নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আর্ফ জামান সুজন

আর্ফ জামান সুজন

আর্ফ জামান সুজন › বিস্তারিত পোস্টঃ

গোড়াতেই জং, তবে কেন এতো ঢং?

২৬ শে অক্টোবর, ২০১৭ বিকাল ৪:৩৭

আরে ভাই বুঝলামতো হলিউড সিনেমার নায়কের মতো পাইলট সাহেব ফাটা চাকা কিংবা ইঞ্জিনে আগুন লাগানো অবস্থায় কিংবা চাকা খসে পড়ে সত্ত্বেও বিমানটিকে সফলভাবে অবতরণ করিয়েছেন। দোয়া করি উনি সুস্থ্য থাকুন আর ওনার দক্ষতা আরো বৃদ্ধি করুন।

ব্রেকিং নিউজতো অনেক হলো এবার গোড়ায় আসেন। জাতির যে সকল সুসন্তানের অবহেলার কারণে এতোগুলো মানুষের জীবন হুমকির মুখে পড়ল তাদেরকে আর কেউ স্মরণ করেন নাহ। বড়জোড় শোকজ আর সাময়িক বরখাস্ত লোক দেখানো। মিডিয়াও সেই মুখগুলোর খোঁজ নেয়নি। আর তদন্ত কমিটিগুলো সিঙ্গারা সমুচার সাথে বিকালের নাস্তা মনে করে রিপোর্টগুলোও খেয়ে ফেলে।

ভাই আপনি আমি বিসিএস নিয়ে ব্যাপক চিন্তিত। দেশের সবোর্চ্চ মেধাবীরা সব বিসিএস গাইড পড়ে। অনেক সুশীলের অভিযোগ যে তারা সৃজনশীল কাজ থেকে দূরে। এরা “স্কিল ডেভেলপমেন্ট” নামক সব জনপ্রিয় হাঙ্কি পাঙ্কি কর্মসূচি হতে দূরে থাকে। এরা দেশের মানুষের টাকা খরচ করে পড়ে এক বিষয়ে আর বিসিএস ক্যাডার হয় অন্য বিষয়ে। অনেকেতো বলেই বসলেন খোটা মেরে যে “ভার্সিটিতে একটা ডিপার্টমেন্ট অব বিসিএস খুললেই হয়।“ দেশে বেকার আরো বাড়ছে। ওদিকে আরেক দল চিন্তিত যুবসমাজের উচিত এইচএসসি শেষ করেই ব্যবসা নিয়ে ভাবা। বিশ্ববিদ্যালয় থাকা অবস্থাতেই উদ্যোক্তা হবার চিন্তা করা। আরেক দল উঠে পড়ে লেগেছে ব্যাংক চাকরি নিয়ে। আর সমাজের চিন্তাশীলরা চিন্তিত এই ভেবে যে সব তরুণই যদি টাকা গুণায় ব্যস্ত থাকে তবে টাকা কি দিন শেষ পুঞ্জিভূত থাকে গুটি কয়েক শিল্পপতির হাতেই? যেখানে তরুণদেরই ভাঙ্গার কথা প্রচলিত উদ্যোক্তার ধারণা।

অনেকতো জীবন পাল্টানো ক্যাডারের জীবনকাহিনী পড়লেন আর সরকারী ও বেসরকারী চাকরির ঝগড়া করলেন, এবার না হয় চলেন একটু গোড়ায় যাইন। প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যারিয়ার কাউন্সিলিং বিভাগ খোলার জন্য একটু লেখালেখি করেন। প্রথম বর্ষের শুরুতেই
শিক্ষার্থীদের প্রত্যেককে ক্যারিয়ারের জোড়া-মই-শিকল নীতি বুঝিয়ে দিন। প্রতিটি বিষয় পড়ার যর্থাথতা বুঝিয়ে দিন। যে যাই হতে চান না কেন সমর্থন পাবেন এই ক্যারিয়ার কাউন্সিলিং বিভাগ হতে। তাহলে আর পাড়ায় পাড়ায় বিসিএস,ব্যাংক আর স্পোকেন কোচিং গড়ে উঠবে নাহ।

সুখন ভাইরা মটিভিশনাল বক্তব্যের ব্যবসা করে। তারা একই কথা বিভিন্ন জায়গায় বলে বেড়ায় আর টাকা উঠায়। বুঝলাম বস, তাই বলে কি ওনাদের বক্তব্য দেয়া বন্ধ করে দিলে কিংবা ওনার পারিশ্রমিক নেয়া বন্ধ করে দিলে এ জাতি পরিপূর্ণ মটিভেশন পাবে বলে মনে হয়। টেডেক্স, নীলক্ষেত, ইউটিউব থাকা স্বত্তেও আজও লক্ষ লক্ষ মানুষ হতাশায় নিমোজ্জিত।

ভাই এইসব মটিভেশানাল কথা নিয়া চেঁচামেচি বাদ দিয়ে গোড়ায় আসেন। রাশেদ ভাই একবার এক লোকের কথা বলেছিলেন। উনি পাচঁ ওয়াক্ত রবের কাছে হাজির হন। যদি দিন উনি বেঁচে আচেন ততোদিন এভাবেই মটিভেশনাল ব্যাটারী চার্জ করিয়েছেন। প্রতিটি বিপদের প্রাণপনে চেষ্টা করেছেন সমাধানের জন্য আর প্রতি বেলাতেই নিশ্চিন্ত মনে পূর্ণ মনযোগ দিয়ে হাজিরা দিয়েছেন সৃষ্টিকর্তার কাছে আর খুলে বলেছেন মনের কথা আর চেয়েছেন শুধু মঙ্গল। যখনই একটু হতাশ মনে হবে দাড়িয়ে জান রবের সামনে। মন প্রাণ ভরে প্রার্থনা করুন। আপনি আর আমি ইসলামকে যতোই ধর্ম বলি না কেন, এটি শুধু ধর্ম নাহ এটি একটি পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা।

এদেশের সংস্কৃতি ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। সকল নারী ও শিশু ভিনদেশী সিরিয়ালে আসক্ত হয়ে যাচ্ছে। এর ভয়াবহতা এতো যে শিশুদের খাতার মলাট হয়ে যাচ্ছে সিরিয়ালের শিল্পীদের নামে। ভাই এখন চ্যানেল বন্ধ করে দিলে কিংবা বাচ্চাদের টিভি দেখা বন্ধ করে দিলেই কি আমাদের সংস্কৃতির চৌদ্দগুষ্টি উদ্ধার করতে পারব? আগে বুঝাতে হবে দেশী সংস্কৃতি আর ভিনদেশী সংস্কৃতির পার্থক্য, প্রয়োজনীয়তা আর স্বাভাবিক জীবনে এর বিরূপ প্রভাব। অন্তত দেশের বিনোদন মাধ্যম যতোদিন চাহিদা পূরণ করতে না পারবে ততোদিন এই সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের দর্শনার্থী হতে হবে। আর একবার ভিনদেশের সংস্কৃতির রক্ত আপনার দেহে প্রবেশ করলে তা নির্গত করা অতোটা সহজ নয়। বরং তা আপনার দেশের সংস্কৃতি কলূষিত করবে অথবা পরিবর্তন করবে।

তো এবার একটু গোড়ায় যাওয়া যাক। আমাদের সংস্কৃতি কি? কি ছিল পূর্বপুরুষদের সংস্কৃতি? আমার কি সংস্কৃতির বাহক নাকি দর্শক? সংস্কৃতি মানে কি শুধুই চলচিত্র আর নাটক? সংস্কৃতির আর ধর্মের সাথে সম্পর্ক কি?সংস্কৃতি কি সুস্থ্য বা অসুস্থ্য হয়? এরকম হাজারো শিশুসূলভ প্রশ্নে উত্তর আমরা যেদিন আমাদের প্রজন্মের কাছে পরিষ্কার করতে পারব শুধু সেদিনই আমার দেশীয় সংস্কৃতির বিজয় নিশান দেখতে পাব। শুধূ ফেসবুকে প্রতিবাদী ছবি আপলোড করলেই কিংবা বিদেশী চ্যানেল বন্ধ করলেই আমাদের সাংস্কৃতিক রক্ত বদলাবে নাহ। প্রয়োজন দীর্ঘমেয়াদী বাস্তবায়নযোগ্য পরিকল্পনা। যদিও এর ছিটাফোটাও আমাদের কুসংস্কৃতি মন্ত্রাণালয় কিংবা অসাংস্কৃতিক জোট গুলোর মধ্যে দেখা যায়নি।

শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের এদেশ। অসংখ্য মা বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত এ স্বাধীন দেশের কোন মা-বোনের ইজ্জতের উপর আবার কেউ হামলা করবে তা কোন দেশপ্রেমিক কল্পনাও করতে পারেনি। আরো আশ্চর্য লাগে যখন আপনি পত্রিকায় দেখবেন ধর্ষকের নাম ও বয়সের আগে "মো:" লেখা। ছিহ!!! বাবা-মা শখ করে নামের আগে সর্বকালের সেরা মানুষের নাম জুড়ে দিয়েছে কিন্তু ছেলের চরিত্র হয়েছে সর্বনিকৃষ্ঠ। একটি মেয়ে ধর্ষণ হবে আর ওমনি আমার ফেবু বন্ধুরা ঝগড়া করবে ধর্ষিতার পোষাক নিয়ে, তার চলাফেরা নিয়ে, তার ব্ন্ধুদের নিয়ে এমনকি দিনশেষে কারো উদ্ধুতি দেখে মনে হয় ধর্ষণ করেছে ঠিক করেছে। যে দেশে এগারজন পুরুষের অর্জন সারা দেশকে আনন্দে ভাসায় সে দেশে দু-একজন পুরুষের কুকৃতি আমাদেরকে লজ্জিত করে। আর শুধু পত্রিকার কাটতি বাড়াতে কিছু পত্রিকাতো এমনভাবে বর্ণনা দেয় যেন সাংবাদিক ঘটনাস্থলেই ছিল।

আরে ভাই হইছে থামেন।মিডিয়া আপনারে নাচাবে আর আপনি নাচবেন তাইতো। আমি পত্রিকার পড়ি ৯০ দশক হতে। মনে হয় না এমন কোন দিন গেছে যেদিন কোন না কোন ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু বেশির ভাগই ছিল ভিতরে আন্ঞলিক পাতায়। নারীবাদী আজকের মিডিয়া বারবার আপনার আমার সামনে ধর্ষণের খবর দিচ্ছে ব্রেকিং নিউজে। কিন্তু তা হতে পরিত্রাণ বিষয়ক কোন ব্রেকিং নিউজ কখনোই আসবে নাহ। কখনই শুনবেন নাহ যে মেয়েদের নিরাপত্তার জন্য বিশেষ এ্যাপস বাজারে এসেছে। কখনোই শুনবেন না যে ব্রেকিং নিউজ- ধষর্ণের চেষ্টায় ব্যর্থ হওয়ার গণধোলাইয়ের শিকার কিংবা সকল ধর্ষকের জীবন কাহিনী নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠান। এদের যতো আগ্রহ ধর্ষিতাকে নিয়েই। কখনোই কোন ধর্ষনের খবরের ফলো আপ দীর্ঘদিন করা হয় নাহ। কারণ একটা ধষর্ণে নিউজে তো সারা বছর চলবে নাহ। এরা আবার খোজে নামে নতুন ধর্ষনের খবরের। সকল সাক্ষী প্রমাণ যখন ধর্ষকের বিপক্ষে তখনও বিচার প্রক্রিয়ার বিলম্বের কারন নিয়ে কখনো ব্রেকিং নিউজ হয় নাহ। তাইতো এই একটি বিষয়ের গোড়ার সন্ধান আমি আজও পায়নি। কারণ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ চিন্তাশীলতো আর ধর্ষণের পক্ষে নয়। বড় বড় রাজনৈতিক দলের কোটি কোটি সমর্থকতো আর ধর্ষণের পক্ষে নয়। আর লক্ষ মসজিদের দেশের কোটি কোটি জুমার মুসল্লী তোর আর ধষর্কের সমর্থক নয়।

যতোদিন আমরা সমস্যার মূলে না গিয়ে মলাট নিয়ে "টক-ঝাল-মিষ্টি শো" করব ততোদিন সমাধান আমাদের কাছে দিল্লী কা লাড্ডুর মতো মুখরোচক হয়েই থাকবে কিন্তু সুদূরপ্রসারী কোন কার্যকরিতা আসবে নাহ। আর আমাদের মতো দেশের সরকারী সমাধানের কথা শুনতেই আমেরিকার অর্থনীতিবিদ মিল্টন ফ্রাইডমেনের একটা উক্তি মনে পড়ে গেল - কোন সমস্যার সরকারী সমাধান ঐ সমস্যাটির মতোই খারাপ।


মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.