নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আর্ফ জামান সুজন

আর্ফ জামান সুজন

আর্ফ জামান সুজন › বিস্তারিত পোস্টঃ

আগুনের গুণাগুণ

২২ শে জুন, ২০১৭ ভোর ৫:১৮

আগুন কেন জ্বলে? প্রশ্নটি ছোট কোন বাচ্চা বললে ঠিক ছিল। কিন্তু পিএইচডি ডিগ্রী অধিকারী খালু যখন এক প্রশ্ন করেন তখন অবশ্যই নড়েচড়ে বসতে হবে। কি আর উত্তর দিব আমি। গত ৯ বছর ধরে ডেবিট আর ক্রেডিটের বৃত্তে বসতকারী হিসেবে শুধু প্রযুক্তির ব্যবহারই করে গেছি, কেন কিভাবে কি এসব প্রশ্ন কখনই উদিত হয়নি। মানবজাতির প্রথম এই আবিষ্কার নিয়ে আদি মানব যতোটা চিন্তিত ছিল আমরা আজকে ঠিক ততোটাই উদাস।খালু কিছু একটা বোঝাবার চেষ্ট করলেও তা মাথার উপর দিয়ে যায়।

National Academy of Sicence দক্ষিণ আফ্রিকার এক গুহাতে ১০লক্ষ বছর আগের পোড়ানো উদ্ভিদ ও হাড় পায়। যার মাধ্যমে তারা প্রমাণ করেন মানুষ কবে নাগাদ আগুনের ব্যবহার শুরু করেছিল। যদিও তারা এটিও নিশ্চিত করেছেন যে সেটি ছিল Homo Erectus (আধুনিক মানুষের পূর্বপুরুষ)। আমরা আজকে যে ক্যাম্পফায়ারের রোমান্টিকতা ও উত্তেজনা নিয়ে মাতামাতি করি তা আজ থেকে দশ বছর আগে জীবন যাপনের সহায়ক ছাড়া আর কোন অনূভূতি ছড়াত কিনা সন্দেহ।

আগুনকে ঘিরে মানুষের কার্যকলাপ বড়ই বিচিত্র। কেউ পূজা করে, কেউ এর উপর দিয়ে হাটাহাটি করে, কেউ এর পিছনের ইতিহাস খুজতে পাহাড়-পর্বত, গুহা ঘুড়ে বেড়ায়। আগুনের ক্রেতার অভাব নেই। প্রতিশোধ, কামনা, ঘৃণা, অহংকার প্রত্যেকেই আগুনকে কেনাবেচা করে। কাব্যে কাব্যে আগুনকে যদি প্রকাশ করা যায় তবে যা পাওয়া যেত-
জ্বালানি, তাপ ও অক্সিজেন করলে মিক্স
কেবল তখনই হবে আগুন ফিক্স
আগুনের শিখা উঠে কেবল উর্ধ্ব গগনে
ইহা সম্ভব হয়েছে অভিকর্ষ বলের কারণে
একেক সময় একেক বর্ণের শিখা
চুলায় নীল আর অন্যত্র লাল বোটা
আংশিক দহনে লাল আর পুরো হলে নীলের ছিটা
আগুন খেলা অনেকেরই আর্থিক পেশা
নহে শক্তি নহে মৌলিক পদার্থ ইহা রাসায়নিক বিক্রিয়া।

মহাকাশে আগুর শিখা গোলকের মতো হয় যা নাসার স্পেসে দেখা যায়। আগুন নামের নব্বই দশকের এক বিখ্যাত শিল্পী একবার কনসার্ট করতে সিরাজগন্জ গিয়েছিলেন। শহরের সম্মুখ ভাগে পৌছতেই চারিদিকে রব উঠে গেল আগুন আসছে,,,আগুন ,,,,আগুন। ব্যস কিছুক্ষণের মধ্যেই ফায়ার সার্ভিস হাজির। রান্না, অন্ধকার দূরীকরণ, তাপ উৎপন্ন ইত্যাদি কতো শত ভাল কাজে আগুন লাগে। কিন্তু যারা খালিদের যদি হিমালয় থেকে গানটি শুনেছেন তার নিশ্চয়ই ভিসুভিয়ারে নামটিও শুনেছেন। যারা মাধ্যমিকে ভূগোল পড়েছেন তারাও হয়তোবা জাপানের ফুজিয়ামার কথা শুনেছেন। পৃথিবীর যখন বদহজম হয় তখন লাভা বমিরূপে বের করে দেয়। আর সেটা সবোর্চ্চ কতোটা ভয়ানক হতে পারে তা টের পেয়েছিল ২০০০ বছর আগে যখন ভিসুভিয়াসের কারণে ৫টি শহর ধ্বংস হয়ে যায়। আর ১৮১৫ সালে নাকি ৯২০০০ লোক মারা গিয়েছিল আগ্নেয়গিরির প্রভাবে। এরকম একটি জিনিস দেখতে আবার অসংখ্য পর্যটক আকৃষ্ট হন। এগুলো আসলে উত্তপ্ত গলিত পাথর, ছাই আর গ্যাস যা অতিরিক্ত তাপের ফলে পৃথিবীর ফাটল থেকে আগুনের মতো বের হয়ে যায়। এর সাথে প্রেসার কুকারের সিটির তুলনা করা যায়। পৃথিবী জুড়ে থাকা ১৫১০ টি সক্রিয় আগ্নেয়গিরির মধ্যে ৮০ এর বেশি রয়েছে সমুদ্রের নিচে। আপাতত একটিই সুখবর আর সেটি হচ্ছে বাংলাদেশে কোন আগ্নেয়গিরি নেই।

দেশের স্বাধীনতার জন্য যারা যুদধ করেছেন তারা ফ্রিডম ফাইটার। আর যারা আগুনের জন্য যুদ্ধ করেছেন তারা ফায়ার ফাইটার। হাস্যকর হলেও কবছর আগেও ইংরেজি শূন্য স্থান পূরণের সময় এ শব্দটি পাই। আর এই মনে মনে এই ধারণা পোষণ করেই অনুচ্ছেদটি পড়ছিলাম। কোন দেশের অগ্নি নির্বাপক কর্মীরা সকল ধররেন প্রশিক্ষণ দেয়া হয় নাহ। যেমন যে দেশে তেলের খনি নেই তারা তৈল উত্তোলন কেন্দ্রে আগুন লাগলে করণীয় সম্পর্কে সচেতন নন। এক মজার কৌতুক মনে পড়ে গেল। একলোক একবার এক দাবা খেলোয়া ঘরের বাইরে গিয়ে একলা দাবা খেলছে অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে। তার বাড়িতে আগুন লেগেছে। সবাই হৈ হুল্লোড় লাগিয়ে দিল। আশেপাশের মানুষজন নিভানো চেষ্টা করছে। কিন্তু তার কোন হুশ নেই। বেশ কয়েক জন তাকে বললেও তিনি কর্ণপাত করেননি। অবশেষে একজন জোরে কানের পাশে এস বলল ঘরে আগুন ঢুকেছে। তিনি উত্তর দিলেন আমাকে বোকা বানানোর চেষ্টা করা হচ্ছে.. নাহ। ঘরে তো তালা মেরে এসেছে আগুন ঢুকবে কি করে? আমি বাপু এপ্রিল ফুল হবো নাহ। তোমরা চলে যাও।

এক আগুনকে কেন্দ্র করে কতো শত আয়োজন। এক দল করে আগুন ধরানো ব্যবসা (দিয়াশলাই), আরেক পালন করে একে নিভানো দায়িত্ব, এক দল এর ক্ষয়ক্ষতি পূরণ করত চায় (বীমা), এক দল আবার আগুন নিভানোর যন্ত্র বিক্রি করে, আর আগুন খেলা করে এমন মানুষ তো প্রতি সম্প্রদায়ে আছে। উত্তপাত কয়লার উপর দিয়ে হাটা আজ আর কোন যাদু মন্ত্রের ফসল নাহ। বিজ্ঞানই এখন এগুলোর জন্য নানান উপায় বাতলে দিচ্ছে। এই যেমন দুম্বার চর্বি মালিশ করে হয়তবা আপনিও উত্তপ্ত কয়লার উপর হাটতে পারেন। এটা প্রমাণিত যে বিজ্ঞানের নানা উপায় অবলম্বন করে এটি সম্ভব। এটি কোন জাদুকরী বিদ্যা নয়।

আমাদের দেশের অগ্নিবির্বাপক কর্মীরা তাদের সাধ্যের বাইরে গিয়ে দায়িত্ব পালন করেন বরাবরই। তাদের অনেক কারিগরী অদক্ষতা ও প্রশিক্ষণের অভাব থাকতে পারে কিন্তু দায়িত্ব পালনে এক চিলতে গাফিলতি নেই। আমেরিকার মতো দেশ যেখানে ফায়ার ফাইটিং প্লেন ব্যবহার করে সেখানে সবোর্চ্চ ঘনবসতির এ দেশে আমাদের কারিগরি অক্ষমতার অভাব নেই।
শেষ করব আমার প্রিয় কবি হেলাল হাফিজের দুটো লাইন দিয়ে-
আগুনে পোড়ালে তবু কিছু রাখে
কিছু থাকে,
হোক না তা শ্যামল রঙ ছাই
মানুষ পোড়ালে আর কিছু রাখে না
কিচ্ছু থাকে না,
খাঁ খাঁ বিরান, আমার কিছু নাই।







মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.