নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আর্ফ জামান সুজন

আর্ফ জামান সুজন

আর্ফ জামান সুজন › বিস্তারিত পোস্টঃ

পেশা চৈতন্য

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৮ রাত ১২:১১

একবার ক্যাফেটেরিয়ায় বিভাগীয় গোটা দশেক ছোট ভাই বোন ক্যারিয়ার সম্পর্কে এক গাদা প্রশ্ন করল আমাকে। এর আগে আমার দুজন সহপাঠী ওদেরকে আমার কাছেই যেতে বলেছিল। এর কারণ ছিল জুনিয়রদের ক্যারিয়ার সম্পর্কে মগজ ধোলাই করতে আমার জুড়ি নেই। ক্যারিয়ার সম্পর্কে আমার বক্তব্য শুনে ছেলেগুলো আনন্দিত ও মেয়েগুলো হতবাক হয়েছিল। কেননা আমি সুশান্ত দা, ডন ভাই আর সুখন ভাইকেই ছাড়িয়ে গিয়েছি বলে আমার কাছে মনে হয়। তো এক নজর চোখ বুলানো যাক আমার সেই বক্তব্যে- “দেখ বৎস তুমি যদি ছেলে হও তবে ক্যারিয়ার বাছাই করবে ঠিক যেভাবে তুমি শ্বশুর বাছাই কর। আর তুমি যদি মেয়ে হও তবে ক্যারিয়ার বাছাই করবে ঠিক যেভাবে জামাই নির্বাচন কর।“
যেহেতু লেডিস ফার্স্ট সুতরাং মেয়েদের ক্ষেত্রটা আগে বলি। ভালো উপার্জনক্ষমতা, ভদ্রতা, যত্নশীলতা, সুদর্শন ও শিক্ষিত ছেলেকে স্বামী হিসেবে যে কোন মেয়েই পেতে চাইবে। এবার চিন্তা করুন সেই একই মেয়ে যদি ক্যারিয়ার হিসেবে বেশ ভাল অংকের বেতন, সুন্দর কর্ম পরিবেশ, আকর্ষণীয় পদবীসম্পন্ন কোন পেশা চায় তবে তার ক্যারিয়ার সিলেকশন যথার্থ হবে।
এ যুগের ধান্দাবাদ ছেলেরা শশুর চায় বেশ অর্থ সম্পদশালী, মেয়ে জামাই অনুগত, জামাইকে ওয়ারিশ ভাবনাকারী ও জামাইয়ের আবদার রক্ষাকারী। সুতরাং ওদের পেশা হওয়া উচিত যেখানে যথেষ্ট তোষামোদ পাওয়া যাবে, মোটা অংকের বেতন ও সাথে ভবিষ্যত পেনশনও রয়েছে।
আমার কথা শুনে একটি পান্জাবী পড়া ছেলে কিছুটা হতাশ। সবাই খাবার টেবিল ছেড়ে আমাকে সালাম দিয়ে চলে গেছে। কিন্তু ঐ ছেলেটি এখনো সমুচার দিকে তাকিয়ে ধীরে ধীরে খাচ্ছে। আমি ওর কাছে গেলাম আর পিঠের উপর হাত রেখে বললাম, কি চিন্তিত এখনো ক্যারিয়ার নিয়ে? কি হতে চাও জীবনে? আমি জোড়াজোড়ি করব নাহ, কিন্তু তুমি চাইলে তোমার উদ্বেগের কারণ আমাকে বলতে পার। সে বলল, ভাইয়া আমার শ্বশুর শুধুমাত্র কাফির ও মুশরিক না হলেই আমি খুশি, আলহামদুলিল্লাহ। তাছাড়া আমিতো কোন পতাকার সম্মানার্থে দাড়াঁতে পারব নাহ, কোন মৃত্যু কিংবা জন্ম দিবস পালন করতে পারব নাহ, কারো মাজারে ফুল দিতে পারব নাহ, যতোটুকু সম্ভব নারী নেতৃত্বের অধীনে কর্ম করতে পারব নাহ, সুদ ও ঘুষ খেতে পারব নাহ, প্রতারণা করতে পারব নাহ, অন্তত আমার অধীনে কোন অসত কাজ বরদাশত করতে পারব নাহ, সালাতের সময় কাজ করতে পারব নাহ ও দাড়ি মুন্ডন করতে পারব নাহ। বিবিএ পড়ার পর এরকম কোন পেশা আছে কি আমার জন্য?
একটা বিশাল দীর্ঘশ্বাস নিলাম। তারপর ছেলেটিকে জিজ্ঞাসা করলাম, আদম আলাইহিস সালাম, ইদ্রিস আলাইহিস সালাম, ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম, নূহ আলাইহিস সালাম ওনাদের পেশা কি ছিল তুমি কি জান? ছেলেটি বলতে একে এক করে বলে উঠল, কৃষক, দর্জি, রাজমিস্ত্রী ও কাঠ মিস্ত্রি। জিজ্ঞাসা করলাম যে ওনাদের কি পৃথিবীর মানুষ পেশার জন্য মনে রেখেছে। অবশ্যই নাহ। সুতরাং হালাল রিজিকের যোগাড় করাই উদ্দেশ্য হওয়া উচিত। আর তোমার শিক্ষা ও আদর্শকে শুধুই তোমার পেশার হাতিয়ার মনে করো নাহ। এগুলো ব্যবহার কর একজন আদর্শবান মুসলিম হবার জন্য। যতোটুকু সম্ভব মানুষের কল্যাণের জন্য কাজ কর। তাহলেই প্রতিরাতে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবে ও পেশা নিয়েও দুশ্চিন্তায় থাকবে নাহ। আর তাছাড়া মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসালাম পশু চড়িয়েছেন, ব্যবসা করেছেন ও বাগানেও কাজ করেছেন। সুতরাং পেশা নিয়ে তুমি কোন প্রকার চিন্তাই কর নাহ। প্রায় ঘন্টাখানে কথা হলো ছেলেটির সাথে। ছেলেটিকে আব্দুল রাহমান আব্দুল্লাহের " A Glimpse at the Beauty of Islam" বইটি উপহার দিয়েছিলাম। ঐদিন বিদায় নেবার সময় ছেলেটি বলেছিল, ভাইয়া কিছু মনে করবেন নাহ, আসলে সাধারণের প্রতি আপনার উপদেশ শুনে মনে হয়নি যে আপনি আমার জন্য কার্যত কোন উপদেশ দিতে পারেন। যাই হোক দোয়া করি আপনি যেন অচীরেই একজন প্রাকটিসিং মুসলিম হিসেবে প্রত্যাবর্তন করেন। আমিন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.