![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
ইবাদত একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর জন্য করতে হবে এবং শিরকী কাজ থেকে দূরে থাকতে হবে। নবী-রাসূলদের দাওয়াতী মিশন ছিল ইবাদত। আল্লাহর জন্যই ইবাদত করতে হবে এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যের জন্য যত প্রকার ইবাদত করা হয় সেসব বর্জন করতে হবে। সুতরাং যারা কবরে সিজদা করে, নযর দেয়, কবরে গরু-ছাগল-মুরগী, টাকা-পয়সা দেয়, কবরের নিকট বরকত চায়, ফুল দেয় এবং পীরের নিকট সাহায্য প্রার্থনা করে, যারা মূর্তি পূজা করে, যাদু করে, গণক গিরি করে সবই তাগূতের পথ, শয়তানের পথ। আমাদেরকে তাওহীদুল ইবাদাহ প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং সর্বপ্রথম দাওয়াত হবে তাওহীদের। এরপর সালাত, সিয়াম, হজ্জ, যাকাত প্রভৃতি ইবাদতের। তাওহীদ প্রতিষ্ঠাই ছিল রাসূলের মূলকাজ। যেমন তিনি বলেন, আমি লোকদের সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাবার জন্য নির্দেশিত হয়েছি, যতক্ষণ না তারা সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ব্যতীত সত্য কোন মা‘বূদ নেই এবং মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল। আর সালাত প্রতিষ্ঠা করে ও যাকাত আদায় করে। তারা যদি এগুলো করে, তবে আমার থেকে তাদের জান ও মাল নিরাপদে থাকবে; অবশ্য ইসলামের বিধান অনুযায়ী যদি কোন কারণ থাকে, তাহলে ¯^তন্ত্র কথা। আর তাদের হিসাবের ভার আল্লাহর উপর অর্পিত হবে। মূলতঃ তাওহীদের ¯^ীকৃতি দিয়েই মানুষ ইসলামে প্রবেশ করে এবং তাওহীদের ¯^ীকৃতি প্রদান করে দুনিয়া থেকে পরপারে চলে যায়। তাই বিদ্বান লোকেরা বলেন, তাওহীদই হচ্ছে প্রথম ওয়াজিব এবং সেটাই হচ্ছে শেষ ওয়াজিব। তাওহীদের ঘোষণা দিয়ে বসে থাকলে হবে না, নিজে আমলও করতে হবে, অন্যদেরকে আমল করাতে হবে নচেৎ নাজাতের কোন পথ নেই।
তাওহীদের দাওয়াতের ব্যাপারে কুরআনের ভাষ্য
১.আমি জিন ও মানুষকে কেবল আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি। (যারিয়াত-৫১ আয়াত : ৫৬)
২.তারা তো আদিষ্ট হয়েছিল আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধ চিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদত করতে। (বায়্যিনাহ-৯৮ আয়াত : ৫)
৩.হে নবী! আপনি বলুন, আমি আদিষ্ট হয়েছি, আল্লাহর আনুগত্যে একনিষ্ঠ হয়ে তাঁর ইবাদত করতে। (যুমার-৩৯ আয়াত : ১১)
৪.অতএব যে তার প্রতিপালকের সাক্ষাৎ কামনা করে সে যেন সৎকর্ম করে এবং তার প্রতিপালকের ইবাদতে কাউকে শরীক না করে। (কাহফ-১৮ আয়াত : ১১০)
আয়াতটিতে ইবাদত কবুলের দু’টি শর্ত বলা হয়েছে-
(১) ইবাদত শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করতে হবে।
(২) রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণে হতে হবে। নচেৎ তা কবুল হবে না।
৫.আল্লাহর ইবাদত করার ও তাগূতকে বর্জন করার নির্দেশ দেওয়ার জন্য আমি তো প্রত্যেক জাতির মধ্যেই রাসূল পাঠিয়েছি। (নাহল-১৬ আয়াত : ৩৬)
৬.আমি তোমার পূর্বে কোন রাসূল প্রেরণ করিনি এই অহী ব্যতীত যে, আমি ছাড়া অন্য কোন (সত্য) মা‘বূদ নেই। সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদত কর। (আম্বিয়া-২১ আয়াত : ২৫)
৭.নূহকে তার কওমের নিকট পাঠিয়েছিলাম। সে বলল, হে আমার কওম! তোমরা শুধু আল্লাহর ইবাদত কর, তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন সত্য মা‘বূদ নেই’ (আ‘রাফ-৭ আয়াত : ৫৯)।
৮.আর তোমরা আল্লাহরই ইবাদত কর এবং তাঁর সাথে কোন বিষয়ে অংশীদার স্থাপন করো না। (নিসা-৪ আয়াত : ৩৬)।
৯.আর তোমার প্রভু নির্দেশ দিয়েছেন তোমরা একমাত্র তাঁরই ইবাদত করবে এবং মাতা-পিতার সাথে ভাল ব্যবহার করবে। (ইসরা-১৭ আয়াত : ২৩)
১০.হে মুহাম্মাদ বলুন! তোমরা এসো, তোমাদের প্রভু তোমাদের উপর যা হারাম করেছেন তা পড়ে শোনাই। (তা হচ্ছে) তোমরা কোন কিছুকে তাঁর সাথে অংশীদার করবে না। (আন‘আম-৬ আয়াত : ১৫১)
তাওহীদের দাওয়াতের ব্যাপারে হাদীসের ভাষ্য
১.আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মু‘য়ায (ইবনে জাবাল) রাদিয়াল্লাহু আনাহু-কে শাসনকর্তা হিসাবে ইয়ামান পাঠান, তখন বলেছিলেন, তুমি আহলে কিতাব লোকদের নিকট যাচ্ছ। সুতরাং প্রথমে তাদেরকে এই সাক্ষ্য প্রদানের দাওয়াত দিবে যে আল্লাহ ছাড়া কোন প্রকৃত উপাস্য নেই এবং আমি তাঁর রাসূল। যদি তারা এটা মেনে নেয়, তাহলে তাদের তুমি বলবে যে, আল্লাহ দিন-রাতে তাদের উপর পাঁচ ওয়াক্ত সালাত ফরয করে দিয়েছেন। যদি তারা তা মেনে নেয়, তখন তাদের জানিয়ে দিবে যে, আল্লাহ তাদের উপর যাকাত ফরয করেছেন, যা তাদের ধনীদের নিকট হতে গ্রহণ করা হবে এবং তাদের দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করে দেয়া হবে। যখন তারা এর অনুসরণ করবে তখন তাদের হতে তা গ্রহণ করবে এবং লোকের উত্তম মাল গ্রহণ করা হতে বিরত থাকবে।
২.আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হজ্জটাই ছিল তাওহীদের বাণী প্রচার ক্ষেত্র ¯^রূপ। যেমন তিনি তালবিয়াহ পাঠ করতেন এভাবে, ‘আমি হাযির হে আল্লাহ! আমি হাযির, আমি হাযির। আপনার কোন শরীক নেই, আমি হাযির। নিশ্চয়ই সকল প্রশংসা ও সকল অনুগ্রহ ও সা¤্রাজ্য সবই আপনার; আপনার শরীক নেই’।
৩.আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরাফার দোয়া সম্পর্কে বলেন, উত্তম দোয়া হলো আরাফার দিনের দোয়া। যে দোয়া আমি এবং আমার পূর্বের নবীগণ পড়তেন। তাহলো ‘আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য মা‘বূদ নেই, তাঁর কোন শরীক নেই, তিনিই সমস্ত রাজত্বের মালিক এবং তাঁর জন্যই সমস্ত প্রশংসা এবং তিনি সমস্ত বিষয়ে ক্ষমতাবান’।
৪.রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, প্রত্যেক নবজাতকই ফিৎরাতের উপর (তাওহীদের উপর) জন্মলাভ করে। অতঃপর পিতা-মাতা তাকে ইহুদী, নাছারা বা মাজুসী (অগ্নিপূজক) রূপে গড়ে তোলে। যেমন চতুষ্পদ পশু একটা পূর্ণাঙ্গ বাচ্ছা জন্ম দেয়। তোমরা কি তাকে কোন (জন্মগত) কানকাটা দেখতে পাও? অতঃপর হযরত আবু হুরায়রাহ রাদিয়াল্লাহু আনাহু তিলাওয়াত করলেন ‘তাঁর (আল্লাহর) দেয়া ফিৎরাতের অনুসরণ কর, যে ফিৎরাতের উপর তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন, এটাই সরল সুদৃঢ় দ্বীন’।
৫.আল্লাহর রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মানুষদের বলেছিলেন, ‘তোমরা বল, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মা‘বূদ নেই, তাহলেই তোমরা সফলকাম হবে’।
উল্লিখিত আয়াত ও হাদীস থেকে দু’টি বিষয় সুস্পষ্ট হলো-
(ক) সকল প্রকার ইবাদত শুধুমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যেই করতে হবে।
(খ) সকল প্রকার শিরকী আমল পরিহার করতে হবে।
তাওহীদের ব্যাপারে ঈমামদের ভাষ্য
১.মুহাদ্দিছ আল্লামা আব্দুল মুহসিন আল-আববাদ বলেন, হাদীসে তাওহীদ প্রতিষ্ঠিত করতে বলা হয়েছে এবং শিরক থেকে বেঁচে থাকতে বলা হয়েছে। যার অর্থ দাঁড়ায় ইবাদত একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর জন্যই হতে হবে, অন্যের জন্য নয়।
২.আল্লামা ইবনে আবিল-ইয হানাফী (রহঃ) বলেন, ‘তাওহীদের মাধ্যমেই সর্বপ্রথমে ইসলামে প্রবেশ করা হয় এবং সেটার মাধ্যমেই মানব জাতি দুনিয়া থেকে বের হয়ে পরপারে যায়। যেমন নবী করীম সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তির শেষের বাক্য হবে ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে’।
৩.অপর হাদীস থেকে পাওয়া যায়, লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ জান্নাতের চাবি। ওয়াহ্হাব ইবনু মুনাবিবহ (রহঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হলো, ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ কি জান্নাতের চাবি নয়? উত্তরে তিনি বললেন, অবশ্যই। তবে কোন চাবির দাঁত থাকে। তুমি দাঁত যুক্ত চাবি আনতে পারলে তোমার জন্য (জান্নাতের) দরজা খুলে দেওয়া হবে। অন্যথা তোমার জন্য খোলা হবে না।
তাওহিদের শিক্ষা
(১) প্রথমেই আক্বীদা শুদ্ধ করতে হবে এবং সকল ইবাদত শুধুমাত্র আল্লাহর জন্যই হতে হবে। কোন পীর, মাজার, দরগা বা অন্য কারো জন্য নয়। কেননা এসব শিরক এবং এর পরিণাম জাহান্নাম।
(২) কালেমা পড়ার সাথে সাথে আমল করতে হবে। অন্তরে বিশ্বাস করতে হবে, মুখে উচ্ছারণ এবং তা কাজে বাস্তবায়ন করতে হবে, নইলে মুসলমান হওয়া যাবে না।
(৩) সকল তাগূতীপথকে পরিত্যাগ করতে হবে। তাগূত হচ্ছে, আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্যের ইবাদত করা।
(৪) সকল মানব সন্তান ফিৎরাতের উপর (তাওহীদের উপর) জন্ম গ্রহণ করে। পিতা-মাতা তাকে ইহুদী, নাছারা, অগ্নিপূজক বানায়।
(৫) সম্পূর্ণ হজ্জ অনুষ্ঠানই তাওহীদের বাণী প্রচারের উপযুক্ত সময়।
(৬) তাওহীদের মাধ্যমেই মানব সন্তান ইসলামে প্রবেশ করে এবং তাওহীদের মাধ্যমেই দুনিয়া থেকে পরপারে চলে যায়।
(৭) রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণেই আমল করতে হবে। অন্যথা তা কবুল হবে না।
©somewhere in net ltd.