নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আর্ফ জামান সুজন

আর্ফ জামান সুজন

আর্ফ জামান সুজন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ওস্তাদ বাঁয়ে প্লাষ্টিক

১০ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ৮:৪৮

একবার ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস পড়েছিলাম যে সেই বড় ভাই লাখ টাকার গাড়িকে কয়েকশ টাকা দৈনিক মজুরি পাওয়া বাসের হেল্পার প্লাস্টিক বলে ডাকে। তার কাছে ইহা বড়ই অপমানজনক। জোড়ে চিল্লায়ে যখন বিএমডব্লিউ গাড়িকে ইশারা করে হেল্পার বলে ওস্তাদ বায়ে প্লাষ্টিক ইহা সত্যিই বড়ই আশ্চর্যজনক ঘটনা। এই সব প্লাষ্টিকে বসে থাকা মানুষেরা পৃথিবীর কতোটা অপকার করেছে বলতে না পারলেও আসল প্লাষ্টিক পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। তবে আশ্চর্য বিষয় যান্ত্রিক পৃথিবী মনে হয়ে আপাদমস্তক এই প্লাষ্টিক দ্বারাই পরিপূর্ণ। প্লাষ্টিক হচ্ছে সিনথেটিক, সেমি-সিনথেটিক। নিম্ন গলনাংক বিশিষ্ট পদার্থ অর্থাৎ কম তাপমাত্রায় এটি গলে যায়। তাপ দিয়ে এক আপনি যে কোন ছাচেঁ নিয়ে যেতে পারবেন। এটিই বিদ্যুৎ পরিবহন করে নাহ। আশ্চর্যজনক তথ্য হলো প্লাষ্টিক দ্রব্য তৈরির প্রাথমিক ইতিহাসে যেটা জানা যায় সেটা বিলিয়ার্ডের বল তৈরির জন্য হাতির দাতেঁর বিকল্প হিসিবে প্রথম বারের মতো তাপ দিয়ে সেলুলয়েড তৈরি করা হয়। ছোট ও খাট বিজ্ঞানের এ চাপ্টার আপাতত শেষ।
যেহেতু এটি বেশ সহজলভ্য, যে কোন ছাচেঁ তৈরী করা যায় ও সস্তা তাই সৃষ্টির সেরা জীব এটিকেই বেছে নিল নিত্যদিনের সঙ্গী হিসেবে। ঘরের চাল থেকে শুরু করে ফ্লোর পর্যন্ত সবই এখন প্লাষ্টিক দ্বারা তৈরি হচ্ছে। আরো আশ্চর্যজনক তথ্য হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে কম দামী এসি প্লাষ্টিকের তৈরী ও এটি বাংলার গ্রামে গ্রামে পৌছে দিতে কাজ করছে গ্রে, ইন্টেল আর গ্রামীনফোন। প্লাষ্টিকের বোতল দিয়ে বানানো এই ইকো কুলার ঘরের তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রী পর্যন্ত কমাতে পারে যা উষ্ণ ভূমিতে গ্রামের মানুষদের একটু হলেও শীতল অনূভূতি দিবে।
বাইপাইল হয়ে টঙ্গী যাচ্ছি হেল্পার জোড়ে বলে উঠল বায়ে প্লাষ্টিক আর ওমনি চোখে পড়ল বিশাল এক বিলবোর্ড যাতে লিখা আর্ন্তজাতিক প্লাষ্টিক মেলা। একদিকে Sustainabiliy, Green, Zero carbon বলে সভা সম্মেলন সব গলা ফাটানো হচ্ছে আর ওদিকে চলছে প্লাষ্টিক, প্রিন্টিং আর প্যাকেজিং এর মেলা। একদিকে চলছে Plastic Pollution Coalition আর অন্যদিকে চলে প্লাষ্টিক শিল্পে ভ্যাট অব্যাহতি। ব্যাপার আসলেই বুঝা যতো সহজ হবার কথা আমার প্রায় তিন পাউন্ডের ব্রেইনটা ততোটা সহজে বুঝে নাহ।
বাজারে যতোই পলিথিনের ব্যাগে করে সদাই করি না কে একটা বিষয়ে আমরা বুক ফুলিয়ে বলতে পারি যে পৃথিবীতে আমরাই প্রথম দেশ যারা কিনা পরিবেশের স্বার্থে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করেছি ২০০২ সালে। যদিও আমাদের নদী নালা, সাগর আর ডাস্টবিন দেখে এ নিষিদ্ধের স্বার্থকতা বোঝার চেষ্টা কোন কালেই বোঝা যাবে নাহ।
সিনেমা জগতে যে সার্জারি সবচেয়ে সহজলভ্য, যে কোন সময় করা যায় ও যে কোন চেহারা পাওয়া যায় তার না প্লাষ্টিক সার্জারি। কিন্তু এটা ভাবা ঠিক না যে এটি প্লাষ্টিক দিয়ে হয় তাই এর নাম প্লাষ্টিক সার্জারি। আসলে এটি জেনেরিক বৈশিষ্ট্যের কারণে এ নাম দেয়া হয়েছে। তবে অনেক জটিল মেডিকাল কাজে প্লাষ্টিক ব্যবহৃত হয় এমনকি পলিমার ট্রান্সপ্লান্টের ক্ষেত্রেও।
বিশুদ্ধ প্লাষ্টিকে দূষণীয় মাত্রা কম। কিন্তু এর সাতে বিভিন্ন অতিরিক্ত পদার্থ যোগ করে একে বিভিন্ন কাজে ব্যবহার উপযোগী করা হয়। যার ফলে এর দূষণীয় মাত্রা অনেক বেড়ে যায়। যেমন আমাদের ব্যবহৃত পলিথিন মাটি দূষণ করে। রঙিন প্লাষ্টিক ব্যাগতো এতোটাই দূষণীয় যে এর কিছু পদার্থ মাটি চুইয়ে চুইয়ে ঢুকে ও ভূ গর্ভস্থ পানি দূষণ করে। প্লাষ্টিক ক্যারি ব্যাগ বানাতে বিভিন্ন সিসা জাতীয় পদার্থ ব্যবহৃত হয়। যদি সরাসরি এসব ব্যাগে খাবার বহন করা হয় তবে এর কিছু অংশ খাবারে মিশে যাবার আশংকা থাকে। আর এটিই ক্যান্সারের সহায়ক। মাটিতে মিশে যাওয়ার ক্ষমতা না থাকায় এই ব্যাগগুলো বৃষ্টির পানি মাটিতে প্রবেশে বাধা সৃষ্টি করে। ময়লা আবর্জনার সাথে পশু পাখি যদি এসব ব্যাগ খেয়ে ফেলে তবে তা বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে।
প্লাষ্টিকের বোতল দুই রকম উপাদান দ্বারা তৈরী হতে পারে। BPA ও PET যার মধ্যে BPA খুব ক্ষতিকর। তবে এর মধ্যে PET কে বিজ্ঞানীরা নিরাপদ খাবার পানির জন্য নিরাপদ বলেছেন। স্পারাইট, ফান্টা পেপসি এর দ্বারাই তৈরী। শুধু ইউরোপে যে পরিমাণ বোতল ব্যবহৃত হয়েছে তার প্রায় অর্ধেকই রিসাইকেল করা সম্ভব হয়নি। যার ফলাফল এগুরো সব জলাধার ও সাগরে গিয়ে মারাত্মক ক্ষতি করছে।

বয়ান স্লাট বেচারা গ্রীসে সাগরের কিনারায় মাছ ধরতে গিয়ে দেখে মাছ কি ধরবে প্লাষিটকের বোতলের জ্বালায় বাচেঁ না। তাই স্কুলেগামী এ বাচ্চাই নেমে গেল সেই বোতল কিভাবে সরানো যায় সেই ধান্ধায়। কয়েক ব্ছর আগে সেই প্রোজেক্টের উপর দেয়া টেডেক্সের ভাষণ সারা বিশ্বে আলোড়িত হয়। তার Ocean Clean Up প্রোজেক্ট প্রায় ৩২.৩২ মিলিয়ন ডলার ডোনেশন সংগ্রহ করেছে ১৬০টি দেশের দাতার কাছ থেকে। হায়রে!! সাধের প্লাষ্টিকের বোতল সরাতে এতো টাকা লাগবে কে আর চিন্তা করে ১০ টাকার পানির বোতল কেনার সময়।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.