নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মোহাম্মদ আবুল হোসাইন চৌধুরী

মোহাম্মদ আবুল হোসাইন চৌধুরী

মোহাম্মদ আবুল হোসাইন চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

বান্দার ইস্তেগফার ও তাওবা আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয় গুনাহ মাফ হয়, জান্নাতের অধীকার হওয়া যায়

২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৮:৫১

তাওবার বিষয়টি আলোচনা করার আগে গুনাহ ও শিরক সর্ম্পকে আলোচনা করা দরকার। গুনাহ ও শিরকের বিষয়টি অবহিত হওয়ার পর তাওবার বিষয়টি আলোচনা করা হলে তাওবা করতে সহজ হবে। তাই প্রথমে গুনাহ, দ্বিতীয়ত শিরক ও তৃতীয়ত তাওবার বিষয়টি আলোচনা করা হলো।
গুনাহ ঃ
আল্লাহর ও আল্লাহর রাসূল যেসব কাজ করতে বলেছেন তা না করা এবং যেসব কাজ করতে নিষেধ করেছেন তা করা হলো গুনাহ। খারাপ কথা, খারাপ কাজ ও খরাপ আচরণও গুনাহ। কারো হক নষ্ট করা, কাউকে গালি দেয়া, কাউকেও কষ্ট দেয়া, কারো অধিকারে হস্তক্ষেপ করা, আল্লাহর দেয়া সিমা লংঘন করাও গুনাহের কাজ। গুনাহ আল্লাহর সাথে ও বান্দার সাথে জড়িত। আল্লাহর সাথে জড়িত গুনাহ আল্লাহ ইচ্ছা করলে মাপ করে দিতে পারেন কিন্তুু বান্দার সাথে গুনাহ বান্দা যতক্ষন পর্যন্ত মাপ না করে দিবেন ততক্ষন পর্যন্ত আল্লাহও মাপ করতে পারবেন না।
গুনাহের প্রকার ঃ
গুনাহ সাধারণত তিন প্রকারের হয়ে থাকে।
১. ফরয ইবাদত ছেড়ে দেড়া : আল্লাহতায়ালা বান্দার উপর যে সকল ইবাদত ফরয করেছেন সে গুলোকে ছেড়ে দেয়া। যেমন নামায, রোজা, যাকাত ইত্যাদি। সালাত আদায় না করা কবীরা গুনাহ অনুরূপভাবে সওম এবং যাকাত আদায় না করাও কবীরা গুনাহ। এ ধরনের গুনাহ হতে মাপ পাওয়ার জন্য করণীয় হল, যে সকল ইবাদত ছুটে গিয়াছে তা যথা সম্ভব ক্বাযা আদায় করা। আর যদি ক্বাযা আদায় করা সম্ভব না হয় তার বিকল্প যেমন রোজার ক্ষেত্রে ফিদয়া আদায় করা। আর যদি তাও সম্ভব না হয় তবে তার জন্য আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করতে হবে এবং আল্লাহর নিকট হতে মাপ করিয়ে নিতে হবে।
২. নিষিদ্ধ কাজ করা : আল্লাহ এবং বান্দার মাঝে সংঘটিত গুনাহসমুহ। যেমন : মদ পান করা, গান বাজনা করা, সুদ খাওয়া ইত্যাদি। এ ধরনের গুনাহের কারণে অবশ্যই লজ্জিত হতে হবে এবং মনে মনে প্রত্যয়ী হতে হবে যে এ ধরনের গুনাহ ও অপরাধ আর কখনো করবে না।
৩. গুনাহ বান্দার সাথে সর্ম্পকিত : গুনাহের সর্ম্পক বান্দার সাথে। এ ধরনের গুনাহ সবচেয়ে কঠিন ও মারাত্মক। এ ধরনের গুনাহ আবার কয়েক ধরনের হতে পারে-
(ক) মালের সাথে সর্ম্পকিত : ধন সম্পদের সাথে সম্পর্কিত, এ বিষয়ে করণীয় হল যে লোকের কাছ থেকে কর্জ নিয়েছেন অথবা যার হক্ব নষ্ট করেছেন কিংবা যার ক্ষতি করেছেন, আপনাকে অবশ্যই তার পাওনা পরিশোধ করতে হবে এবং তার ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। যদি পরিশোধ বা ফেরত দেয়া সম্ভব না হয়, হয়ত যে সম্পদটি আপনি নষ্ট করেছিলেন তা এখন আর আপনার নিকট অবশিষ্ট নাই, কিংবা আপনি নি:স্ব হয়ে গিয়েছেন তাহলে অবশ্যই আপনাকে ক্ষতিগ্রস্ত লোকটি হতে ক্ষমা চাইতে হবে এবং তার থেকে অনুমতি নিয়ে তা হালাল করে নিতে হবে। আর যদি এ রকম হয় যে লোকটি মারা গিয়েছে অথবা অনুপুস্থিত। যার কারণে ক্ষতিপূরণ দেয়া কিংবা মাফ নেওয়া এর কোনটিই সম্ভব নয় তাহলে তার পক্ষ হতে তা দান করে দিতে হবে। আর যদি তাও সম্ভব না হয়, তবে তাকে অবশ্যই বেশি বেশি নেক আমল করতে হবে, আল্লাহর দরবারে বেশী বেশী তাওবা ও কান্নাকাটি করতে হবে যাতে আল্লাহ ক্বিয়ামত দিবসে লোকটিকে আপনার উপর রাজি করিয়ে দেয়।
(খ) মানুষের সাথে সর্ম্পকিত : মানুষের জীবনের সাথে সম্পর্কিত, যেমনÑহত্যা করা বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ নষ্ট করা, তাহলে আপনাকে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি অথবা তার অবিভাবককে ক্বিসাস বা প্রতিশোধ নেয়ার সুযোগ দিতে হবে অথবা তারা আপনাকে ক্ষমা করে দিবে এবং কোনো বদলা নেবে না মর্মে একটি সমঝতায় পৌঁছতে হবে। আর যদি তাও সম্ভব না হয়, তবে অবশ্যই আল্লাহর দরবারে বেশী বেশী তাওবা ও কান্নাকাটি করতে হবে, যাতে আল্লাহ ক্বিয়ামত দিবসে লোকটিকে আপনার উপর রাজি করিয়ে দেন।
(গ) মানুষের সমভ্রম হরণ করা : গীবত করা, কারো বিরুদ্ধে অপবাদ দেয়া অথবা গালি দেয়া ইত্যাদি। তখন আপনার করণীয় হল, যার বিপক্ষে এ সকল কথা বলেছিলেন, তার নিকট গিয়ে নিজেকে মিথ্যুক সাব্যস্ত করা এবং বলা যে ভাই আমি মিথ্যুক, আমি আপনার বিরুদ্ধে যে সব অপবাদ বা বদনাম করেছি তা ঠিক নয় আমি মিথ্যা বলেছি। আর যদি ঝগড়া বিবাদ বা নতুন কোন ফাসাদ কিংবা লোকটির ক্রোধ আরো প্রকট আকার ধারণ করার সম্ভাবনা না থাকে তবে তার নিকট সব কিছু প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়ে নিতে হবে। অন্যথায় আল্লাহর নিকট অধিক হারে তাওবা করতে হবে। যাতে আল্লাহ তাকে আপনার উপর রাজি করিয়ে দেন। আল্লাহর নিকট প্রার্থনা আল্লাহ যেন লোকটির জন্য এর বিপরীতে তার জন্য অশেষ কল্যাণ নিহিত রাখে এবং তার জন্য বেশী বেশী প্রার্থনা করবেন।
(ঘ) ইজ্জত হরণ করা : যেমন কারো অনুপস্থিতিতে তার পরিবারের ইজ্জত হরণ অথবা সন্তান-সন্তুতির অধিকার নষ্ট বা খিয়ানত করা।
গুনাহের খারাপ পরিণতি ও ক্ষতিকর দিকসমূহ ঃ
গুনাহ মানুষের দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জগতের জন্যই ক্ষতিকর। গুনাহের কারণে মানুষ দুনিয়াতে লাঞ্ছনা-বঞ্চনা, অপমান-অপদস্থের শিকার হয়। দুনিয়ার জীবনে তার অশান্তির অন্ত থাকে না। অনেক সময় দুনিয়ার জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়ে। ফলে দুনিয়াতেও গুনাহের কারণে তাকে নানাবিধ শাস্তি ও আজাব-গজবের মুখোমুখি হতে হয় এবং আখেরাতে তো তার জন্য রয়েছে অবর্ণনীয়-সীমাহীন দুর্ভোগ। এ ছাড়া গুনাহ কেবল মানুষের আত্মার জন্যই ক্ষতিকর নয় বরং আত্মা ও দেহ দুটির জন্যই ক্ষতিকর। গুনাহ মানুষের জন্য কঠিন এক ভয়ানক পরিণতি ডেকে আনে। গুনাহ মানুষের আত্মার জন্য এমন ক্ষতিকর যেমনিভাবে বিষ দেহের জন্য ক্ষতিকর।
১.ইলম তথা দ্বীনি জ্ঞান লাভ থেকে বঞ্চিত হওয়া : ইলম হল নূর যা আল্লাহ মানুষের অন্তরে স্থাপন করেন কিন্তু গুনাহ-পাপাচার এ নূরকে নিভিয়ে দেয়। সুতরাং গুনাহে লিপ্ত ব্যক্তি কখনো ইলম তথা শরিয়তের জ্ঞান লাভে ধন্য হতে পারে না। ইলম হল, আল্লাহর নূর আর গুনাহ হলো অন্ধকার। আর এ কথা স্পষ্ট যে, আলো ও অন্ধাকার কখনো এক হতে পারে না।
২.রিযিক থেকে বঞ্চিত হওয়া : বান্দা গুনাহে লিপ্ত হওয়ার কারণে রিযিক হতে বঞ্চিত হয়। মানুষের রিযিকে সংকীর্ণতা দেখা দেয়। সুতরাং, রিযিকের স্বচ্ছলতা কামনাকারীদের জন্য গুনাহের কাজ ছেড়ে দিতে হবে।
৩.গুনাহ দেহ ও আত্মাকে দুর্বল করে দেয় : নেক আমলের কারণে মানুষের চেহারা উজ্জ্বল হয়, অন্তর আলোকিত হয়, রিযিক বৃদ্ধি পায়, দেহের শক্তি ও মনোবল চাঙ্গা হয়, মানুষের অন্তরে মহব্বত বৃদ্ধি পায়। পক্ষান্তরে খারাপ কাজে মানুষের চেহারা কুৎসিত হয়, অন্তর অন্ধকার হয়, দেহ দুর্বল হয়, রিযিক সংকীর্ণ হয় এবং মানুষের অন্তরে তার প্রতি ঘৃণা জন্মায়।
৪.গুনাহ আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য হতে বঞ্চিত করে : গুনাহ আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য হতে বঞ্চিত করে। যদি গুনাহের কারণে তাকে কোন শাস্তি নাও দেয়া হয়, কিন্তু সে আল্লাহর বিশেষ ইবাদত বন্দেগী হতে বঞ্চিত হবে।
৫.গুনাহকে ঘৃণা বা খারাপ জানার অনুভূতি হারিয়ে ফেলে : ফলে গুনাহের কাজে সে অভ্যস্ত হয়ে যায় এবং সমস্ত মানুষও যদি তাকে দেখে ফেলে বা তার সামলোচনা করে এতে সে লজ্জাবোধ বা গুনাহ করাকে খারাব ও অন্যায় মনে করে না। এ ধরনের মানুষকে আল্লাহ ক্ষমা করেন না এবং তাদের তাওবার দরজাও বন্ধ হয়ে যায়।
৬.গুনাহর গোষণা না দেয়া : রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন ‘‘আমার সকল উম্মতকে ক্ষমা করা হবে একমাত্র ঘোষণা দানাকারী ছাড়া। আর ঘোষণা হল, কোন ব্যক্তি রাতে কোন পাপ করল আর আল্লাহ তার অপকর্মকে গোপন রাখলেন কিন্তু লোকটি সকালে লোকদের ডেকে ঘোষণা করতে লাগল, হে অমুক আমি রাতে এই এই কাজ করেছি। রাতে তার রব তাকে গোপন করল আর সকালে সে আল্লাহর গোপন করা বিষয় প্রকাশ করে দিল। (সহীহ মুসলিম)
৭.গুনাহকে কিছু মনে না করা : বান্দা গুনাহ করতে করতে গুনাহ তার জন্য সহজ হয়ে যায়, অন্তরে সে গুনাহকে ছোট মনে করতে থাকে। তার মধ্যে অপরাধ বোধ অবশিষ্ট থাকে না। ফলে সে কোন অপরাধকে অপরাধ মনে করে না। আর এটাই হল একজন মানুষের জন্য ধ্বংসের নিদর্শন। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন-“মু’মিন নিজ গুনাহগুলোকে এমনভাবে দেখে যে, যেন একটি পাহাড়ের পাদদেশে বসে আছে আশঙ্কা করছে যে সেটি তার উপর পতিত হবে আর পাপী নিজ গুনাহসমূহকে মাছির মত মনে করে যা তার নাকের উপর পড়েছে একটু পর উড়ে গিয়েছে। (সহীহ মুসলিম)
৮.গুনাহ লাঞ্ছনা ও অপমানের কারণ হয়ে থাকে : সকল প্রকার ইজ্জত একমাত্র আল্লাহর আনুগত্যের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। আল্লাহর আনুগত্যের বাহিরে কোথাও ইজ্জত সম্মান পাওয়া যাবে না। তিনি যাকে ইচ্ছা ইজ্জত দান করেন আর যাকে ইচ্ছা বেÑইজ্জত করেন। আল্লাহ বলেন-‘‘কেউ ইজ্জতের আশা করলে মনে রাখতে হবে যে, সমস্ত ইজ্জত আল্লাহরই।’’ (ফাতের : ১০) অর্থাৎ ইজ্জত আল্লাহর আনুগত্যের মাধ্যমেই তালাশ করা উচিত, কারণ, আল্লাহর আনুগত্য ছাড়া কোথাও ইজ্জত খুঁজে পাওয়া যাবে না। আল্লাহর আনুগত্যের বাহিরে যে ইজ্জত তালাশ করবে তাকে অবশ্যই বেÑইজ্জত হতে হবে। তাকে ভোগ করতে হবে লাঞ্ছনা, বঞ্চনা আর হতাশার গানী। তাই আল্লাহর আনুগত্যের মাধ্যমেই ইজ্জত তালাশ করতে হবে।
৯.গুনাহ মানুষের জ্ঞান বুদ্ধিকে ধ্বংস করে দেয় : কারণ মানুষের জ্ঞান বুদ্ধির জন্য একটি আলো বা নূর থাকে আর গুনাহ ঐ নূর বা আলোকে নিভিয়ে দেয়, ফলে জ্ঞান বুদ্ধি ধ্বংস হয়ে যায়।
১০.গুনাহ অন্তরকে কাবু করে ফেলে : গুনাহ গুনাহকারীর অন্তরকে কাবু করে ফেলে এবং সে ধীরে ধীরে অলসদের অর্ন্তভুক্ত হয়। যেমন আল্লাহ বলেন-অর্থাৎ ‘‘কখনো না, বরং তারা যা করে তাই তাদের হৃদয়ে মরিচা ধরিয়ে দিয়েছে।’’ (মুতাফফিফীন : ১৪)
এ আয়াত সম্পর্কে ওলামায়ে কেরাম বলেন, বার বার গুনাহ করার কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়ে থাকে। তখন তার অন্তর আর ভাল কিছু গ্রহণ করে না। ভাল কাজ, ভাল কোন উপদেশ এবং মনীষীদের বাণী সবই তার কাছে অসহনীয় ও বিরক্তিকর মনে হয়। ফলে সে তার মনের ইচ্ছা ও খেয়াল খুশি মত যা ইচ্ছা তাই করতে থাকে। কোন অন্যায় অপরাধ তার নিকট অন্যায় মনে হয় না। গুনাহ তার নিকট আর গুনাহ বলে বিবেচিত হয় না। এ ধরনের লোকের সংখ্যা বর্তমান সমাজে অসংখ্য রয়েছে। তারা সালাত আদায় করে না, সওম পালন করে না, যাকাত প্রদান করে না। কিন্তু এ সব যে প্রতিটিই মারাত্মক অপরাধ তা তাদের মনে একটুও রেখাপাত করে না। তারা যে অপরাধী, গুনাহগার ও পাপী এ ধরনের কোন অনুভূতি তাদের মনষ্পটে জাগ্রত হয় না এবং তাদের বিবেক বিন্দু পরিমাণও নাড়া দেয় না। ফলে তাদের অন্তর পাথরের চেয়ে বেশি কঠিন হয়ে যায়। তাদের অন্তরসমূহ হককে গ্রহণ করার যোগ্যতা হারিয়ে ফেলে। ফলে এক পর্যায়ে ঈমান হারা হয়ে মারা যায়। আল্লাহ আমাদেরকে এ ধরনের পরিণতি হতে হেফাজত করুন।
১১.গুনাহ বান্দাকে অভিশাপের অর্ন্তভুক্ত করে : গুনাহ বান্দাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অভিশাপের অর্ন্তভুক্ত করে। কারণ, তিনি গুনাহগারদের ওপর অভিশাপ দিয়েছেন। যেমন সুদ গ্রহীতা, দাতা, লেখক ও সাক্ষী-সকলের উপর অভিশাপ করেছেন। এমনিভাবে অভিশাপ করেছেন চোরের উপর। গাইরুল্লাহর নামে জবেহকারী, জীবের ছবি অংকনকারী, মদ্যপানকারীসহ বিভিন্ন গুনাহের উপর তিনি অভিশাপ করেছেন। সুতরাং, মনে রাখতে হবে, যে গুনাহের কারণে আল্লাহ ও তার রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অভিশাপ করেছেন সে সব গুনাহে লিপ্ত হলে তাকে অবশ্যই আল্লাহ ও তার রাসূলের অভিশাপের ভাগীদার হতে হবে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তার রাসূলের অভিশাপের ভাগীদার হয় তার পরিণতি যে কী হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
১২.গুনাহ দু’আ হতে বঞ্চিত করে : গুনাহ আল্লাহর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তার ফেরেশতাদের দু’আ হতে বঞ্চিত হওয়ার কারণ হয়। কেননা, আল্লাহ তার নবীকে বান্দা বান্দীদের জন্য দু’আ করার আদেশ দিয়েছেন।
ইবাদত, আনুগত্য ও খেলাফতের দায়িত্ব পালনের জন্য মহান আল্লাহ আমাদের পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। বাঁচিয়ে রেখেছেন নানা নেয়ামতরাজী দ্বারা। সুতরাং আনুগত্য করাই আমাদের কাজ। কল্যাণ ও কামিয়াবির পথ এটিই। তার পরও নফস-শয়তানের প্রবঞ্চনায় অন্যায়-অপরাধ হতে পারে, হয়ে যায়। কিন্তু রহমানুর রাহীম মহান আল্লাহর করুণা সীমাহীন। তিনি বান্দাকে অপরাধ মুক্ত হিসাবে হাশরে উপস্থিত দেখতে চান। তাই অন্যায় হয়ে গেলেও তার প্রতিকারের সুন্দর ব্যবস্থা রেখেছেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, পাপ থেকে তাওবাকারী এমন হয়ে যায় যেন সে পাপই করেনি। তিনি আরো বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ মৃত্যুর লক্ষণ শুরু হওয়া অবধি বান্দার তাওবা কবুল করেন। তাই সুবিবেচনা ও নিজের প্রতি ইনসাফের পরিচয় হবে, সর্বদা পাপমুক্ত থাকার সর্বাত্মক চেষ্টা করা। যদি পাপ হয়ে যায় তাহলে অবশ্যই তাওবা সুযোগ গ্রহণ করা। তাওবাতে আল্লাহ অনেক খুশি হন।
গুনাহ সর্ম্পকে কুরআনের ভাষ্য ঃ
১. হে আমার বান্দারা! তোমরা যারা নিজের আত্মার উপর জুলুম করেছ, আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই, আল্লাহ সকল গুনাহ মাফ করেন। নি:সন্দেহে তিনি অধিক ক্ষমাশীল ও মেহেরবান। (যুমার : ৫৩)
এ আয়াত অনুযায়ী আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হওয়া নিষিদ্ধ বা কুফরী।
২. যারা অশ্লীল কাজ করে ফেললো কিংবা নিজেদের আতœার উপর জুলূম করে ফেললো, নিজেদের গুনাহর জন্য আল্লাহ কে স্মরণ করলো; আল্লাহ ছাড়া আর কে আছে যিনি গুনাহ মাফ করেন এবং তারা জেনে-শুনে কৃত গুনাহর পুনারাবৃত্তি করে না। তাদের পুরস্কার হলো, আল্লাহ ক্ষমা এবং এমন জান্নাত যার তলদেশ দিয়ে নহর প্রবাহিত তারা সেখানে চিরদিন থাকবে। আমলকারীদের পুরস্কার কতই না উত্তম! (ইমরান : ১৩৫ ও ১৩৬)
৩. আপনি যাদের মধ্যে মওজুদ থাকা অবস্থায় আল্লাহ তাদেরকে আজাব দেবেন না, যারা গুনাহ মাফ চায়, আল্লাহ তাদের উপরও আজাব দেন না। (আনফাল : ৩৩)
৪. অত:পর আমি বলেছি, তোমরা তোমাদের পালনকর্তার ক্ষমা প্রার্থনা করো। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের উপর অজস্র বৃষ্টি ধারা ছেড়ে দেবেন, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দেবেন, তোমাদের জন্য বাগান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্য নদী-নালা প্রবাহিত করবেন। (নুহ : ৯-১২)
৫. নিশ্চয়ই নেক কাজ পাপ ও গুনাহ দূর করে দেয়। (হুদ : ১১৪)
৬. জেনে রাখুন, আল্লাহ ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। ক্ষমা প্রার্থনা করুন, আপনার ক্রটির জন্যে এবং মু’মিন পুরুষ ও নারীদের জন্যে। আল্লাহ, তোমাদের গতিবিধি ও অবস্থান সম্পর্কে জ্ঞাত। (মুহাম্মদ : ১৯)
৭. হে আমার পালনকর্তা! আপনি আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে, যারা মু’মিন হয়ে আমার গৃহে প্রবেশ করে-তাদেরকে এবং মু’মিন পুরুষ ও মু’মিন নারীদেরকে ক্ষমা করুন এবং যালেমদের কেবল ধ্বংসই বৃদ্ধি করুন। (নূহ : ২৮)
৮. তারা উভয়ে বলল : হে আমাদের পালনকর্তা আমরা নিজেদের প্রতি যুলুম করেছি। যদি আপনি আমাদেরকে ক্ষমা না করেন এবং আমাদের প্রতি অনুগ্রহ না করেন, তবে আমরা অবশ্যই অবশ্যই ধ্বংস হয়ে যাব। (আ’রাফ : ২৩)
৯. আপনি আমার বান্দাদের জানিয়ে দিন যে, নিশ্চয় আমিই একমাত্র ক্ষমাকারী দয়ালু। (হিজর : ৪৯)
১০. তোমরা তোমাদের প্রভূর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর। অতঃপর তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন (তাওবা) কর। (হুদ : ৩)
১১. এবং তোমরা আল্লাহ কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়ালু। (মুযযাম্মিল : ২০)
১২. হে ঈমানদারগণ, তোমরা সবাই তাওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসো, যাতে করে তোমরা সফলকাম হতে পারো। (নূর : ৩১)
১৩. তুমি ক্ষমা চাও তোমার ও মু’মিন নারী-পুরুষদের ক্রটি-বিচ্যুতির জন্য। (মুহাম্মদ : ১৯)
১৪. আর তুমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালূ । (নিসা : ১০৬)
১৫. হযরত মূসা (আঃ) বললেন, হে আমার পালনকর্তা, আমি তো নিজের উপর যুলুম করে ফেলেছি। অতএব, আমাকে ক্ষমা করুন। আল্লাহ তাকে ক্ষমা করলেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, দয়ালু। (কাসাস : ১৬)

গুনাহ সর্ম্পকে হাদীসের ভাষ্য ঃ
১. আল্লাহ দিনে গুনাহকারীদের গুনাহ মাফ করার জন্য রাত্রে নিজ ক্ষমার হাত সম্প্রসারিত করেন এবং রাত্রে গুনাহকারীদের গুনাহ মাফ করার জন্য দিনের নিজ ক্ষমার হাত সম্প্রসারিত করেন। কেয়ামতের আগে পশ্চিমে সূর্যোদয় পর্যন্ত এভাবেই চলতে থাকবে। আল্লাহ বান্দার গুনাহ মাফের জন্য রীতিমত অপেক্ষা করেন। বান্দা মাফ চাইলেই মাফ পেতে পারে।
২. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন: সেই ব্যক্তির নাক ধূলামলিন হোক, যে রমযান পেয়েছে কিন্তু তার গুনাহ মাফ করাতে পারেনি। (জামে আত তিরমিযী, হাকেম)
৩. হাদীসে কুদসীতে বর্ণিত আছে : আল্লাহ বলেন, হে বনি আদম! তুমি আমার কাছে যা আশা করো এবং চাও, আমি তোমাকে মাফ করে দিলাম এবং এ জন্য আমি কোন পরোয়া করি না। (জামে আত তিরমিযী)
৪. হাদীসে কুদসীতে আরো এসছে : আল্লাহ বলেন, হে আমার বান্দা! তোমরা দিনে রাতে গুনাহ করে থাকো, আর আমি সকল গুনাহ মাফ করি। তোমরা আমার কাছে ক্ষমা চাও, আমি তোমাদের গুনাহ মাফ করে দেব। (সহীহ মুসলিম)
গুনাহ মাফের জন্য এর চাইতে বড় প্রতিশ্রুতি আর কি হতে পারে?
৫. হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন : আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, আল্লাহ বলেন, হে বনি আদম! তুমি আমার নিকট যা যা দোয়া ও প্রত্যাশা করো, আমি তোমার সকল গুনাহ মাফ করে দেবো এবং এ ব্যাপারে আমি কোন কিছুর পরোয়া করবো না। হে বনি আদম! যদি তোমার গুনাহ আকাশের মেঘমালার মতো বিপুল পরিমাণও হয়, তারপর তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাও, আমি তোমার সে গুনাহ মাফ করে দেবো এবং সে জন্য আমি কোন পরোয়া করি না। হে আদম সন্তান! যতি তুমি জমীন পরিমাণ বিশাল গুনাহরাশি নিয়েও আমার দিকে ফিরে আসো এবং আমার সাথে আর কাউকে শরীক না করো, তাহলে আমিও তোমার প্রতি জমীন পরিমাণ বিশাল ক্ষমা নিয়ে হাজির হবো। (জামে আত তিরমিযি)
বন্ধুগন! ক্ষমার জন্য এর চাইতে বড় আহবান আর কি হতে পারে?
৬.হযরত আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যার হাতে আমার প্রাণ তার শপথ, তোমরা যদি গুনাহ না করতে তাহলে আল্লাহ তোমাদেরকে উঠিয়ে নিতেন এবং যারা গুনাহ করে এমন জাতি তৈরী করতেন। তার পর তারা আল্লাহ কাছে ক্ষমা চাইত, তিনি তাদেরকে ক্ষমা কতে দিতেন। (সহীহ মুসলিম)
গুনাহ করার পর গর্ব-অহংকার না করে আল্লাহ কাছে বিনীতভাবে গুনাহ মাফ চাওয়া ও তাওবা করা দরকার। তাওবা করলে আল্লাহ গুনাহ মাফ করেন। বান্দা গুনাহ করবে, আল্লাহ তা জানেন।
৭. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : যে ব্যক্তি নিজ আমলনামা দেখে খুশি হতে চায় সে যেন বেশী করে গুনাহ মাফ চায়। (সুনানে বায়হাকী)
৮. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : নিশ্চয়ই শয়তান বলেছে, হে আমার রব, আপনার ইজ্জতের শপথ করে বলছি, আমি আপনার বান্দাদেরকে তাদের শরীরে প্রাণ থাকা পর্যন্ত গোমরাহ করতে থাকবো। তখন রব বলেন, আমার ইজ্জত ও শ্রেষ্ঠত্বের শপথ করে বলছি, তারা যে পর্যন্ত ক্ষমা চাইতে থাকবে, আমি তাদেরকে ক্ষমা করতে থাকবো। (মুসনাদে আহমদ)
৯. মোমেনের প্রতিটি বিষয়ই কল্যানকর। ক্রুটি করাও কল্যাণকর হতে পারে যদি মানুষ এরপর তাওবা করে বিনীত হয় এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়।
১০.হযরত আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : আমার বান্দা যখন নেক কাজের ইচ্ছা করে, কিন্তু এখন পর্যন্ত আমল করেনি, আমি তার জন্য একটি সওয়াব লিখি। আর যদি আমল করে তাহলে, ১০ থেকে ৭শ গুন সওয়াব লিখি। যদি গুনাহর কাজের ইচ্ছা করে, কিন্তু এখন ও তা করেনি, আমি তা লিখি না। কিন্তু যদি কাজটি করে ফেলে, তাহলে, আমি কেবল ১টি গুনাহ লিখি। (সহীহ মুসলিম)
১১.রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : মোমেনের বিষয় আশ্চর্যজনক। তার প্রত্যেকটি জিনিসই কল্যাণকর। আর এটা মোমেন ছাড়া আর কারো জন্য নয়। সে সুখ ও আনন্দ পেলে শুকরিয়া আদায় করে, সেটা তার জন্য কল্যাণকর। আর দু:খ ও কষ্ট পেলে ধৈর্য ধারণ করে; সেটাও তার জন্য কল্যানকর।’ (সহীহ মুসলিম)
গুনাহ ও ক্রটি তখন কল্যাণকর হবে, যখন তা মানুষকে অধিক সওয়াবের কাজ এবং তাওবা-এস্তেগফারের জন্য উদ্ধুদ্ধ করে। এ জন্য কোন গুনাহ সংঘটিত হয়ে গেলে তাওবার সাথে সাথে আরো কিছু নেক কাজ করা কর্তব্য। তা সেই গুনাহর কাফফারা হয়ে যাবে।
১২.হযরত আবু মুসা আবদুল্লাহ ইবনে কায়েস আল আশয়ারী রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উদিত না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহতায়ালার দিনের অপরাধীদের ক্ষমা করার জন্য রাতে এবং রাতের অপরাধীদের ক্ষমা করার জন্য দিনে ক্ষমার হাত প্রসারিত করে রাখেন। (সহীহ মুসলিম)
১৪.হযরত আবু যার রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাঁর বান্দাহদের লক্ষ্য করে বলেন, আমি যুলুমকে আমার উপর হারাম করে নিয়েছি এবং তোমাদের মাঝেও যুলুম করাকে হারাম করে দিয়েছি। অতএব, তোমরা একে অপরে উপর যুলুম করো না। হে আমার বান্দাহগণ! তোমরা হেদায়াত প্রাপ্তির জন্যে দোয়া করো। আমি তোমাদেরকে হেদায়াত দান করবো হে আমার বান্দাহগণ! আমি যাকে খাদ্য দান করেছি, সে ছাড়া তোমাদের প্রত্যেকেই ক্ষুধার্থ। অতএব তোমরা আমার নিকট খাদ্য প্রার্থনা করো আমি তোমাদের খাদ্য দান করব। হে আমার বান্দাহগণ! তোমাদের মধ্য হতে যাকে আমি বস্ত্র পরিধান করিয়েছি সে ছাড়া আর সকলেই উলঙ্গ। অতএব তোমরা আমার নিকট বস্ত্র পরিধানের জন্য দোয়া করো, আমি তোমাদেরকে পরিধান করাবো। হে আমার বান্দাহগণ! তোমরা রাতে ও দিনে গুণাহ করে থাকো এবং আমি সকল গুণাহ ক্ষমা করতে পারি। অতএব তোমরা আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দেবো। (সহীহ মুসলিম)
১৫.হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেন-রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি : আল্লাহ তায়ালা বলেছেন; হে আদম সন্তান! যতক্ষণ পর্যন্ত তুমি আমাকে ডাকবে এবং আমার কাছে (ক্ষমা) প্রত্যাশা করবে, তুমি যাই প্রকাশ হোক না কেন আমি তা ক্ষমা করে দেব-আর আমি কোন কিছুর পরোয়া করি না। হে আদম সন্তান! তোমার গোনাহ যদি আকাশ সমান হয়ে যায় আর তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাও, তাহলে আমি তোমাদে ক্ষমা করে দেব। হে আদম সন্তান! যদি তুমি পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ নিয়ে আমার কাছে আস এবং আমার সঙ্গে কোন কিছুকে শরীক না করে (আখেরাতে) সাক্ষাত কর, তাহলে আমি সমপরিমাণ ক্ষমা নিয়ে তোমার সঙ্গে সাক্ষাত করবো। (জামে আত তিরমিযি)
১৬.হযরত আসরার ইবনে ইয়াসার আল মাজানী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে লোক সকল, তোমরা আল্লাহ কাছে তাওবা কর এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আমি প্রতিদিন একশত বার তাওবা করে থাকি। (সহীহ মুসলিম)

শিরক ঃ
‘শিরক’ হলো আরবী শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ সমকক্ষ করা, মিলানো, সংমিশ্রণ করা, একত্রীকরণ, অংশীদার, ভাগাভাগি, সমান করা, সম্পৃক্ত করা। শিরক মানে বিশ্ব প্রভু আল্লাহর সঙ্গে অন্য কাউকে অংশীদার বা সমকক্ষ বানানো। এটা এমনসব বিশ্বাস, কাজ, কথা বা অভ্যাসকে বোঝায় যা দ্বারা মহান আল্লাহর রুবুবিয়াত, উলুহিয়াত এবং সিফাতে অপর কারও অংশীদারিত্ব বা সমকক্ষতা প্রতীয়মান হয়। * আল্লাহর ‘রুবুবিয়াতে’ কাউকে শরিক বানানোর অর্থ লালন-পালন, সৃষ্টি, জীবন-জীবিকা, জন্ম-মৃত্যু ইত্যাদিতে অন্যকে অংশীদার করা। * তাঁর ‘উলুহিয়াত’ বৈশিষ্ট্যে কাউকে সমকক্ষ করার অর্থ সালাত, সাওম, কোরবানী, মান্নত প্রভৃতিতে অন্য কারও উপাস্য মেনে নেয়া। * আর আল্লাহর ‘সিফাতে’ কাউকে শরিক বানানোর অর্থ হচ্ছে কোনো ব্যক্তির গায়েব জানা, নিজকে অমুখাপেক্ষী ভাবা, অভাবমুক্ত মনে করা প্রভৃতি।
যারা শিরক করে তারা আল্লাহকে অস্বীকার করে না। তারা আল্লাহকে বিশ্বাস করে বটে, কিন্তু আল্লাহ সাথে অন্যান্য সত্তা বা শক্তিকে বিভিন্নভাবে শরীক করে। আল্লাহর সাথে কী কী ভাবে শরীক করা হয় তা বুঝতে হলে শিরক সর্ম্পকে ধারণা থাকতে হবে তাহলেই শিরক থেকে বেঁচে থাকাও সজহ হবে। শিরকমুক্ত আকিদা-বিশ্বাসই পরকালে সৎকর্মের প্রতিদান পাওয়ার পূর্বশর্ত। আল্লাহর সর্বাধিক প্রিয়ভাজন হওয়া সত্ত্বেও রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে অনেকটা কড়া ভাষায় সম্বোধন করে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন। তুমি যদি শিরক কর, তাহলে তোমার আমল নিষম্ফল হয়ে যাবে এবং তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।’ (যুমার : ৬৫)। যুগে যুগে মানুষ শয়তানের কবলে পড়ে চন্দ্র, সূর্য, গ্রহ, নক্ষত্র, দেব-দেবী, গাছ, পাথর প্রভৃতির পূজা করতে শুরু করে দিত। তারা তাদের হৃদয়-মনের সব আবেগ, শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, বিশ্বাস ও আকুতি-মিনতি দিয়ে এদের ডাকত। এ পথহারা পাপিষ্ঠ বনি আদমগুলোকে সরল-সঠিক দ্বীন তথা তাওহীদি জিন্দেগীতে নিয়ে আসার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত হয়েছে অসংখ্য নবী-রাসূল। তারা প্রত্যেকেই শিরকের পথ পরিহার করে খাঁটি ঈমানের দিকে মানুষকে দাওয়াত দিতেন।
শিরকের প্রকারভেদ ঃ
ইমাম ইযযাহাবী তাঁর বিশ্ববিখ্যাত ‘আল-কাবায়ের’ (কবীরা গোনাহ) নামক গ্রন্থে লিখেছেন শিরক দুই প্রকার : (১) আকিদগত শিরক ঃ
আকিদাগত শিরক অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে আল্লাহ সমকক্ষ মনে করা এবং তার ইবাদত করা।
আকিদাগত শিরক ৪ (চার প্রকার) ঃ
ক) শিরকুন ফিয-যাত অর্থাৎ আল্লাহর সত্তা
খ) শিরকুন ফিস-সিফাত অর্থাৎ আল্লাহর গুনাবলি
গ) শিরকুন ফিল এখতিয়ারাত অর্থাৎ আল্লাহর ক্ষমতা
ঘ) শিরকুন ফিল হুকুক অর্থাৎ আল্লাহর অধিকার
তাওহীদকে বুঝতে হলে শিরককে বুঝতে হবে। শিরকের বিপরীতই তাওহীদ। ঈমান শিরকমুক্ত না হওয়া পর্যন্ত তাওহীদের দাবী পূরণ হতে পারে না।
ক) শিরকুন ফিয-যাত অর্থাৎ আল্লাহর সত্তার উদাহরণ : আল্লাহ সত্তাকে শরীক করা যেমন কাউকে আল্লাহ পুত্র, স্ত্রী মনে করা। ফেরেশতা, দেব-দেবী ইত্যাদিকে আল্লাহ বংশধর বলে বিশ্বাস করা।
খ) শিরকুন ফিস-সিফাত অর্থাৎ আল্লাহর গুনাবলির উদাহরণ : যে সব গুন একান্তই আল্লাহ সে সবগুন কারোর মধ্যে আছে বলে বিশ্বাস করা শিরক। আল্লাহ ছাড়া কাউকে সকল রকম দুর্বলতা ও দোষক্রটি থেকে পাক মনে করা। যেমন-গায়েবী ইলম বা অদৃশ্য সর্ম্পকে জ্ঞান। কারো সর্ম্পকে এমন ধারণা করা যে, তিনি সবকিছু জানেন, দেখেন বা শুনেন এবং সব দোষ ত্রুটি থেকে মুক্ত।
গ) শিরকুন ফিল এখতিয়ারাত অর্থাৎ আল্লাহর ক্ষমতার উদারহণ : আলৌকিকভাবে উপকার বা ক্ষতি করার ক্ষমতা, প্রয়োজন পূরণ ও হেফাযত করার যোগ্যতা, মানুষের ভাগ্য গড়া ও ভাঙ্গা, দোয়া করা, মানব জীবনের জন্য আইন কানুন রচনা করা, সন্তান দান করা, রোগ ভাল করা, গুনাহ মাফ করা, হায়াত ও মওত দেয়া, রিযক দান করা ইত্যদি।
ঘ) শিরকুন ফিল হুকুক অর্থাৎ আল্লাহর অধিকারের উদাহরণ : কাউকে রুকু, সিজদা ও পূঁজা পাওয়ার অধিকারী বা হাত বেঁধে নত হয়ে দাড়িয়ে ভক্তি করার পাত্র মনে করা, কারো আস্তানাকে চুমু দেয়ার যোগ্য মনে করা, কুরবানী করা, নযর, নিয়ত, মানত পেশ করার যোগ্য মনে করা। নিয়ামতের শুকরিয়া পাওয়ার অধিকারী বা আপদে বিপদে সাহায্যের জন্য আবেদন গ্রহনের যোগ্য, সব অবস্থায় যাকে ভয় করা যায় বা যার জন্য আর সব মহ্বত ত্যাগ করা যায় বলে মনে করা।
(২) রিয়া ঃ
লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে সৎ কাজ করা। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : ‘তোমরা ছোট শিরক থেকে দূরে থাক। সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন : ছোট শিরক কী? তিনি বললেন : রিয়া অর্থৎ লোক দেখিয়ে সৎ কাজ করা। যেদিন আল্লাহ বান্দাদের কর্মফল দেবেন সেদিন তাদের বলবেন, যাদের দেখিয়ে দেখিয়ে তোমরা নেক কাজ করতে, তাদের কাছে চলে যাও। দেখ তারা তোমাদের কী প্রতিদান দেয়? (মুসনাদে আহমাদ ও সুনানে বায়হাকী)। ফজল ইবনে ইয়াজ বলেন : ‘লোকের ভয়ে খারাপ কাজ বর্জনকারী রিয়াকারী এবং মানুষকে খুশি করার জন্য ভালো কাজ করা শিরক। আর ইখলাস হচ্ছে এই উভয় রোগ থেকে মুক্ত থাকার নাম’।
শিরকে লিপ্ত হওয়ার কারণ ঃ
মানুষ নানাবিধ কারণে শিরকে লিপ্ত হয়ে থাকে। আল্লাহ যে কত মহান, কত ক্ষমতাধর, তার কর্তৃত্বের পরিধি যে কত বিশাল বিস্তৃত ও প্রসারিত, তিনি যে কত নিকটতম; তার যথার্থ মূল্যায়নের অভাবে মানুষ শিরকে লিপ্ত হয়। আবার অনেকে তাদের বাপ-দাদার কৃষ্টি রেওয়াজের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে আল্লাহর সঙ্গে শরিক করে ফেলে। কখনও কখনও অতি ভক্তি কিংবা অতি আবেগের বশীভূত হয়ে মানুষ মানুষের পায়ে সেজদায় লুটিয়ে পড়ে, চুমু খায়, পায়ের ধুলা গায়ে মাখে যা সুস্পষ্ট শিরকের শামিল। আমাদের দেশে প্রচলিত শিরকগুলোর মধ্যে পীরপূজা, মাজারপূজা, কবরপূজা, মাজারের পার্শ্ববর্তী গাছের শিকড়, ছাল-বাকল ইত্যাদিতে রোগ আরোগ্য হয় বলে বিশ্বাস, মাজার থেকে আনা সুতা, তাগা, দড়ি প্রভৃতি আরোগ্য দান করে, মাজার পুকুরের পানি, কুমির, কাছিম, গজার মাছ, কবুতর প্রভৃতিকে খাবার দিলে মনের আশা পূর্ণ হয়, মৃত ওলীরা জীবিতদের সাহায্য করতে পারেন, দুর্ঘটনা রোধের জন্য মাজারে টাকা দেয়া, নবী-ওলীরা গায়েব (অদৃশ্য) জানেন, নানাবিধ ফায়েজ-বরকত হাসিলের জন্য মাজারের গিলাপে চুমু খাওয়া, টিয়া পাখি কিংবা বানরের মাধ্যমে ভাগ্য গণনা করা, কোনো বুযুর্গ একই সময় অনেক স্থানে অবস্থান করতে পারা প্রভৃতি। এগুলো সবই অজ্ঞতা ও বাড়াবাড়িরই নামান্তর। মানুষ অজ্ঞতা ও ভুল বিশ্বাসের কারণে তার যবান, বিশ্বাস, অভ্যাস, আচার-আচরণ প্রভৃতি দ্বারা শিরক করে থাকে। সতর্ক থাকার পরেও কখনও কখনও মনের অজান্তে এ মারাত্মক পাপ কর্মটি সংঘটিত হয়ে যায়। আখেরী জামানার দুর্বল মু’মিন হিসেবে আমাদের যতসামান্য নেক আমলগুলো সংরক্ষণের জন্য শিরক ও তাওহীদ সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা অর্জন করা সময়ের অনিবার্য দাবী।
শিরক নেক আমল নষ্ট করে দেয় ঃ
শিরক নেক আমলকে সম্পূর্ণরুপে বিনষ্ট করে দেয় এবং ব্যক্তিকে নিশ্চিত জাহান্নামের উপযোগী করে গড়ে তোলে। মানুষের সবচেয়ে বড় সম্পদ ও কল্যাণকর জীবনযাপনের মহৎশক্তি হলো ঈমান। ঈমান এক অচলায়তন পর্বতের ন্যায়, যা চির অবিচল, সদা সমুন্নত। ইহা একটি দিগন্ত উজ্জ্বলকারী সূর্যশক্তি, যা জীবনের সবগুলো দিক ও আনাচ-কানাচ আলোকম-িত ও উজ্জ্বল করে দেয়। শিরক এমন একটি অন্ধকার জগত, যেখান থেকে আল্লাহর আক্রোশ আর গজবের হাওয়াই নির্গত হয়ে থাকে। আর যারা তাওবা করে না, আল্লাহ তাদের জালেম বলে আখ্যায়িত করেছেন।
আল্লাহতায়ালা মু’মিনদের দুটি ভাগে ভাগ করেছেন-
(এক) যারা তাওবা করে ঃ যারা তাওবা করে, তাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, তারাই সফলকাম।
(দ্বিতীয়) যারা তাওবা করে না ঃ যারা তাওবা করে না, তাদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, তারাই অত্যাচারী ও জালিম। এ দুই ভাগের মধ্যে কোনো তৃতীয় ভাগ নাই। আমাদের নির্ধারণ করতে হবে, আমরা কোন ভাগের অন্তর্ভূক্ত হবো? বান্দা যখন কোনো অপরাধ করে আল্লাহর নিকট ফিরে যায় এবং তাওবা করে, আল্লাহ তার তাওবা কবুল করেন আল্লাহতায়ালা তার প্রতি অধিক খুশী হন।
শিরক সর্ম্পকে কুরআনের ভাষ্য ঃ
১. আল্লাহতায়ালা বলেন : ‘নিশ্চয়ই যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে অংশীদার স্থির করে আল্লাহতায়ালা তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেন এবং তার বাসস্থান হবে জাহান্নামে।’ (মায়িদা : ৭২)।
২. তারা আল্লাহর পরিবর্তে এমন কিছুকে ডাকে যা তাদের অপকার করতে পারে না, উপকারও করতে পারে না। এটাই চরম বিভ্রান্তি যে, তারা এমন কিছুকে ডাকে, যার অপকার উপকারের আগে এসে পৌঁছে। কত নিকৃষ্ট এ বন্ধু কত নিকৃষ্ট এ সঙ্গী। (হজ্ব : ১২-১৩)।
শিরক সর্ম্পকে হাদীসের ভাষ্য ঃ
১. যে ব্যক্তি শিরকমুক্ত অবস্থায় আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাত করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি শিরক করে আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাত করবে সে জাহান্নামে যাবে। (সহীহ আল বুখারী)
২. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : যে ব্যক্তি বলে যে, আমি আল্লাহ কাছে গুনাহ মাফ চাই, তিনি ছাড়া আর কোন সত্যিকার মা‘বুদ নেই। তিনি চিরঞ্জীব ও ধারক এবং আমি তার দিকেই প্রত্যাবর্তন করবো। তাহলে, তার গুনাহসমুহ মাফ করে দেয়া হবে। যদিও সে জেহাদের ময়দান থেকে পালিয়ে আসুক না কেন। (আবু দাউদ)
জেহাদের ময়দান থেকে পালিয়ে আসা কবীরা গুনাহ। তা সত্বেও আল্লাহ তাকে মাফ করে দেবেন।

তাওবা ঃ
আল্লাহতায়ালা তাওবাকারীদের ভালোবাসেন এবং মহান আল্লাহ তাওবাকারীদের ক্ষমা করতে ভালোবাসেন। কারণ আল্লাহতায়ালা মানবজাতিকে অত্যন্ত ভালোবেসে সৃষ্টি করেছেন। মানবজাতি পাপকাজ করে জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হোক এটা আল্লাহতায়ালা চান না। আল্লাহতায়ালার দরবারে বান্দার তাওবা করা অধিক পছন্দনীয়। মানুষ অপরাধ করার পর আল্লাহতায়ালার নিকট তাওবা করা ও গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করাকে তিনি অত্যধিক পঁছন্দ করেন। আল্লাহতায়ালা তাওবা কবুল করেন এবং তাওবার মাধ্যমে বান্দাকে পুত পবিত্র করেন। তবে তাওবা কি বা তাওবা কবুল হওয়ার জন্য শর্তাবলী কি তা আমাদের জানা থাকা জরুরী। আল্লাহর হাবীব বিশ্বনবী মুহাম্মদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাধ্যমে তাওবা করার সঠিক নিয়ম শিক্ষা দিয়েছেন। মহান আল্লাহ মু’মিন বান্দাদের সফলকাম হওয়ার জন্য আহ্বান করেন তাওবার মাধ্যমে। কারণ আল্লাহতায়ালা আমাদের প্রভূ তিনি ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। যিনি প্রভূ তাঁর অন্যতম গুণ হল ক্ষমা করা। প্রতিটি মুসলিমকে মনে রাখতে হবে আল্লাহ আমাদের হিসাব নেয়ার আগে আমরা আমাদের নিজেদের হিসাব করে নিব। তাতে আমাদের হিসাব দেয়া সহজ হবে। যদি সম্ভব হয় প্রতিদিন একবার অথবা সপ্তাহে বা অথবা কমপক্ষে মাসে একবার তাওবা করুন এবং আপনি আপনার হিসাব করুন। আপনি নিজেকে প্রশ্ন করুন, এমন কোন কাজ করছেন কি, যা সঠিক আক্বীদা পরিপন্থী/দ্বীনের স্তম্ভ সালাত কায়েমে আপনার কোন দুর্বলতা আছে কি? ইসলামের অন্যান্য মৌলিক বিষয়গুলি যথাযথভাবে আদায় করছেন কি? আপনি কোন কবীরা গুনাহে লিপ্ত হয়েছেন কি? দুনিয়ার সফলতা এবং পরকালের অনাবিল শান্তি পাওয়ার আশা প্রত্যেকটি বনীআদমের হৃদয়ের গহিনে লুকিয়ে আছে। কিন্তু ইবলিস কি এমনিতেই তাদের ছেড়ে দেবে? সে আদম-সন্তানকে বিপথে নেয়ার জন্য সব সময় সরল পথে ওঁত পেতে বসে থাকে। যখনই কোনো মানুষ সৎকর্ম করতে করতে নাজাতের দারপ্রান্তে উপনীত হয়, ঠিক তখনই ইবলিস খপ করে ধরে তাকে টেনে নিয়ে যায় আপন ভুবনে, শয়তানি রাজ্যে। তাকে দিয়ে শিরক নামক মারাত্মক অপরাধটি পর্যন্ত করিয়ে ছাড়ে। শিরক এমন এক অপরাধ, যা মানুষের ইবাদতের প্রাসাদকে ভেঙে খান খান করে দেয়। ইহা মানুষকে নিক্ষেপ করে গোমরাহীর অতল গহিন অন্ধকারে। বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত, আমাদের জানা-শোনার মধ্যে যেসব জগত রয়েছে এবং আমাদের জ্ঞানসীমার বাইরেও যে লক্ষ-কোটি জগত থাকতে পারে, এসবের নিরঙ্কুশ মালিক এবং সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হলেন একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা। তাঁর ক্ষমতা ও সার্বভৌমত্বের মধ্যে অন্য কারও বিন্দুমাত্র অংশ নেই। আমরা সর্বদাই তাঁর করুণার পাত্র এবং অনুগ্রহের প্রত্যাশী। তিনি যখন, যেভাবে এবং যা চান তাই হয়ে থাকে। তিনি বলেন ‘তবু কি তারা কর্ণপাত করবে না? আর আল্লাহ যদি দিনকে কিয়ামত পর্যন্ত বর্ধিত করে দেন আর কে আছে তোমাদের বিশ্রামের জন্য রাতকে নিয়ে আসতে পারে?’ (কাসাস : ৭১-৭২) মানব প্রকৃতি বেঁচে থাকার সবচেয়ে বড় সার্থকতা হচ্ছে একমাত্র আল্লাহর সমীপে মাথা নত করা, অন্য কারও কাছে নয়। কিন্তু কেউ যখন আল্লাহকে ছেড়ে অন্য কারও কাছে মাথা নুইয়ে দেয় কিংবা বিশ্বাস করে যে, আল্লাহকে ছাড়া অন্য কেউ ইবাদতের হকদার আছে, তখন সে মানবীয় সত্ত্বা থেকে বহুদূরে অবস্থান করে। ফলে তার অবস্থা হয়ে যায় একটি জীবন্ত লাশের ন্যায়। শয়তান তাকে অধঃপতনের গহিন সমুদ্রে ফেলে দেয়, সেখানে সে হাবুডুবু খেতে থাকে। তার উন্নত নেকআমল বরবাদ হয়ে যায়, ফলে তার সর্বশেষ ঠিকানা হয়ে যায় জাহান্নাম।
তাওবা কাহাকে বলে ঃ
তাওবা শব্দের অর্থ : প্রত্যাবর্তন করা, ফিরে আসা, ক্ষমা প্রার্থনা করা, অনুতাপ করা প্রভৃতি। পরিভাষায় : কোনো পাপকাজ সংঘটিত হওয়ার পর অনুতাপ-অনুশোচনা করে সেই পাপ কাজের জন্য মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া এবং সেই পাপকাজ ছেড়ে ভালো কাজে ফিরে আসাকেই তাওবা বলে। খারাপ কাজ-গুনাহ, পাপাচার, অন্যায় অবিচার ও আল্লাহর নাফরমানি হতে ফিরে এসে, বান্দা নেক কাজ করার মাধ্যমে তার প্রভুর দিকে ফিরে আসাই তাওবা। অনেক অজ্ঞ বা মূর্খ লোকেরা মনে করে তাওবা শুধু মাত্র খারাব কাজ বা গুনাহের কাজ থেকে ফিরে আসার দ্বারাই হয়ে থাকে। তাদের এ ধরনের ধারণা মোটেও ঠিক না। বরং এখানে সঠিক, নির্ভুল ও গ্রহণযোগ্য কথা হল, যে সব নেক আমল করার জন্য আল্লাহতায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন তা ছেড়ে দেয়াও গুনাহ। যারা এ সব নেক আমালগুলো পালন করা ছেড়ে দেয় তাদের অবশ্যই তা ছেড়ে দেয়া হতে তাওবা করা এবং ফিরে আসা, নিষিদ্ধ কাজ করা থেকে তাওবা করা হতে আরো বেশী গুরুত্বপুর্ণ। অধিকাংশ মানুষ আল্লাহর অনেক আদেশ, অন্তরের কার্যাদি, অঙ্গপ্রত্যঙ্গের আমল বা যিকির ছেড়ে দেয়, অথচ তারা জানেই না যে এগুলো সবই আল্লাহর আদেশের অন্তর্ভুক্ত এবং এ গুলো ছেড়ে দেয়া বা এ সব আমল পালন করা হতে বিরত থাকা অপরাধ ও গুনাহ। অথবা জানা থাকলেও তারা তার পাবন্দি করে না এবং এগুলো ছেড়ে দেয়াতে যে, তার পাপ হচ্ছে, তা থেকে ফিরে আসা ও তাওবা করা যে গুরুত্বপূর্ণ বা অতীব জরুরী তা তারা বিশ্বাস করে না। ফলে সত্যিকার জ্ঞান না থাকার কারণে তারা হয়ত পথভ্রষ্টদের দলভুক্ত হয় অথবা অভিশপ্ত সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত হয়। সত্যকে সত্য বলে জানা সত্ত্বেও তা হতে বিরত থেকে তারা মন্দ পরিণতির অধিকারীই রয়ে গেল। মোট কথা, তাওবা বান্দার জীবনের শেষ ও শুরু। তবে তার প্রয়োজন যেমনিভাবে জীবনের শেষাংশে জরুরী অনুরূপভাবে জীবনের প্রথমাংশেও জরুরী। গুনাহগার বান্দা তাওবার মাধ্যমে আল্লাহ নাফরমানী থেকে আল্লাহ দিকে পুনরায় ফিরে আসে। বান্দা যত গুনাহ করুক না কেন আল্লাহ কাছে ক্ষমা চাইলে তিনি ক্ষমা ও মাফ করেন। বান্দাহ গুনাহ যত বড় তাঁর রহমত এর চাইতেও বড়। তাই নিরাশ হওয়ার কোন কারণ নেই।
তাওবার গুরুত্ব ঃ
ইস্তেগফার ও তাওবা আল্লাহর ইবাদত। ইস্তেগফার ও তাওবার কারনে গুনাহ মাফ হয়, বৃষ্টি বর্ষণ হয়, সন্তান ও সম্পদ দ্বারা সাহায্য করা হয় এবং জান্নাতের অধিকারী করা হয়। ইস্তেগফার ও তাওবার ফলে সর্বধিক থেকে শক্তি ও সামর্থ্য বৃদ্ধি পায়। আল্লাহতায়ালা বলেন ঃ “তিনি তোমাদের শক্তির সাথে আরো শক্তি বৃদ্ধি করবেন”। (হুদ : ৫২) ইস্তেগফার ও তাওবার ফলে সুখ-সমৃদ্ধি ও প্রাপ্য হক অর্জিত হয়। ইস্তেগফার ও তাওবার ফলে বালা-মুসিবত দুরীভূত হয়। আল্লাহতায়ালার কাছে ওই মু’মিন বান্দা প্রিয়, যে পাপকাজ করার পর মহান আল্লাহর দরবারে তাওবা করে। আর তাওবা করার পাশাপাশি পাপকাজ থেকে ফিরে আসে। পাপকাজ করার পর অনুতপ্ত হয়ে যে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে সে পাপীদের মধ্যে উত্তম। তাওবা-এস্তেগফারের মর্যাদা আল্লাহ আরশ বহনকারী ফেরেশতাসহ অন্যান্য ফেরেশতাদের কাছেও অনেক বেশী। ফেরেশতারা নিষ্পাপ। তাদের দোয়া কবুল হয়। তাওবা করলে ফেরেশতারা তাওবাকারীর পরিবার ও সন্তানদেরকে বেহেশতে প্রবেশের জন্য দোয়া করেন। মানুষ আল্লাহর সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব। এই শ্রেষ্ঠত্বের কারণে আল্লাহতায়ালা মানুষকে আশরাফুল মাখলুকাত তথা সৃষ্টির সেরা জীব হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন। কিন্তু এই পৃথিবীতে চলার পথে শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে মানুষ অনেক ভুল করে বসে। ছোট ছোট গুনাহ করতে করতে অনেক সময় তারা জানা অজানা অনেক বড় বড় গুনাহ ও করে থাকে। অনেক মানুষ তাদের গুনাহের দিকে তাকিয়ে হতাশায় ভেঙ্গ পড়ে। আল্লাহতায়ালা সৃষ্টির হতাশা কাটাতে তাওবার ব্যবস্থা করেছেন। তাওবার মাধ্যমে আল্লাহ একজন মানুষকে নিস্পাপ করে দেন। মানব সৃষ্টির শুরু থেকেই আল্লাহতায়ালার দরবারে বান্দার তাওবা অধিক পছন্দনীয়। কোন মানুষ অপরাধ করার পর যখন আল্লাহর কাছে তাওবা করে এবং তার দ্বারা সংঘটিত গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, আল্লাহ তাকে অত্যধিক পছন্দ করেন, তার তাওবা কবুল করেন এবং তাওবার মাধ্যমে বান্দাকে পবিত্র করেন। কুরআন ও হাদীস দ্বারা প্রমাণিত মহানআল্লাহ তাওবা কবুলকারী। এ জন্য বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ তাওবার প্রতি বেশি গুরুত্ব প্রদান করে তাঁর উম্মতদের তাওবার প্রতি উৎসাহিত করেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : হে লোক সকল, তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা করো এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয় আমি প্রতিদিন ১০০ বার তাওবা করে থাকি। (সহীহ মুসলিম) এ হাদীসের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাওবার প্রতি গুরুত্ব প্রদান করে তার উম্মতদের তাওবা করার প্রতি নির্দেশ প্রদান করেন। কারণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন নিষ্পাপ। তাঁর কোনো গুনাহ ছিল না। তারপরও তিনি প্রতিদিন ১০০ বার তাওবা করতেন। তাঁর এই তাওবার মাধ্যমে তাঁর উম্মতদের শিক্ষা দিতেন ও (আগের ও পরের সব গুনাহ মাফ করে দেয়ার জন্য) আল্লাহর প্রশংসা করতেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অন্য হাদীসে বলেছেন : মৃত্যুর যন্ত্রণা শুরু না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ তাঁর বান্দার তাওবা কবুল করেন। (জামে আত তিরমিযী) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ হাদীস দ্বারা উম্মতের সব সময় তাওবা করার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। কারণ কার মৃত্যুযন্ত্রণা কখন শুরু হয় তা কেউ বলতে পারে না। তাই প্রতিটি মু’মিন বান্দার উচিত আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা। তোমরা কি পাপ কাজের মাধ্যমে ভ্রান্ত পথে অগ্রসর হয়েছো। তোমরা পাপ করার পর আল্লাহর দরবারে ফিরে এসো, আল্লাহ তোমাদের পাপ মোচন করে দেবেন এবং জন্নাতে প্রবেশ করাবেন।
তাওবা কবুলের শর্ত সমূহ ঃ
মনে রাখতে হবে তাওবা শুধু করলেই কবুল হয়ে যায় না। মুখে ক্ষমা প্রার্থনা দ্বারাই আল্লাহতায়ালা ক্ষমা করে দেন না। তাওবা কবুল হওয়া বা শুদ্ধ হওয়া জন্য একাধিক শর্ত রয়েছে। শর্তগুলো পূরণ করা তাওবা কবুল হওয়া পূর্ব শর্ত। এ শর্তগুলোর বাস্তাবায়ন ছাড়া তাওবা কবুল হয় না। তাওবা করার জন্য নিম্মবর্ণিত শর্তগুলো পূরণ করতে হবে, তাহলেই আল্লাহ তায়ালা সেই তাওবা কবুল করবেন।
১.গুনার স্বীকৃতি : অতীতের সমস্ত পাপ কাজ ও ভুল ক্রুটি আল্লাহর কাছে স্বীকার করতে হবে।
২.গুনার জন্য লজ্জিত ও অনুতপ্ত হওয়া : গুনাহর জন্য আল্লাহর কাছে অনুতপ্ত ও লজ্জিত হতে হবে।
৩.তাওবা করা ও মাফ চাওয়া : গুনাহর জন্য লজ্জিত ও অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহর কাছে সমস্ত গুনাহ খাতার জন্য “ইস্তিগফার” করতে হবে (মাফ চাইতে হবে) “তাওবা” করতে হবে (গুনাহ করা বন্ধ করে আল্লাহর কাছে ফিরে আসতে হবে)।
৪.গুনাহ না করার ওয়াদা করা : গুনাহর কাজ করা বন্ধ করতে হবে। এখন শুধু মুখে মুখে তাওবা করি, কয়েকদিন পর থেকে পাপ কাজটা ছেড়ে দেবো এ রকম হলে তাওবা হবে না।
৫.গুনাহ অন্তর থেকে ঘৃনা করা : অন্তরে ঐকাজগুলোর প্রতি ঘৃণা রেখে সেইগুলোতে আর ফিরে না যাওয়ার জন্য প্রতিজ্ঞা করতে হবে।
৬.কারো হক নষ্ট না করা : কারো হক্ক নষ্ট করে থাকলে তাকে তার হক্ক ফিরিয়ে দিতে হবে, অথবা যেইভাবেই হোক, সামর্থ্য না থাকলে অনুরোধ করে, ক্ষমা চেয়ে তার কাছ থেকে মাফ করিয়ে নিতে হবে। যেমন ঋণ থাকলে তা পরিশোধ করা, আপনি কাউকে গালি দিয়ে থাকলে অথবা কারো অধিকারে হস্তক্ষেপ করে থাকলে আপনার কর্তব্য হল, তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা। আর যদি আপনি এমন কোন অন্যায় করেন যার মধ্যে অন্যের অধিকারের কোন সম্পর্কে নেই। উল্লেখ্য, তাওবা করলে আল্লাহ সমস্ত গুনাহ মাফ করে দেন, এমনকি কারো পাপ আকাশ পর্যন্ত পৌঁছে গেলেও আল্লাহ তাকে মাফ করে দেবেন। কিন্তু বান্দার কোনো হক্ক নষ্ট করলে সেটা বান্দা মাফ না করলে তিনি মাফ করবেন না।
৭.অন্তরে আশা রাখা : অন্তরে আশা রাখতে হবে, যে আমি গুনাহগার কিন্তু আল্লাহ গাফুরুর রাহীম অতীব ক্ষমাশীল ও দয়ালু। সুতরাং তিনি আমার তাওবা কবুল করবেন।
৮.ওয়াদার ওপর টিকে থাকার জন্য আল্লাহ সাহায্য প্রার্থনা করা : তাওবা করার পরে প্রাণপণে চেষ্টা করতে হবে পাপ কাজ থেকে সম্পূর্ণ দূরে থাকতে, এবং সাধ্য অনুযায়ী বেশি বেশি করে নেকীর কাজ করার চেষ্টা করতে হবে।
৯.গুনাহ করার সাথে সাথে তাওবা করা : যে পাপ কাজ থেকে তাওবা করা হলো (সমস্ত পাপ কাজ থেকেই তাওবা করা ফরয), কোনো ভুলে বা কুপ্রবৃত্তির কারণে পাপ কাজটা করে ফেললে সাথে সাথে আবার তাওবা করে সেটা থেকে ফিরে আসতে হবে। এইভাবে যখনই কোনো পাপ হবে সাথে সাথেই তাওবা করতে হবে, মৃত্যুপর্যন্ত।
১০.পূর্ণ এখলাস ও আন্তুরিকতার সাথে তাওবা করা : পূর্ণএখলাস ও আন্তরিকতারসাথে তাওবা করতে হবে। একে তাওবাতুন নাছুয়া বলে। পূর্ণএখলাস ও আন্তরিকতার সাথে তাওবা করলে আল্লাহ গুনাহসমূহ মাফ করে দেবেন। জান্নাতে দাখিল করাবেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন-(তাওবাতুন নাছূহার বিনিময়ে) আশা করা যায়, তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের মন্দকার্যগুলো মোচন করে দিবেন এবং তোমাদেরকে দাখিল করবেন জান্নাতে, যার পাদদেশে নদী প্রভাহিত। (তাহরীম : ০৮)
তাওবার ফলাফল ঃ
ইমাম গাজালী রহ. তার কিতাব মিনহাজুল আবেদীনে’ লিখেন “অতপর হে! ইবাদতকারী তোমার ওপর কর্তব্য হল তুমি আল্লাহর নিকট তাওবা কর। আর তাওবা করবে তুমি দুইটি কারণে-
(এক ) আল্লাহর আনুগত্য করার জন্য : তাওবার কারণে আল্লাহ আপনাকে তার আনুগত্য করা সহজ করে দিবেন এবং আপনার নেক কাজ করার তাওফীক ও সৌভাগ্য লাভ হবে। গুনাহের পরিণতি হল, গুনাহ মানুষকে বঞ্চিত করার অভিবাকত্ব করে এবং লাঞ্ছনা ও বঞ্চনার দিকে ঠেলে দেয়। গুনাহতে আবদ্ধ লোককে আল্লাহর আনুগত্যের পথে চলা ও আল্লাহর দীনের খেদমতে অগ্রসর হতে গুনাহ বারণ করে। গুনাহের বোঝা ভারি হলে সকল প্রকার নেক আমল তার জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। তার জন্য আর কোন নেক আমল করা সহজ হয় না ইবাদত বন্দেগীতে সে আর কোন উৎসাহ পায় না। আর সব চেয়ে বিপদজনক কথা হল, যারা সব সময় গুনাহে লিপ্ত থাকে তাদের অন্তর কালো হয়ে যায়, ফলে তারা অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়। অন্তর ভাল মন্দের বিচার করতে অক্ষম হয়ে যায়, তাদের অন্তর পাথরের চেয়েও শক্ত হয়ে যায়। ফলে কোন ভাল কাজ তার অন্তর কবুল করে না। তখন একমাত্র আল্লাহর অনুগ্রহ ছাড়া সে আর কোন মুক্তি বা নাজাতের পথ খুজে পায় না। কোন কিছুতেই তৃপ্তি অনুভব করে না। সে নিজেকে অনিরাপদ মনে করে। নিজের জন্য কোথাও নিরাপদ স্থান খুঁজে পায় না এবং পায় না কোন আশ্রয় কেন্দ্র। পরিণতিতে ধাবিত হয় গভীর অন্ধকার ও ভয়ঙ্কর বিপদের দিকে। ধীরে ধীরে গুনাহ তাকে ঈমান হারা হওয়া এবং শিরক ও কুফরের দিকে টেনে নিয়ে যায়। আরো আশ্চযের্র বিষয় হল, যে ব্যক্তি দুর্ভাগা এবং যার অন্তর পাথরের চেয়েও বেশী কঠিন, তাকে কিভাবে আল্লাহর আনুগত্যের তাওফীক দেয়া হবে ? তাকে কিভাবে আহবান করা হবে কল্যাণের পথে ? অথচ সে গুনাহের কাজেই অবিচল, তার মধ্যে কোন অনুভূতি নাই। সে যে একজন অপরাধী ও অন্যায়কারী এ বিষয়ে তার মধ্যে কোন চেতনা জাগ্রত হয় না। সুতরাং তাকে কিভাবে কাছে আনা হবে যে নাপাকী ও দূর্গন্ধময় বস্তুর সাথে সর্বদা মাখামাখি করছে, গুনাহের কাজে লিপ্ত থাকে অহর্নিশ। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : মানুষ যখন মিথ্যা কথা বলে,তার মুখ থেকে দূর্গন্ধ বের হতে থাকে, আর সাথে সাথে তার কাছ থেকে দুই জন ফেরেশতা দূরে সরে যায়। তখন আর তার মুখ ও জিহবা আল্লাহর যিকিরের উপযোগী থাকে না। ফলে গুনাহে লিপ্ত থাকে এ ধরনের খুব কম লোকই আছে যারা পরর্বতীতে আল্লাহর আনুগত্যে ফিরে আসে এবং আল্লাহর ইবাদতে কোন স্বাদ আস্বাদন করে। যদি সে কোন দান-সদকা করে তা অনেক কষ্টে, এতে কোন স্বাদ উপভোগ করে না, আত্মার কোন তৃপ্তি হয় না এগুলো সবই হল গুনাহের পরিণতি এবং তাওবা না করার ফলাফল। একথাই সত্য যে, যদি আপনি দিনে রোজা এবং রাতে ইবাদত করতে না পার, তাহলে মনে রাখবেন আপনি একজন হাতে পায়ে কড়া পরিহিত শিকলাবদ্ধ লোক। আপনার গুনাহই আপনাকে এ পরিণতিতে টেনে এনেছে।
(দুই) ইবাদত বন্দেগী কবুল হওয়ার জন্য : আর দ্বিতীয় বিষয় হল, আপনাকে যে কারণে আল্লাহর নিকট তাওবা করতে হবে তা হল, যাতে আল্লাহ আপনার ইবাদত বন্দেগীগুলো কবুল করেন। কারণ, পাওনাদার সাধারণত উপঢৌকন গ্রহণ করে না। গুনাহ হতে বিরত থাকা, গুনাহ হতে তাওবা করা এবং প্রতিপালককে সন্তুষ্ট করা হল ফরয কাজ। আর অন্যান্য সকল ইবাদত তা সবই নফল। সুতরাং মূল পাওনা পরিশোধ ছাড়া আল্লাহতায়ালা আপনার থেকে কিভাবে উপঢৌকন গ্রহণ করবেন? আপনি কীভাবে তার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে বৈধ ও মুবাহ কাজ গুলি ছেড়ে দিবেন অথচ আপনি এখনো আল্লাহর নাফরমানী এবং নিষিদ্ধ কাজে লিপ্ত। আপনি কিভাবে আল্লাহকে ডাকবেন, তার সাথে মুনাজাত করবেন এবং তার প্রশংসা করবেন অথচ আল্লাহ আপনার উপর রাগান্বিত। মনে রাখতে হবে যারা আল্লাহর নাফরমানীতে লিপ্ত তাদের অবস্থা উল্লেখিত অবস্থার মোটেই ব্যতিক্রম নয়, তারা আল্লাহর অবাদ্ধতায় লিপ্ত অথচ তারা আল্লাহর নিকট দোয়া করে, আল্লাহর দরবারে মুনাজাত করে এবং তার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে।
তাওবাতুন নাছুহা ঃ
মনে রাখতে হবে তাওবা হল মানুষের অন্তরের প্রচেষ্টা। অর্থাৎ মানুষের অন্তরে অপরাধবোধ জাগ্রত হওয়া এবং নিজেকে গুনাহের কারণে অপরাধী মনে করা যা বান্দার অন্তরে কখনো কখনো জাগ্রত হয়ে থাকে। অন্তরে এ ধরনের অনুভূতি জাগ্রত হওয়ার অর্থই হল তাওবা বা ক্ষমা প্রার্থনা ও আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়া। আর আত্মাকে সকল প্রকার গুনাহ, অন্যায়, পাপাচার ইত্যাদি হতে বিরত রাখার মাধ্যমে একজন বান্দা সফলকাম হতে পারে। জনৈক আলেম তাওবার সংজ্ঞায় বলেন, আল্লাহর অসোন্তোষ ও পাকড়াওয়ের ভয়ে গুনাহের ইচ্ছা ছেড়ে দেয়া এবং সমপর্যায়ের যে সব গুনাহ তার দ্বারা সংঘটিত হয়েছে, তার থেকে ফিরে এসে আল্লাহর দরবারে ক্ষমা প্রার্থনা করা। শুধু সংঘটিত গুনাহ নয়, যদি কোন গুনাহের ইচ্ছা মনে জাগ্রত হয়ে থাকে তা থেকে ফিরে আসাও এক ধরনের তাওবা। কারো তাওবা কবুল হয়েছে কিনা এটা কিভাবে বুঝবেন ? অনেক আলেম এ সম্পর্কে বলেন ঃ কারো যদি তাওবা করার পরের জীবন আগের জীবন থেকে ভালো হয় অর্থাৎ পাপের কাজ অনেক কমে যায় ও ভালো কাজ বৃদ্ধি পায় তাহলে আশা করা যেতে পারে তার তাওবা আল্লাহর দরবারে কবুল হয়েছে। কিন্তু কারো যদি এমন না হয় অর্থাৎ তাওবার আগের ও পরের জীবনে কোনো পার্থক্য না থাকে তাহলে বুঝতে হবে তার তাওবাতে ক্রুটি আছে। তার উচিত হতাশ না হয়ে বার বার আন্তরিকতার সাথে খালেস নিয়তে তাওবা করা, আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া।
ইস্তেগফার ও তাওবার সময় ঃ
ইস্তেগফার ও তাওবা সব সময় করা যায়, কিন্ত গুনার পর ইস্তেগফার ও তাওবা করা ওয়াজিব এবং নেক আমল করার পর মুস্তাহাব। যেমন সালাত শেষে তিনবার ইস্তেগফার করা, হজ্ব শেষে ইস্তেগফার করা, বিশেষ করে পবিত্র রমযান মাসে বেশি বেশি করে ইস্তেগফার ও তাওবা করা ইত্যাদি। তবে ক্ষমা প্রার্থনার উত্তম সময় হলো ফরজ নামাজ শেষে ও শেষ রাতে যখন মানুষ ঘুমিয়ে পড়ে। তখন চোখের পানি ফেলে আল্লাহর কাছে ইস্তেগফার ও তাওবা করাই উত্তম। কারণ ওই চোখের পানি আল্লাহর কাছে অত্যান্ত প্রিয়। রমযান মাসে ইফতারী ও সেহরীর সময় ইস্তেগফার ও তাওবা করা ফজীলত বেশী। কারণ এ সময় আল্লাহ ইস্তেগফার ও তাওবা কবুুল করেন। তাদের ফরিয়াদ শুনেন। মনের আশা আঙ্খাংকা পুরণ করে দেন।
ইস্তেগফার ও তাওবার পার্থক্য ঃ
ইস্তেগফার ঃ ইস্তগেফার’ শব্দরে র্অথ কৃত পাপর্কমরে জন্য আল্লাহর দরবারে ক্ষমা র্প্রাথনা করা । ক্ষমা চাওয়ার
উদ্দেশ্য বান্দার আসতাগফিরুল্লাহ বলা।
তাওবা ঃ আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করা, ফিরে আশা, গুনাহের জন্য অনুতপ্ত হওয়া, গুনাহ না করার
ওয়াদা করা, ওয়াদার ওপর টিকে থাকা ও তার প্রতি মনোনিবেশ করা।
তাওবা সর্ম্পকে কুরআনের ভাষ্য ঃ
১.তিনি সেই সত্তা যিনি বান্দার তাওবা কবুল করেন, তাদের গুনাহ মাফ করেন এবং তোমরা যা করো সবকিছু তিনি জানেন। (শুরা : ২৫)
২.কেউ খরাপ কাজ করে কিংবা নিজের উপর জুলুম করে যদি আল্লাহ কাছে ক্ষমা চায়, সে আল্লাহকে ক্ষমাশীল ও মেহেরবান দেখতে পাবে। (নিসা : ১১০)
৩.তাওবা-এস্তেগফারকারীদের জন্য স্বয়ং আল্লাহ আরশ বহনকারী ফেরেশতা ও এর চারপাশের ফেরেশতারা এই বলে দোয়া করে যে, যারা তাওবা করে এবং আপনার পথে চলে, তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং জাহান্নামের আযাব থেকে রক্ষা করুন। হে আমাদের রব, আপনি তাদেরকে এবং তাদের বাপ-দাদা, স্বামী-স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততিদেরকে আপনার প্রতিশ্রুতি চিরকাল বসবাসের জান্নাতে প্রবেশ করান। নিশ্চয়ই আপনি পরাক্রশালী, প্রজ্ঞাময় এবং আপনি তাদেরকে অমঙ্গল ও ক্ষতি থেকে রক্ষা করুন। আপনি যাকে সেদিন অমঙ্গল থেকে রক্ষা করেন, তাদের প্রতি অনুগ্রহই করেন। এটাই মহাসাফল্য। (মোমিন : ৭ থেকে ৯)
৪.কিন্তু যারা তাওবা করবে, ঈমান আনবে এবং ভাল কাজ করবে আল্লাহ তাদের খারাপ কাজসমূহকে ভাল কাজ দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু আর যারা তাওবা করে এবং নেককাজ করে আল্লাহ প্রতি তাদের তাওবা সত্যিকারের তাওবা। (ফোরকান : ৭০ ও ৭১)
৫.তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর এবং তাঁর নিকট তাওবা কর, তোমার প্রতিপালক পরম দয়ালু ও প্রেমময়। (হুদ : ৯০)
৬.তোমরা প্রতিপালকের দয়া করা তাঁর কর্তব্য বলে স্থির করেছেন। তোমাদের মধ্যে কেউ অজ্ঞানতাবশত যদি মন্দ কাজ করে তারপর তাওবা করে এবং সংশোধন করে (নিজের অবস্থার) তবে আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (আন’আম)
৭.তাওবা তাদের জন্য নয়, যারা আজীবন মন্দ কাজ করে এবং তাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হলে সে বলে, আমি এখন তাওবা করছি। তাওবা তাদের জন্যও নয়, যারা মারা যায় কাফির অবস্থায়। এরাই তারা, যাদের জন্য আমি মর্মন্তদ শাস্তির ব্যবস্থা করেছি। (নিসা : ১৮)
৮.অত:পর তারা কি আল্লাহর দিকে তাওবা করে ফিরে আসবে না এবং তাদের গোনাহ সমূহের জন্যে ক্ষমা চাইবে না? অথচ আল্লাহ তো ক্ষমাশীল এবং মেহেরবান। (মায়েদা : ৭৪)
৯.কিন্তু তারা তাওবা করে ও নিজেদের কর্মনীতির সংশোধন করে নিবে এবং যা গোপন করছিল তা প্রকাশ করে তাদেরকে আমি মাফ করে দিব, প্রকৃতপক্ষে আমি তাওবা গ্রহণকারী ও দয়ালু। (বাকারা : ১৬০)
১০.(তাওবাকারীর বৈশিষ্ট্য) আল্লাহ দিকে বার বার প্রত্যাবর্তনকারী তার বন্দেগী পালনকারী, তার প্রশংসা বাণী উচ্চারণকারী, তার জন্য জমীনে পরিভ্রমণকারী, তার সম্মুখে রুকু ও সিজদায় বিনীত, ভাল কাজের আদেশদানকারী, খারাপ কাজে বাধা দানকারী এবং আল্লাহ নির্দিষ্ট সীমা রক্ষাকারী এবং হে নবী এই মু’মিন লোকদের সুসংবাদ জানিয়ে দিন। (তাওবা : ১১২)
১১.আল্লাহর কাছেই ক্ষমা প্রার্থনা কর। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাকারী করুনাময়। (বাকারাহ : ১৯৯)
১২.অন্যত্র আল্লাহ রাব্বুল আ’লামীন ইরশাদ করেন : আল্লাহর কাছেই ক্ষমা প্রার্থনা কর। (ফুস্সিলাত : ৬)
১৩.তিনি বলেন ‘তবু কি তারা কর্ণপাত করবে না? আর আল্লাহ যদি দিনকে কিয়ামত পর্যন্ত বর্ধিত করে দেন আর কে আছে তোমাদের বিশ্রামের জন্য রাতকে নিয়ে আসতে পারে?’ (কাসাস : ৭১-৭২)
১৪.হে ঈমানদার লোকেরা, তোমরা খালেস দিলে তাওবা করে আল্লাহর দিকে ফিরে আসো। আশা করা যায়,আল্লাহ তোমাদের ছোটখাটো ক্রটিবিচ্যুতি মার্জনা করে দেবেন এবং সেই জান্নাতে স্থান দেবেন। যাঁর পাদদেশ দিয়ে ঝরণা ধারা প্রবাহিত। (তাহরীম : ৮)
১৫.আল্লাহর কাছে তাদের তাওবাই সত্যিকারের তাওবা, যারা অজ্ঞতাবশত খারাপ কাজ করে এবং সাথে সাথেই তাওবা করে। আল্লাহতায়ালা তাদের তাওবা কবুল করেন। আল্লাহ তো মহাজ্ঞানী ও হেকমতওয়ালা। (নিসা : ১৭)
তাওবা সর্ম্পকে হাদীসের ভাষ্য ঃ
১.বোখারী শরীফে একটি ঘটনার উল্লেখ আছে। ঘটনাটি হলো, আগের উম্মাতের এক ব্যক্তি ৯৯টি হত্যার গুনাহ মাফ সম্ভব কিনা তা জানার জন্য একজন আলেমের কাছে যান। আলেম ব্যক্তিটি ‘না’ বলেন। তখন হত্যাকারী একেও হত্যা করে হত্যার সংখ্যা ১শত পূর্ণ করেন। তারপর ১শ’ হত্যার গুনাহ মাফ সম্ভব কিনা তা জানার জন্য আরেক আলেমের উদ্দেশ্যে রওনা করেন। পথে তার মৃত্যু উপস্থিত হলে নেক ও পাপী লোকের মৃত্যুদানকারী ফেরেশতাদের মধ্যে কে তার রূহ হরণ করবে তা নিয়ে বিরোধ সৃষ্টি হয়। পরে তার তাওবার গন্তব্যস্থল কাছে না প্রস্থান স্থল কাছে তা মাপার নির্দেশ আসে। জরীপে তাওবার স্থান নিকটবর্তী হওয়ায় নেক লোকের রূহ হরণকারী ফেরেশতারা তার রূহ হরণ করেন। এই ঘটনা তাওবার মর্ম ও মাহাতœ্যকে কি সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছে।
২.হে লোক সকল! তোমরা আল্লাহ কাছে তাওবা কর এবং গুনাহ মাফ চাও। আমি প্রতিদিন একশ বার তাওবা করি। (সহীহ মুসলিম)
৩.রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : যার আমলনামায় অধিক এস্তেগফার থাকবে তার জন্য সুখবর। (ইবনে মাযাহ)
৪.সাদ্দাদ বিন আউস রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন বন্দার জন্য সাইয়্যেদুল ইস্তেগফার হচ্ছে : যে ব্যক্তি পূর্ণ বিশ্বাস রেখে দিনের বেলা এটা পাঠ করে, অতঃপর সে দিনেই সে সন্ধার পূর্বে মারা যায়, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর যে ব্যক্তি তা পূর্ণ বিশ্বাস রেখে রাতের বেলা এটা পাঠ করে, অতঃপর সে রাতেই সে সকাল হওয়ার পূর্বে মারা যায়, সে জান্নাতবাসী। (সহীহ মুসলিম)
৫.রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন : যে সাইয়েদুল এস্তেগফার পড়ে এবং এর প্রতি দৃঢ় বিশ্বাস করে সন্ধ্যা হওয়ার আগেই দিনে মারা যায়, সে বেহশতবাসী হবে; আর যে ব্যক্তি দৃঢ় বিশ্বাস সহকারে তা পড়ে সকাল হওয়ার আগে রাত্রে মারা যায, সেও জান্নাতবাসী হবে। (সহীহ আল বোখারী)
আল্লাহুমা আনতা রাব্বি লা-ইলাহা ইল্লা আনতা খালাক্বতানি ওয়া আনা আবদুকা ওয়ানা আলা আহদিকা ওয়া ওয়াহদিকা মাসতাত্ব’আতু ওয়া আউ’যুবিকা মিনশাররি মাছানা’তু আবুউ লাকা বিনিহমাতিকা আলাইয়া ওয়াআবুউ বিজানবি ফাগফিরলি ফাইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ্জুনুবা ইল্লা আনতা।
৬.হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত। মৃত্যুর আগে নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিম্মের বাক্যটি অধিক হারে উচ্চারন করতেন : “সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি আস্তাগফিরুল্লাহা ওয়াতুবু এলাহি।” (সহীহ মুসলিম)
৭.হযরত আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, বান্দা গুনাহ করার পর ক্ষমা ভিঙ্খার জন্যে যখন আল্লাহ দিকে ফিরে যায় তখন আল্লাহ সে ব্যক্তির তাওবার দরুন ঐ ব্যক্তির চেয়েও অধিক খুশি হন, যে ব্যক্তি নিজের জীবিকা নির্বাহের একমাত্র উট কোন ময়দানে হারিয়ে যাবার পর হঠাৎ তা পেয়ে যায়। (এ ব্যক্তি উট প্রাপ্তির পর কত যে খুশী হবে তা অনুমান করা সম্ভব নয়, অনুরূপভাবে বান্দা তাওবা করলে আল্লাহ খুশী হবে। বরং আল্লাহর খুশী বান্দার খুশির মোকাবিলার আরো অধিক হয়ে থাকে। কেননা তিনি হলেন দয়া ও করুনার মূল উৎস)। (সহীহ মুসলিম)
৮.রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামআল্লাহ পক্ষ থেকে বর্ণনা করেন। কোন বান্দা গুনাহ করে এসে বলে, হে আল্লাহ, আমার গুনাহ মাফ করুন। আল্লাহ বলেন, আমার বান্দা গুনাহ করেছে, সে জেনেছে যে তার একজন পালনকর্তা আছে যিনি গুনাহ মাফ করেন। তারপর সে আবারও গুনাহ করেছে এবং বলেছে, হে আল্লাহ আমার গুনাহ মাফ করুন। আল্লাহ জবাবে বলেন, আমার বান্দা গুনাহ করেছে এবং সে জেনেছে যে, তার একজন রব আছেন যিনি গুনাহ মাফ করেন। আল্লাহ বলেন, তুমি যা ইচ্ছা করো, আমি তোমার গুনাহ মাফ করে দিলাম। (সহীহ মুসলিম)
৯.অল্লাহর জন্যে সদকা এবং বেশী বেশী তাওবা জাহান্নাম থেকে নাজাতের কারণ : ইবনে উমর রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : হে নারীগণ, তোমরা সদকা কর এবং বেশী বেশী তাওবা কর। কারণ, আমি তোমাদেরকে জাহান্নামের অধিকাংশ অধিবাসী দেখেছি। তাদের থেকে এক মহিলা বলল : কী কারণে আমরা অধিকাংশ জাহান্নামী? তিনি বললেন : তোমরা বেশী বেশী লানত কর এবং স্বামীর অকৃতজ্ঞ হও। আমি তোমাদের মত আকল ও দ্বীনে ক্রুটিপূর্ণ কাউকে দেখিনি, যে বিজ্ঞলোকদের উপর বিজয়ী হয়। সে বলল : আমাদের আকল ও দ্বীনে ক্রুটি কী? তিনি বললেন, দুজন নারীর সাক্ষ্য একজন পুরুষের সাক্ষ্যের সমান, এবং তোমরা কতক দিন অবস্থান কর, যাতে তোমরা নামায আদায় কর না। (সহীহ মুসলিম)
১০.তাওবা সবচেয়ে বড় যিকর। বান্দার উচিত এ যিকর বেশী বেশী করা। হযরত আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি। ‘আল্লাহর শপথ’ প্রতি দিন আমি সত্তুরবারের চেয়েও অধিক আল্লাহর ইস্তিগফার ও তাওবা করি। (সহীহ মুসলিম)
নিষ্পাপ নবী দিনে ৭০ বারের বেশী তাওবা করলে আমাদেরমত পাপী উম্মাহর কত বার তাওবা করা দরকার তা ভেবে দেখা দরকার। দিনে কমপক্ষে ৭০ থেকে ১০০ এবং আরো বেশী তাওবা করা উচিত।
১১.রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন : অনুতপ্ত হওয়াই হলো তাওবা। (মুসনাদে আহমেদ ও ইবনে মাজাহ)
১২.নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন : যে ব্যক্তি আল্লাহ নিকট তাওবা করবে ঘড়ঘড়া উঠার পূর্বে, আল্লাহ তার তাওবা কবুল করবেন। (মুসনাদে আহমেদ ও জামে আত তিরমিযী)
১৩.রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামাযের পরও তিন বার ইস্তিগফার করতেন। (সহীহ মুসলিম)
১৪.হযরত ইবনে আব্বাস রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি ইস্তেগফারকে অবশ্যম্ভাবী করবে, আল্লাহ তাকে সকল সংকীর্ণতা থেকে মুক্ত করবেন এবং সকল পেরেশানী থেকে তাকে নাজাত দেবেন আর এমন জায়গা থেকে রিযিক দেবেন, যার কল্পনা পর্যন্ত সে করেনি।”
১৫.রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, রাতের শেষ সময়ে আল্লাহতায়ালা দুনিয়ার দিকে নাযিল হন এবং বলেন, ডাকার জন্যে কেউ আছে কি যার ডাক আমি শুনব, চাওয়ার জন্যে কেউ আছে কি যাকে আমি দেব, গুনাহ মাফ চাওয়ার কেউ আছে কি যার গুনাহ আমি মাফ করব? (সহীহ মুসলিম)
১৬.হযরত আসরার ইবনে ইয়াসার আল মাজানী রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, হে লোক সকল, তোমরা আল্লাহ কাছে তাওবা কর এবং তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই আমি প্রতিদিন একশত বার তাওবা করে থাকি। (সহীহ মুসলিম)
১৭.হযরত আবু আব্দুর রহমান আবদুল্লাহ ইবনে উমর ইবনে খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত তিনি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, মৃত্যুর যন্ত্রণা শুরু না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ তার বান্দার তাওবা কবুল করেন। (জামে আত তিরমিযি)



তাওবার দোয়াসমূহ ঃ
(১) হে আল্লাহ! দৃষ্টির অন্তরালবর্তী ও দৃষ্টিগ্রাহ্য সকল বিষয়ে যেন তোমাকে ভয় করতে পারি হে আল্লাহ! যদি জীবন আমার জন্য কল্যাণকর হয়, তাহলে আমাকে জীবিত রাখ, আর যদি মৃত্যু আমার জন্য কল্যাণকর হয় তাহলে আমাকে মৃত্যু দান কর। সেই তাওফিক প্রার্থনা করি। আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করি সত্য কথা বলার তাওফিক, খুশি ও ক্রোধ উভয় অবস্থাতেই। আমি তোমার নিকট প্রার্থনা করি মিতব্যয়িতার, সচ্ছল-অসচ্ছল উভয়াবস্থায়। প্রার্থনা করি এমন নেয়ামত যা শেষ হবার নয়। প্রার্থনা করি যা চক্ষু জুড়াবে অনিঃশেষভাবে। আমি তোমার নিকট চাই তকদিরের প্রতি সন্তুষ্টি। আমি তোমার নিকট চাই মৃত্যুর পর সুখময় জীবন। আমি তোমার নিকট কামনা করি তোমাকে দেখার তৃপ্তি, আমি কামনা করি তোমার সহিত সাক্ষাৎ লাভের আগ্রহ-ব্যাকুলতা যা লাভ করলে আমাকে স্পর্শ করবে না কোন অনিষ্ট, আর আমাকে সম্মুখীন হতে হবে না এমন কোন ফেৎনার যা আমাকে পথভ্রষ্ট করতে পারে। হে আল্লাহ, তুমি আমাদেরকে ঈমানের অলংকার দ্বারা বিভূষিত কর আর আমাদেরকে বানাও পথ প্রদর্শক ও হেদায়েতের পথিক। (সুনানে নাসায়ী)
(২) হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রভু তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ আর আমি হচ্ছি তোমার বান্দা এবং আমি আমার সাধ্য-মত তোমার প্রতিশ্রুতিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ রয়েছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট হতে তোমার আশ্রয় ভিক্ষা করি। আমার প্রতি তোমার নিয়ামতের স্বীকৃতি প্রদান করছি, আর আমি আমার গুনাহ-খাতা স্বীকৃতি করছি। অতএব তুমি আমাকে মাফ করে দাও নিশ্চয়ই তুমি ভিন্ন আর কেউ গুনাহ মার্জনাকারী নেই। (সহীহ মুসলিম)
(৩) হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করছি পদস্খলন অথবা পদস্খলিত হওয়া থেকে। পথ হারিয়ে ফেলা অথবা অন্য কর্তৃক পথভ্রষ্ট হওয়া থেকে। কারও উপর জুলুম করা থেকে অথবা কারো নির্যাতিত হওয়া থেকে। কারও সাথে মূর্খতা-পূর্ণ আচরণ করা থেকে অথবা অন্যের মূর্খতা-জনিত আচরণে আক্রান্ত হওয়া থেকে। (সুনানে আন নাসায়ী)
(৪) হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট উপকারী বিদ্যা, গ্রহণযোগ্য আমল এবং পবিত্র জীবিকা প্রার্থনা করি। (ইবনে মাজা)
(৫) হে আল্লাহ! তোমার জিকির, তোমার শুকরিয়া জ্ঞাপন করার এবং তোমার ইবাদত সঠিক ও সুন্দরভাবে সম্পাদন করারকাজে আমাকে সহায়তা কর। (হাকিম)
(৬) আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের যোগ্য কোন মা‘বুদ নেই। তিনি এক তাঁর কোন শরিক নেই। রাজত্ব তাঁরই এবং প্রশংসা মাত্রই তাঁর। তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান। হে আল্লাহ! তুমি যা প্রদান কর তা বাধা দেয়ার কেহই নেই, আর তুমি যা দেবেনা তা দেয়ার মত কেহ নেই। তোমার গজব হতে কোন বিত্তশালী বা পদমর্যাদার অধিকারীকে তার ধন-সম্পদ বা পদমর্যাদা রক্ষা করতে পারে না। (সহীহ আল বুখারী)
(৭) হে আল্লাহ! আমি আশ্রয় চাচ্ছি কৃপণতা থেকে এবং আশ্রয় চাচ্ছি কাপুরুষতা থেকে। আর আশ্রয় চাচ্ছি বার্ধক্যের চরম পর্যায় থেকে। দুনিয়ার ফিতনা-ফাসাদ ও কবরের আজাব হতে। (সহীহ মুসলিম)
(৮) হে আল্লাহ! আমি আমার নিজের ওপর অনেক বেশি জুলুম করেছি আর তুমি ছাড়া গুনাহসমূহ কেহই মাফ করতে পারে না। সুতরাং তুমি তোমার নিজ গুনে মার্জনা করে দাও এবং আমার প্রতি তুমি রহম কর। তুমি তো মার্জনাকারী ও দয়ালু। (সহীহ মুসলিম)
(৯) হে আল্লাহ! আমার অন্তরে তাকওয়া প্রদান কর, তাকে পবিত্র কর। তুমি তার উত্তম পবিত্রকারী, তার অভিভাবক ও মনিব। (সহীহ মুসলিম)
(১০) হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট দুনিয়া ও আখেরাতের নিরাপত্তা কামনা করছি। হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আমার দ্বীন ও দুনিয়া, পরিবার ও সম্পদ বিষয়ে ক্ষমা ও নিরাপত্তা কামনা করছি। হে আল্লাহ! তুমি গোপন ব্যাপারগুলো আচ্ছাদিত করে রাখো। ভয়-ভীতি থেকে আমাকে নিরাপত্তা দাও। হে আল্লাহ! তুমি আমাকে নিরাপদে রাখ, আমার সম্মুখের বিপদ হতে, পশ্চাতের বিপদ হতে, ডানের বিপদ হতে, বামের বিপদ হতে আর ঊর্ধ্ব দেশের গজব হতে। তোমার মহত্ত্বের দোহাই দিয়ে তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি আমার নিম্নদেশ হতে আগত বিপদে আকস্মিক মৃত্যু হতে। (আবু দাউদ)
(১১) হে আল্লাহ! তুমি ঈমানকে আমাদের নিকট সুপ্রিয় করে দাও এবং তা আমাদের অন্তরে সুশোভিত করে দাও। কুফর, অবাধ্যতা ও পাপাচারকে আমাদের অন্তরে ঘৃণিত করে দাও, আর আমাদেরকে হেদায়েত প্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত করে নাও। হে আল্লাহ ! আমাদেরকে মুসলমান হিসেবে মৃত্যু দাও। আমাদের মুসলমান হিসেবে বাঁচিয়ে রাখ। লাঞ্ছিত ও বিপর্যস্ত না করে আমাদেরকে সৎকর্মশীলদের সাথে সম্পৃক্ত কর। (মুসনাদে আহমদ)
(১২) হে আল্লাহ! তোমারই রহমতের আকাঙ্খী আমি। সুতরাং এক পলের জন্যও তুমি আমাকে আমার নিজের আমার নিজের উপর ছেড়ে দিয়ো না। তুমি আমার সমস্ত বিষয় সুন্দর করে দাও। তুমি ভিন্ন প্রকৃত কোন মা‘বুদ নেই। (আবু দাউদ)
(১৩) আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন মা‘বুদ নেই, যিনি সহনশীল, মহীয়ান। আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন মা‘বুদ নেই, যিনি সুমহান আরশের প্রতিপালক। আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোন মা‘বুদ নেই। তিনি আকাশম-লীর প্রতিপালক, জমিনের প্রতিপালক এবং সুমহান আরশের প্রতিপালক। (মুসনাদে আহমদ)
(১৪) হে আল্লাহ! তুমিই প্রথম, তোমার পূর্বে কিছু নেই। তুমিই সর্বশেষ, তোমার পরে কিছু নেই। তুমি প্রকাশ্য, তোমার উপরে কিছুই নেই। তুমি অপ্রকাশ্য, তোমার চেয়ে নিকটবর্তী কিছুই নেই; তুমি আমার ঋণ পরিশোধ করে দাও, আমাকে দারিদ্র্যমুক্ত করে সম্পদশালী বানাও। (সহীহ মুসলিম)
(১৫) হে আল্লাহ! সমস্ত প্রশংসা তোমার জন্য। তুমি আকাশম-লী-পৃথিবী ও এর মধ্যকার সকল কিছুর নূর। সমস্ত প্রশংসা তোমার জন্যই। তুমি আকাশম-লী-পৃথিবী ও এর মধ্যকার সকল কিছুর রক্ষক। সকল প্রশংসা তোমার, তুমি আকাশম-লী-পৃথিবী ও এর মধ্যকার সকল কিছুর প্রতিপালক। তুমি সত্য, তোমার প্রতিশ্রুতি সত্য। তোমার বাণী সত্য। তোমার দর্শন লাভ সত্য। জান্নাত সত্য। জাহান্নাম সত্য। নবীগণ সত্য। মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সত্য। কেয়ামত সত্য। (সহীহ মুসলিম)
(১৬) হে আল্লাহ! তোমার কাছে আত্মসমর্পণ করলাম। তোমার উপর ভরসা করলাম। তোমার প্রতি ঈমান আনলাম। তোমার দিকে প্রত্যাবর্তন করলাম। তোমাকে কেন্দ্র করে বিবাদে লিপ্ত হলাম। তোমার নিকট বিচার ফয়সালা সোপর্দ করলাম। অতঃপর আমাকে ক্ষমা কর, যা আগে করেছি এবং যা পরে করব, যা প্রকাশ্যে করেছি এবং যা গোপনে করেছি। তুমিই আমার মা‘বুদ। তুমি ব্যতীত সত্যিকার কোন মা‘বুদ নেই। (সহীহ মুসলিম)
(১৭) হে আল্লাহ! তুমি তোমার হারাম বস্তু হতে বাঁচিয়ে তোমার হালাল বস্তু দিয়ে আমার প্রয়োজন মিটিয়ে দাও। এবং তোমার অনুগ্রহ দ্বারা সমৃদ্ধ করে তুমি ভিন্ন অন্য সবার থেকে আমাকে অমুখাপেক্ষী করে দাও। (জামে আত তিরমিযী)
(১৮) হে আল্লাহ! আমি তোমার আশ্রয় চাচ্ছি জাহান্নামের আজাব হতে, কবরের আজাব হতে, মসিহ দজ্জালের ফিতনা হতে এবং জীবন মৃত্যুর ফেৎনা হতে। (সহীহ মুসলিম)
(১৯) হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে প্রার্থনা করছি, আমি সাক্ষ্য দিই যে- তুমিই আল্লাহ। তুমি ব্যতীত কোনো ইলাহ নেই। তুমি একক অদ্বিতীয়। সকল কিছুই যার মুখাপেক্ষী। যিনি জন্ম দেন নাই এবং জন্ম নেন নাই এবং যার সমকক্ষ কেউ নেই। (জামে আত তিরমিযি)
(২০) হে আল্লাহ! আমি আশ্রয় প্রার্থনা করছি বিপদের কষ্ট, নিয়তির অমঙ্গল, দুর্ভাগ্যের স্পর্শ ও বিপদে শক্রর উপহাস হতে। (সহীহ মুসলিম)
(২১) হে আল্লাহ! আমি সকল বিরোধ, মুনাফেকি এবং বদ চরিত্র হতে তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি। (সহীহ মুসলিম)
(২২) হে আল্লাহ! আমার সমস্ত গুনাহ মাফ করে দাও ছোট গুনাহ, বড় গুনাহ, প্রকাশ্য ও গোপন গুনাহ, আগের গুনাহ, পরের গুনাহ। (সহীহ মুসলিম)
(২৩) হে আল্লাহ! তুমি যাদেরকে হেদায়েত করেছ, আমাকে তাদের অন্তর্ভুক্ত কর। তুমি যাদেরকে নিরাপদ রেখেছ আমাকে তাদের দলভুক্ত কর। তুমি যাদের অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেছ, আমাকে তাদের দলভুক্ত করো। তুমি আমাকে যা দিয়েছে তাতে বরকত দাও। তুমি যে অমঙ্গল নির্দিষ্ট করেছ তা হতে আমাকে রক্ষা করো। কারণ তুমিই তো ভাগ্য নির্ধারণ কর। তোমার উপরে তো কেউ ভাগ্য নির্ধারণ করার নেই। তুমি যার অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেছ, সে কোন দিন অপমানিত হবে না এবং তুমি যার সাথে শক্রুতা করেছ, সে কখনো সম্মানিত হতে পারে না। হে আমাদের প্রভু! তুমি বরকতপূর্ণ ও সুমহান। (জামে আত তিরমিযি)
(২৪) হে আল্লাহ! তোমার কাছে আত্মসমর্পণ করলাম। তোমার প্রতি ঈমান আনলাম। তোমার উপর ভরসা করলাম। তোমার দিকে প্রত্যাবর্তন করলাম। তোমার উদ্দেশ্যে বিবাদে লিপ্ত হলাম। তোমার নিকট বিচার ফয়সালার ভার সোপর্দ করলাম। অতঃপর তুমি আমাকে ক্ষমা কর, যা আগে করেছি ও পরে করব, যা প্রকাশ্যে করেছি ও যা গোপনে করেছি। এবং যে বিষয়ে আমার থেকেও তুমি অধিক অবহিত আছ। তুমিই আমার মা’বুদ তুমি ব্যতীত প্রকৃত কোন মা’বুদ নেই। (সহীহ মুসলিম)
(২৫) হে আল্লাহ! তুমি আমার অন্তর আলোকময় কর। আমার কর্ণ আলোকময় কর। আমার চোখ জ্যোতির্ময় কর। আমার সম্মুখ আলোকময় কর। আমার পশ্চাৎ আলোকময় কর। আমার ডানে, আমার বামে, আমার সামনে, আমার পিছনে জ্যোতি ছড়িয়ে দাও। আমার নূরকে তুমি বৃহদাকার করে দাও। হে বিশ্ব জাহানের প্রতিপালক। (সহীহ মুসলিম)
(২৬) হে আল্লাহ! তোমারই রহমতের আকাঙ্খী আমি, সুতরাং তুমি এক পলক পরিমাণ সময়ের জন্যও আমাকে আমার নিজের উপর ছেড়ে দিয়ো না। তুমি আমার সমস্ত বিষয় সুন্দর করে দাও। তুমি ভিন্ন প্রকৃত কোন মা’বুদ নেই। (আবু দাউদ)
(২৭) হে আল্লাহ! আমি তোমার বান্দা, তোমারই এক বান্দার পুত্র আর তোমার এক বান্দির পুত্র। আমার ভাগ্য তোমারই হাতে। আমার উপর তোমার নির্দেশ কার্যকর। আমার প্রতি তোমার ফয়সালা ইনসাফপূর্ণ। আমি সেই সমস্ত নামের প্রত্যেকটির বদৌলতে, যে নাম তুমি নিজের জন্য নিজে রেখেছ, অথবা তোমার যে নাম তুমি তোমার কিতাবে নাজিল করেছ, অথবা তোমার সৃষ্ট জীবের মধ্যে কাউকে যে নাম শিখিয়েছ, অথবা স্বীয় ইলমের ভা-ারে নিজের জন্য সংরক্ষণ করে রেখেছ, তোমার নিকট এই কাতর প্রার্থনা জানাই-তুমি কুরআন মাজিদকে আমার হৃদয়ের প্রশান্তি, আমার বক্ষের জ্যোতি,আমার চিন্তা-ভাবনার অপসারণকারী এবং উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার বিদূরণকারীতে পরিণত কর। (মুসনাদে আহমদ)
(২৮) হে অন্তর সমূহের পরিবর্তনকারী! তোমার দ্বীনের উপর আমার অন্তরকে অবিচল রাখ। (জামে আত তিরমিযি)
(২৯) হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে কল্যাণময় সকল বিষয় কামনা করি, কল্যাণের আগত ও অনাগত বিষয়গুলো; যা আমি জানতে পেরেছি এবং যা আমি জানতে পারিনি। আর আমি তোমার আশ্রয় কামনা করছি সকল প্রকার অনিষ্ট হতে, অনিষ্টের আগত ও অনাগত সকল বিষয় হতে, যা আমি জানতে পেরেছি এবং যা আমি জানতে পারিনি। (ইবনে মাজা)
(৩০) হে আল্লাহ! আমি তোমার আশ্রয় কামনা করছি অসার জ্ঞান হতে, অশ্রুত দো’আ হতে, এবং এমন প্রবৃত্তি হতে যা পরিতৃপ্ত হয় না, এমন অন্তর হতে যা বিগলিত হয় না। (সহীহ মুসলিম)
(৩১) হে আল্লাহ! তুমি আমাকে সকল ঘৃণিত স্বভাব, অবাঞ্ছিত আচরণ, কুপ্রবৃত্তির তাড়না ও রোগ-ব্যাধি হতে দূরে রাখ। (জামে আত তিরমিযি)
(৩২) হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে হেদায়েত, তাকওয়া, চারিত্রিক পবিত্রতা, সম্পদের প্রাচুর্য এবং সে কাজ করার সামর্থ্য কামনা করি যা তুমি পছন্দ কর ও যাতে তুমি সন্তুষ্ট হও। (সহীহ মুসলিম)
(৩৩) হে আল্লাহ! আমাকে ইসলাম সহকারে দাঁড়ানো অবস্থায় এবং বসা অবস্থায় তথা সর্বাবস্থায় হেফাজত কর। আমার ক্ষেত্রে আমার কোন শত্রু, আমার কোন নিন্দুক বা হিংসুক খুশি হয়ে উপহাস করতে পারে এমন কোন কাজ আমার দ্বারা করায়েনা। (সহীহ জামেউস সগীর)
(৩৪) হে আল্লাহ! আমি তোমার কাছে কামনা করছি সেসব কল্যাণ ও মঙ্গল যার ভা-ার তোমার হাতে। আর তোমার কাছে আশ্রয় কামনা করছি সেসব অনিষ্ট ও ক্ষতি হতে, যার ভা-ারও তোমার হাতে। (সহীহ মুসলিম)
(৩৫) হে আমাদের রব! তুমি আমাদিগকে দুনিয়া ও আখেরাতে মঙ্গল দান কর। আর জাহান্নামের শাস্তি হতে আমাদের রক্ষা কর।
খারাপ কাজ তথা পাপ করার সাথে সাথেই আল্লাহর কাছে তাওবা করা। তাদের তাওবাই প্রকৃত তাওবা, যারা সাথে সাথেই আল্লাহর কাছে তাওবা করে। আর আল্লাহ এমন মু’মিন বান্দাদের তাওবা কবুল করেন। মু’মিন বান্দাদের সত্যিকারভাবে সহী নিয়্যাতে অন্তরের অন্তস্থল থেকে একনিষ্ঠভাবে মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর কাছে তাওবা করলে দুনিয়ার জীবনে ঘটে যাওয়া অন্যায় আল্লাহ মাফ করে দেবেন এবং মাফ করার পর জান্নাতের মাঝে স্থান দেবেন, যাঁর পাদদেশে নহর প্রবাহিত। আল্লাহর নিকট প্রার্থনা হলো, আল্লাহ যেন আমাদের ক্ষমা করেন এবং আমাদেরকে তাওবা করার তাওফীক দান করেন। আর আমাদের মধ্যে যারা আল্লাহর দরবারে তাওবা করেন তাদের তাওবা যেন তিনি কবুল করেন। আমীন।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ৯:০৬

মু. মিজানুর রহমান মিজান (এম. আর. এম.) বলেছেন: আমরাতো বুঝেও বুঝিনা ভাই

২| ২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:৩০

আহলান বলেছেন: আমি তো পড়েও পড়ি না ...(ইয়া বড় পোষ্ট !!)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.