![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সেই ’৯৮ সালের কথা। তখনও ইত্যাদি অনুষ্ঠানে দেখতাম প্রতি পর্বেই এমন একজন মানুষকে হাজির করা হতো যার কিনা আজব আজব শখ থাকত। যেমন পুরনো গাড়ি সংগ্রহ, তামাকের কলকি সংগ্রহ, শামুক সংগ্রহ, প্রজাপতি সংগ্রহ, কলম সংগ্রহ, মুদ্রা সংগ্রহ। আমারও এক আজব শখ ছিল কলমের খাপ সংগ্রহের। যাই হোক আমার ফুপিজানের ঘর পরিষ্কার কর্মসূচির খপ্পরে পড়ে সেই সংগ্রহশালা আবর্জনা স্তূপে পতিত হয়।
এ যুগের সর্বাধিক জনপ্রিয় গ্রহণযোগ্য শখের নাম হচ্ছে ছবি তোলা। একসময় ঘরে ঘরে শুধু কলম যোদ্ধা পাওয়া যেত, কিন্তু আজ যেন যুবকেরা সব ক্যামেরা যোদ্ধা। নাহ এরা যু্দ্ধের ছবি তোলে নাহ। এরা সহস্রাধিক লাইক পাওয়া তরুনীর সুশীল ছবি তুলে উহার ক্রেডিট নিয়ে যুদ্ধ জয়ের আনন্দে মেতে উঠেন।পৃথিবীর কোন উন্নত দেশেও যুবকদের নখদপর্ণে এতো প্রফেশনাল ক্যামেরা পাওয়া যাবে নাহ তা আমি নি:সন্দেহে বলে দিতে পারি।
এবার আসা যাক র্যাংকিএ দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা শখ নিয়ে। রাস্তার দেয়ালে বড় করে লিখা অনেকেই খেয়াল করে থাকবেন “গীটার শিখুন, মোবাইল নং-….”। লম্বা চুল আর গলায় ঝুলানো একটা গীটার। ব্যস, আপনি যে শখের (Hobby বুঝাইছি, চুপারইস্টার নাহ) বাজারে অনেক এগিয়ে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে নাহ।
বর্তমান যুব সমাজের শখ কিংবা passion এর এক বিশাল অংশ জুড়ে রয়েছে গীটার আর ক্যামেরা। ভ্রমণের শখ যাদের রয়েছে তাদের অধিকাংশেরই উদ্দেশ্য ভাল ছবি তুলা, নতুন স্থান দর্শন কিংবা জানা নয়। বই পড়া, পর্বত আরোহন, পেপার কাটিং, ডাকটিকিট সংগ্রহ, কাব্য রচনা, অটোগ্রাফ সংগ্রহ, বাণী সংগ্রহ, রন্ধন শিল্পচর্চা, পাখি সংগ্রহ, আকাশ দেখা, চলচিত্র সংগ্রহ করা, অরিগ্যামি, কুরুশ শিল্পচর্চা, বুনন শিল্পচর্চা, প্রযুক্তিচর্চা, পুরাতত্ন সামগ্রী সংগ্রহ ইত্যাদি শখের পসড়া আজ ৬৮ হাজার গ্রাম বাংলা হতে বিলুপ্ত প্রায়। যে দু-চারজন এসব উদ্ভট শখ পোষেন তাদের বড় পরিসবে প্রায়ই নাজেহাল হতে হয়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শখ ছিল বিভিন্ন ডিজাইনের কলম সংগ্রহ করা, ভ্রমণ করা, চিঠি লিখা। হিটলারের শখ ছিল ভায়োলিন বাজানো। মাইকেল মধুসূদন দত্তের শখ ছিল রুমাল সংগ্রহ করা। আইনস্টাইনের শখ ছিল ডাকটিকিট সংগ্রহ করা, বিজ্ঞান চর্চা নয়। বর্ধমান জেলার অসিতবরণের শখ হচ্ছে তিনি পৃথিবীর জীবিত সব বিখ্যাত ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদেরকে চিঠি লিখেন। লিওনার্দো দা ভিঞ্চি বাজার হতে খাচায় বন্দী পাখি কিনতেন। তারপর সেগুলো খোলা আকাশে মুক্ত করে দিতেন।
আপনাকে আপনার শখের মধ্যেই বেঁচে থাকার স্বম্বল খুঁজতে হবে এমন কোন কথা নেই। পুরান ঢাকার টমটম ব্যবসায়ীরা বছরের অধিকাংশ সময়ই লোকসানে কিংবা কম মুনাফায় বাপ-দাদার এই ব্যবসা ধরে রেখেছেন শুধুমাত্র শখের বশে। আবার শখের বশে গাভীর খামার করে আজ কোটিপতি হয়েছেন সিলেটের আশিক মিয়া। শখ আপনার, জীবন আপনার, বেঁচে থাকার স্বার্থকতা খুঁজতে হবে আপনাকে। অর্জনের পিছনে না ছুটে জীবনের উদ্দেশ্য খুজেঁ বেড়ান। আর তা খুজে পেলে্ই জীবনের স্বাদ পাবেন, আর পাবেন বেঁচে থাকার স্বার্থকতা।
©somewhere in net ltd.