![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিষয় যখন মুদ্রাদোষ; মুদ্রাদোষ নিয়ে কিছু কথা
মুদ্রাদোষ কাকে বলে?
মুদ্রাদোষ হলো এমন একটি অভ্যাস, যা কোনো ব্যক্তি অনিচ্ছাকৃতভাবে বারবার ব্যবহার করেন। এটি কথায় বা আচরণে গভীরভাবে প্রোথিত থাকে। শব্দটি "মুদ্রা" (অর্থাৎ ছাপ বা চিহ্ন) এবং "দোষ" (অর্থাৎ ত্রুটি) এর সমন্বয়ে গঠিত।
কেন একে মুদ্রাদোষ বলা হয়?
এটিকে মুদ্রাদোষ বলা হয় কারণ এটি ব্যক্তির কথায় বা আচরণে এমন একটি ছাপ ফেলে, যা বারবার ফিরে আসে। যেমন: কথায় কথায় "এই যে", "মানে", বা "হলো গিয়ে" বলা, কিংবা শারীরিক অভ্যাস যেমন নখ কামড়ানো। এই অভ্যাসগুলো সাধারণত অনিচ্ছাকৃত এবং পরিবর্তন করা কঠিন, তবে সচেতন প্রচেষ্টায় কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।
জীবনে এমন কিছু মানুষের সাথে কখনও কখনও দেখা হয়ে যায়, যাদের কথা শুনলে মনে হয় তারা বাংলা ভাষাকে নতুন এক মাত্রা দিয়েছেন। তাদের কথার ফাঁকে ফাঁকে এমন কিছু শব্দ বা বাক্যাংশ লেগে থাকে, যা শুনতে শুনতে আমাদের কানে পাক খায়, মস্তিষ্কে দোলা দেয়, আর হৃদয়ে এক ধরনের হাস্যরসের সৃষ্টি করে। আজ আমি এমনই কয়েকজন ব্যক্তিত্বের কথা বলব, যাদের মুদ্রাদোষ আমাদের জীবনে এক বিশেষ রং যোগ করেছে।
প্রথমেই আসি "হলো গিয়ে" মহাশয়ের কথায়। এই ভদ্রলোকের কথা শুনলে মনে হয়, তিনি বাংলা ভাষায় একটি নতুন টেন্স চালু করতে চান। তার প্রতিটি বাক্যে "হলো গিয়ে"র একাধিক ব্যবহার থাকবেই। যেমন:
"কাল রাতেই হলো গিয়ে, আমার খুব ঘুম হলো গিয়ে পেলো না।"
"আমি তো হলো গিয়ে বাজারে হলো গিয়ে গিয়েছিলাম, হলো গিয়ে দেখলাম সব দোকান বন্ধ।"
"তুমি হলো গিয়ে এটা হলো গিয়ে করলে কেন হলো গিয়ে?"
শুনতে শুনতে মনে হয়, "হলো গিয়ে" শব্দটি তার মুখ থেকে বেরোতে বেরোতে ক্লান্ত হয়ে পড়ছে, কিন্তু তিনি "হলো গিয়ে" শব্দ দু'টিকে বিশ্রাম দিতে নারাজ। শ্রোতা হিসেবে আমরা ক্লান্ত, তিনি কিন্তু অটল।
এরপর আসি "মোট কথা" মহাশয়ের প্রসঙ্গে। এই ভদ্রলোকের কাছে সব কথাই "মোট কথা"। তিনি যেন প্রতিটি বাক্যকে সংক্ষিপ্ত করার জন্য "মোট কথা"র আশ্রয় নেন। যেমন:
"মোট কথা, আমি তো বলেছি, মোট কথা, তুমি শুনলে না।"
"মোট কথা, কাল রাতেই বৃষ্টি হচ্ছিল, মোট কথা, আমি ভিজে গেলাম।"
"মোট কথা, তুমি যদি মোট কথা শুনতে চাও, মোট কথা, আমি বলব।"
শুনতে শুনতে মনে হয়, তিনি যেন প্রতিটি বাক্যের আগে "মোট কথা" বলেই নিশ্চিত করেন যে, শ্রোতা তার কথার সারমর্ম বুঝতে পারবে। কিন্তু বাস্তবে, "মোট কথা" শব্দটি এতবার শুনে আমরা কথার মূল কথাই ভুলে যাই।
সবশেষে আসি "এই যে" মহাশয়ের কথায়। এই ভদ্রলোকের কথা শুনলে মনে হয়, তিনি যেন প্রতিটি শব্দের আগে "এই যে" বলে নিশ্চিত করেন যে, তিনি কথা বলছেন। যেমন:
"এই যে, কাল রাতেই এই যে, আমি এই যে, বাজারে গিয়েছিলাম।"
"এই যে, তুমি এই যে, এটা এই যে, করলে কেন?"
"এই যে, আমি এই যে, বলছি এই যে, শুনছো?"
শুনতে শুনতে মনে হয়, তিনি যেন প্রতিটি শব্দের মধ্যে "এই যে" ঢুকিয়ে দিচ্ছেন, যাতে কথার ফ্লো ঠিক থাকে। কিন্তু বাস্তবে, "এই যে" শব্দটি এতবার শুনে আমরা কথার ফ্লোই হারিয়ে ফেলি।
এই সব মুদ্রাদোষের মহান ব্যক্তিত্বদের কথা শুনতে শুনতে আমরা কখনো হাসি, কখনো বিরক্ত হই, আবার কখনো তাদের কথার মধ্যে এক ধরনের মজা খুঁজে পাই। কিন্তু একথা ঠিক, তাদের এই অভ্যাস আমাদের জীবনে এক বিশেষ মাত্রা যোগ করে। তাই, "হলো গিয়ে", "মোট কথা", এবং "এই যে"-র রাজত্ব যতদিন থাকবে, ততদিন আমাদের কথোপকথনেও থাকবে একটু হাসি, একটু বিরক্তি, আর একটু মজা।
মোট কথা, এই যে, হলো গিয়ে, এটা হলো গিয়ে আমাদের জীবনের হলো গিয়ে এক বিশেষ অধ্যায়। এই যে, হলো গিয়ে, মোট কথা, এটা হলো গিয়ে আমাদেরকে হলো গিয়ে হাসাতেই থাকবে।
০৪ ঠা মার্চ, ২০২৫ সকাল ৯:৪০
আবু ছােলহ বলেছেন:
পড়ে মজা লাগলো জেনে আনন্দিত। শুভকামনা।
২| ০৪ ঠা মার্চ, ২০২৫ সকাল ১০:৪৮
রাজীব নুর বলেছেন: চিন্তায় পরে গেলাম। আমার কি কোনো মুদ্রাদোষ আছে?
০৪ ঠা মার্চ, ২০২৫ সকাল ১১:০৮
আবু ছােলহ বলেছেন:
অস্বাভাবিক কিছু নয়। থাকলেও থাকতে পারে। ভালোভাবে খুঁজে দেখুন। সুরভী ম্যাডামকে জিজ্ঞেস করলে সঠিক তথ্য পেতে পারেন।
©somewhere in net ltd.
১|
০৪ ঠা মার্চ, ২০২৫ রাত ১:১০
আদিত্য ০১ বলেছেন: হা হা হা।। পড়ে মজা লাগলো