নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আর্ফ জামান সুজন

আর্ফ জামান সুজন

আর্ফ জামান সুজন › বিস্তারিত পোস্টঃ

শান্তি কি গাছে ধরে!

২০ শে জুন, ২০১৭ বিকাল ৫:০৬

শান্তির খোজঁ করে না যে জন, কে বলে মানুষ তারে সন্ত্রাসবাদী সে জন। একজন সন্ত্রাসবাদীও মৃত্যুর পর শান্তিতে থাকবে তাই নিসংঙ্কচে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। বয়স যখন ১৮ ছুই ছুই তখন আমি শান্তির খোজেঁ ইন্টারনেটে খোড়াখুড়ি শুরু করলাম। আমার এই খোড়াখুড়ির কারণ ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শান্তি ও সংঘর্ষ নামের একটি বিভাগ। যে বিভাগের নামই শান্তি তাতে পড়ালেখা করা না জানি কতো শান্তি! কিন্তু আশেপাশের কোন বন্ধুর মুখেই এই বিভাগের বন্দনা শুনলাম না। কেউতো জানতইনা এ বিভাগের নাম। একজনতো হেসে বলেই ফেলল ফাইযলামি করস এই নামে ডিপার্টমেন্ট হয় নাকি। অবশেষে ফেসবুকে থেকে এক বড় ভাই এর সাথে যোগাযোগ করে আমার শান্তি বিভাগ সম্পর্কিত ধারণা যে বাস্তবতার সাথে কতোটা সাংঘর্ষিক তা প্রমাণ হল। এখান থেকে পড়ালেখা করে শিক্ষার্থীরা যদি শান্তি ছড়াতে পারে তবে সরকার প্রধানের উচিত প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে এই বিভাগ খোলা। আফসোস শান্তি বিভাগ খুলেও ওখানকার অসংখ্য শিক্ষার্থীকে সাংঘর্ষিক মনোভাব থেকে শান্ত করা যাইনি।
শান্তিকে পাওয়া সহজ না কঠিন তা বিতর্কিত বিষয় হলেও এর সংজ্ঞাখানা বড়ই সহজ। অশান্তিতে না থাকাই শান্তি। এই সংজ্ঞার গোফ-দাঁড়ি আর একটু টানলে যেটা পাওয়া যাবে, যখন সংঘর্ষ বা যুদ্ধ থেকে বিরত থাকা হয় তাকেই শান্তি বলে। সংজ্ঞাতেই যখন যুদ্ধ যুদ্ধ ভাব তখন একটি মজার ঘটনা মনে পড়ে গেল। তখন ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ি। গণিত পরীক্ষার আগে সবসময় বেশি বন্ধ দেয়া হতো। এজন্যে একবার রুটিনে বাংলা ২য়পত্র পরীক্ষা গণিতের পরেরদিন পড়ল। এতা অংক করেছি যে দু-তিন দিন শুধু চোখে অংকই দেখতাম। মাথা ভর্তি গণিত নিয়ে বাংলা ২য় পত্র পরীক্ষা দিতে গেলাম। রচনা কমন পড়ল না। যুদ্ধ নয়, শান্তি চাই। এই প্রথম এ রচনার নাম শুনলাম। চিন্তা করছিলাম যে সমাজ বইয়ে প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের নাম শুনেছি। কিন্তু সাত সাতটি যুদ্ধ ডিঙ্গিয়ে যুদ্ধ নয় নাম্বারে পৌছল কখন তাতো টের পেলাম নাহ। যাই হোক ইনিয়ে বিনিয়ে বানিয়ে লেখার কথিত বদভ্যাস আমার তখন ছিল। সুতরাং খালি রাখা যাবে না একটি পৃষ্ঠাও, পরীক্ষা ফি তোর একটাকাও কম দিইনি। আমি ইতোমধ্যে ইতিহাসের নয়টি যুদ্ধের বর্ণনা একে্ এক শেষ করে জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠা করে শান্তিতে পৃথিবী ভরিয়ে দিয়েছি খাতার মধ্যে। পরীক্ষার খাতায় নম্বর মোটামুটি ভালই পেয়েছিলাম। পরীক্ষা শেষে আমি কখনও ওই প্রশ্ন নিয়ে ঘাটা ঘাটি করি নাহ। এর ফলে নাকি মন খারাপ হবার একটা সম্ভাবনা উদয় হয়। নতুন ক্লাস উঠে সিলেবাসে সেই রচনাটি ছিল এবং আমি বই খুলে যখন পড়া শুরু করলাম তখন আমার মাথায় হাত। আমি এক বছর আগের পরীক্ষায় কি লিখেছিলাম মনে পড়ে আবার নিজেই হাসছিলাম।
আমাদের বাসার পাশে একটি বস্তি ছিল। ঈদের সময় সেখান থেকে এক মহিলাকে ম্যানেজ করা হয়েছিল গরুর ভুড়ি পরিষ্কার করার জন্যে। সে হঠাৎ এক মেয়েকে দেখে চিল্লিয়ে উঠল ওইই শান্তি কই? আমিতো পুরা্ই অবাক। ভাবছিলাম এই মহিলার শান্তি মনে হয় ওই মেয়েটার কাছে। একটু পর দেখলাম মেয়েটা এসে মহিলাটাকে বলে শান্তির বাপ শান্তিরে ঘুম পাড়াইছে। বুঝতে পারলাম অশান্তিতে ভরা বস্তিত বসতকারী মাতা তার কন্যার নাম শান্তি রাখে শখের বসে। সে সময় ৭-৮ বছর বয়সে বুঝতে পারিনি যে শান্তি কারো নাম হতে পারে। তবে শান্তি এ কলুষিত পৃথিবীতে কতোটুকু শান্তিতে আছে তার বস্তির প্রতিবেশীগণই ভাল বলতে পারবে।
দাতঁ থাকিতে দাতেঁর মর্যাদা মানুষ বুঝে নাহ। তাইতো যুদ্ধের পরই মানুষ শান্তির মর্ম বুঝতে পেরেছিল। শান্তির উদ্দেশ্যে আবিষ্কৃত ডিনামাইট পৃথিবীতে যখন অশান্তি সৃষ্টি করছে তখন এক হাস্যকর নোবেল পুরুষ্কারের প্রচলন হয়েছিল। সবচেয়ে মজার বিষয় শান্তিতেও সেই নোবেল (ইগনোবেল) দেয়া হয়। আইন করে জনসম্মুখে হাতে তালি দেয়া বন্ধ করার জন্য বেলারুশের প্রেসিডেন্ট ২০১০ সালে শান্তিতে ইগনোবেল পান। অবশ্যই এই অসম্মানজনক পুরুষ্কার তিনি গ্রহণ করেননি।
পৃথিবীতে সবচেয়ে শান্তিময় স্থান উপসনালয়। তারপরও মসজিদে বেশ কয়েকটি জঙ্গীহামলা বরই লজ্জাজনক। এখনতো শান্তির অপর নাম হয়ে গেছে নিরাপত্তা। আপাত দৃষ্টিতে মনে হচ্ছে নিরাপত্তা ও সুরক্ষারময় রাষ্ট্র হচ্ছে ইসরাইল। একদিক দিয়ে এরা পরমাণু শক্তিধর। অপরদিকে আই এস এর বেড়াজাল থেকে মুক্ত। সুতরাং হানিমুনে গিয়ে জঙ্গী হামলায় অপমৃত্যুর সম্ভাবনা খুব কম। এখন পর্যন্ত ইসরাইলে কোন জঙ্গী হামলা খবর চোখে পড়েনি। উল্টো ইসরায়েলের সাবেক যুদ্ধমন্ত্রীর ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে দেয়া ভাষ্যমতে একবার ইসরায়েলী সেনাদের প্রতি গোলাবর্ষণের পর আইএস তাদের কাছে নি:শর্ত ক্ষমা চেয়েছে। কিভাবে তারা ক্ষমা চাইল সে সম্পর্কে আর কিছু জানাননি তিনি। তবে সিদ্ধন্ত নিয়ে ফেলেছি ইন্ডিয়া গিয়ে তারপর ভিসার ব্যবস্থা করে ইসরাইল যাব হানিমুনে। যাইহোক হানিমুনে গিয়ে জঙ্গীহামলায় মরতে চাই নাহ। বাংলাদেশে কিন্তু ইসরাইলের দূতাবাস নেই।
ভাবছি দেশে বসেই কোন একটা বিষয় নিয়ে অভ্যন্তরীন সূচকের ব্যবসা খুলে বসব। উইপিডিয়ায় দেখা যায় শুধু বাংলাদেশকে পরিমাপের জন্য ২৯ রকম সূচকে (শান্তি, মানবতা, সুখ) এদেশের অবস্থান বলা হয়েছে। কোথাকার কোন গ্লোবাল ইন্ডেক্স বাংলাদেশকে ৮৪ অবস্থানে রেখেছে। ওরা হয়ত জানে না ডটর অব পিস আমাদের দেশে। ওরা জানে না দেশ স্বাধীন হলে শান্তি আসবে। তাই লাখ লাখ মানুষ রক্ত দিয়ে স্বাধীনতা এনেছে। তারপর আরকি রাজা আর রাণীর গল্পের মতো আবার রাজ্যে শান্তি ফিরল। কিন্তু নাহ কাদের যেন মনে হল দেশের প্রধানরা মানুষগুলোকে শান্তিতে থাকতেও দিচ্ছে নাহ আবার গদিও ছাড়ছে নাহ। তাই দুইবার দেশের সরকার প্রধানকে হত্যা করা হল। যাক এবার তাহলে গল্পের শেষটা হবে আর শান্তিতে সবাই বাস করবে। কিন্তু নাহ গণতন্ত্র না আসলে নাকি শান্তি আসবে নাহ। সুতরাং দাও প্রাণ নাও গণতন্ত্র। ইস্স সে কি মজা গণতন্ত্রের। সে কি শান্তি গণতন্ত্রে। ওই গ্লোবাল ইন্ডেক্স কি আর এসব বুঝে। ওদিকে আবার জাতিসংঘ অর্ন্তভূক্ত দেশগুলো ২১ সেপ্টেম্বর বিশ্ব শান্তি দিবস পালন করে ঘটা করে। যেখানে জাতিসংঘের একাধিক দেশ যুদ্ধাবস্থায় আছে সেখানে তারা প্রতিবছর এ দিবস পালন করে তারা কিভাবে শান্তি বর্ধিত করে তা আমার বোধগম্য নয়।
যাই হোক “শান্তির নীড়, শান্তি কুন্জ, শান্তিবাগ, শান্তি নিকেতন, শান্তি পরিষদ, শান্তি সূচক, শান্তির মা” ইত্যাদি নামে হাটতে চলতে শান্তি বিশেষণযুক্ত কিছু না কিছু আশেপাশে বিভিন্ন সময়ই পাওয়া যায়। শেষ করছি শান্তির বর্ষণে কামনার সেই চিরচেনা বাণী দিয়ে -আস্ সালামু ওয়ালাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:১৭

ভ্রমরের ডানা বলেছেন:

ব্লগে স্বাগতম!

২৩ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১০:৫০

আর্ফ জামান সুজন বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.