নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

পৃথিবী আমার আবাস। মানুষ আমার পরিচয়।

আবীর চৌধুরী

ইলেক্ট্রিক্যাল এন্ড ইলেক্ট্রনিক্স ইঞ্জিনিয়ার

আবীর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

বন্ধুর ডায়েরী থেকে-৬ঃ ফর্মাল গেট আপে একদিন

২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৩:৫৫

সর্বপ্রথমেই খুশি মনে আপনি আপনার এলোমেলো চুল এবং ফেসিয়াল হেয়ার বিসর্জন দেবেন, কারন এখন না আপনি হতে চান কবি, না গড়তে চান ব্যান্ড এবং গাইতে চান গান। যেহেতু সারাবছর ফর্মাল তো দূরের কথা রেগুলার ধোয়া কাপড়ই পড়া হয় নি, এইদিনে আপনি ভাববেন আপনার সব কাপড়ই রেডী আছে। কিন্তু শেষ মুহূর্তে গিয়ে দেখবেন শার্টটা যে একবছর আগে পড়ে এসে সেই যে কোনোমতে ধুয়ে ফেলে রেখেছিলেন ওয়ার্ড্রোবের এক কোনায়, সেটা সেখানেই পড়ে আছে এখনো যেটাকে তড়িঘড়ি সাত তলা সিড়ি বেয়ে নেমে আয়রন করে এনে আবার দ্বিগুন গতিতে সেই সিড়ি বেয়েই উঠে এসে সাথে সাথে গায়ে চড়িয়ে দেয়া হবে। সদ্য বিগত শীতে টানা পনেরো দিন একই জিন্স পড়ে এসে আজ যখন আপনি ধবধবে, চকচকে গ্যাবার্ডিনখানা পায়ে ঢুকাবেন, আপনার রোমকূপগুলো কিঞ্চিত ইতস্তত বোধ করে উঠবে। গতবার ধার-কর্জ করে টাই জোগাড় করতে হয়েছিলো, এবং দূর্ভাগ্যক্রমে সেটা ছিলো পার্টি টাই। এবার আপনি একটা টাই কিনে আনবেন, কিন্তু গতবার ধার করা টাই পড়ানোর মানুষ থাকলেও এবার নিজের কেনা টাই পড়িয়ে দেয়ার মতো কেউ নেই। তাই আপনি আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে মনোযোগ সহকারে টাইখানা পারফেক্ট শেইপে বাধার কসরত করতে করতে মনে মনে নিজেকে অবুঝের মতো করে বুঝ দেবেন, 'লাগে না কাউকে আর। আমিই যথেষ্ট আমার জন্য।' শার্টটা ইন করে হাতার বোতামদ্বয় লাগিয়ে যখন সোজা হয়ে দাড়াবেন, মনে হবে আপনাকে কেউ পেছন থেকে জাপটে ধরে রেখেছে, আপনাকে কেউ বেধে রাখার পায়তারা করেছে। আপনি না ঠিকমতো বসতে পারবেন, না ঠিকমতো পাশ ফিরতে পারবেন, না উচু-নিচু হতে পারবেন। মনে মনে ভাববেন, কাউকে কিছু না করা সত্ত্বেও নিজ সৃষ্ট কারাগারে প্রবেশ করলাম গোটা দিনটার জন্য। হঠাট করেই খেয়াল করবেন, কোমড়ের চর্বি যেমন কমে গেছে আপনার, সিনার আয়তনও চুপসে গেছে জীবন নামক ভাইরাস আপনার দেহে সংক্রমিত হয়েছে বলে। এরপর আপনি বের হবেন, বহিরঙ্গ দিয়ে চমক দেখানোর অর্থহীন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে।

এখন সমস্যা হলো, আপনি একজন ব্যাচেলর এবং মাসের শেষ সপ্তাহ প্রায় সমাগত। লোকাল বাসে স্টেশন পর্যন্ত গিয়ে ভার্সিটির ট্রেনে করে যাওয়া ছাড়া আপনার কাছে পোছপাছ রক্ষা করার অন্য কোনো উপায় নেই। অগত্যা তাই করা, এবং ফলস্বরুপ যেটা হলো সেটা হচ্ছে, ঝিকমিক করতে থাকা কাপড়ে নিম্নস্তরের বালু এবং নিচুস্তরের মানুষের ঘাম লেগে যাওয়ার ভয় ঢুকে গেলো আপনার ভেতর। আপনি অন্যদিন গা লাগিয়ে বসা সহযাত্রীকে আজ অচ্ছুতের আসনে বসিয়ে নিজেকে পরিশুদ্ধ রাখার ব্যপক প্রয়াস চালাতে লাগলেন। ট্রেনে উঠার পর যখন সবগুলো চোখ আপনার দিকে ফিরলো, তখন নিজেকে আপনি যুগপত অবিস্মরনীয় এবং ভাড় হিসেবে খুজে পেলেন। ট্রেন ভার্সিটি পৌছানোর মাঝপথে হঠাত একগাদা ধুলার চাদর বিছিয়ে দিলো আপনার এই মেকি বাবুয়ানার গোলামিকে অভ্যর্থনা জানাতে। আপনার আশেপাশের সবাই কিছু না কিছু একটা করছে, হয় আড্ডা দিচ্ছে নয়তো পরীক্ষায় ফার্স্ট ক্লাস তোলার জন্য চটি শিট পড়ছে আর নয়তো প্রেমকাব্য রচনা করছে। কিন্তু আপনি রোবটের মতো নিশ্চল চিত্তে অনেকটা সঙের মতো ঘাড় সোজা করে সামনের দিকের বগির দেয়ালে তাকিয়ে আছেন, উদ্দেশ্য ইন নষ্ট হওয়া কিংবা কাপড়ে দাগ লাগা আটকানো। এরুপ রিডিকিউলাস কন্ডিশনে নিজেকে তাদেরই একজন প্রমান করার জন্য তখন আপনি ব্যাগ থেকে শিকওয়া ও জওয়াবে শিকওয়ার অক্সফোর্ড থেকে বের হওয়া ইংরেজি অনুবাদটি বের করবেন এবং পড়তে পড়তে কখন যে গন্তব্যে পৌছে যাবেন টেরই পাবেন না।

অত:পর, ফ্যাকাল্টিতে গিয়ে দেখবেন আপনার সিরিয়াল আসতে আরো চার ঘন্টা বাকি। ঘন্টাখানেক পড়েই আপনি আপনার এই বিশেষ গেট আপের সাথে ইজি হয়ে যাবেন, কারন দেখবেন ফ্রেশার মেয়েগুলো উকিঝুকি দিচ্ছে। বুঝতে পারবেন, চোটপাট আছে এই রুপে। এই চোটপাট দেবে আপনার কনফিডেন্সের আগুন জ্বালিয়ে, ভাইভা বোর্ডে শিক্ষকরা যে পরিমান প্রশ্ন করলেন তার চাইতে অধিক চটপটে উত্তর দিয়ে ফাইনালি আদায় করেই নেবেন উপস্থিত সকলের কাছ থেকে, 'ছেলেটা জানে। ছেলেটা পড়ে নিয়মিত।'

ভাইভা শেষ হতে হতে পড়ন্ত বিকেল। শার্ট গোজা অবস্থা থেকে বের করে এনে ছেড়ে দেবেন অবাধ্যের মতো, শার্টের হাতা গুটিয়ে ফেলবেন বরাবরের মতোই, টাইটা একটু লুজ করে দিয়ে শার্টের প্রথম বোতামটা খুলে দিয়ে ফিরতি ট্রেনে চাপবেন এবং অনিকেত প্রান্তর উচ্চারন করতে করতে শহরের দিকে ফিরতে থাকবেন। সর্বশেষ, বাসায় এসে আবারো সব খুলে হাফপ্যান্ট পড়ে আরাম করে বসতে না বসতেই চট করে টের পাবেন' শেষ অবশেষে ২০১৬ এর আবর্জনার স্তুপ এবং অভিশপ্ত দ্বিতীয় বর্ষ। থার্ড ইয়ারে উঠে গেলেন, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের অর্ধেক শেষ, আর বাকি কয়েকটা দিন তারপরেই কুকুরের মতো খাটো এবং শুয়োরের মতো ফলাও-জীবনধারায় প্রবেশ। প্রবল ঝাপটা দেবে এই ফ্যাক্টগুলো আপনার চর্মে। মনে হবে যেন কানের নিচে বাস্তবতার একটি চরম চাপড় খেয়েছেন।

এইসব কিছুর পর এখন আপনার ঘুম আসবে, এবং আপনি ঘুমের ঘোরে কষ্টকল্পনাবৃত সুখস্বপ্ন দেখছেন'
'সে টাই পড়াচ্ছে, আপনি জড়িয়ে ধরেছেন, অত:পর...।'

লিখেছেনঃ Muhammad A. Bashed

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.