নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আর্ফ জামান সুজন

আর্ফ জামান সুজন

আর্ফ জামান সুজন › বিস্তারিত পোস্টঃ

পয়দার ময়দামাখা পাতিহাস

২৪ শে অক্টোবর, ২০১৭ দুপুর ১:৩৮

ছোট বেলা থেকেই জন্মদিন এলে মনটা খারাপ হয়ে যেত মূলত: দুটি কারণে। প্রথমত যিনি জন্ম দিয়েছেন তিনি পাশে নেই। আর দ্বিতীয়ত আমার জন্মদিন মনে রাখার মতো পৃথিবীতে একটি মানুষও নেই। বন্ধু-বান্ধবীদের দেখতাম কাছের মানুষ দের নিয়ে কেক কাটাছে আর বাতি ফুকাচ্ছে। আর আমি মুখ দিয়ে ফুকাচ্ছি ইসসসসসসসস…….।
২০১০ সাল হতে সামাজিক মাধ্যমে থাকার কারণে কিছু বন্ধু জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাত আর দেখা করতে চাইত। আমি ঠিকই বুঝতাম যে তাদের উদ্দেশ্য আমার কাছ থেকে ট্রিট নিবে। কিন্তু বাবার কাছে তখন বন্ধুদের খাওয়ানোর জন্য টাকা চাইবার সাহস আমার ছিল নাহ। কি আর করার লুকোচুরি খেলতাম ধরা দিতাম নাহ আর মোবাইল বন্ধ করে রাখতাম। একবার ইচ্ছে করেই ফেসবুকে জন্মদিবস প্রদর্শন বন্ধ করে দিলাম। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে তারপর থেকে আর কোন শুভেচ্ছাই পাইনি কারো থেকে। একবার এক কাছের বন্ধু আমার জন্মসন্ধ্যায় কিছু আপেল কিনে দিয়েছিল আর বলেছিল সে নাকি ব্যস্ত ছিল। যেহেতু আমার মোবাইল বন্ধ ছিল তাই ফেসবুকে ঢুঁ মারা হয়নি।পরে বুঝলাম যে আমি নতুন করে যে ফেসবুক এ্যাকাউন্ট খুললাম সেটিতে জন্মদিন প্রদর্শন বন্ধ করতে ভুলে গিয়েছিলাম। হায়রে আমার পোড়া কপাল!!!!
তবে একটা সময় আমি এবিষয়ে মোটেও হতাশ হলাম নাহ। কারণ অনেকেই হয়তোবা জানেন নাহ যে পৃথিবীর সর্বকালের সেরা মানুষটির জন্মদিন তারা পরিবার ও সাথীরা কেউই পালন করত নাহ। আরও আশ্চর্যজনক হচ্ছে সাহাবীরা কেউই জিজ্ঞেস করেননি যে রাসূল্লাহ ((সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর জন্মতারিখ । পরবর্তীতে তাবিঈগণ যখন ইতিহাস লিখা শুরু করেন তখন এবিষয়ে গবেষণা করা হয়।। এমনকি তারঁ জন্মদিবস নিয়েও মতানৈক্য রয়েছে। তবে যদি আপনি মনে করে থাকেন যে সাহাবায়ে কেরামের তুলনায় আপনি রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে বেশি ভালবাসেন তাই ইদে মিলাদুন্নবী করবেন। তবে জেনে রাখেন তারা রাসূলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর জন্মের জন্য শুকরিয়া আদায়ে যে কাজটি করতেন সেটি হচ্ছে প্রতি সোমবার ও নবুওয়্যাত উপলক্ষে প্রতি বুধবার সাওম পালন করতেন। (মুসলিম:১১৬২) (https://www.youtube.com/watch?v=2iIf4EGFyaI)
আমি এ বিষয়ে কিছু বললেই কতিপয় মর্ডাণ মুসলিম বন্ধু বলে যে দেখ নবীজি (সা:) এ যুগে জন্মালে অবশ্যই তিনি জন্মদিন পালন করতেন কেক কেটে। বাহ অসাধারণ বুঝা গেল যে ইসলাম অসম্পূর্ণ এবং এর আধুনিকীকরণ প্রয়োজন। এই বিতর্কিত বিষয় আর দুটো কথা বললেই মনে আমাকে হাজার পীরের লক্ষ মুরিদের তোপের মুখে পড়তে হতে পারে।
যাই হোক চলে আসি আবার আমার জন্মদিনে। আমার বরাবরই রূপক ও অর্ন্তকথা, প্রতিকী কথার প্রতি আকর্ষণ রয়েছে। ঘটনার ভেতরের ঘটনা জানার আগ্রহ ছোট বেলা থেকেই। হঠাৎ মাথায় চিন্তা আসল যে জন্মদিন নিয়ে উইকি মামা কি চিন্তা করে দেখি তো। উইকি মামার কথা শুনে তো আমি পুরাই টাস্কি। জন্মদিনের কেক আর মোমবাতির ইতিহাস শুধু দেব, দেবী, অসুর , প্রেতাত্মাদের নিয়ে। কোন কোন ঐতিহাসিক ব্যাখ্যা করেছেন যে কেকের উপর যে মোমবাতি রাখা হয়ে এটি দেবী আর্টমিসের জন্মদিনের সম্মানে জ্বালানো মোমবাতি হতে এসেছে (যদিও একে কিছু ঐতিহাসিক ভিত্তিহীন বলেছেন)।
অন্যদিকে পৌত্তলিক ইতিহাস হতে জানা যায় যে জন্মদিনে পিশাচরা সেই মানুষকে দেখতে আসে। শয়তানি অপদেবতা হতে সেই ব্যক্তিটিকে বাচাঁনোর জন্য সবাই একসাথে তাকে ঘিরে ধরে ও আনন্দধ্বনি করে। সেই সাথে মোমবাতিও জ্বালিয়ে রাখে। কি প্রিয় পাঠক একটু আধটু মিল খুজে পাচ্ছেন তো আপনার জন্মদিনের পার্টির সাথে। চমকতো এখনও বাকি আছে!!
আপনার হয়তো মনে হতে পারে যে বড়দের না হয় জন্মদিন না করলাম। বাচ্চারাতো ছোট ওদের খুশির দিকে তাকিয়ে একটু ফুর্তি করলে কি-বা আর এমন দোষ হবে। আপনি যদি এই চিন্তা করে থাকেন তবে আপনার জন্যই আমার পরবর্তী কয়েকটি লাইন।
আঠারশ শতাব্দীতে জার্মানরা ঘটা করে শিশুদের জন্মদিন পালন করা শুরু করে। সেটির নাম ছিল “কিন্ডার ফেস্ট”। তাদের ধারণা ছিল যে জন্মদিনে শয়তান শিশুদের আত্মাকে চুরি করে নিয়ে যাবে। তাই বিশাল কোন অডিটরিয়ামে অনেক পূর্ণবয়স্ক মানুষ শিশুদের জন্মদিন পালন করত। এ সময়টি হতেই জন্মদিনে উপহারের বিষয়টি চালু করা হয়। উপহার নিয়ে আসাটা বাধ্যতামূলক ছিল নাহ। তবে কেউ উপহার নিয়ে আসলে সেটিকে শুভ লক্ষণ হিসেবেই ধরা হত। আরও বিস্তারিত জানতে পড়তে পারেন Ralph & Adelin এর Linton The Lore of Birthdays বইটি।

তারপরও হয়তোবা মনে হতে পারে যে আপনি তো দেব দেবী , পিশাচ এসব উদ্ভট তত্ত্ব মাথায় রেখে জন্মদিন পালন করেন নাহ। সুতরাং তাহলে তো আর কোন সমস্যা নেই।তবে আপনার জন্যই বলছি- আমার লেখার আবেগ হয়তো আপনার বিবিককে নাড়া দিতে পারবে নাহ। আপনিতো শত শত মানুষকে দাওয়াত দিয়েই ঘটা করে ছোট্ট শিশুটির জন্মদিন পালন করেন ও নানানরকম মুখরোচক খাবারের আয়োজন করেন। একটু কষ্ট করে আপনার এলাকার এতিমখানা কিংবা পথশিশুদের কাছে ওই দিনে পুষ্টিকর খাবার পৌছে দিন। আমার মনে হয় যে হারে লক্ষ লক্ষ মানুষ তাদের জন্মদিন পালন করে এই উদ্যোগ নিলে সারা বছরই এতিম, অসহায়, গরীব শিশু গুলো পুষ্টিকর খাবার খেতে পারবে।

ধন্যবাদ


মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.