নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

উতস

আবু সায়েদ

student

আবু সায়েদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

তাবলীগের আমীর মাওলানা সাদ সাহেবের মতাদর্শের ব্যাপারে দারুল উলুম দেওবন্দের ফতোয়া

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৩:৩২

মাওলানা সাদ সাহেবের মতাদর্শের ব্যাপারে দারুল উলুম দেওবন্দের ফতোয়ার বাংলা অনুবাদ
প্রাক কথন
জনাব মাওলানা মুহাম্মদ সাদ কান্ধলবি সাহেবের কয়েকটি ভ্রান্ত ধ্যানধারণা এবং প্রশ্ন উত্থাপনযোগ্য বয়ানসমূহের ব্যাপারে দেশ ও দেশের বাইরে থেকে প্রাপ্ত চিঠিপত্র, নানান প্রশ্ন দেখে দারুল উলুম দেওবন্দের মুরব্বি পর্যায়ের আসাতিযায়ে কেরাম ও মুফতিয়ানে কেরাম স্বাক্ষরিত সর্বসম্মত একটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিলো৷ কিন্তু সে লেখাটি ইস্যু করার আগে জানা গেলো, হজরত সাদ সাহেবের তরফ থেকে একটি প্রতিনিধিদল কথা বলার জন্য দারুল উলুম দেওবন্দে আসতে চায়|

তারা এসে হজরত সাদ সাহেবের তরফ থেকে এই বার্তা পৌঁছালো, তিনি নিজ মতামত প্রত্যাহার করার জন্য প্রস্তুত৷ তাই দেওবন্দের সিদ্ধান্তের একটি কপি তাদের মারফত মাওলানা সাদ সাহেব বরাবর পাঠানো হলো৷ তার পক্ষ থেকেও আমাদের পত্রটির একটি জবাব দেওয়া হলো৷ কিন্তু সামগ্রিকভাবে দারুল উলুম দেওবন্দ তার জবাব পেয়ে সন্তুষ্ট হতে পারেনি৷ এ বিষয়টি সবিস্তারে তার বরাবর পত্রের মাধ্যমে আবার পাঠানো হলো৷

আকাবির প্রতিষ্ঠিত তাবলিগজামাতের পবিত্র কাজকে উল্টো ধ্যানধারণার কবল থেকে রক্ষা করতে, মাসলাকে আকাবিরের ওপর কায়েম রাখতে, তাবলিগের ফায়দা এবং হক্কানি উলামায়ে কেরামের মাঝে এর ওপর পূর্ণ ভরসা অবশিষ্ট রাখতে, নিজেদের সম্মিলিত সিদ্ধান্তের ব্যাপারে মাদরাসা সংশ্লিষ্ট ও আলেমদের বরাবর উম্মাহর সঠিক সিদ্ধান্ত প্রেরণ করাকে দীনি কর্তব্য মনে করে দারুল উলুম দেওবন্দ৷ আল্লাহ তাআলা এই মোবারক জামাতকে পূর্ণাঙ্গ হেফাজত করুন৷ আমাদের সবাইকে মাসলাক ও আমলের দিক থেকে হকপথে কায়েম থাকবার তৌফিক দিন৷ আমিন৷

স্বাক্ষর
তারিখ : ৫/৩/৩৮ হিজরি
বিশেষ দ্রষ্টব্য: ফতোয়ার এ কপিটি ওলামায়ে কেরাম ও বিশেষ ব্যক্তিবর্গের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছিল। কিন্তু কোনোভাবে তা সোস্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে এর বিশ্বস্ততার ব্যাপারে জনমনে সন্দেহ দেখা দেওয়ায় তা দারুল উলুম দেওবন্দের ওয়েব সাইটে প্রকাশ করা হচ্ছে।

দারুল উলুম দেওবন্দের ফতোয়ার মূল বক্তব্য

বর্তমানে অধিকাংশ হক্কানি উলামায়ে কেরাম ও মাশায়েখগণের দাবী হলো, জনাব মাওলানা মুহাম্মদ সাদ কান্ধলবি সাহেবের চিন্তা-চেতনার ব্যাপারে দারুল উলুম দেওবন্দ যেন নিজেদের মতামত স্পষ্ট করে দেয়৷ সম্প্রতি বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের নির্ভরযোগ্য বেশ কয়েকজন ওলামায়ে কেরামের পক্ষ থেকে আমাদের কাছে এ বিষয়ে চিঠি-পত্রও এসেছে৷ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকেও দারুল উলুম দেওবন্দের ইফতা বিভাগে বহু প্রশ্ন এসেছে।
তাবলিগের ভেতরকার মতনৈক্য ও যাবতীয় ব্যবস্থাপনার বিষয়গুলো উপেক্ষা করে বলতে চাই, বিগত কয়েক বছর ধরে প্রশ্নপত্র ও চিঠির মধ্যমে মাওলানা মুহাম্মদ সা’দ কান্ধলবি সাহেবের মতাদর্শ ও চিন্তাধারা সম্পর্কিত তথ্য দারুল উলুম দেওবন্দে পৌঁছুতে থাকে৷ সেগুলো যাচাই-বাচাই করার পর স্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হয় যে, তার বয়ানে কোরআন - হাদিসের ভুল ও মনগড়া ব্যাখ্যা এবং অপব্যাখ্যা রয়েছে। কিছু ক্ষেত্রে আম্বিয়ায়ে কেরাম আলাইহিস সালামের ব্যাপারে বেয়াদবিমূলক আচরণ স্পষ্ট হয়ে ওঠে৷ এমনকি, অনেক বিষয় এমনও রয়েছে, যার ফলে তিনি সংখ্যাগরিষ্ঠ উম্মত ও ইজমায়ে সালফের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন।
বেশকিছু ফিকহি মাসায়েলেও তিনি গ্রহণযোগ্য দারুল ইফতাসমূহের দেয়া ফতোয়ার বিপরীত ভিত্তিহীন মতামত ব্যক্ত করে সাধারণ জনতার সামনে কঠোরতার সাথে বয়ান করে থাকেন৷
তাবলিগী কাজের গুরুত্ব বয়ান করতে গিয়ে দীনের অন্যান্য শাখার বিরুদ্ধে কঠোরভাবে সমালোচনা করেন। তাতে দীনের অন্যান্য শাখাকে হীন ও গুরুত্বহীন মনে হয় এবং সালাফে সালেহিনের প্রাচীন দাওয়াতি পদ্ধতিকে অস্বীকার ও প্রত্যাখান করা হয়। ফলে আকাবির ও আসলাফের মাহাত্ম্যের ঘাটতি বরং হীনতা প্রদর্শিত হয়৷
তার এই মতাদর্শ তাবলিগ জামাতের সাবেক দায়িত্বশীল হজরত মাওলানা ইলিয়াস সাহেব রহ., হজরত মাওলানা ইউসুফ সাহেব রহ., হজরত মাওলানা ইনামুল হাসান সাহেব রহ.-এর চিন্তাধারা ও ককর্মপদ্ধতি হতে একেবারে ভিন্ন।
মাওলানা মুহাম্মদ সা’দ সাহেবের বয়ান ও উদ্ধৃতি যতোটুকু আমাদের পর্যন্ত পৌঁছেছে এবং যেগুলো তার ব্যক্তব্য হওয়া-ও আমাদের নিকট প্রমাণিত হয়েছে, তার মধ্য থেকে নিম্নে আংশিক আলোচনা করা হচ্ছে :

০১. রাব্বুল আলামিনের ডাকে হজরত মুসা আলাইহিস সালাম আপন জাতি ও জামাত ছেড়ে একাগ্রতায় চলে যান৷ ফলে বনি ইসরাইলের ৫ লাখ ৮৮ হাজার মানুষ পথভ্রষ্ট হয়ে যায়৷ মূল তো ছিলেন তিনিই৷ আর তিনিই ছিলেন দায়িত্বশীল৷ মূল যিনি, তার থাকা উচিত ছিল৷ হজরত হারুন আলাইহিস সালাম তো ছিলেন তার সহযোগী৷
০২. আত্মশুদ্ধি ও তওবার পূর্ণতার জন্যই তাবলীগি কাজের জন্য ঘর থেকে বের হতে হবে৷ তওবার তিনটি শর্ত তো মানুষের জানা আছে। কিন্তু চতুর্থটি জানা নেই, মানুষ তা ভুলে গেছে৷ আর সেটি হলো আল্লাহর পথে বের হওয়া৷ এটি মানুষ ভুলে গেছে৷ হাদিসে আছে, নিরানব্বইজন মানুষের খুনির সাক্ষাৎ কোনো পাদ্রীর সঙ্গে হয়েছিল৷ পাদ্রী তাকে নিরাশ করেছে৷ এরপর তার দেখা এক আলেমের সঙ্গে হয়েছিল৷ আলেম তাকে বলেছেন, ‘তুমি অমুক জনবসতির উদ্দেশে বেরিয়ে পড়ো৷'
অতঃপর সেই খুনি বের হলো৷ তাই, আল্লাহ তাআলা তার তওবা কবুল করেন৷ এর দ্বারা বোঝা যায়, তওবার জন্য আল্লাহর পথে বের হওয়া-ও শর্ত৷ অন্যথায় তওবা কবুল হবে না৷ এই শর্তটি মানুষ ভুলে গেছে৷ কেবল অন্য তিনটি শর্ত বয়ান করে ৷ অথচ চতুর্থ শর্ত অর্থাৎ আল্লাহর পথে বের হওয়ার শর্তটি সবাই একদম ভুলে গেছে।
০৩. হেদায়েতপ্রাপ্তির স্থান একমাত্র মসজিদই৷ যেখানে কেবল ধর্মীয় বিষয়াদি পড়াশোনা হয়, তাদের সম্পর্ক যদি মসজিদের সঙ্গে কায়েম না হয়, তাহলে আল্লাহর শপথ! সেখানেও দীন নেই। সেখানে ধর্মীয় পড়াশোনা হতে পারে, কিন্তু দীন বা ধর্মীয় ইবাদত হবে না৷
(এখানে মসজিদের সাথে সম্পর্ক থেকে উদ্দেশ্য মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়া নয়৷ বরং তাবলিগী কাজে নিজেকে নিয়োজিত করাই উদ্দেশ্যে। কেননা, তিনি কথাটি মসজিদের গুরুত্ব এবং দীনি বিষয় কেবলমাত্র মসজিদেই আলোচনা করার ব্যাপারে নিজের বিশেষ মত বয়ান করতে গিয়ে বলেছেন৷ বিস্তারিত অডিওতে রয়েছে। তার বিশ্বাস হলো, দীনের কথা মসজিদের বাইরে বলা সুন্নতের পরিপন্থী; আম্বিয়ায়ে কেরাম ও সাহাবায়ে কেরামের মতাদর্শের খেলাফ)৷
০৪. পারিশ্রমিক নিয়ে দীন শেখানো দীন বিক্রির নামান্তর৷ যেনা-ব্যভিচারে লিপ্ত ব্যক্তিরা পারিশ্রমিক গ্রহণকারী কুরআন শিক্ষাদাতাদের আগে জান্নাতে যাবে৷
০৫. আমার মতে ক্যামেরাযুক্ত মোবাইল পকেটে রাখা অবস্থায় নামাজ হয় না৷ উলামায়ে কেরাম থেকে যতো ইচ্ছে ফতোয়া নাও, ক্যামেরাযুক্ত মোবাইলে কোরআনে কারিম শোনা ও তা দেখে কোরআন তেলাওয়াত করা কোরআনে কারিমের অপমান করার নামান্তর৷ এর মাধ্যমে গোনাহ ছাড়া সওয়াব হবে না৷ এর কারণে আল্লাহ তাআলা কোরআনে কারিমের ওপর আমল করা থেকে বঞ্চিত করে দেবেন৷ যেসব ওলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে বৈধতার ফতোয়া দিয়ে থাকেন, তারা নিঃসন্দেহে ‘ওলামায়ে সু' তথা মন্দ আলেম৷ তাদের মন-মস্তিষ্ক ইহুদি-খৃস্টানদের চিন্তাচেতনায় প্রভাবিত৷ তারা নিরেট মূর্খ আলেম৷ আমার মতে যে আলেম এর বৈধতার ফতোয়া দেয়, আল্লাহর শপথ! তার অন্তরে আল্লাহ তায়া’লার কালামের মাহাত্ম্য নেই৷ এ কথা আমি এজন্য বলছি, আমাকে একজন আলেম জিজ্ঞাসা করেন, ‘এতে অসুবিধে কী?' আমি বলেছি, ‘আসলে এই আলেমের অন্তর আল্লাহ তাআলার বড়ত্বশূন্য; চাই তার বুখারি শরিফই মুখস্থ থাকুক না কেনো৷ আরে, বুখারি শরিফ তো অমুসলিমদেরও মুখস্থ থাকতে পারে৷
০৬. কোরআনে কারিম বুঝে-বুঝে পাঠ করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর ওয়াজিব৷ যে উক্ত ওয়াজিব ছেড়ে দেবে সে ওয়াজিব ছেড়ে দেবার গোনাহে লিপ্ত হবে।
০৭. আমার আফসোস হয়, যখন আমাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, ‘তোমার ইসলাহি সম্পর্ক কার সঙ্গে?' তারা কেন বলে না, আমার ইসলাহি সম্পর্ক এই দাওয়াত ও তাবলিগের কাজের সঙ্গে! এ কথার ওপর বিশ্বাস করো, দাওয়াতের কাজ তরবিয়তের জন্য শুধু যথেষ্ট নয়; বরং গ্যারান্টিদাতা৷ আমি অনেক ভেবে দেখেছি, কর্মীদের পদস্খলনের মূল কারণ এটাই৷
আমার তো সেসব লোকের জন্য চিন্তা হয়, যারা এখানে বসে বলে ‘ছয় নম্বর পূর্ণ দীন নয়৷' নিজের দইকে নিজেই টক বর্ণনাকারী কখনও ব্যবসা করতে পারে না৷

আমার বড় আফসোস হলো, যখন আমাদের একজন তাবলিগি ভাই আমাকে বলল, ‘আমার এক মাসের ছুটি দরকার৷ অমুক শায়খের নিকট এতেকাফের উদ্দেশ্যে যেতে হবে৷' আমি বললাম,এখনো পর্যন্ত তোমরা দাওয়াত ও ইবাদতকে এক করো নি৷ তাবলিগের কাজে চল্লিশ বছর কাটানোর পর কিভাবে একজন লোক বলতে পারে যে, ইতিকাফের জন্য আমাকে এক মাসের ছুটি দিতে হবে?! আমি বললাম, যে ইবাদতের জন্য দাওয়াত থেকে ছুটি চাচ্ছে, সে দাওয়াত ছাড়া ইবাদতে উন্নতি করতে পারবে কী করে?
আমি পরিষ্কারভাবে বলছি, নবীর কাজ ও ওলীর কাজের মধ্যে পার্থাক্য হলো কেবল আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়া বা না হওয়া।
আমি স্পষ্টভাবে বলছি, আমরা কেবল দীন শেখবার জন্য তাবলিগে বের হই না৷ কারণ দীন শেখার তো আরও পথ-পন্থা রয়েছে৷ তাহলে তাবলিগে বের হওয়া কেন জরুরি? দীনই যদি শিখতে চাও তাহলে মাদরাসা থেকে শেখো, খানকা থেকে শেখো৷
তার বয়ানের কিছু এমন অংশও পৌঁছেছে, যার মাধ্যমে স্পষ্ট হয় মাওলানা মুহাম্মদ সা’দ সাহেবের মতে দাওয়াতের ব্যাপক অর্থে কেবল তাবলিগি জামাতের বর্তমান ব্যবস্থাপনাই অন্তর্ভুক্ত৷ তাবলীগকেই তিনি আম্বিয়ায়ে কেরাম ও সাহাবায়ে কেরামের পথ ও পন্থা মনে করেন। আর এই বিশেষ সংঘকে সুন্নত ও হুবহু আম্বিয়ায়ে কেরামের মেহনতের মতো সাব্যস্ত করেন৷ অথচ উম্মতের সর্বসম্মত মাসলাক হলো, দাওয়াত ও তাবলিগ একটি ব্যাপক বিষয়৷ শরিয়তে তার জন্য কোনো বিশেষ পদ্ধতি আবশ্যক করা হয়নি, যা পরিত্যাগের ফলে সুন্নত ছেড়ে দেয়া সাব্যস্ত হয়৷ বিভিন্ন যুগে দাওয়াত ও তাবলিগের নানান পদ্ধতি চালু ছিলো৷ কোনো যুগে-ই দাওয়াতী কাজকে অবেহেলা করা হয়নি। সাহাবায়ে কেরামের পরে তাবেয়িন, তাবে তাবেয়িন আইম্মায়ে কেরাম, মুজতাহিদিন, ফুকাহা, মুহাদ্দিসিন, মাশায়েখ, আওলিয়ায়ে কেরাম এবং নিকটতম সময়ে আমাদের আকাবিরে কেরাম বিশ্বব্যাপী দীন প্রতিষ্ঠিত রাখতে নানামুখী পথপন্থা অবলম্বন করেছেন৷
কলেবর বড় হয়ে যাওয়ার আশংকায় আমরা এই কথাগুলি-ই পেশ করলাম৷ এছাড়া এমন অনেক কথাও আমাদের কাছে পৌঁছেছে, যা সিংহভাগ উলামায়ে কেরাম থেকে দূরে সরে একটি নবউদ্ভাবিত বিশেষ মতাদর্শের প্রমাণ বহন করে৷ তার এসব বক্তব্য সঠিক না হওয়ার বিষয়টি একদম স্পষ্ট৷ তাই, এখানে তার ওপর বিস্তারিত আলোচনার দরকার নেই৷

এর আগেও দারুল উলুম দেওবন্দের পক্ষ থেকে কয়েকদফা পত্র মারফত এবং দারুল উলুম দেওবন্দে তাবলিগের ইজতেমাকালে বাংলাওয়ালী মসজিদের প্রতিনিধিদলের সামনেও এসবের প্রতি লিখিত আকারে দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়েছিলো৷ কিন্তু সেসব চিঠিপত্রের এখনো পর্যন্ত কোনো জবাব আসেনি।
তাবলিগ জামাত একটি একান্ত ধর্মীয় জামাত৷ যা আমল ও মাসলাক হিসেবে সংখ্যাগরিষ্ঠ উম্মত ও আকাবিরের পদ্ধতি থেকে দূরে সরে গিয়ে সংরক্ষিত থাকতে পারে না৷ আম্বিয়ায়ে কেরামের ব্যাপারে বেয়াদবিমূলক মন্তব্য, উল্টো ধ্যানধারণা, মনগড়া তাফসির, হাদিস-আসারের মনগড়া ব্যাখ্যার সঙ্গে হক্কানি ওলামায়ে কেরাম কখনও ঐকমত্য পোষণ করতে পারেন না৷ আর এর ওপর চুপ থাকাও যায় না৷ কারণ এ ধরনের চিন্তাধারা পরবর্তী সময়ে পুরো তাবলিগজামাতকে সত্যপথ থেকে বিচ্যুত করে দেবে৷ যেমনিভাবে অতীতে কতক ইসলাহি ও দীনি জামাতের পরিণতি এমনই হয়েছে। এজন্য আমরা এসব উত্থাপিত প্রশ্নের আলোকে উম্মাতে মুসলিমা; বিশেষত সাধারণ তাবলিগি ভাইদেরকে এ বিষয়গুলো সম্পর্কে অবহিত করানো নিজেদের কর্তব্য মনে করছি, মৌলবি মুহাম্মদ সা’দ সাহেব স্বল্প ইলমের কারণে নিজের চিন্তাভাবনা, মতাদর্শ এবং কোরআন-হাদিসের ব্যাখ্যায় আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের সঠিক পথ থেকে সরে যাচ্ছেন; যা নিঃসন্দেহে ভ্রষ্টতার পথ৷ এ কারণে এ ব্যাপারে চুপ থাকা সমীচীন নয়৷ কারণ যদিও এই চিন্তা-চেতনা একজনের, কিন্তু এসব সাধারণ মানুষের মাঝে খুব প্রবল বেগে ছড়িয়ে যাচ্ছে৷
তাবলিগ জামাতে প্রভাব সৃষ্টিকারী ন্যায়পরায়ণ ও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বশীলদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করছি, আকাবিরের প্রতিষ্ঠিত এই জামাতকে জমহুর উম্মত ও আকাবিরের পথ-পন্থায় প্রতিষ্ঠিত রাখার জন্য অক্লান্ত চেষ্টা চালিয়ে যান। আর মৌলবি মুহাম্মদ সা’দ সাহেবের যে ভ্রান্ত চিন্তাধারা সাধারণ মুসলমানের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছে, সেসব সংশোধনের জন্য সচেষ্ট হোন৷ এখনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে আগামীতে তাবলিগজামাতের কারণে উম্মতের একটি বৃহত্তম অংশ পথভ্রষ্টতার শিকার হয়ে গোমরাহ দলে রূপান্তরিত হবে।
আমাদের প্রার্থনা হলো, রাব্বুল আলামিন যেনো তাবলিগ জামাতকে হেফাজত করেন এবং একনিষ্ঠতার সাথে আকাবিরের পথে সদা সজীব ও সজাগ রাখেন। আমিন, ছুম্মা আমিন৷
(মাওলানা নেয়ামতুল্লাহ আজমী দা. বা. ফতোয়ায় দস্তখত করার পূর্বে নিজের পক্ষ থেকে একটি পুনশ্চ লিখেন, নিম্নে তার অনুবাদ দেয়া হলো)
পুনশ্চ : পূর্বে এ ধরনের অগ্রহণযোগ্য কথাবার্তা তাবলিগজামাতের কিছু লোকদের পক্ষ থেকে প্রকাশ পেয়েছিলো৷ সেকালে উলামায়ে দেওবন্দ, যেমন হজরত শাইখুল ইসলাম মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানি রহ. ও অন্যান্যরা তাদেরকে সতর্ক করেন৷ তাতে বড়রা তার সংশোধন করেন৷ কিন্তু এখন স্বয়ং দায়িত্বশীল-ই এধরনের, বরং এরচেও বড়ধরনের কথাবার্তা (যেমনি উপরোল্লিখিত আলোচনায় স্পষ্ট) বয়ানে উল্লেখ করছেন, তাকে সতর্কও করানো হচ্ছে, কিন্তু তিনি ভ্রুক্ষেপই করছেন না৷ ফলে সর্ব সাধারণকে এমন ফেতনা থেকে রক্ষা করতেই এই সিদ্ধান্ত ও ফতোয়ার সত্যায়ন করা হলো৷
(মাওলানা নেয়ামতুল্লাহ আ’জমী)
স্বাক্ষর
১. মুফতি আবুল কাসেম নোমানী ২. মুফতি সাঈদ আহমদ পালনপুরী ৩.আল্লামা নেয়ামতুল্লাহ আজমী ৪. মুফতি হাবিবুর রহমান খায়রাবাদী, ৫. মুফতি যায়নুল ইসলাম কাসেমী ৬. মুফতি আব্দুল খালেক সাম্বালী, ৭. মুফতি আব্দুল খালেক মাদরাসী ৮. মুফতি ওয়াকর আলী ৯.মুফতি মাহমুদ হাসান বুলন্দশহরী ১০. মুফতি হাবিবুর রহমান আজমী, ১১. মুফতি ওসমান ১২. মুফতি নোমান সিতামোরী ১৩.মুফতি মোসআব ১৪. মুফতি আসাদুল্লাহ আসামী।
অনুবাদ : কাজী মুহাম্মদ হানিফ
ঈষৎ সম্পাদিত

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৪:০৯

শাহজালাল হাওলাদার বলেছেন: তাবলীগ আমিও পছন্দ করি কিন্তু অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি পছন্দ করিনা।
দ্বীনের কাজও হক্কানি ওলামায়ে কেরামের মতাদর্শের মধ্যে থেকেই করা উচিত।
ছয় উছুল বিশিষ্ট তাবলীগের বাইরে দ্বীনের খেদমত হবে না এমনটিও ঠিক নয়।

৩০ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:৫৯

আবু সায়েদ বলেছেন: একমত

২| ৩০ শে নভেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:৫৮

আবু সায়েদ বলেছেন: ঠিক কথা বলেছেন। ভারসাম্য পূর্ন নীতী উত্তম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.