনের ব্যবস্থা রয়েছে। এছাড়া বড়লেখায়ও রয়েছে ভালো মানের হোটেল।
সর্তকতা : মাধবকুন্ড জলপ্রপাতে সৌন্দর্য অবলোকনের সাথে রয়েছে দুর্ঘটনার আশঙ্কা। জলপ্রপাতের মূল চূড়ায় উঠলে বা কুপের মধ্যিখানে নেমে পড়লে দুর্ঘটনার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে মাধবকুন্ডে বেড়াতে গেলে জলপ্রপাতের চূড়ায় উঠা বা লেকে সাঁতার কাটার সময় সর্তক থাকা উচিত। সাতার না জানলে কখনোই নামা যাবে না পানিতে।
আপনাদের জন্য মাধবকুন্ড জলপ্রপতাতের একটি ভিডিও


আহমদ নূর

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.