নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আর্ফ জামান সুজন

আর্ফ জামান সুজন

আর্ফ জামান সুজন › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুভি রিভিউ

১৭ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ১:৩৫

মাধ্যমিকের গন্ডি পেরিয়ে মাত্র উচ্চ মাধ্যমিকে পা রাখলাম আর অমনি উঠাবসা শুরু হলো আধুনিক যুগের শিশুদের সাথে (যেহুতু বয়স তখনও ১৮ পেরোয়নি)। আমি হিন্দী আর বাংলা মুভি দেখে বড় হয়েছি। আর লুকিয়ে লুকিয়ে MTv Englishগান শুনতাম। আর ইংরেজি চলচিত্র বলতে কয়েকটা শিশুতোষ আর ধুন্ধুমার এ্যাকশন (Baby’s Day Out, Terminator) । এ যুগের খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি ওঠা শিশুদের সাথে তাল মিলাতে গিয়ে আমাকেও এরা তথ্য সংরক্ষণ ও স্থানান্তর যন্ত্রের (pen drive) মারফত কিছু তৎকালীন চলচিত্র দেখার জন্য দিল।
এবার শুরু করলাম চলচিত্র দেখা্। কিছুদিন পর বুঝলাম আমি এতোদিন এক আজব ভাষা শিখছিলাম। এতোদিন Cool, Bad Ass, Cock অর্থ যা আমি বুঝতাম এরাতো তা বুঝাচ্ছে নাহ। কম বেশি যাই বুঝলাম কাহিনী বেশ ভালোই লাগত। বিশেষত রোমান্টিক কাহিনীগুলো। সদ্য গোফঁ ওঠা ছেলের যৌবনও তখন উঠতি। সুতরাং প্রেমবিষয়ক সিনেমা ভাল লাগা স্বাভাবিক।
তবে বাংলা সিনেমা দেখে মাঝে মধ্যে মনে হতো বেটা চিত্রগ্রাহক আর কিছুক্ষণ শট ওকে থাকলে কি আর এমন দেখে ফেলতাম। ক্যামেরাম্যান ঠিক যথাসময় ক্যামেরা নিয়ে হারিয়ে যায় বা স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা ব্যবহার করতে যায়। আর ইংরেজি সিনেমায় ক্ষেত্রে মনে হয় এইসব চিত্রগ্রাহকের একটুও লাজ স্বরম নেই, লায়ক লায়িকাদের একটু একা থাকতে দিলে কি হয়? সবই কি ক্যামেরায় আটকে আনতে হবে বেটা বেলাহেজ ক্যামেরামান।
স্কুলের সময়কার শারীরিক উচ্চতার চেয়ে কলেজে ১ ইঞ্চি বেড়ে যাবার সাথে সাথে আমার সার্কেলও এক কিলোমিটার পরিধি বাড়াল। এবার এরা অস্কার, এ্যাকাডেমি এ্যাওয়ার্ড প্রাপ্ত সিনেমা ছাড়া দেখে নাহ। সাথে যোগ হলো আবার আইএমডিবি রেটিং আর রোটেন টমাটো। ওদিকে আরেক দল তো ফিল্মফেয়ার, আইফা, জি সিনে এ্যাওয়ার্ড নিয়ে রীতিমতো ঝগড়া করে। মনে হয় যেন এর ভারতের অধিবাসী আর এদের ভোটেই এ্যাওয়ার্ড পান তারাকারা।
ওদিকে ছোট বেলার বন্ধুরা এতোদিনে অনেকেই খানদের অন্ধ পাঙ্খা হয়ে গেছে। এদের মধ্য ঝগড়া লেগেই থাকে। এরা বলিউডের অন্ধ ভক্ত। দেখা হবার কিছুক্ষণের মধ্যেই বলে উঠবে অমুক খানের তমুক কারেঙ্গা সিনেমাটা দখেছিস? যাক এদের সাথে তাল মিলাতে এবার বলিউডের অধিকাংশ অখাদ্যও খেতে হয়েছে। তবে আগ্রহ বশত বলিউডের সিনেমা দেখতে বসলেও ২.৫ ঘন্টার ছবি ১.২৫ ঘন্টার বেশী সময় লাগে নাহ দেখতে। এদের ৪-৫ টি গানে ৩০ মিনিট চলে যায়। আর সাধারণ মানুষের অতি মানবীয় এ্যাকশন থাকে ৩০ মিনিট। এসব দৃশ্য কেটে দিলে পূর্নদৈঘ্য এসব ছবি এমনিতেই স্বল্পদৈঘ্যে নেমে আসে।
যাক বলিউডের অখাদ্য খেতে না খেতেই খেয়াল করলাম গামের্ন্টসের কর্মী যারা সকালে অফিসে যায় অনেকেই কয়েকজন মানুষের চেহারা বুকি নিয়ে অফিস করতে যায়। মনে হলো এদেরকে কৈ যেন দেখেছি। মনে পড়ছে স্যাট ম্যাক্সের কিছু সিনেমাতে এদের দেখেছি। যাই হোক এদের মানুষ যে কখন খান, কাপুর, বচ্চন আর চোপড়াদের ছেড়ে কবে এসব গোফওয়ালাদের কবে টি-শার্টে জায়গা দিল টেরই পেলাম নাহ।ইউটিউবে খোজঁ লাগাতেই দেখলাম মানুষ এদের সিনেমার হিন্দি অনুদিত ভার্সন পেতে মরিয়া। তবে একটি কথা স্বীকার করতেই হবে যে এদের গল্প আমাদের দেশের সিনেমার গল্পের তুলনায় অনেক ভাল। অধিকাংশই কপি পেস্ট মার্কা কাহিনী বর্জন করে।
এক বন্ধু ভাল রেজুলেশনের সিনেমা ডাউনলোডের জন্য কয়েকটা ফেবু গোষ্ঠীতে জয়েন করাল। এবার আমি সেই সব গামেন্টসকর্মীদের টিশার্টের নায়কদের চিনলাম। একই সাথে এসব গোষ্ঠী জয়েন করে বুঝলাম যে বুদ্ধিজীবি হবার জন্য ইংলিশ সিরিয়াল দেখা বাধ্যতামূলক।মোটামুটি কয়েক মাসে কয়েকটা সিরিয়াল (৬বা৭ সিরজ বিশিষ্ট) শেষ করলাম। ফেসবুক গোষ্ঠীতে আরও একটি জিনিস বোঝা গেল যে যতো বেশি ভিনদেশী সিরিয়াল ও মুভি দেখা যায় ততোই জ্ঞান সমৃদ্ধ হয়। এই এক জীবনে ইংরেজি, হিন্দী, মালায়াম, তেলেগু, তামিল, ফ্রান্ঞ, কোরিয়ান, চাইনিজ, জাপানি, কানাড়ী, মারাঠী, ভোজপুরী, উর্দূ, আরবি, তুর্কি, ইটালিয়ান আরো কতো যে ভাষার ছায়াছবি দেখা হয়েছে এইসব মুভি লাভারজ ফেসবুক গোষ্ঠীর কারণে। তবে একটি কথা নি:সন্দেহে বলতে পারি যে ঐসব ভাষাভাষীরা আমাদের দেশের চলচিত্র দেখে নাহ। অনেকে হয়তো আমাদের দেশের নামই জানে নাহ। কিন্তু আমরা তাদের চলচিত্রের দর্শক। হয়তোবা এটাই বিশ্বায়নের সবচেয়ে বড় সুবিধা।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.