নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মোহাম্মদ আবুল হোসাইন চৌধুরী

মোহাম্মদ আবুল হোসাইন চৌধুরী

মোহাম্মদ আবুল হোসাইন চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

এক নজরে হজ্জের নিয়ম-কানুন

১৫ ই জুন, ২০২১ বিকাল ৫:৪১

হজ্জ
৮ যিলহজ্জ থেকে ১২ যিলহজ্জ পর্যন্ত এই ৫ দিনে মক্কা মুকাররমা ও তার আশে পাশের কয়েকটি জায়গায় (মক্কায় তাওয়াফ, সাফা-মারওয়ায় সায়ী, মিনার তাঁবুর জীবন, আরাফাতের বিশাল প্রান্তরে অবস্থান, মুজদালিফায় রাত্রি যাপন আবার মিনাতে প্রত্যাবর্তন, জামরাগুলোতে কংকর নিক্ষেপ, মিনাতে পশু কুরবানী, আবার ক্বাবা তাওয়াফ, সাফা-মারওয়ায় সায়ী ইত্যাদি) কিছু কর্তব্য কার্য সম্পাদন করাকে ইসলামের পরিভাষায় হজ্জ বলা হয়। ‘হজ্জ’অর্থ কছদ, সংকল্প। হজ্জের আভিধানিক অর্থ হলো যিয়ারতের এরাদা করা। শরীয়তের পরিভাষায় হজ্জের অর্থ কতক কার্যক্রম সম্পাদন করার উদ্দেশ্যে ইহরামের সাথে বায়তুল্লাহ জেয়ারতের সংকল্প। অর্থাৎ আল্লাহকে রাজি খুশী করার উদ্দেশ্যে শরীয়তের বিধান অনুসারে হজ্জের ইহরাম বেঁধে বায়তুল্লাহ শরীফসহ নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট স্থানসমূহে, নির্দিষ্ট কর্মসমূহ সুনির্দিষ্ট পন্থায় সম্পাদন (যিয়ারত) করাকে হজ্জ বলা হয়। হজ্জ একাধারে আর্থিক, শারীরিক ও মানসিক এবাদত। এতে অর্থ ব্যয় হয়, শারীরিক পরিশ্রম হয়, পরিবার পরিজনের মায়া ত্যাগ করার মত মানসিক কষ্টও রয়েছে। ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে পবিত্র মক্কা শরীফে যাতায়াতের খরচ বহন এবং ওই সময় স্বীয় পরিবারের ব্যয়ভার নির্বাহে সক্ষম, দৈহিকভাবে সামর্থ, প্রাপ্তবয়স্ক জ্ঞানবান প্রত্যেক সহীহ মুসলিম নর-নারীর ওপর জীবনে একবার হজ্জ ফরয। সঠিকভাবে হজ্জব্রত আদায়কারীকেও দেয়া হয়েছে জান্নাতের সুসংবাদ। একবারের বেশী করলে সেটা নফল।
হজ্জ তিন প্রকার
১) হজ্জে ইফরাদ
২) হজ্জে কেরান
৩) হজ্জে তামাত্তু
১। হজ্জে ইফরাদ : হজ্জের সাথে ওমরাহ না করে শুধু হজ্জ করাকে ইফরাদ হজ্জ বলে।
 মীকাত থেকে শুধু হজ্জের নিয়তে (বর্ণিত নিয়মে) ইহরাম বাঁধুন।
 মক্কা শরীফ পৌঁছে তাওয়াফে কুদুম (আগমনী তাওয়াফ) করুন।
ইচ্ছা করলে এ তাওয়াফের পর সায়ী করুন। সে ক্ষেত্রে হজ্জের ফরজ-তাওয়াফের পর আর সায়ী করতে হবে না।
 তাওয়াফ ও সায়ী করার পর চুল ছাঁটবেন না।
 তাওয়াফে কুদুমের পর ইহরাম অবস্থায় হজ্জের অপেক্ষায় থাকুন।
 ৮ যিলহজ্জ একই ইহরামে মিনা-আরাফাহ গমন ও হজ্জের যাবতীয় কাজ সম্পাদন করা।
বি: দ্র: ইফরান হজ্জ পালনকারীকে কুরবানী করতে হয়না। তাই ১০ যিলহজ্জ কংকর নিক্ষেপের পর মাথা মুন্ডন করে হজ্জ থেকে হালাল হয়ে যান।
২। হজ্জের ক্বিরান : ওমরাহর সাথে যুক্ত করে একই ইহরামে ওমরাহ ও হজ্জ আদায় করাকে ক্বিরান হজ্জ বলে।
ক্বিরান হজ্জ দু’ভাবে আদায় করা যায়।
এক.
১-১) মীকাত থেকে এহরাম বাঁধার সময় হজ্জ ও ওমরাহ উভয়টার নিয়ত করে ইহরাম বাঁধুন।
১-২) মক্কায় পৌঁছে প্রথমে ওমরাহ ও সায়ী আদায় করুন। তবে এরপর চুল ছাঁটবেন না।
১-৩) ইহরাম অবস্থায় মক্কায় অবস্থান করুন।
১-৪) ৮ যিলহজ্জ একই ইহরামে মিনা-আরাফাহ গমন ও হজ্জের যাবতীয় কাজ সম্পাদন করা।
দুই.
২-১) মীকাত থেকে শুধু ওমরাহর নিয়তে ইহরাম বাঁধুন।
২-২) পবিত্র মক্কায় পৌঁছার পর তাওয়াফ শুরু করার পূর্বে হজ্জের নিয়ত ওমরাহর সাথে যুক্ত করে নেন।
২-৩) ওমরাহর তাওয়াফ ও সায়ী শেষ করুন, তবে এরপর চুল ছাঁটবেন না।
২-৪) ইহরাম অবস্থায় হজ্জের অপেক্ষায় থাকুন।
২-৫) ৮ যিলহজ্জ একই ইহরামে মিনা-আরাফাহ গমন ও হজ্জের যাবতীয় কাজ সম্পাদন করা।
২-৬) মক্কাবাসীদের জন্য ক্বিরান হজ্জ নেই। যেহেতু তারা হারামের সীমানার ভেতরে অবস্থান করছেন, সেহেতু তাদের ক্বিরান হজ্জ করতে হয় না।
বি: দ্র: ক্বিরান হজ্জ পালনকারীদের কুরবানী করতে হয়। তাই ১০ যিলহজ্জ কংকর নিক্ষেপের পর কুরবানী করে মাথা মুন্ডন করে হজ্জ থেকে হালাল হয়ে যান।
৩। হজ্জে তামাত্তু : এ হজ্জের জন্য পৃথকভাবে প্রথমে ওমরাহ ও পরে হজ্জ আদায় করাকে তামাত্তু হজ্জ বলে।
তামাত্তু হজ্জ তিনভাবে করা যায়।
এক.
১-১. তামাত্তু হজ্জ পালনকারীগণ মীকাত থেকে প্রথমে ওমরাহর ইহরাম বাঁধুন।
১-২. মক্কায় পৌঁছে প্রথমে ওমরাহর তাওয়াফ ও সায়ী আদায় করুন।
১.৩. তারপর মাথা মুন্ডন করে হজ্জ থেকে হালাল হয়ে যান।
১-৪. হজ্জের আগ পর্যন্ত স্বাভাবিক জীবন যাপন করুন।
দুই.
২-১. তামাত্তু হজ্জ পালনকারীগণ মীকাত থেকে প্রথমে ওমরাহ’র ইহরাম বাঁধুন।
২-২. মক্কায় পৌঁছে প্রথমে ওমরাহর তাওয়াফ ও সায়ী আদায় করুন।
২-৩. তার পর মাথা মুন্ডন করে হজ্জ থেকে হালাল হয়ে যান।
২-৪. হজ্জের আগ পর্যন্ত স্বাভাবিক জীবন যাপন করুন।
২-৫. হজ্জের পূর্বে মদীনা যিয়ারত সেরে নেয়া।
২-৬. মদীনা থেকে মক্কায় আসার পথে আবায়ে আলী নামক জায়গা থেকে ওমরাহর নিয়তে ইহরাম বেঁধে মক্কায় আসা।
২-৭. ওমরাহ আদায় করে হালাল হয়ে যাওয়া।
২-৮. হজ্জের আগ পর্যন্ত স্বাভাবিক জীবন যাপন করুন।
তিন.
৩-১. ইহরাম না বেঁধে সরাসরি মদীনা গমন করা।
৩-২. যিয়ারতে মদীনা সেরে মক্কায় আসার পথে আবায়ে আলী নামক জায়গা থেকে ওমরাহর নিয়তে ইহরাম বেঁধে মক্কায় আসা।
২-৭. ওমরাহ আদায় করে হালাল হয়ে যাওয়া।
২-৮. হজ্জের আগ পর্যন্ত স্বাভাবিক জীবন যাপন করুন।
২-৯. হারামের সীমানার ভেতরের অধিবাসীদের জন্য তামাত্তু হজ্জ নেই।
৮ যিলহজ্জহজ্জের ইহরাম বেঁধে মিনা-আরাফাহ গমন ও হজ্জের যাবতীয় কাজ সম্পাদন করুন
বি: দ্র: তামাত্তু হজ্জ পালনকারীদের কুরবানী করতে হয়। তাই ১০ যিলহজ্জ কংকর নিক্ষেপের পর কুরবানী করে মাথা মুন্ডন করে হজ্জ থেকে হালাল হয়ে যান।
মাসাআলা
ক. তামাত্তু বা ক্বিরান হজ্জের নিয়ত করে মীকাতের ভিতরে যদি কেউ নিয়ত পরিবর্তন করে অর্থাৎ ক্বিরান হজ্জের নিয়ত করার পর তামাত্তু হজ্জের মনস্থ করে; অথবা তামাত্তু হজ্জের নিয়ত করার পর ক্বিরান হজ্জের মনস্থ করে, তাহলে তার জন্য এরূপ করা জায়েয। ইফরাদ হজ্জের ক্ষেত্রেও এরূপ জায়েয।
খ. হাদঈ (পশু) জবেহ করা সামর্থ্য যাদের নেই, তারা দশটি রোযা অবশ্যই রাখবেন। কিন্তু অকুফে আরাফাতের দিন তাদের জন্য রোযা রাখা নিষেধ। হাজীগণ ছাড়া অন্যদের জন্য এ দিনের রোযা রাখা সওয়াব রয়েছে।
গ. তিন প্রকারের হজ্জ কুরআন এবং হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। এর মধ্যে যে কোন প্রকারের হজ্জ পালনের ইখতিয়ার হজ্জ পালনকারীর রয়েছে। তবে এর মধ্যে কোনটা উত্তম, সে ব্যাপারে ওলামাদের বিভিন্ন মত রয়েছে। জমহুম ওলামার মতে তামাত্তু হজ্জ উত্তম। অনেকের দৃষ্টিতে ক্বিরান হজ্জ উত্তম। কেউ কেউ ইফরাদ হজ্জকে উত্তম বলেছেন। সার কথা হলো, হজ্জ পালনকারী নিজের সুবিধা ও সামর্থকে সামনে রেখে এটা চয়ন করবেন। মূলত তিন প্রকারের হজ্জই আল্লাহর নিকট কবুলযোগ্য।
হজ্জের ফরজ ০৩ (তিন) টি
১। ইহরাম বাঁধা। (নিয়ত করা, ইহরাম বাঁধা ও তালবিয়া পাঠ করা)। অর্থাৎ এই তিনটি কাজ যেহেতু এক সাথেই করা হয়, এজন্য এ তিনটি অংশ মিলে এক ফরজ। সুতরাং এর কোনো অংশই বাদ দেয়া যাবে না।
২। অকুফে আরাফাহ অর্থাৎ আরাফাহ ময়দানে অবস্থান করা। অর্থাৎ ৯ যিলহজ্জ জোহরের পর থেকে সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত যে কোন সময় আরাফাহ ময়দানে অবস্থান করা।
৩। তাওয়াফে যিয়ারত (চার চক্কর পরিমাণ) করা। অর্থাৎ ১০, ১১ ও ১২ যিলহজ্জ তারিখের কোন একদিন পবিত্র ক্বাবাঘর প্রদক্ষিণ করা।
মাসাআলা
হজ্জের যে কোন একটি ফরয যদি বাদ পড়ে যায় তবে হজ্জ হবে না। পুনরায় হজ্জ করতে হবে।
হজ্জের ওয়াজিব ০৭ (সাত) টি
১। মুজদালিফায় অবস্থান করা। অর্থাৎ ৯ যিলহজ্জ রাতে (সূর্য ডোবার পর) আরাফাতের ময়দান হতে মিনায় ফিরার পথে মুজদালিফায় রাত যাপন।
২। মিনায় রমী অর্থাৎ কংকর নিক্ষেপ করা। অর্থাৎ ১০, ১১ ও ১২ যিলহজ্জ তারিখে জামরাতে কংকর মারা।
৩। হজ্জে ক্বিরান ও তামাত্তু হজ্জ পালনকারীদের দমে শোকর বা কুরবানী করা। ইফরাদ হজ্জের জন্য কুরবানী ওয়াজেব নয়।
৪। ইহরাম ভঙ্গ করার পর মাথার চুল ছাঁটা অথবা মুন্ডানো। মহিলা হজ্জযাত্রী হলে চুলের অগ্রভাগ কাটা।
৫। তাওয়াফে যেয়ারতের বাকি তিন চক্কর শেষ করা।
৬। সাফা মারওয়া সায়ী করা। অর্থাৎ নির্ধারিত নিয়মে সাত চক্কর দৌঁড়ানো।
৭। মক্কার বাইরের লোকদের জন্য তাওয়াফে বিদা অর্থাৎ বিদায় তাওয়াফ করা।
মাসাআলা
হজ্জের ওয়াজিব ছুটে গেলে হজ্জ আদায় হবে; তবে দম (ফিদইয়া) ওয়াজিব হবে। দমের আওতাভুক্ত পশু হচ্ছে ছাগল, ভেড়া, দুম্বা অথবা গরু বা উটের সাত ভাগের এক ভাগ দান করা। মক্কার হারামের সীমানার মধ্যে দম দিতে হবে এবং এর গোশত কেবল মক্কার গরীবদের জন্য।
হজ্জের সুন্নাত ০৯ (নয়)টি
১) ইফরাদ এবং ক্বিরান হাজীগণের জন্য তাওয়াফে কুদুম (আগমনী তাওয়াফ) অর্থাৎ সর্বপ্রথম তাওয়াফ করা।
২) তাওয়াফে কুদুম ও তাওয়াফে জিয়ারতে রমল করা।
৩) ইমামের তিন জায়গায় খুৎবা দেয়া। (৭ যিলহজ্জ মক্কা শরীফে, ৯ যিলহজ্জ আরাফাহ ময়দানে এবং ১১ যিলহজ্জ মিনায়)
৪) ৮ যিলহজ্জ মিনায় জোহর, আছর, মাগরিব, এশা ও ফজর এই পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করা এবং সেখানে রাত যাপন করা।
৫) ৯ যিলহজ্জ সূর্যোদয়ের পর মিনা থেকে আরাফাতের দিকে গমন।
৬) আরাফাতের ময়দান থেকে সূর্যাস্তের পর মুজদালিফা রওনা হওয়া।
৭) আরাফাতের ময়দানে গোসল করা।
৮) ১০, ১১ ও ১২ যিলহজ্জ মিনায় রাত যাপন।
৯) মিনা থেকে মক্কা শরীফে ফেরার সময় ‘মুহাচ্ছব’ নামক স্থানে অতি অল্প সময়ের জন্য হলেও অবস্থান করা।
মাসাআলা
ক. হজ্জের সুন্নাত বাদ গেলে কোন দম বা ক্ষতি পূরণ দিতে হবে না। তবে সুন্নাত যেন পালন করা যায় সেজন্য চেষ্টা করতে হবে।
খ. বিশেষ প্রয়োজনে বা সময়ের অভাবে সুন্নাত বাদ দিলে কোন ক্ষতি নেই। তবে সুন্নাতকে তুচ্ছ জানলে ঈমান থাকে না। রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমার কাছ থেকে তোমরা হজ্জের নিয়মাবলী গ্রহণ কর। (সহীহ আল বুখারী ও মুসলিম)
গ. সুন্নাত ইচ্ছাকৃত ভাবে ত্যাগ করা দোষনীয়। পালন করার মধ্যে অনেক ছাওয়াব আছে।
যে সব কারণে হজ্জ থেকে বিরত থাকতে হবে

হজ্জ সমাপ্ত করতে আপনাকে তিনটি কাজ করতে হবে নিম্মে তা উল্লেখ করা হলো।
এক. ৫ (পাঁচ) দিন সময় লাগবে। (৮, ৯, ১০, ১১ ও ১২ যিলহজ্জ)
দুই. ৪ (চার) জায়গায় যেতে হবে। (১) মক্কা, (২) মিনা, (৩) আরাফাহ, (৪) মুজদালিফা
তিন. ১০ (দশটি) কাজ করতে হবে।
১. ইহরাম বাঁধা এবং মিনায় অবস্থান করা ও ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়া
২. আরাফায় অবস্থান করা
৩. মুজদালিফায় অবস্থান করা
৪. বড় শয়তানকে কংকর নিক্ষেপ করা
৫. কুরবানী করা
৬. হলক বা কছর করা
৭. তাওয়াফ করা
৮. সায়ী করা
৯. শয়তানকে কঙ্কর নিক্ষেপ করা ও
১০. বিদায়ী তাওয়াফ করা।
এই কাজগুলোর উপর গুরুত্ব দেয়া অতিব প্রয়োজন। বিশেষ করে তিনটি ফরয ও ৭টি ওয়াজিব।
৮ যিলহজ্জ (১ম দিন)
অবস্থানঃ মক্কা শরীফ-মিনা
করণীয় কাজসমূহঃ
৭ যিলহজ্জ থেকে আপনার হজ্জের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে। যদিও ৮ই যিলহজ্জ সূর্যোদয়ের পর মিনার উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া সুন্নত, কিন্তু আজকাল ৭ তারিখ দিবাগত রাতেই মুআল্লিমের গাড়িতে হাজীদের মিনা পৌঁছানোর কাজ শুরু হয়ে যায়। তাই যারা মুআল্লিমের গাড়ীতে বা ট্রেনে মিনা যাবেন তারা ৭ তারিখ দিবগত রাত্রে হেরেম শরীফ অথবা নিজ বাসায় হজ্জের ইহরাম বাঁধবেন। আর হেঁটে গেলে ৮ যিলহজ্জ সূর্যোদয়ের পর মিনার উদ্দেশে রওনা করুন।
৮ যিলহজ্জ ২ দুইটি কাজ করতে হয়।
১. ইহরাম বাঁধা (ফরজ)
২. মিনায় অবস্থান ও ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা (সুন্নাত)
ইহরাম বাঁধা
প্রথম কাজ
১। ইহরাম বাঁধা (ফরজ)
তামাত্তু হজ্জ পালনকারীগণ ঐদিন নতুন করে ইহরাম বেঁধে হজ্জের নিয়ত করবেন (হেরেম শরীফের এলাকা থেকে ইহরাম বাঁধতে হবে)।
ইহরাম বাঁধার নিয়মঃ
পবিত্র অবস্থায় ইহরামের কাপড় পরিধান করুন।
দু’রাকাত ইহরামের সুন্নাত নামাজ আদায় করুন।
নামাজে প্রথম রাকাতে সূরা কাফেরুন এবং দ্বিতীয় রাকাতে সূরা এখলাস পাঠ করুন।
হজ্জের নিয়ত করুন
নিয়তঃ আল্লাহুম্মা ইন্নী উরিদুল হাজ্জা ফায়াসসিরহু-লী ওয়াতাক্বাব্বাল-হু-মিন্নী ওয়াআইন্নি আলাইহা ওয়াবারিকলি ফিহা নাওয়াইতুল হাজ্জা ওয়া আহরামতু বিহা লিল্লাহি তায়ালা। অর্থাৎ হে আল্লাহ আমি হজ্জের নিয়ত করছি, আমার জন্য তা সহজ করে দাও এবং তা আমার পক্ষ থেকে কবুল করে নাও এবং সহীহ শুদ্ধভাবে আদায় করার জন্য সাহায্য কর। এতে বরকত দান কর। আমি হজ্জ করার নিয়ত করেছি এবং আল্লাহর জন্য তার ইহরাম বেধেছি।
সংক্ষেপে হজ্জের নিয়ত:
নিয়ত : (“লাব্বাইকা হাজ্জান কিংবা আল্লাহুম্মা লাব্বাইকা হাজ্জান”)।
অর্থাৎ আমি হজ্জ আদায় করার জন্য তোমার দরবারে উপস্থিত হলাম।
তালবিয়া পাঠ করুন:
তালবিয়াঃ (“লাব্বাইকা আল্লাহুম্মা লাব্বাইক। লাব্বাইকা লা-শারিকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা ওয়ান্ নি’মাতা লাকা ওয়াল মুল্ক্ লা-শারিকা লাক”)। অর্থাৎ-আমি উপস্থিত হে আল্লাহ আমি উপস্থিত আমি হাজির তোমার কোন শরীক নাই, আমি হাজির। সমস্ত সৌন্দর্য ও নেয়ামত ও রাজত্ব তোমারই জন্য তোমার কোন অংশীদার নাই।
সকালে হালকা মালসামানাসহ মিনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা করুন।
শক্ত-সবল এবং মাইলের পর মাইল হেঁটে অতিক্রম করায় অভ্যস্ত না হলে মিনায় পায়ে হেঁটে যাওয়ার পরিকল্পনা করবেন না।
মোয়াল্লেমের বাসে অথবা ট্রেনে করে মিনায় আসুন।
মিনায় আগমন
দ্বিতীয় কাজ
মিনায় অবস্থান ও ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা
ঐ দিন জোহর, আছর, মাগরিব, এশার ও ৯ তারিখ ফজর সর্বমোট ৫ ওয়াক্ত নামাজ মিনায় আদায় করুন।
রাতে মিনায় অবস্থান করুন।
পরদিন অকুফে আরাফাহ সময়টা কিভাবে কাটাবেন সেজন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করুন।
প্রত্যেকে নিজ নিজ তাঁবুতে থাকার চেষ্টা করবেন।
সবাইকে নিয়ে একত্রে জামায়াতে নামাজ পড়ার চেষ্টা করবেন।
মসজিদে খায়েফে নামাজ পড়তে হবে এটা খুব একটা জরুরী নয়। তবে পড়তে পারলে ভাল।
অবসর সময় দোয়া-দরূদ, যিকির-আযকার, কুরআন তিলাওয়াত ও অন্যান্য এবাদতে সময় অতিবাহিত করুন। তবে এখানে সবচেয়ে উত্তম হলো তালবিয়া পড়া।

তাকবীরে তাশরীকের বিধান
৯ যিলহজ্জ ফজরের নামাজ থেকে ১৩ যিলহজ্জ আসর পর্যন্ত আপনি যেখানেই থাকুন, মোট ২৩ ওয়াক্ত প্রতি ফরজ নামাজের পর তাকবীরে তাশরীক পড়ুন। এ সময় তাকবীরে তাশরিক পড়া ওয়াজিব।
তাকবীরে আশরীক : আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লাইলাই ইল্লালাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদু।
৯ যিলহজ্জ (২য় দিন)
অবস্থানঃ মিনা-আরাফাহ, আরাফাহ-মুজদালিফা
৯ যিলহজ্জ ২ (দুই) টি কাজ করতে হয়।
১. আরাফাতে অবস্থান করা (ফরজ)
২. মুজদালিফায় অবস্থান করা (ওয়াজিব)
আরাফাহ
আরাফাহ অভিমুখে রওয়ানা
মিনায় ফজরের নামাজ আদায় করুন।
বাদ ফজর সূর্যোদয়ের পর মিনা থেকে মুয়াল্লিমের গাড়িযোগে অথবা ট্রেনে অথবা হেঁটে আরাফাহ’র উদ্দেশে রওয়ানা করুন।
পথে তালবিয়া, দোয়া, তাসবীহ (সুবহানাল্লাহ), তাকবীর (আল্লাহু আকবার), তাহলীল (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ), পড়তে পড়তে দুপুরের পূর্বেই মিনা থেকে ১৪ কি.মি. দূরে অবস্থিত আরাফাহ ময়দানে পৌঁছুন।
আরাফাতে অবস্থান
প্রথম কাজ
২. আরাফাতে অবস্থান (ফরজ))
যিহজ্জ মাসের ৯ তারিখকে ‘ইয়াওমু আরাফা বা আরাফার দিবস বলা হয়। এই দিবসে আরাফায় অবস্থান করা হজ্জের শ্রেষ্ঠতম আমল। আল্লাহ তা’আলা আরাফার দিন বান্দার নিকটবর্তী হন এবং বান্দাদের সবচেয়ে বেশি সংখ্যককে তিনি জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দেন। আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “এমন কোন দিন নেই যেদিন আল্লাহ তা’আলা আরাফার দিন থেকে বেশি বান্দাদের জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি দেন। আল্লাহ সেদিন নিকটবর্তী হন এবং তাদেরকে নিয়ে ফিরিশতাদের সাথে গর্ব করে বলেন, ওরা কী চায়?”। (সহীহ মুসলিম : ১৩৪৮)
আরাফাতে মসজিদে নামিরা (যা আরাফাতের প্রান্তরে মক্কা মোকাররমার দিকে অবস্থিত) এর নিকট অবস্থান করবেন।
যদি জাবালে রহমতের নিকটবর্তী স্থান, যেখানে কালো পাথরের বিছানা রয়েছে সেখানে যদি জায়গা পাওয়া যায় তবে সেখানেই অবস্থান করবেন। এটি স্বয়ং রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর অবস্থান করার জায়গা। নতুবা যেখানে সম্ভব নির্ধারিত তাঁবুতে অবস্থান করবেন।
যোহর থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করুন।
পানাহার শেষ করে সূর্য হেলে পড়ার পূর্বে গোসল করবেন।
তারপর মসজিদে নামিরায় গিয়ে বসবেন।
আরাফাহ ময়দানের মসজিদে যেতে পারলে যোহর ও আসর একসাথে কছর করে আদায় করবেন।
যখন ইমাম খুৎবা পাঠ করবেন, তখন তা মনোযোগের সাথে শ্রবণ করবেন।
অন্যথায় তাঁবুতে যোহরের সময় যোহর এবং আসরের সময় আসর আদায় করবেন।
আরাফাহ ময়দানে নিজের অবস্থানস্থলে কেবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসল্লামের অনুকরণ ও অনুসরণে দু’হাত উঠিয়ে অতি বিনয়ের সাথে চোখের পানি ফেলে আল্লাহর দরবারে দোয়া ও মুনাজাত করুন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,“ উত্তম দো’আ হচ্ছে‘ আরাফাহর দিনের দো’আ; আর উত্তম সেই বাক্য যা আমি ও আমার পূববর্তী নবীগণ বলেছি, তা হচ্ছে- (লা-ইল্লাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকালাহু লাহুল মূলকু ওয়া লাহুল হামদু ওয়া হুয়া কুল্লি শাইয়্যিন ক্কাদীর) অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি এক, তাঁর কোনো শরীক নেই, রাজত্ব ও সমস্ত প্রশংসা তাঁর জন্য। তিনি সবকিছুর ওপর ক্ষমতাবান। (তিরমিযি : ৩৫৭৫)
আরাফায় অবস্থানকালে আপনার পুরো সময়টাই আপনি তালবিয়া পাঠ করে, দোয়া-যিকির, ইস্তিগফার ও কুরআন তিলাওয়াত করে এবং আল্লাহর স্মরণে অতিবাহিত করে কাটান।
মুজদালিফায় অবস্থান
দ্বিতীয় কাজ
মুজদালিফা অভিমুখে রওয়ানা
সূর্যাস্তের পর আরাফাহ বা রাস্তার কোথাও মাগরিবের নামাজ না পড়ে সোজা মুজদালিফার দিকে চলুন।
৩। মুজদালিফায় অবস্থানঃ (ওয়াজিব)
মুজদাফিলায় শেষ প্রান্তে মিনা প্রান্তরের কাছাকাছি অবস্থান নিতে পারলে ভাল।
মুজদালিফায় করণীয়:
মুজদালিফায় এসে এক আজান ও দুই ইকামাতে এশার ওয়াক্তে প্রথমে মাগরিবের ৩ রাকাত ফরয নামাজ আদায় করুন এবং পরে এশার ৪ রাকাত ফরয ও তিন রাকাত বেতের নামাজ আলাদা আলাদা আদায় করুন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুজদালিফায় এলেন, সেখানে তিনি মাগরিব ও ইশা এক আযান ও দুই ইকামতসহ আদায় করলেন। এ দুই সালাতের মাঝখানে কোনো তাসবী (সুন্নাত বা নফল সালাত) পড়লেন না। অতঃপর তিনি শুয়ে পড়লেন। ফজর (সুবহে সাদেক) উদিত হওয়া পর্যন্ত তিনি শুয়ে থাকলেন। (সহীহ মুসলিম : ১২১৮)
যেহেতু ১০ যিলহজ্জ হাজী সাহেবকে অনেক পরিশ্রম করতে হবে তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুজদালিফার রাতে আরাম করার বিধান রেখেছেন। সুতরাং হাজীদের জন্য মুজদালিফার রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগী করা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতের পরিপন্থী।
ফরজ নামাজের পর তাকবীরে তাশরীফ পড়ুন।
দুই নামাজের মাঝে কোন প্রকার সুন্নাত ও নফল পড়বেন না।
এবার মাগরিব ও এশার সুন্নত পড়ুন এবং এবাদতে মশগুল হন।
রাতে মুজদালিফায় অবস্থান করুন।
হযরত জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদীসে উল্লেখ হয়েছে, “আকাশ ভালভাবে ফরসা হওয়া পর্যন্ত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উকুফ (অবস্থান) করেছেন। অতঃপর সুর্যোদয়ের পূর্বে তিনি (মুজদালিফা থেকে মিনার দিকে) যাত্রা আরম্ভ করেছেন।” রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফজরের সালাত আদায়ের পর ‘কুযা’ (মাশ‘আরুল হারাম) পাহাড়ের পাদদেশে গিয়ে উক‚ফ করেছেন। বর্তমানে এই পাহাড়ের পাশে মাশ’আরুল হারাম মসজিদ অবস্থিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আমি এখানে উকুফ করলাম তবে মুজদালিফা পুরোটাই উকুফের স্থান। (সহীহ মুসলিম : ১২১৮)
কংকর সংগ্রহ
কুরবানীর দিন জামরায়ে আকাবায় নিক্ষেপের জন্য মুজদালিফা থেকে শুধু সাতটি কংকর নেয়া এবং এর বেশী না নেয়াটাই হলো সুন্নাত। বাকী কংকরগুলো মিনা থেকেই নেয়া উত্তম। অর্থাৎ মুজদালিফা ও মিনা উভয় স্থান থেকে এগুলো সংগ্রহ করা জায়েয। এ কংকরগুলো বুটের দানার চেয়ে খানিকটা বড় হবে।
১০, ১১, ১২ ও ১৩ তারিখে মীনায় অবস্থিত তিনটি শয়তান “জামরাতুল আক্বাবা” “জামরাতুল উলা” ও “জামরাতুল ছোগরা” কে কংকর মারার জন্য (৭+২১+২১) = ৪৯টি অথবা (৭+২১+২১+২১) = ৭০ টি কংকর সংগ্রহ করুন।

১০ যিলহজ্জ ইয়াওমুন নাহার (৩য় দিন)
স্থানঃ মুজদালিফা-মিনা, মিনা-মক্কা শরীফ, মক্কা শরীফ-মিনা
১০ যিলহজ্জ ৫ (পাঁচ) টি কাজ করতে হয়।
১) বড় শয়তানকে কংকর নিক্ষেপ করা (ওয়াজিব)
২) কুরবানী করা (ওয়াজিব)
৩) হলক বা কছর করা (ওয়াজিব)
৪) তাওয়াফ করা (ফরজ)
৫) সায়ী করা (ওয়াজিব)
মুজদালিফায় অবস্থান
১০ যিলহজ্জ সুবহে সাদেক থেকে সূর্যোদয়ের পূর্ব পর্যন্ত মুজদালিফায় অবস্থান করুন।
সুবহে সাদেকের পর অন্ধকার থাকতে প্রথম সময় ইমামের সাথে অথবা একাকী যেমন সুযোগ হয়, ফজরের নামাজ আদায় করুন।
ফজরের নামাজ পড়ে মাশআরে হারামের কাছে কেবলামুখী হয়ে লাব্বাইকা অথবা তস্বীহ তাহলীল পড়বেন এবং হাত উপরে তুলে দোয়ায় লিপ্ত হবেন।
মিনা
মিনা অভিমুখে রওয়ানা
১০ যিলহজ্জ ফজরের নামাজান্তে কিছুক্ষণ অবস্থান করে মিনার দিকে যাত্রা করবেন।
মুজদালিফা থেকে সূর্যোদয়ের একটু আগে যাত্রা করা সুন্নত।
মিনায় আগমন
কংকর নিক্ষেপ
প্রথম কাজ
৪। বড় শয়তানকে কংকর নিক্ষেপঃ (ওয়াজিব)
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরবনীর দিন সূর্য পূর্ণভাবে আলোকিত হওয়ার পর জামরায় কংকর নিক্ষেপ করছেন। আর পরের দিনগুলোতে (নিক্ষেপ করেছেন) সূর্য হেলে যাওয়ার পর। (সহীহ মুসলিম : ১২৯৯)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,“বাইতুল্লাহর তাওয়াফ, সাফা-মারওয়ার সায়ী ও জামরাতে কংকর নিক্ষেপের বিধান আল্লাহর যিকির কায়েমের উদ্দেশেই করা হয়েছে। (আবূ দাউদ : ১৮৯০)
যোহরের পূর্বে (তবে সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত বিলম্ব করা যায়) ভিড় বা দুর্বলতার কারণে অসুস্থ ও দুর্বল হাজীরা রাতে ৩টি জামরার মধ্যে ১ম টিতে অর্থাৎ জামরাতুল আক্বাবায় (যা মিনার দিকে থেকে তৃতীয় ও মক্কার দিক থেকে প্রথম) একটি একটি করে মোট ৭টি কংকর নিক্ষেপ করুন।
মিনাকে ডান পাশে, ক্কিবলাকে বাম পাশে ও জামরাতুল আকাবাকে সামনে রেখে এতে পর পর সাতটি কংকর নিক্ষেপ করুন। কংকর সাতটির চেয়ে কম কিংবা বেশি নিক্ষেপ করা যাবে না।
আপনি হাউয তথা গোলাকার বৃত্তের ভেতর কংকর নিক্ষেপের চেষ্টা করুন।
কংকর নিক্ষেপের সময় প্রতিবার আল্লাহু আকবার বলুন।
অসুস্থ ও দুর্বল হাজীরা তাদের প্রতিনিধিদের দ্বারা কংকর নিক্ষেপ করে দিতে পারবেন। আর এক্ষেত্রে প্রতিনিধিরা প্রথমে নিজেদের তরফ থেকে কংকর মারবেন তার পর তাদের জন্য মারবেন।
কঙ্কর নিক্ষেপের পর তালবিয়া পাঠ বন্ধ করুন।
দ্বিতীয় কাজ
৫। কুরবানী করাঃ (ওয়াজিব)
কংকর মারার পর কুরবানী করুন।
সম্ভব হলে আপনি নিজেই মিনাতেই কুরবানীর পশু নিজ হাতে যবেহ করুন এবং এটাই উত্তম অথবা মক্কায় যবেহ করুন। মক্কার ভিতরে যে কোন জায়গায় যবেহ করলে চলবে। তবে মক্কার হারামের সীমানার বাইরে যবেহ করবেন না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়সাল্লাম বলেন, মিনার সবজাগায় কুরানীর স্থান এবং মক্কার প্রতিটি অলিগলি পথও কুরবানীর স্থান। (আবূ দাউদ : ২৩২৪)
নিজে যবেহ করতে না পারলে পশুর কাছে হাজির থাকুন।
ব্যাংকের মাধ্যমে টাকা জমা করে কুরবানী করতে পারেন। তবে কুরবানীর সময় জেনে নিবেন।
মিনার উত্তর পাশে ‘মুআইসীম’ নাম ক্যাম্পে ও মক্কায় বাইতুল্লাহ শরীফের দক্ষিণে তিন মাইল দূরে ‘হালাকা’ ও ‘নাক্কাসা’ নামক পশু বিষয়ক বাজারে কুরানী করতে পারেন।
কুরবানীর গোশত নিজে খাওয়ার ব্যবস্থা করুন। কারন কুরবানীল গোশস্ত খাওয়া সুন্নাত।
তামাত্তু এবং ক্বিরান হজ্জযাত্রীদের জন্য ইহা শুকরিয়া স্বরূপ ওয়াজেব কুরবানী। ইফরাদ হজ্জযাত্রীদের জন্য ইহা মুস্তাহাব।
তামাত্তু ও কিরান হজ্জকারী যদি হাদী না পায়, কিংবা হাদী ক্রয় করতে সামর্থবান না হয়, তাহলে হজ্জের দিনগুলোতে তিনটি এবং বাড়িতে ফিরে সাতটি, সর্বমোট দশটি সাওম পালন করবে।
হলক বা কছর করা
তৃতীয় কাজ
৬। হলক বা কছর করাঃ (ওয়াজিব)
কুরবানী করার পর মাথা মুন্ডান বা চুল ছেঁটে ফেলুন।
হজ্জের ইহরাম থেকে হালাল
কুরবানী করার পর মাথা মুন্ডানোর বা চুল ছেঁটে ফেলার মাধ্যমে আপনি এখন হজ্জের ইহরাম থেকে সম্পূর্ণ হালাল হয়ে গেলেন।
পুরুষদের জন্য হলক করাই উত্তম, কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলককারীদের জন্য তিনবার মাগফিরাতের দোয়া করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন-আল্লাহুম্মাগফির লিমুহাল্লিক্কি’ন, আল্লাহুম্মাগফির লিমুহাল্লিক্কি’ন, আল্লাহুম্মাগফির লিমুহাল্লিক্কি’ন। হে আল্লাহ! আপনি হলোককারীদের ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ! আপনি হলককারীদের ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ! আপনি হলককারীদের ক্ষমা করুন।
মহিলাদের সমগ্র চুলের অগ্রভাগ হাতের অঙ্গুলির এক কড়া পরিমাণ ছেঁটে হালাল হোন।
চুল ছোট করা বা ছেঁটে ফেলার মাধ্যমে ইহরামের সমুদয় কাজ সমাপ্ত হল।
এখন আপনি গোসল করে সেলাইযুক্ত কাপড় পরিধান করুন।
তাওয়াফ
মক্কায়
৪র্থ কাজ
৭। তাওয়াফ করা (ফরজ)
তাওয়াফে ইফাযা করা ফরজ এবং এ তাওয়াফের মাধ্যমেই হজ্জ পূর্ণতা লাভ করে।
এরপর মিনা থেকে মক্কায় এসে (নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সুবিধাজনক সময়) তাওয়াফের যিয়ারত পূর্ণ করুন।
মনে রাখবেন সূর্যাস্তের আগেই তাওয়াফে যিয়ারত করে নিতে হবে।
তবে নারীরা প্রাকৃতিক কারণে করতে না পারলে পবিত্র হওয়ার পরে করবেন।
সাধারণ পোশাক পরে আপনি তাওয়াফে ইফাদা বা তাওয়াফে যিয়ারাহ করুন।
এ তাওয়াফে ইযতিবা ও রমল করতে হবে না ।
মসজিদে হারামের দিকে অগ্রসর হওয়া
মক্কায় আসার পর শারীরিক ক্লান্তি বা ক্ষুধা থাকলে কিংবা অন্য কোন জরুরী কাজ থাকলে সব সেরে শান্ত হোন। অতঃপর গোসল অথবা ওজু করে মসজিদে হারামের দিকে অগ্রসর হোন। তালবিয়া পড়তে পড়তে ডান পা রেখে এই দোয়া পড়ুনঃ “বিসমিল্লাহি ওয়াসসালাতু ওয়াসসালামু আলা
রাসূলিল্লাহি আল্লাহুম্মাফ তাহলী আবওয়াবা রাহমাতিক”।
তাওয়াফের নিয়মাবলী
নিয়ত করা।
নিয়তঃ “আল্লাহুম্মা ইন্নি উরিদু তাওয়াফা বাইতিকাল হারামি ফা-ইয়াস্সিরহু লী ওয়া-তাক্কাব্বালহু মিন্নী, সাব্আতা আশওয়াতিন লিল্লাহি তায়ালা আজ্জ ওয়া-জাল্লা”।
কালো পাথর কাবা শরীফের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে স্থাপিত। হাজরে আসওয়াদের কোণ এবং সাফা পাহাড়ের দিকে হারাম শরীফের দেয়ালে যে সবুজ রঙ্গের টিউব লাইট জ্বালানো আছে এ দুইটির মধ্যে অর্থাৎ হাজরে আসওয়াদ বরাবর তাওয়াফের জায়গায় যে মোটা দাগ টানা আছে বর্তমানে তা উঠিয়ে দেয়া হয়েছে। তাই হাজরে আসওয়াদ বরাবর এসেছেন কিনা তা নির্ণয় করবেন। হাজরে আসওয়াদকে সামনে রেখে তার বরাবর ডান পাশে দাঁড়ান তারপর ক্বাবা শরীফের দিকে ফিরে হাজরে আসওয়াদ থেকে তাওয়াফ শুরু করুন।
তারপর নামাজের মতো উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠাবেন এবং বলবেন- “বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া লিল্লাহিল হাম্দ, ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসূলিল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম” এবং অত্যধিক ভিড় বা ধাক্কাধাক্কি না থাকলে সামনে এগিয়ে অতি ভক্তি ও বিনয়ের সাথে সম্ভব হলে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করুন। এটা সম্ভব না হলে যে স্থানে দাঁড়িয়ে আছেন সেখান থেকে উভয় হাতের তালু পাথরের দিকে ইঙ্গিত করে তাওয়াফ শুরু করুন।
হাজরে আসওয়াদের ইস্তিলামের পর বায়তুল্লাহ শরীফের দরজার দিকে অর্থাৎ নিজের ডান দিকে অগ্রসর হবেন এবং তাওয়াফে হাতীমকেও শামিল করবেন।
তাওয়াফের সময় সহজ দোয়া পাঠ।
“সুবহানাল্লাহি ওয়ালহামদু লিল্লাহি লাইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদু, ওয়া-লাহাওলা ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহিল আলিয়্যিল আযীম, ওয়াসসালাতু ওয়াসসালামু আলা রাসূলিল্লাহি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম”।
তাওয়াফ আরম্ভ করার পর তালবিয়া পাঠ বন্ধ রাখুন।
রোকনে ইয়ামীনে দোয়া
আপনি যখন রুকনে ইয়ামানীতে পৌঁছবেন, তখন সম্ভব হলে ডান হাত দিয়ে তা স্পর্শ করুন। তবে তাতে চুম্বন করবেন না এবং তা মাসেহও করবেন না। যেমন কতেক লোকেরা করে থাকে। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ কাজ সাব্যস্ত হয় নি। আপনি আপনার তাওয়াফের প্রত্যেক চক্করে রুকনে ইয়ামানীকে স্পর্শ করার কাজটি করবেন। আর রুকনে ইয়ামানীকে স্পর্শ করা সম্ভব না হলে সেদিকে কোনরূপ ইশারা না করে ও আল্লাহু আকবার না বলেই এগিয়ে যাবেন।
যখন রোকনে ইয়ামীনে অর্থাৎ হাজরে আসওয়াদের আগের (বায়তুল্লাহর পশ্চিম-দক্ষিণ) কোণে পৌঁছবেন তখন নিম্নোক্ত দোয়া পড়তে পড়তে হাজরে আসওয়াদের দিকে অগ্রসর হোন-
দোয়াঃ “রাব্বানা-আ-তিনা ফিদ্দুনিয়া-হাসানাতাওঁ ওয়া ফিল্ আ-খিরাতি হাসানাতওঁ ওয়া কিনা আযা-বান্ না-র। ওয়াদখিলনাল জান্নাতা মাআল আবরার ইয়া-আজিজু ইয়া-গফ্ফারু ইয়া-রাব্বাল্ আলামীন”।
এই দোয়া পড়তে পড়তে হাজরে আসওয়াদ বরাবর পৌঁছলে এক চক্কর পূর্ণ হয়ে গেল।
এভাবে মোট সাত চক্কর পূর্ণ করে নিন। প্রয়োজনে হিসাব রাখার জন্য ৭ দানার তাসবিহ ব্যবহার করুন।
সাত চক্কর পূর্ণ করার পর অষ্টমবারে হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করবেন এতে তাওয়াফ সমাপ্ত হয়ে গেল।
সাত চক্কর শেষে মাকামে ইবরাহীমের দিকে অগ্রসর হবেন এবং বলবেন, “ওয়াত্তাখিযু মিম মাকামি ইবরাহীমা মুসাল্লা”। মাকামে ইবরাহীমকে তোমরা সালাতের স্থল বানাও।
তাওয়াফ শেষে আবার তালবিয়া পাঠ শুরু করুন।
তাওয়াফের প্রত্যেক চক্করের জন্য বিশেষ কোন দোয়া নেই। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে তাওয়াফের মধ্যে হাজারে আসাওয়াদের কাছে এসে তাকবীর পড়া ছাড়া অন্য কোন যিকির বা দোয়া সাব্যস্থ হয় নি। তাওয়াফের প্রত্যেক চক্করের জন্য বিশষ কোন দোয়া পাঠে নিজেকে বাধ্য না করাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণেরই অন্তর্গত।
নবী সাল্লাল্লাহু আল্ইাহি ওয়াসাল্লাম হাজারে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানী ছাড়া কা’বার অন্য কোনো অংশ স্পর্শ করেননি।
মাকামে ইব্রাহিমে নামাজ
তাওয়াফের পর মাকামে ইব্রাহীমের পিছনে বা হারামের যে কোন স্থানে অথবা যে খানে স্থান পাওয়া যায় তাওয়াফের নিয়তে দুই রাকাত নামায পড়ুন।
এ নামাযে প্রথম রাকা’আতে সূরা ফাতেহার পর সূরা কাফিরূন ও দ্বিতীয় রাকা’আতে সূরা ফাতিহার পর সূরা ইখলাস পড়া সুন্নাত।
যমযমের পনি
নামজ শেষে যমযমের পানি পান করা মুস্তাব। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তা করেছেন। (সহীহ বুখারী : ৩/৪৯১; সহীহ মুসলিম : ২/৮৯২)
সালাতুত তাওয়াফ আদায় শেষে যমযমের পানি পান করুন ও মাথায় ঢালুন।
যমযমের পানি পান করার সময় এই দোয়া পড়ুন-
“আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা ইলমান নাফিয়ান ওয়া-রিযক্কান ওয়া-সিয়ান ওয়া-শিফায়ান মিন কুল্লি দায়িন”।
সাফা মারওয়ায় সায়ী
পঞ্চম কাজ
৮। সায়ী করাঃ (ওয়াজিব)
সাফা ও মাওয়া
তাওয়াফ শেষে নামাজ পড়ে সায়ীর জন্য সাফা পাহাড়ের দিকে অগ্রসর হোন। তারপর সাফা পাহাড়ের কাছে যাবেন এবং এর উপর আরোহণ করবেন অথবা এর নিচে দাঁড়াবেন, তবে যদি সম্ভব হয় পাহাড়ের কিয়দংশে উঠা উত্তম। সাফা পাহাড়ের কিছুটা ওপরে উঠে (এখন আর পাহাড় নেই, মেঝেতে মার্বেল পাথর, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত) পাহাড়ের চিহ্নস্বরূপ উঁচু জায়গা রয়েছে। এখানে উঠলে আপনার নজরে ক্বাবা শরীফ আসবে। অতঃপর অন্তরের আবেগ অনুযায়ী দোয়া কালাম পাঠ করতে করতে মারওয়া পাহাড়ের দিকে অগ্রসর হোন।
আপনি সাফা পাহাড়ের নিকটবর্তী হলে তাতে উঠার আগেই এ আয়াতটি পড়ুন : “ইন্নাচ্ছাফা ওয়াল মারওয়াতা মিন শা‘আ-ইরিল্লাহ আবাদাউ বিমা বাদাআল্লাহু বিহী”। অর্থাৎ নিশ্চয়ই সাফা এবং মারওয়া আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্গত। আমি শুরু করছি আল্লাহ যা দিয়ে শুরু করেছেন। (সূরা আল-বাক্বারাহ : ১৫৮, মুসলিম : ১/৮৮৮) প্রথম চক্করের শুরুতে আল্লাহর এ বাণী পাঠ করুন এর পর আর পাঠ করা লাগবে না।
সায়ীর নিয়তঃ “আল্লাহুম্মা ইন্নি উরিদুস সা’য়া বাইনাস সাফা ওয়াল মারওয়াতে সাবয়াতা আশওয়াতিন লিওয়াজহিকাল কারিম ফায়াসসিরহুলি ওয়াতাক্বাব্বালহু মিন্নি”।
সায়ীর দোয়াঃ সাফা পাহাড়ে উঠার পর ক্কিবলামুখী হয়ে প্রার্থনাকারীর ন্যায় দু’হাত উর্ধ্বে তুলে আল্লাহ্ তা‘আলার প্রশংসা করে তিনবার তাকবীরসহ নিম্নোক্ত দো‘আ পড়ুন:
১. “আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু, আনজাযা ওয়া’দাহু, ওয়া নাছারা আবদাহু, ওয়া হাযামাল আহজাবা ওয়াহদাহু”।
অর্থাৎ আল্লাহ বড়, আল্লাহ বড়, আল্লাহ বড়, একমাত্র আল্লাহ্ ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নেই। তাঁর কোন শরীক নেই। সমস্ত রাজত্ব ও প্রশংসা তাঁরই। তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। একমাত্র আল্লাহ্ ছাড়া প্রকৃত কোন উপাস্য নেই। তিনি তাঁর ওয়াদা পূর্ণ করেছেন, তাঁর বান্দাকে বিজয় দিয়েছেন এবং তিনি একাই শক্রকে পরাজিত করেছেন।
২. “সুবহানাল্লাহি ওয়ালহামদু লিল্লাহি আল্লাহু আকবার ওয়া লাহাওলা ওয়ালা কুয়াতা ইল্লাবিল্লাহিল আলিয়্যিল আযীম”।
৩. “আলহামদু লিল্লাহি আল্লাহু আকবার লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” বলে দোয়া করুন। তবে যে কোন দোয়া পড়া যায়। যেহেতু শরীয়তে এখানে বেশী বেশী করে দো‘আ করার কথা বলা হয়েছে সেহেতু যাবতীয় দো‘আই এখানে করতে পারেন।
অতঃপর সাফা হতে নেমে মারওয়ার দিকে যাবেন। সায়ীকালীন সময়ে সাফা ও মারওয়ার মাঝে সবুজ দুটি স্তম্ভ আপনার নজরে পড়বে। এই স্তম্ভদ্বয়ের মাঝখানে কিছুটা দ্রুতগতিতে চলুন এবং এই দোয়া পড়ুনঃ “সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদু লিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার ওয়া লা-হাওলা, ওয়ালা কুওয়াতা ইল্লাবিল্লাহিল আ’লিয়্যিল আ’যীম, “রাব্বিগফির ওয়ারহাম ইন্নাকা আন্তাল আয়াযযুল আকরাম”।
পুরুষগণ দু’সবুজ আলোর মধ্যবর্তী স্থানে দ্রুত চলবেন এবং এর আগে ও পরে স্বাভাবিকভাবে চলবেন। মহিলাগণ কোথাও দ্রুত চলবেন না, কারণ মহিলাগণ পর্দা করবেন, দ্রুত হাঁটা মহিলাদের পর্দার বিপরীত।
এরপর যখন মারওয়ার কাছে যাবেন, তখন তার উপর আরোহণ করবেন অথবা নিচে দাঁড়াবেন এবং আল্লাহর প্রশংসা জ্ঞাপন করবেন এবং সাফায় যেমনটি করেছেন এখানেও তেমনটি করবেন। অর্থাৎঃ মারওয়ার উপরে উঠার পরে কা’বা শরীফকে সামনে রেখে প্রার্থনাকারীর ন্যায় দু’ হাত উর্ধে তুলে আল্লাহ্ তা‘আলার প্রশংসা করে তিনবার তাকবীরসহ নিম্নোক্ত দো‘আ পড়বেন -
“আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকা লাহু, লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু, ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু, আনজাযা ওয়াহদাহু, ওয়া নাছারা আবদাহু, ওয়া হাযামাল আহজাবা ওয়াহদাহু”।
অর্থাৎ আল্লাহ বড়, আল্লাহ বড়, আল্লাহ বড়, একমাত্র আল্লাহ্ ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নেই। তাঁর কোন শরীক নেই। সমস্ত রাজত্ব ও প্রশংসা তাঁরই। তিনি সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান। একমাত্র আল্লাহ্ ছাড়া প্রকৃত কোন উপাস্য নেই। তিনি তাঁর ওয়াদা পূর্ণ করেছেন, তাঁর বান্দাকে বিজয় দিয়েছেন এবং তিনি একাই শক্রকে পরাজিত করেছেন।
এতে সাফা থেকে মারওয়া পর্যন্ত এক চক্কর হয়ে গেল। আবার মারওয়া থেকে সাফা পর্যন্ত পূর্বের নিয়মে যাবেন, তাতে দ্বিতীয় চক্কর হয়ে যাবে। এভাবে ৭ চক্কর পূর্ণ করুন।
সাফা মারওয়া পাহাড়ে সাতবার যাওয়া আসা করার সময় অজু না থাকলেও সায়ী সম্পন্ন হয়ে যাবে। তবে অজু থাকা ভাল।
সাফা মারওয়ায় হুঁশিয়ারী
সাফা-মারওয়া পাহাড়দ্বয়ের উঁচু জায়গার শেষ প্রান্তে পৌঁছা সুন্নতের খেলাফ।
সায়ীর পর নফল নামাজ
সায়ী শেষে মসজিদে হারামে এসে মাতাফে অথবা হাজরে আসওয়াদের সামনে অথবা তাওয়াফ করার স্থানে কিংবা যেখানে স্থান পাওয়া যায় সেখানে দু’রাকাত নফল নামাজ আদায় করুন।
এ নামাযে প্রথম রাকা’আতে সূরা ফাতেহার পর সূরা কাফিরূন ও দ্বিতীয় রাকা’আতে সূরা ফাতিহার পর সূরা ইখলাস পড়া সুন্নাত।
৫টি কাজ ধারাবাহিকভাবে করা উত্তম। প্রথমত জামরায়ে আকাবায় রমী করবেন, তারপর কুরবানী করবেন, এরপর চুল হলোক বা ছোট করবেন, তারপর বায়তুল্লার তাওয়াফ করবেন এবং এরপর সা’ঈ করবেন। কিন্তু এ পাঁচটি কাজের ধারাবাহিকতা ভঙ্গ করে একটির আগে অন্যটি করলে আপনার কোন অসুবিধা নেই আর আল্লাহ চাহেত আপনার হজ্জ শুদ্ধ হবে। এ ব্যাপারে কুরবনীর দিন সাহাবায়ে কেরামের পক্ষ থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি একের পর এক প্রশ্ন পেশ করা হয়েছিলো। তাদে কেউ কুরবনীর আগে হলোক করেছিলেন, কেউ রমী করার আগে তাওয়াফ করেছিলেন এবং এভাবে আরো ঘটনা সংঘটিত হয়েছিলো। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তরে তাদেরকে বলেছিলেন : করুন, এতে কোনো অসুবিধা নেই। এটা আল্লাহ পক্ষ থেকে বান্দাদের কষ্ট লাঘবকরণ, তাদের প্রতি তাঁর দয়া ও করুনা।
ইমাম আবূ হানিফা (রহ.) এর প্রখ্যাত দুই ছাত্র ইমাম আবূ ইউসূফ (রহ.) ও ইমাম মুহাম্মদ (রহ.) ১০ যিলহজ্জের কাজসমূহে ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে না পারলেও দম ওয়াজিব হবে না বলে মতামত ব্যক্ত করেছেন।


১১ ও ১২ যিলহজ্জ (৪র্থ ও ৫ম দিন)
অবস্থানঃ মিনা
১১ ও ১২ যিলহজ্জ ১ একটি কাজ করতে হয়।
শয়তানকে কংকর মারা
৯। শয়তানকে কংকর নিক্ষেপ করাঃ (ওয়াজিব)
১০ ও ১১ তারিখ রাত মিনায় রাত্রি যাপন করুন। ১২ তারিখ যদি মিনায় থাকা অবস্থায় সূর্য ডুবে যায় তাহলে ১২ তারিখ রাত ও মিনায় যাপন করুন। হযরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আল্ইাহি ওয়াসাল্লাম যোহরের সালাত মসজিদুল হারামে আদায় ও তাওয়াফে যিয়ারত শেষ করে মিনায় ফিরে এসেছেন এবং তাশরীকের রাতগুলো মিনায় কাটিয়েছেন। (আবূ দাউদ : ১৬৮৩)
দুপুরের পর প্রতিদিন তিন জামরায় ৭টি করে মোট ২১টি কংকর নিক্ষেপ করুন।
শরীয়তের বিধান হলো একটি একটি করে কংকর নিক্ষেপ করা এবং প্রতিটি কংকর নিক্ষেপের সময় আল্লাহু আকবার বলা।
সূর্যাস্তের পূর্বে মিনা ত্যাগ (১২ জিলহজ্জ) করুন।
১০ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত নিক্ষিপ্ত কংকর সংখ্য = (৭+২১+২১) = ৪৯ টি
১০ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত নিক্ষিপ্ত কংকর সংখ্যা = (৭+২১+২১+২১) = ৭০ টি
সূর্যাস্তের পূর্বে মিনা ত্যাগ করুন।
মিনা থেকে মক্কাশরীফ আগমন।
বিঃ দ্রঃ কোন কারণে ১২ যিলহজ্জ সূর্যাস্তের পূর্বে মিনা ত্যাগ না করতে পারেল ১৩ তারিখও মিনায় অবস্থান করুন। একই নিয়মে ১৩ তারিখ তিন জামরায় ৭টি করে মোট ২১টি কংকর নিক্ষেপ (দুপুরের পর) করুন।

সর্বশেষ কাজ
অবস্থানঃ মক্কা
সর্বশেষ ১ (এক) টি কাজ করতে হয়।
বিদায়ী তাওয়াফ করা।
১০। বিদায়ী তাওয়াফ করাঃ (ওয়াজিব)
হাজী সাহেবদের সর্বশেষ আমল হবে এই তাওয়াফ। এটি ওয়াজিব।
মক্কা থেকে জেদ্দা যাওয়ার পূর্বে অথবা মক্কা থেকে মদীনায় যাওয়ার পূর্বে বিদায়ী তাওয়াফ করুন।
বিদায়ী তাওয়াফ অন্য তাওয়াফের মতই। সাধারণ পোষাক পরে এই তাওয়াফ করুন।
যারা মক্কাবাসী নন, তারা সকলে বিদায়ী তাওয়াফ করবেন। এটা করা ওয়াজিব।
বিদায়ী তাওয়াফে সাতটি চক্করে কোন রমল নেই; ইযতিবাও নেই।
এ তাওয়াফে সায়ী করতে হবে না। অর্থাৎ সাফা ও মারওয়া পাহাড়ে দৌঁড়াতে হবে না।
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: বায়তুল্লার তাওয়াফ প্রত্যেক ব্যক্তির শেষ কাজ না হওয়া পর্যন্ত কেউ যেন মক্কা থেকে বেরিয়ে না যায়। (সহীহ মুসলিম : ৩২৮৩ ও ১৩২৭)
হযরত আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,“ লোকদের নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে যে, বাইতুল্লাহর সাথে তাদের সর্বশেষ কাজ যেন হয় তাওয়াফ করা। তবে মাসিক শ্রাবগ্রস্ত মহিলাদের ক্ষেত্রে এটা শিথিল করা হয়েছে। (সহীহ মুসলিম : ২৩২৮)
তাওয়াফের পর মাকামে ইবরাহীমের পেছনে অথাব যে খানে জায়গায় পাওয়া যায় সেখানে দু’রাকাত সালাত পড়ুন। এর পর মসজিদুল হারাম থেকে বেরিয়ে পড়ুন এবং মসজিদ থেকে বের হওয়ার দোয়াটি পাঠ করুন : “বিসমিল্লাহি ওয়াসসালাতু ওয়াসসালামু আলা রাসূলিল্লাহি আল্লাহুম্মা
ইন্নি আছআলুকা মিন ফাদলিকা”।
জেদ্দা অথবা মদীনা শরীফের উদ্দেশে রওয়ানা করুন।
মদীনা-মক্কা শরীফ থেকে জেদ্দায় আগমন।
 জেদ্দায় অবস্থান করুন।
 বিমানের জন্য অপেক্ষা করুন।
হজ্জের পর করণীয়
মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শেখানো হজ্জের নীতি অনুসারে প্রতিটি বিধানের হাকীকত উপলব্ধি করে তা পালন করা এবং বাকী জীবনে তা কার্যকর করার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যেতে পারে। আর পরবর্তী জীবনে হজ্জের শিক্ষা কার্যকর করে সর্বপ্রকার পাপাচার ও আল্লাহর নির্দেশ অমান্য করা থেকে বিরত থাকার নামই হলো হজ্জে মাবরুর। এই হজ্জে মাবরুরের প্রতিদানই হলো জান্নাত।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.