![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কুরবানী একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত, এটি আদায় করা ওয়াজিব। এই ইবাদাতটি শুধু এই উম্মতের মধ্যে নয় বরং পূর্ববর্তী উম্মতের মধ্যেও ছিল। মানব সৃষ্টির সূচনালগ্ন থেকেই কুরবানীর বিধান চলে আসছে। হাবিল কাবিল দুই ভাই কুরবানী করেছিল। হাবিলের কুরবানী আল্লাহ তা'আলা কবুল করেছিলেন আর কাবিলের কুরবানী কবুল করেননি।
এই কোরবানীর পেছনে আমাদের পিতা ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এর চরম আত্মত্যাগ জড়িয়ে আছে। তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে নিজের জীবন, পরিবার ও বৃদ্ধ বয়সে পাওয়া প্রাণাধিক পুত্রকে জবাই করার জন্য উদ্যত হয়েছিলেন। নিজ পুত্র যবেহ করার মত কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হয়েছিলেন ইবরাহীম আলাইহিস সালাম। এ বিষয়ে সূরা আস-সাফ্ফাতের ১০০ থেকে ১০৯ আয়াতে বলা হয়েছে, তিনি বললেন, হে প্রভু! আমাকে নেক সন্তান দান করুন। অতঃপর আমি তাকে সুসংবাদ দিলাম এক অতীব ধৈর্যশীল সন্তানের। পরে যখন সে সন্তান তার সাথে দৌড়াদৌড়ি করে বেড়ানোর বয়সে পৌঁছলো তখন তিনি (ইবরাহীম আঃ) একদিন বললেন, হে বৎস! আমি স্বপ্নে দেখেছি যে, আমি আল্লাহর হুকুমে তোমাকে যবেহ করছি এখন তুমি চিন্তা-ভাবনা করে দেখ এবং তোমার অভিমত কী? তিনি (ইসমাঈল) বললেন, হে পিতা আপনি তাই করুন যা করতে আপনি আদিষ্ট হয়েছেন। আল্লাহ চাহেন তো আপনি আমাকে ধৈর্যশীলদের মধ্যে পাবেন। অতঃপর যখন দু'জনই আল্লাহর আদেশ মানতে রাজি হলেন, তখন তিনি (ইবরাহীম আঃ) পুত্রকে যবেহ করার জন্য শুইয়ে দিলেন। আমি তাকে ডেকে বললাম, হে ইবরাহীম! তুমি আমার স্বপ্নকে সত্যে পরিণত করেছ। আমি এভাবেই নেক বান্দাদেরকে পুরস্কৃত করে থাকি। নিশ্চয়ই ইহা বড় পরীক্ষা। আর আমি তাকে বিনিময় করে দিলাম এক বড় কুরবানীর দ্বারা এবং তা পরবর্তীর জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করলাম। শান্তি বর্ষিত হোক ইবরাহীম (আঃ) এর উপর।’’ একমাত্র আল্লাহ তা'আলার নৈকট্য লাভের প্রত্যাশায় এবং আল্লাহ প্রদত্ত কঠিনতম পরীক্ষায় সাফল্যজনকভাবে উত্তীর্ণ হওয়ার উদ্দেশ্যে এক মহান পিতার প্রাণাধিক পুত্রকে কুরবানী করার মধ্যদিয়ে ধৈর্যশীলতার উত্তম নমুনা পেশ পৃথিবীর ইতিহাসে এক বিরল ঘটনা। কুরআন মাজীদে ইবরাহীম ও ইসমাঈল আলাইহিমুস সালামের আত্মত্যাগ এবং আল্লাহর প্রতি সীমাহীন আনুগত্যের সাবলীল বিশ্লেষণ তুলে ধরা হয়েছে। উল্লেখিত আয়াত দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, স্বীয় পুত্র যবেহ না হয়ে দুম্বা যবেহ হয়েছে।
সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি এই ইবাদত পালন করে না তার ব্যাপারে হাদীস শরীফে এসেছে, প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন, রাসূল (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তির সামর্থ্য থাকা সত্বেও কোরবানী করে না, সে যেন আমার ঈদের মাঠের কাছেও না আসে। (সুনানে ইবনে মাজাহ : ৩১২৩, মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস : ৩৫১৯; আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব ২/১৫৫) রাসূল (সাঃ) মদিনার ১০ বছরের জিন্দেগীতে প্রত্যেক বছর কুরবানী করেছেন। কখনও কোরবানী পরিত্যাগ করেননি, বরং কোরবানী পরিত্যাগকারীদের ভৎসনা করেছেন।
কুরবানীর উদ্দেশ্য :
কোরবানীর উদ্দেশ্যে হবে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি আদায়। কুরবানী একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। আল্লাহ রাববুল আলামিন মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছেন শুধু তার ইবাদত করার জন্য। তাই আল্লাহ তা'আলার বিধান তাঁর নির্দেশিত পথে পালন করতে হবে। তিনি বলেন, ‘আমি জিন ও মানুষকে এ জন্য সৃষ্টি করেছি যে, তারা শুধু আমার এবাদত করবে।' (আয্যারিয়াত-৫৬)
বলুন! আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহরই উদ্দেশ্যে, তাঁর কোন শরীক নেই, আর আমি এর জন্যই আদিষ্ট হয়েছি এবং আমিই প্রথম মুসলিম। (আনআম : ১৬২-১৬৩) এ আয়াতদ্বয়ের মর্মকথা হচ্ছে আমাদের জীবনের সকল ইবাদত ও কাজ কেবল আল্লাহর উদ্দেশ্যে হতে হবে। আমাদের কাজের প্রকৃত লক্ষ্য থাকবে আল্লাহর সন্তুষ্টি। ঈদ ও কুরবানী এ দু'টি কাজই মূলত আল্লাহর ইবাদত ও মুমিন বান্দাদের প্রতি মহিয়ান রাববুল আলামীনের বিশেষ অনুগ্রহ। কুরবানীর মধ্যে ত্যাগ ও উৎসর্গের মর্মনিহিত রয়েছ।
১. শর্তহীন আনুগত্য :
আল্লাহ তা'আলা তার বান্দাহকে যে কোন আদেশ দেয়ার ইখতিয়ার রাখেন এবং বান্দাহ তা পালন করতে বাধ্য। তাই তার আনুগত্য হবে শর্তহীন। আল্লাহর আদেশ সহজ হোক আর কঠিন হোক তা পালন করার বিষয়ে একই মন-মানসিকতা থাকতে হবে এবং আল্লাহর হুকুম মানার বিষয়ে মায়া-মমতা প্রতিবন্ধকতা হতে পারে না। কুরআনুল কারীম আমাদেরকে জানিয়ে দিচ্ছে যে, আল্লাহ রাববুল আলামীন ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে আনুগত্যের চরম পরীক্ষায় অবতীর্ণ করেছিলেন। ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এর আনুগত্য ছিল শর্তহীন। তিনি বলতে পারতেন যে, হে আল্লাহ! তোমার জন্য আগুনে গিয়েছি, ঘরবাড়ি ছেড়েছি, আত্মীয়-স্বজন সব কিছু হারিয়েছি, এসব কিছুর বিনিময়ে আমার স্নেহের সন্তানটিকে কুরবানী করা থেকে রেহাই দাও। কিন্তু তা তিনি করেননি; বরং আল্লাহ হুকুম করেছেন তা শর্হহীনভাবে মেনে নিয়েছেন এবং তিনি আল্লাহর আনুগত্য পালনের ব্যাপারে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। এ জন্য মহান আল্লাহ যেমনিভাবে বিশ্ব মানবমন্ডলীকে বিভিন্ন জাতিতে বিভক্ত করেছেন ঠিক তেমনিভাবে সর্বশেষ জাতি হিসেবে মুসলিম জাতির পিতাও মনোনয়ন দিয়েছেন। কুরআনে এসেছে : ‘এটা তোমাদের পিতা ইবরাহীমের মিল্লাত তিনি পূর্বে তোমাদের নাম করণ করেছেন মুসলিম।' (হজ্ব : ৭৮)
২. তাকওয়া অর্জন :
তাকওয়া অর্জন ছাড়া আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায় না। একজন মুসলিমের অন্যতম চাওয়া হলো আল্লাহ তা'য়ালার নৈকট্য অর্জন। পশুর রক্ত প্রবাহিত করার মাধ্যমে কোরবানীদাতা আল্লাহ রাববুল আলামিনের নৈকট্য অর্জন করেন। যেমন আল্লাহ তা'য়ালা বলেন : ‘আল্লাহর নিকট পৌঁছায় না তাদের গোশত এবং রক্ত, বরং পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া। এভাবে তিনি এগুলোকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যাতে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর এজন্য যে, তিনি তোমাদের পথ প্রদর্শন করেছেন; সুতরাং আপনি সুসংবাদ দিন সৎকর্মপরায়ণদেরকে। (হজ্ব : ৩৭)
৩. আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করা :
প্রত্যেক ইবাদতই আল্লাহর শেষ্ঠত্বের প্রমাণ বহন করে। তাই কুরবানীর মাধ্যমে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করা হয়। যেমন, আল্লাহ তা'য়ালা বলেন : আল্লাহ তোমাদের সহজ চান, কঠিন চান না, আর যাতে তোমরা সংখ্যা পূরণ করতে পারো এবং তিনি তোমাদেরকে যে, হিদায়াত দিয়েছেন তার জন্য আল্লাহর বড়ত্ব প্রকাশ কর এবং যাতে তোমরা শোকর কর। (বাকারাহ : ১৮৫)
৪. ত্যাগ করার মহান পরীক্ষা :
কুরবানীর অন্যতম উদ্দেশ্য হলো ত্যাগ করা মানসিকতা তৈরি করা। আল্লাহর বিধান পালনে জানমালের ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। কুরবানীর ঈদকে গোশত খাওয়ার অনুষ্ঠানে পরিণত করা নয়, বরং নিজেদের মধ্যকার পশুসুলভ আচরণ ত্যাগ করার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। নফসের আনুগত্য ত্যাগ করে আল্লাহর একান্ত অনুগত হওয়াই কুরবানীর উদ্দেশ্য। ‘আমি তোমাদেরকে অবশ্যই ভয়, দারিদ্র্য, সম্পদ ও জীবনের ক্ষয়ক্ষতি করার মাধ্যমে পরীক্ষা করবো। (বাকারাহ : ১৫৫)
কোরবানী কবুল হবার জন্য নিয়ত বিশুদ্ধ হওয়া শর্তঃ
কোরবানী একান্তই কোন উৎসব নয়; কোরবানী হতে হবে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নিজের মধ্যে আল্লাহর ভয় জাগ্রত করার লক্ষ্যে। গোশত খাওয়ার নিয়তে হলে কিংবা মানুষ খারাপ বলবে এই কারণে কোরবানী দেওয়া হলে আল্লাহ এ কোরবানী কবুল হবে না। কেননা আল্লাহর না গোশতের প্রয়োজন, না রক্তের প্রয়োজন। তিনি তো শুধু বান্দার তাকওয়াই দেখেন।
কুরআনে পাকে এরশাদ হয়েছে, আল্লাহর কাছে কখনও কোরবানীর গোশত বা রক্ত পৌঁছায় না। বরং তাঁর কাছে তোমাদের তাকওয়া টুকুই পৌছায়। (হজ্জ : ৩৭)
একজন কুরবানীদাতার ঘোষণা এমনই । "আমার নামায, আমার কোরবাণী, আমার জীবন, আমার মরণ সবকিছুই সারা জাহানের মালিক মহান আল্লাহ তা'আলার জন্যই।" (আনআম : ১৬২)
যাদের উপর কুরবানী ওয়াজিবঃ
যে ব্যক্তি নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক (সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপার যে কোন একটির সমপরিমাণ সম্পত্তি) তার জন্য গরু, মহিষ, উট এগুলোর সাত ভাগের একভাগ অথবা ছাগল, দুম্বা এসব পশুর একটি কোরবানী করা ওয়াজিব। প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থমস্তিষ্ক সম্পন্ন প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, যে ৯ জিলহজ্ব ফজর থেকে ১২ জিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত মালিকে নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। টাকা-পয়সা, সোনা-রূপা, অলঙ্কার, বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজন আসে না এমন জমি, প্রয়োজন অতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য ও অপ্রয়োজনীয় সকল আসবাবপত্র কুরবানীর মালিক নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য। আর মালিকে নিসাব হল-
ক) স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত (৭.৫) ভরি,
খ) রূপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি,
গ) টাকা-পয়সা ও অন্যান্য বস্ত্তর ক্ষেত্রে নিসাব হল এর মূল্য সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হওয়া।
ঘ) আর সোনা বা রূপা কিংবা টাকা-পয়সা এগুলোর কোনো একটি যদি পৃথক ভাবে মালিকে নেসাব পরিমাণ না থাকে কিন্তু প্রয়োজন অতিরিক্ত একাধিক বস্ত্ত মিলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হয়ে যায় তাহলেও তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। (আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৫৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪০৫)
আল্লাহতা'আলার ইরশাদ করেন, ‘‘তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর এবং পশু কুরবানী কর। আল্লাহ তা'আলার নির্দেশ পালন মূলত ওয়াজিব। রাসূলুল্লাহ সাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানী করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটেও না আসে। (ইব্ন মাজাহ-৩১২৩ হাদীসটি হাসান) যারা সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কুরবানী ত্যাগ করে তাদের প্রতি এ হাদীসটি একটি সতর্কবাণী।
মালিকে নেসাবের মেয়াদঃ
মালিকে নেসাবের মেয়াদ কুরবানীর মালিকে নেসাব পুরো বছর থাকা জরুরি নয়; বরং কুরবানীর তিন দিনের মধ্যে যে কোনো দিন থাকলেই কুরবানী ওয়াজিব হবে। (বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩১২)
কুরবানীর সময়ঃ
মোট তিনদিন কুরবানী করা যায়। জিলহজ্বের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত। তবে সম্ভব হলে জিলহজ্বের ১০ তারিখেই কুরবানীকরা উত্তম। (মুয়াত্তা মালেক ১৮৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৮, ২৩, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৫)
কুরবানীর ব্যাপারে কুরআন ও হাদীসের ভাষ্যঃ
কুরআনের ভাষ্য :
১. আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, “আমার নামায, আমার কোরবানী, আমার জীবন ও মরণ বিশ্বপ্রতিপালক আল্লাহর জন্যে। তাঁর কোন অংশিদার নেই। আমি তাই আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি প্রথম আনুগত্যশীল।”( আনয়াম : ১৬২)
২. আল্লাহ তায়ালা বলেন, “আল্লাহর নিকট পৌছায়না এর গোশত ও রক্ত, পৌছে তোমাদের তাকওয়া।”(হজ্জ : ৩৭)
৩. আল্লাহ তায়ালা বলেন, “উৎসর্গীকৃত উটকে আমি তোমাদের জন্য আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন করেছি। এতে তোমাদের জন্য মঙ্গল রয়েছে।” (হজ্জ : ৩৬)
৪. মহান আল্লাহ তা'আলা বলেন প্রত্যেক উম্মতের জন্য আমি কোরবানীর একটি পদ্ধতির প্রচলন করেছি। যে পশু আল্লাহ তাআলা তাদের দান করেছেন তার ওপর যেন তারা তাঁর নাম উচ্চারণ করে। (হজ : ৩৪)
৫. আল্লাহ তা'আলা আমাদের আদি পিতা হযরত আদম (আ-এর দুই ছেলে হাবিল ও কাবিলের কুরবানীর কথা বলেছেন। হাবিল কাবিল দুই ভাই কুরবানী করেছিল। কাবিলের কুরবানী আল্লাহ তা'আলা কবুল করেছিলেন আর কাবিলের কুরবানী কবুল করেননি। (মায়েদার : ২৭)
৬. আল্লাহ এরশাদ করেন, তুমি তোমার রবের জন্য নামাজ পড়ো ও কুরবানী করো। (কাওসার আয়াত : ২)
৭. কোরআনের ভাষায় ইবরাহীম বলল। হে আমার প্রতিপালক! আমাকে একজন সৎকর্মপরায়ন সন্তান দান করুন। অতঃপর আমি তাকে এক স্থিরবুদ্ধি পুত্রের সুসংবাদ দিলাম। তারপর সে যখন তার পিতার সঙ্গে কাজ করার মতো বয়সে উপনীত হলো, তখন ইব্রাহীম বললো, পুত্র আমার! আমি স্বপ্নে দেখি, তোমাকে আমি জবাই করছি। এখন তোমার অভিমত কি বলো। পুত্র বললো, হে আমার পিতা! আপনি যা আদিষ্ট হয়েছেন তা সম্পাদন করুন। আল্লাহর ইচ্ছায় আপনি আমাকে ধৈর্য্যশীলদের মধ্যথেকে পাবেন। যখন তারা উভয়ে আল্লাহর নির্দেশের সামনে আত্মসমর্পণ করলো আর ইব্রাহিম তাঁর পুত্রকে কাত করে শায়িত করেন জবেহ করার জন্য, তখন আমি তাকে বললাম,হে ইব্রাহীম! তুমি তো স্বপ্নাদেশ সত্যই পালন করেছো। এভাবেই আমি সৎকর্মপরায়ণদের পুরস্কৃত করে থাকি। নিশ্চয়ই এটি ছিল এক স্পষ্ট পরীক্ষা। আমি তাকে (পুত্র ইসমাইলকে) মুক্ত করলাম এক কোরবানীর বিনিময়ে। আর আমি এটা (ঈদুল আজহায় কোরবানী করার রীতি প্রবর্তন করে) পরবর্তীদের স্মরণে রেখেছি। (সাফফাত : ১০০ - ১০৮)
হাদীসে ভাষ্য :
১. রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন, “হে লোক সকল!প্রত্যেক পরিবারের পক্ষে প্রতি বছর কোরবানী করা আবশ্যক।” (মেশকাত শরীফ)
২. রাসূল (সাঃ) কখনোই কোরবানী ত্যাগ করতেন না। প্রতি বছরই তিনি কোরবানী দিতেন। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন, রাসূল (সাঃ) মদিনা শরীফে ১০ বছর অবস্থান করেছেন। আর প্রতি বছরই কোরবানী দিয়েছেন। তন্মধ্যে স্বহস্তে ৬৩টি উট কোরবানী করেন। বাকিগুলো হযরত আলী (রাঃ) এর কাছে সোপর্দ করেছেন। এক সাথে এতগুলো উট কোরবানী করা কোরবানীর ফজিলত ও গুরুত্ব বহন করে। (তারীখে কুরবানী, পৃষ্ঠা-২১)
৩. রাসূল (সাঃ)ইরশাদ করেন, “কোরবানীর দিন কোরবানী করার চেয়ে প্রিয় ইবাদত আল্লাহর নিকট আর নেই।” (মেশকাত শরীফ)
তিনি আরো ইরশাদ করেন, “কোরবানীর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই তা আল্লাহর দরবারে কবুল করে নেওয়া হয়।”(মেশকাত শরীফ)
৪. রাসূল (সাঃ) বলেন, আজ আমাদের প্রথম কাজ হলো নামায পড়া, তার পরের কর্তব্য হলো, কোরবানী করা। যে ব্যক্তি এরূপ করবে সে আমার তরিকার উপরই থাকবে। আর যে ব্যক্তি নামাযের পূর্বেই কোরবানী করল, তার কোরবানী শুদ্ধ হয়নি; বরং তার কোরবানী শুধু গোশত খাওয়ার জন্য হলো। সাওয়াবের সাথে এর কোন সম্পর্ক নেই।
৫. হযরত যায়িদ ইবনে আরকাম হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) এর সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! এ কোরবানী কী? তিনি বললেন, ইহা তোমাদের পিতা ইবরাহীম (আ এর সুন্নাত। তারা বলল, এতে আমাদের কী কল্যাণ নিহিত আছে? তিনি বললেন, এর প্রত্যেকটি পশমের বিনিময় একটি করে নেকী আছে। তারা পুনরায় জিজ্ঞাসা করলেন, বকরীর পশমেও কী তাই? জবাবে তিনি বলেন, বকরীর প্রতিটি পশমের বিনিময় ও একটি করে নেকী আছে।” (ইবনে মাজাহ, ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা নং-২২৬)
৬. হযরত আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন, কোরবানীর দিনে বনী আদম এমন কোন কাজ করতে পারে না যা আল্লাহর নিকট রক্ত প্রবাহিত করা অপেক্ষা প্রিয়তর হতে পারে। কোরবানীর পশুসমূহ কিয়ামতের দিন তাদের শিং, পশম ও খুরসহ হাজির হবে। আর কোরবানীর পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার পূর্বেই আল্লাহর নিকট তা পৌছে। সুতরাং তোমরা প্রফুল্লচিত্তে কোরবানী কর। (তিরমিযী শরীফ : ১৪৯৩)
৭. হাদীস শরীফে এসেছে, “যে ব্যক্তি প্রফুল্ল চিত্তে কোরবানী আদায়ের নিয়তে কোরবানী করে। (কিয়ামতের দিন) তার এবং জাহান্নামের মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে।”, (সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকী : ৪৪২২)
৮. হুসাইন ইবনে আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি খুশি মনে সাওয়াবের নিয়তে কোরবানী করে, ঐ কোরবানী তার জাহান্নামে যাওয়ার পথে প্রতিবন্ধক হবে (আল মুজামুল কাবীর লিত তাবরানী)
৯. হযরত আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাঃ) বলেন, ঈদুল আযহার দিন মানুষের কোন আমল আল্লাহ তা'আলার কাছে কোরবানী করার চেয়ে বেশি প্রিয় নয়। কোরবানীর পশু কেয়ামতের দিন তার সিংহ, পশম ও ক্ষুরসহ উপস্থিত হবে। অর্থাৎ কুরবানীদাতা ওই জিনিসগুলোর বিনিময়ে সওয়াব পাবে।
১০. কুরবানীর রক্ত মাটিতে পড়ার আগেই তা আল্লাহ তাআলার কাছে একটি বিশেষ স্থানে পৌঁছে যায়। তাই তোমরা খুশিমনে কুরবানী করো। বেশি খরচ হয়ে গেলেও মন খারাপ করোনা। (জামে তিরমিজি)
কুরবানী দিনের ফজিলতঃ
দশ যিলহজ্বের এ দিনটিকে ইয়াওমুল আজহা বা কুরবানীর দিন বলা হয়। এ দিনের অপরিসীম তাৎপর্য ও মর্যাদা পবিত্র কুরআন ও সহীহ হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে।
১. এ দিনটি বছরের শ্রেষ্ঠ দিন : হাদীসে এসেছে : আব্দুল্লাহ ইবনে কুর্ত রাদি আল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ দিন হচ্ছে কুরবানীর দিন, এরপর কুরবানীর পরবর্তী দিন। (আবু দাউদ : ১৭৬৫, ইবনে খুযাইমা : ২৮৬৬) ইমাম ইবনুল কাইয়্যেম (রহ বলেন : এ হাদীস থেকে প্রতীয়মান হয় যে, বছরের মধ্যে শ্রেষ্ঠ ও মহিমান্বিত দিবস হচ্ছে কুরবানীর দিন। এতে ঈদের সালাতের পাশাপাশি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য কুরবানী ও করা হয়ে থাকে।’’ (তাহযীবুস্ সুনান : ২/২৯৫)
২. এ দিন ইয়াওমুল হাজ্জিল আকবার বা বড় হজ্বের দিন। এ দিন হাজী সাহেবগণ হজ্বের হাদি যবেহসহ হজ্বের অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ কর্ম সম্পাদন করে থাকেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এভাবে ইরশাদ করেছেন : ইবনে উমার রাদি আল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কুরবানীর দিন লোকদের উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করলেন, এটা কোন দিন? সাহাবাগণ উত্তর দিলেন এটা ইয়ামুন নাহার বা কুরবানীর দিন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন : এটা হচ্ছে ইয়াওমুল হাজ্জিল আকবার বা বড় হজ্বের দিন। (আবু দাউদ : ১৯৪৫) হে লোক সকল, প্রত্যেক পরিবারের উপর কুরবানী দেয়া অপরিহার্য। (ইবনে মাজাহ : ৩১২৫, হাদীসটি হাসান)
৩. কুরবানীদাতা কুরবানীর পশুর জবাই-এর মাধ্যমে ইবরাহীম (আ ও শেষ নবী (সাঃ) এর সুন্নাতের বাস্তবায়ন করতে পারে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা'আলা বলেন : ‘‘আর আমরা মহা কুরবানীর বিনিময়ে তাকে মুক্ত করেছি।’’ (আস-সাফফাত : ১০৭) এ আয়াতের তাফসীরে তাফসীর বিশারদগণ উল্লেখ করেছেন, সকল কুরবানী এ মহাকুরবানীর অন্তর্ভুক্ত। এ জন্য রাসূল (সাঃ) যায়েদ ইবনে আরকাম বর্ণিত হাদীসেও কুরবানীকে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম-এর সুন্নাত হিসাবে উল্লেখ করেছেন।
৪. কুরবানীর রক্ত প্রবাহিত করার মাধ্যমে আল্লাহ রাববুল আলামীনের নৈকট্য অর্জিত হয়। আল্লাহ তা'য়ালা বলেন- ‘‘আল্লাহর নিকট পৌঁছায় না তাদের গোশত এবং রক্ত পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া। এভাবে তিনি এগুলোকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যাতে তোমরা আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা কর এজন্য যে, তিনি তোমাদের পথ-প্রদর্শন করেছেন। সুতরাং আপনি সুসংবাদ দিন সৎকর্ম পরায়ণদেরকে।’’ (হজ্ব : ৩৭)
৫. কুরবানী আল্লাহতা'য়ালার অন্যতম নিদর্শন। সূরা হজ্বের ৩৬নং আয়াতে আল্লাহ বলেন- অর্থাৎ কুরবানীর উটসমূহকে আমরা তোমাদের জন্য আল্লাহর নিদর্শনের অন্যতম করেছি। তোমাদের জন্য যাতে কল্যাণ রয়েছে। সুতরাং সারিবদ্ধভাবে দন্ডায়মান অবস্থা এগুলোর উপর তোমরা আল্লাহর নাম স্মরণ করো আর যখন কাত হয়ে পড়ে যায় তখন সেগুলো হতে খাও। আর আহার করাও ধৈর্যশীল অভাবী ও ভিক্ষাকারী অভাবগ্রস্তকে এভাবে আমি ওদেরকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছি, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। এ আয়াতে কুরবানীর ফযিলত সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরা হয়েছে এবং কুরবানীর পশুকে আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।
৬. পশু দ্বারা কুরবানীর মাধ্যমে আল্লাহর জিকির বা স্মরণের বাস্তবায়ন করে থাকেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কুরআনে ইরশাদ হয়েছে : অর্থাৎ আমি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য কুরবানীর নিয়ম করে দিয়েছি। তিনি তাদেরকে জীবনোপকরণ স্বরপ যে সকল চতুষ্পদ জন্তু দিয়েছেন, সেগুলোর উপর যেন তারা আল্লাহর নাম স্মরণ করে। (হজ্জ : ৩৪) প্রকৃতপক্ষে পশু কুরবানীর মাধ্যমে আল্লাহর স্মরণকে বাস্তবায়নের এ সুমহান নিদর্শন বাস্তবায়িত হয়ে থাকে।
৭. কুরবানীর প্রবাহিত রক্ত আল্লাহ তা'আলার কাছে দুটি কুচকুচে কালো ছাগলের চেয়ে প্রিয় ও পবিত্র। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে আবু হুরায়রা রাদি আল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন : অর্থাৎ কুরবানীর প্রবাহিত রক্ত আল্লাহ তা'আলার কাছে দুটি কুচকুচে কালো ছাগলের চেয়ে অধিক প্রিয়। (সুনান বায়হাকী)
৮. কুরবানীর দিন আল্লাহ তা'আলার নিকট সবচেয়ে প্রিয় আমল হচ্ছে কুরবানীর পশুর রক্ত প্রবাহিত করা। আয়েশা রাদি আল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, কুরবানীর দিনের আমলের মধ্যে ব্যক্তির সেই আমলই আল্লাহ তা'আলার কাছে প্রিয় যাতে সে পশুর রক্ত প্রবাহিত করে। (হাদীসটি হাকেম তার মুসতাদরাকে বর্ণনা করেছেন এবং সনদের দিক থেকে সহীহ বলেছেন)
৯. হাফেয ইবনে আব্দুল বার (রহঃ) বলেন, কুরবানী করা আমাদের কাছে সাধারণ দান খয়রাতের চেয়ে উত্তম। কেননা, কুরবানী সালাতুল ঈদের মত সকল প্রকার দান খয়রাত থেকে বিশেষ মহিমান্বিত ও বিশেষিত। এ প্রসঙ্গে শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যা ‘মাজমু' ফাতাওয়াহ’’ ৮/৪২৫ এ উল্লেখ করেছেন যে, সাধারণ দান-খয়রাত থেকে কুরবানী, আক্বীকা ও হজ্বের হাদীকে খুব বিশেষিত করা হয়েছে। সুতরাং কারো নিকট যদি সম্পদ থাকে এবং সে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করতে চায় তাহলে সে আল্লাহর উদ্দেশ্যে কুরবানী করার মাধ্যমে নৈকট্য অর্জনের চেষ্টা করবে।
১০. প্রত্যেক সামর্থ্যবান ব্যক্তি কুরবানী করার মাধ্যমে ঈদের প্রকৃত দাবি পূরণ করে থাকেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, সামর্থ্য থাকতে যে কুরবানী করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটেও না আসে। (সুনান ইবনে মাজাহ)
১১. ইসলামে হজ্ব একটি গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক ইবাদত। হজ্বের সাথে কুরবানীর অনেক বিষয় জড়িত। হাজীগণ এ দিনে তাদের পশু যবেহ করে হজ্বকে পূর্ণ করেন। এজন্য এর নাম হলো ইয়াওমুল হজ্জিল আকবার বা শ্রেষ্ঠ হজ্বের দিন। হাদীসে এসেছে : ইবনে উমার রাদি আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরবানীর দিন জিজ্ঞেস করলেন-- এটা কোন দিন? সাহাবাগণ উত্তর দিলেন এটা ইয়াওমুন্নাহর বা কুরবানীর দিন। রাসূলে কারীম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন : এটা হলো ইয়াওমুল হজ্জিল আকবার বা শ্রেষ্ঠ হজ্বের দিন। (সুনান আবু দাউদ)
১২. কুরবানীর মাধ্যমে সামাজিক ও পারিবারিক ঐক্য প্রতিষ্ঠা করার বিশেষ সুযোগ সৃষ্টি হয়। সমাজে আল্লাহর বিধান প্রতিষ্ঠার জন্য ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার প্রেরণা তৈরি হয়। আল্লাহ তা'আলা বলেন : তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে ঐক্যবদ্ধভাবে আকঁড়িয়েয়ে ধর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হইও না। (আলে ইমরান : ১০৩)
১৩. কুরবানীতে গরীব মানুষের অনেক উপকার হয়। যারা বছরে একবারও গোশত খেতে পারে না, তারাও গোশত খাবার সুযোগ পায়। দারিদ্র্যবিমোচনেও এর গুরুত্ব রয়েছে। কুরবানীর চামড়ার টাকা গরীবের মাঝে বণ্টন করার মাধ্যমে গরীব-দুঃখী মানুষের প্রয়োজন মেটাতে সম্ভব। অপরদিকে কুরবানীর চামড়া অর্থনীতিতে একটি বিরাট ভূমিকা পালন করে থাকে।
ঈদের করণীয় বিষয়গুলো হলঃ
ঈদ আমাদের জন্য এক বিরাট নিয়ামত। কিন্তু আমরা এ দিনকে নিয়ামত হিসেবে গ্রহণ করি না। এ দিনে অনেক কাজ আছে যার মাধ্যমে আমরা আল্লাহ তা'আলার নিকটবর্তী হতে পারি এবং ঈদ উদযাপনও ইবাদতে পরিণত হতে পারে।
১. ঈদের দিন গোসল করা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা অর্জন করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা : কেননা এ দিনে সকল মানুষ সালাত আদায়ের জন্য মিলিত হয়। ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত যে, তিনি ঈদুল-ফিতরের দিনে ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে গোসল করতেন এবং তিনি দু'ঈদের দিনে সর্বোত্তম পোশাক পরিধান করতেন। আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (রাঃ) আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসূল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘আল্লাহ রাববুল আলামিন তাঁর বান্দার উপর তাঁর প্রদত্ত নেয়ামতের প্রকাশ দেখতে পছন্দ করেন।' (সহীহ আল-জামে)
২. পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়া : অধিকাংশ উলামায়ে কেরাম পায়ে হেঁটে ঈদগাহে যাওয়ার আমল করেন।
৩. এক পথে যাওয়া অন্য পথে আসা : যে পথে ঈদগাহে যাবে সে পথে না ফিরে অন্য পথে ফিরে আসবে। জাবের (রাঃ) আল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম (সাঃ) ঈদের দিন পথ বিপরীত করতেন। (সহীহ বুখারি)। অর্থাৎ যে পথে ঈদগাহে যেতেন সে পথে ফিরে না এসে অন্য পথে আসতেন। এটা এ জন্য যে উভয় পথের লোকদেরকে সালাম দেয়া ও ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা যায়। (যাদুল-মায়াদ)
৪. ঈদের সালাত আদায় করা : দুই রাকাত ঈদের সালাত আদায় করা ওয়াজিব। কোন অবস্থায় ঈদের সালাত আদায়ে অলসতা করা যাবে না। শিশু-সন্তানদের ঈদের সালাতে নিয়ে যাওয়া ও ব্যবস্থা থাকলে মেয়েদের যেতে উৎসাহিত করা। মনে রাখতে হবে, ঈদের সালাত ইসলামের একটি শিআ'র তথা মহান নিদর্শন। শাহ ওয়ালী উল্লাহ দেহলভী (রহঃ) বলেছেন : ‘প্রত্যেক জাতির এমন কিছু উৎস থাকে যাতে সকলে একত্র হয়ে নিজেদের শান-শওকত সংখ্যাধিক্য প্রদর্শন করে। ঈদ মুসলিম জাতির এমনি একটি উৎসব। হাদীসে এসেছে : উমার রাদি আল্লাহু আনহু বলেন, জুমআর সালাত দু'রাকাত, ঈদুল ফিতরের সালাত দু'রাকাত, ঈদুল আজহার সালাত দু'রাকাত ও সফর অবস্থায় সালাত হলো দু'রাকাত। (সুনান আননাসায়ি)
৫. ঈদের খুতবা শ্রবণ করা : আব্দুল্লাহ ইবন সায়েব (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নবী করীম (সাঃ) এর সাথে ঈদ উদযাপন করলাম। যখন তিনি ঈদের সালাত শেষ করলেন, তখন বললেন, আমরা এখন খুতবা দেব। যার ভাল লাগে সে যেন বসে আর যে চলে যেতে চায় সে যেতে পারে। (সুনান আবু দাউদ)
৬. দোয়া ও ইস্তগফার করা : মুয়ারিরক আলঈজলী রহ. বলেন, ঈদের এই দিনে আল্লাহ তা'য়ালা একদল লোককে এভাবে ক্ষমা করে দিবেন, যেমন তাদের মা তাদের নিাপ জন্ম দিয়েছিল। নবী কারীম (সাঃ) ইরশাদ করেন, তারা যেন এই দিনে মুসলিমদের জামায়াতে দোয়ায় অংশগ্রহণ করে। (লাতাইফুল মা'আরেফ)
৭. তাকবীর দেয়া : ঈদুল আজহা এর অন্যতম করণীয় হচ্ছে এ দিনের তাকবীর। ইবনে আবি শাইবা তার মুসান্নাফে (২/১৪১) উত্তম সনদে বর্ণনা করেন আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) তাকবীর বলতেন, ‘আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াআল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার ওয়া লিল্লাহিল হামদ'। ঈদেও দিনে আওয়াজ করে তাকবীর বলার প্রতি সালফে সালেহীন বিশেষভাবে গুরুত্ব দিতেন। এ দিনে বেশি বেশি তাকবীর বলাকে ইমাম শাফেয়ী (রহঃ) সুন্নাত হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
৮. কুরবানী করা : ঈদের সালাত আদায়ের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো কুরবানী করা। হাদীসে এসেছে : আল-বারা ইবনে আযেব রাদি আল্লাহ আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন : আমি শুনেছি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুতবাতে বলেছেন : এ দিনটি আমরা শুরু করব সালাত দিয়ে। অতঃপর সালাত থেকে ফিরে আমরা কুরবানী করব। যে এমন আমল করবে সে আমাদের আদর্শ সঠিকভাবে অনুসরণ করল। আর যে এর পূর্বে যবেহ করল সে তার পরিবারবর্গের জন্য গোশতের ব্যবস্থা করল। কুরবানীর কিছু আদায় হল না। (সুনান বায়হাকী)। সামর্থ্যবান প্রত্যেককে কুরবানী করতে হবে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন : ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাক সত্ত্বেও কোরবানী করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহের ধারে না আসে। (মুসনাদ আহমাদ, ইবন মাজাহ-৩১২৩ হাদীসটি হাসান)
৯. ঈদের দিনে খাবার গ্রহণ : ঈদুল আজহার দিন ঈদের সালাতের পূর্বে কিছু না খেয়ে সালাত আদায়ের পর কুরবানীর গোশত খাওয়া সুন্নাত। বুরাইদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সাঃ) ঈদুল ফিতরের দিনে না খেয়ে বের হতেন না, আর ঈদুল আজহার দিনে ঈদের সালাতের পূর্বে খেতেন না। সালাত থেকে ফিরে এসে কুরবানীর গোশত খেতেন। (মুসনাদ আহমাদ)
১০. ঈদে শুভেচ্ছা বিনিময়ের ভাষা : ঈদ উপলক্ষে পরস্পরকে শুভেচ্ছা জানানো শরিয়ত অনুমোদিত একটি বিষয়। বিভিন্ন বাক্য দ্বারা এ শুভেচ্ছা বিনিময় করা যায়। যেমন : (ক) হাফেয ইবনে হাজার রহ, বলেছেন, জুবায়ের ইবনে নুফাইর থেকে সহীহ সূত্রে বর্ণিত যে, রাসূলে কারীম (সাঃ) এর সাহাবায়ে কেরাম ঈদের দিন সাক্ষাৎকালে একে অপরকে বলতেন : ‘তাকাববালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকা' অর্থ-আল্লা তা'আলা আমাদের ও আপনার ভাল কাজগুলো কবুল করুন'। (ফাত্হুল বারী) (খ) ‘ঈদ মুবারক' বলে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা যায়। (গ) ‘ওয়া কুল্লু আ'মীন ওয়া আনতুম বিখাইর' অর্থ-প্রতি বছরই আপনারা ভাল থাকুন : বলা যায়।
১১. আত্মীয়-স্বজনের খোঁজ খবর নেয়া ও তাদের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া : সদাচরণ পাওয়ার দিক দিয়ে আত্মীয়-স্বজনের মাঝে সবচেয়ে বেশি হকদার হলো মাতা-পিতা। তারপর পর্যায়ক্রমে অন্যান্য আত্মীয়-স্বজন। আত্মীয়-স্বজনের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ ও তাদের সাথে সম্পর্ক উন্নয়ন এবং সকল প্রকার মনোমালিন্য দূর করার জন্য ঈদ হলো একটা বিরাট সুযোগ।
১২. মুসাফাহা ও মুআনাকা করা : আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, একদা হাসান ইবনে আলী (রাঃ) আল্লাহু নবী কারীম (সাঃ) এর নিকট আসলেন, তিনি তখন তাকে জড়িয়ে ধরলেন এবং মুআনাকা (কোলাকুলি) করলেন। (শারহুস সুন্নাহ) ঈদের দিন মু'আনাকা করা প্রসঙ্গে শাইখ বিন বায (রহ.) বলেন, এ দিন মু'আনাকা করতে কোন অসুবিধা নেই।
কুরবানীর ঈদে বর্জনীয় বিষয়গুলোঃ
১. কুরবানীর ঈদের সালাত আদায়ে বিলম্ব করা : এটি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাতের পরিপন্থী। কোথাও কোথাও ১১/১২টা পর্যন্ত ঈদের সালাত বিলম্বে আদায় করা হয়। এটি সঠিক নয়।
২. সালাতের আগে কুরবানী: করাতাড়াতাড়ি কুরবানীর গোশত খাওয়ার জন্য ঈদের সালাতের আগে কুরবানী করা। এ প্রসঙ্গে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন : অর্থাৎ সে তার পরিবারবর্গের জন্য গোশতের ব্যবস্থা করলো, কুরবানীর কিছু আদায় হলো না। (সহীহ বুখারী)
৩. ঈদের সালাতের আগে দীর্ঘ বক্তব্য, দো'য়া, মোনাজাত ইত্যাদি করা : বারা ইবন আল আযেব রাদি আল্লাহু আনহু বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি, আমাদের এই দিনে যা দিয়ে আমরা শুরু করবো তা হচ্ছে ঈদের সালাত। (সহীহ বুখারী : ৯০৮)
৪. গোশত বণ্টন নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ করা : শরীকদের পরস্পরের মাঝে কুরবানীর গোশত বণ্টন নিয়ে ঝগড়া-বিবাদ করা। মূলতঃ কুরবানী যবেহ করা হয়ে থাকে আল্লাহর জন্য। এর প্রকৃত উদ্দেশ্য আল্লাহর সন্তুষ্টি। গোশত খাওযার উদ্দেশ্য নিয়ে কুরবানী করা উচিত নয়। তাই গোশত নিয়ে শরীকরা পরস্পর বাড়াবাড়ি করা গর্হিত ও কুরবানীর প্রকৃত উদ্দেশ্য পরিপন্থী কাজ।
৫. ঈদের দিন সিয়াম পালন করা : সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত আছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিনে রোজা রাখতে নিষেধ করেন।
৬. বিজাতীয় আচরণ প্রদর্শন করা : আবদুল্লাহ বিন আমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অন্য জাতির সাথে সাদৃশ্য রাখবে সে তাদের দলভুক্ত বলে গণ্য হবে। (আবু দাউদ)
৭. পুরুষ কর্তৃক নারীর বেশ ধারণ ও নারী কর্তৃক পুরুষের বেশ ধারণ : ইবনে আববাস রাদি আল্লাহু থেকে বর্ণিত, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পুরুষের বেশ ধারণকারী নারী ও নারীর বেশ ধারণকারী পুরুষকে অভিসম্পাত করেছেন। (সুনান আবু দাউদ)
৮. নারীদের খোলামেলা অবস্থায় রাস্তা-ঘাটে বের হওয়া : নারীগণ পর্দা পালন করে বের হবে। আবু হুরায়রা রাদি আল্লাহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, জাহান্নামবাসী দু' ধরনের লোক যাদের আমি এখনও দেখতে পাইনি। একদল লোক যাদের সাথে গরুর লেজের ন্যায় চাবুক থাকবে, তা দিয়ে তারা লোকজনকে প্রহার করবে। আর একদল এমন নারী যারা পোশাক পরিধান করেও উলঙ্গ মানুষের মতো হবে, অন্যদের আকর্ষণ করবে ও অন্যরা তাদের প্রতি আকৃষ্ট হবে, তাদের মাথার চুলের অবস্থা উটের হেলে পড়া কুঁজের ন্যায়। ওরা জান্নাতে প্রবেশ করবে না, এমনকি তার সুগন্ধিও পাবে না, যদিও তার সুগন্ধি বহুদূর থেকে পাওয়া যায়। (সহীহ মুসলিম)
৯. গান-বাজনা করা, অশ্লীল সিনেমা ও নাটক দেখা : রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমার উম্মতের মাঝে এমন একটা দল পাওয়া যাবে যারা ব্যভিচার, রেশমি পোশাক, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল (বৈধ) মনে করবে। (সহীহ বুখারী)
১০. অবাধে নারীদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করা : উকবাহ ইবনে আমের রাদি আল্লাহু থেকে বর্ণিত, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : তোমরা মহিলাদের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ করা থেকে নিজেদের বাঁচিয়ে রাখবে। মদিনার আনসারদের মধ্য থেকে এক লোক প্রশ্ন করলো হে আল্লাহর রাসূল! দেবর-ভাসুর প্রমুখ আত্মীয়দের সাথে দেখা-সাক্ষাৎ সম্পর্কে আপনার অভিমত কি? তিনি উত্তরে বললেন, এ ধরনের আত্মীয়-স্বজন তো মৃত্যু। (সহীহ মুসলিম)
১১. অপচয় ও অপব্যয় করা : আল্লাহতা'আলা বলেন, ‘‘আর তোমরা কোনভাবেই অপব্যয় করো না, নিশ্চয়ই অপব্যয়কারী শয়তানের ভাই’’। (বনী ইসরাঈল : ২৬-২৭)। ‘এবং তোমরা খাও, পান করো কিন্তু অপচয় করো না।' (আরাফ : ৩১)।
১২. ঈদের দিনকে কবর যিয়ারতের জন্য নির্দিষ্ট করা : অনেকে এ দিনকে কবর যিয়ারতের জন্য নির্দিষ্ট করে থাকেন, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরাম থেকে সাব্যস্ত হয়নি। অতএব ঈদের দিনকে কবর যিয়ারতের জন্য নির্দিষ্ট করা যাবে না।
১৩. জুয়া খেলা ও আতশবাজি করা : এগুলো শরীয়াত বিরোধী কাজ। আল্লাহতা'আলা বলেন, হে মুমিনগণ, নিশ্চয় মদ, জুয়া, প্রতিমা-বেদী ও ভাগ্যনির্ধারক তীরসমূহ তো নাপাক শয়তানের কর্ম। সুতরাং তোমরা তা পরিহার কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। (আলমায়িদাহ-৯০)
১৪. ঈদের সালাত আদায় না করে কেবল আনন্দ ফূর্তি করা : অনেকে ঈদের আনন্দে মাতওয়ারা হয়ে নতুন জামা-কাপড় পরিধান, সেমাই, ফিরনী ইত্যাদি নিয়ে এতই ব্যস্ত হয়ে পড়েন যে, ঈদের সালাত আদায় করার কথা ভুলে যান। অথচ এই দিনে ঈদের সালাত আদায় করা হচ্ছে মূল করণীয়।
পরিশেষে বলা যায়, কোরবানী একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত, যা আল্লাহর পক্ষ থেকে এক কঠিন পরীক্ষা। এটা একমাত্র তার সন্তুষ্টির জন্যই করতে হয়। এতে সামান্যতমও ত্রুটি করা যাবে না। এর মাধ্যমে বান্দা আল্লাহর সাথে নিবিড় সম্পর্ক করতে পারে। সে বিভিন্ন হিংসা-বিদ্বেষ, লৌকিকতা থেকেও মুক্তি পায়। আল্লাহ পাক আমাদেরকে হযরত ইবরাহীম (আ এর মত দৃঢ় মনে কোরবানী করার তাওফিক দান করুক। আমিন।
কুরবানীর মাসায়েল
কুরবানী একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এটি আদায় করা ওয়াজিব। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি এই ইবাদত পালন করে না তার ব্যাপারে হাদীস শরীফে এসেছে,‘যার কুরবানীর সামর্থ্য রয়েছে কিন্তু কুরবানী করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে।’-মুস্তাদরাকে হাকেম, হাদীস : ৩৫১৯; আত্তারগীব ওয়াত্তারহীব ২/১৫৫
ইবাদতের মূলকথা হল আল্লাহ তাআলার আনুগত্য এবং তাঁর সন্তুষ্টি অর্জন। তাই যেকোনো ইবাদতের পূর্ণতার জন্য দুটি বিষয় জরুরি। ইখলাস তথা একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পালন করা এবং শরীয়তের নির্দেশনা মোতাবেক মাসায়েল অনুযায়ী সম্পাদন করা। এ উদ্দেশ্যে এখানে কুরবানীর কিছু জরুরি মাসায়েল উল্লেখ হল।
✔ কার উপর কুরবানী ওয়াজিব
মাসআলা : ১. প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থমস্তিষ্ক সম্পন্ন প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, যে ১০ যিলহজ্ব ফজর থেকে ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। টাকা-পয়সা, সোনা-রূপা, অলঙ্কার, বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজন আসে না এমন জমি, প্রয়োজন অতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য ও অপ্রয়োজনীয় সকল আসবাবপত্র কুরবানীর নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য।
আর নিসাব হল স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত (৭.৫) ভরি, রূপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি, টাকা-পয়সা ও অন্যান্য বস্ত্তর ক্ষেত্রে নিসাব হল এর মূল্য সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হওয়া। আর সোনা বা রূপা কিংবা টাকা-পয়সা এগুলোর কোনো একটি যদি পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না থাকে কিন্তু প্রয়োজন অতিরিক্ত একাধিক বস্ত্ত মিলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হয়ে যায় তাহলেও তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব।-আলমুহীতুল বুরহানী ৮/৪৫৫; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ১৭/৪০৫
✔ নেসাবের মেয়াদ
মাসআলা ২. কুরবানীর নেসাব পুরো বছর থাকা জরুরি নয়; বরং কুরবানীর তিন দিনের মধ্যে যে কোনো দিন থাকলেই কুরবানী ওয়াজিব হবে।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩১২
✔ কুরবানীর সময়
মাসআলা : ৩. মোট তিনদিন কুরবানী করা যায়। যিলহজ্বের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ সূর্যাস্ত পর্যন্ত। তবে সম্ভব হলে যিলহজ্বের ১০ তারিখেই কুরবানী করা উত্তম। -মুয়াত্তা মালেক ১৮৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৮, ২৩, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৫
✔ নাবালেগের কুরবানী
মাসআলা : ৪. নাবালেগ শিশু-কিশোর তদ্রূপ যে সুস্থমস্তিষ্কসম্পন্ন নয়, নেসাবের মালিক হলেও তাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। অবশ্য তার অভিভাবক নিজ সম্পদ দ্বারা তাদের পক্ষে কুরবানী করলে তা সহীহ হবে।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৬
✔ মুসাফিরের জন্য কুরবানী
মাসআলা : ৫. যে ব্যক্তি কুরবানীর দিনগুলোতে মুসাফির থাকবে (অর্থাৎ ৪৮ মাইল বা প্রায় ৭৮ কিলোমিটার দূরে যাওয়ার নিয়তে নিজ এলাকা ত্যাগ করেছে) তার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়। -ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৪৪, বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৫, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৫
✔ নাবালেগের পক্ষ থেকে কুরবানী
মাসআলা : ৬. নাবালেগের পক্ষ থেকে কুরবানী দেওয়া অভিভাবকের উপর ওয়াজিব নয়; বরং মুস্তাহাব।-রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৫; ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৪৫
✔ দরিদ্র ব্যক্তির কুরবানীর হুকুম
মাসআলা : ৭. দরিদ্র ব্যক্তির উপর কুরবানী করা ওয়াজিব নয়; কিন্তু সে যদি কুরবানীর নিয়তে কোনো পশু কিনে তাহলে তা কুরবানী করা ওয়াজিব হয়ে যায়। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯২
✔ কুরবানী করতে না পারলে
মাসআলা : ৮. কেউ যদি কুরবানীর দিনগুলোতে ওয়াজিব কুরবানী দিতে না পারে তাহলে কুরবানীর পশু ক্রয় না করে থাকলে তার উপর কুরবানীর উপযুক্ত একটি ছাগলের মূল্য সদকা করা ওয়াজিব। আর যদি পশু ক্রয় করে ছিল, কিন্তু কোনো কারণে কুরবানী দেওয়া হয়নি তাহলে ঐ পশু জীবিত সদকা করে দিবে।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৪, ফাতাওয়া কাযীখান ৩/৩৪৫
✔ প্রথম দিন কখন থেকে কুরবানী করা যাবে
মাসআলা : ৯. যেসব এলাকার লোকদের উপর জুমা ও ঈদের নামায ওয়াজিব তাদের জন্য ঈদের নামাযের আগে কুরবানী করা জায়েয নয়। অবশ্য বৃষ্টিবাদল বা অন্য কোনো ওজরে যদি প্রথম দিন ঈদের নামায না হয় তাহলে ঈদের নামাযের সময় অতিক্রান্ত হওয়ার পর প্রথম দিনেও কুরবানী করা জায়েয।-সহীহ বুখারী ২/৮৩২, কাযীখান ৩/৩৪৪, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৮
✔ রাতে কুরবানী করা
মাসআলা : ১০. ১০ ও ১১ তারিখ দিবাগত রাতেও কুরবানী করা জায়েয। তবে দিনে কুরবানী করাই ভালো। -মুসনাদে আহমাদ, হাদীস : ১৪৯২৭; মাজমাউয যাওয়াইদ ৪/২২, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২০, কাযীখান ৩/৩৪৫, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৩
✔ কুরবানীর উদ্দেশ্যে ক্রয়কৃত পশু সময়ের পর যবাই করলে
মাসআলা : ১১. কুরবানীর দিনগুলোতে যদি জবাই করতে না পারে তাহলে খরিদকৃত পশুই সদকা করে দিতে হবে। তবে যদি (সময়ের পরে) জবাই করে ফেলে তাহলে পুরো গোশত সদকা করে দিতে হবে। এক্ষেত্রে গোশতের মূল্য যদি জীবিত পশুর চেয়ে কমে যায় তাহলে যে পরিমাণ মূল্য হ্রাস পেল তা-ও সদকা করতে হবে।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০২, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২০-৩২১
✔ কোন কোন পশু দ্বারা কুরবানী করা যাবে
মাসআলা : ১২. উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয। এসব গৃহপালিত পশু ছাড়া অন্যান্য পশু যেমন হরিণ, বন্যগরু ইত্যাদি দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়। -কাযীখান ৩/৩৪৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫
✔ নর ও মাদা পশুর কুরবানী
মাসআলা : ১৩. যেসব পশু কুরবানী করা জায়েয সেগুলোর নর-মাদা দুটোই কুরবানী করা যায়। -কাযীখান ৩/৩৪৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫
✔ কুরবানীর পশুর বয়সসীমা
মাসআলা : ১৪. উট কমপক্ষে ৫ বছরের হতে হবে। গরু ও মহিষ কমপক্ষে ২ বছরের হতে হবে। আর ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা কমপক্ষে ১ বছরের হতে হবে। তবে ভেড়া ও দুম্বা যদি ১ বছরের কিছু কমও হয়, কিন্তু এমন হৃষ্টপুষ্ট হয় যে, দেখতে ১ বছরের মতো মনে হয় তাহলে তা দ্বারাও কুরবানী করা জায়েয। অবশ্য এক্ষেত্রে কমপক্ষে ৬ মাস বয়সের হতে হবে।
উল্লেখ্য, ছাগলের বয়স ১ বছরের কম হলে কোনো অবস্থাতেই তা দ্বারা কুরবানী জায়েয হবে না। -কাযীখান ৩/৩৪৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৫-২০৬
✔ এক পশুতে শরীকের সংখ্যা
মাসআলা : ১৫. একটি ছাগল, ভেড়া বা দুম্বা দ্বারা শুধু একজনই কুরবানী দিতে পারবে। এমন একটি পশু কয়েকজন মিলে কুরবানী করলে কারোটাই সহীহ হবে না। আর উট, গরু, মহিষে সর্বোচ্চ সাত জন শরীক হতে পারবে। সাতের অধিক শরীক হলে কারো কুরবানী সহীহ হবে না। -সহীহ মুসলিম ১৩১৮, মুয়াত্তা মালেক ১/৩১৯, কাযীখান ৩/৩৪৯, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭-২০৮
✔ সাত শরীকের কুরবানী
মাসআলা : ১৬. সাতজনে মিলে কুরবানী করলে সবার অংশ সমান হতে হবে। কারো অংশ এক সপ্তমাংশের কম হতে পারবে না। যেমন কারো আধা ভাগ, কারো দেড় ভাগ। এমন হলে কোনো শরীকের কুরবানীই সহীহ হবে না। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭
মাসআলা : ১৭. উট, গরু, মহিষ সাত ভাগে এবং সাতের কমে যেকোনো সংখ্যা যেমন দুই, তিন, চার, পাঁচ ও ছয় ভাগে কুরবানী করা জায়েয। -সহীহ মুসলিম ১৩১৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৭
✔ কোনো অংশীদারের গলদ নিয়ত হলে
মাসআলা : ১৮. যদি কেউ আল্লাহ তাআলার হুকুম পালনের উদ্দেশ্যে কুরবানী না করে শুধু গোশত খাওয়ার নিয়তে কুরবানী করে তাহলে তার কুরবানী সহীহ হবে না। তাকে অংশীদার বানালে শরীকদের কারো কুরবানী হবে না। তাই অত্যন্ত সতর্কতার সাথে শরীক নির্বাচন করতে হবে। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৮, কাযীখান ৩/৩৪৯
✔ কুরবানীর পশুতে আকীকার অংশ
মাসআলা : ১৯. কুরবানীর গরু, মহিষ ও উটে আকীকার নিয়তে শরীক হতে পারবে। এতে কুরবানী ও আকীকা দুটোই সহীহ হবে।-তাহতাবী আলাদ্দুর ৪/১৬৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩৬২
মাসআলা : ২০. শরীকদের কারো পুরো বা অধিকাংশ উপার্জন যদি হারাম হয় তাহলে কারো কুরবানী সহীহ হবে না।
মাসআলা : ২১. যদি কেউ গরু, মহিষ বা উট একা কুরবানী দেওয়ার নিয়তে কিনে আর সে ধনী হয় তাহলে ইচ্ছা করলে অন্যকে শরীক করতে পারবে। তবে এক্ষেত্রে একা কুরবানী করাই শ্রেয়। শরীক করলে সে টাকা সদকা করে দেওয়া উত্তম। আর যদি ওই ব্যক্তি এমন গরীব হয়, যার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব নয়, তাহলে সে অন্যকে শরীক করতে পারবে না। এমন গরীব ব্যক্তি যদি কাউকে শরীক করতে চায় তাহলে পশু ক্রয়ের সময়ই নিয়ত করে নিবে।-কাযীখান ৩/৩৫০-৩৫১, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১০
✔ কুরবানীর উত্তম পশু
মাসআলা : ২২. কুরবানীর পশু হৃষ্টপুষ্ট হওয়া উত্তম।-মুসনাদে আহমদ ৬/১৩৬, আলমগীরী ৫/৩০০, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৩
✔ খোড়া পশুর কুরবানী
মাসআলা : ২৩. যে পশু তিন পায়ে চলে, এক পা মাটিতে রাখতে পারে না বা ভর করতে পারে না এমন পশুর কুরবানী জায়েয নয়। -জামে তিরমিযী ১/২৭৫, সুনানে আবু দাউদ ৩৮৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৪, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৩, আলমগীরী ৫/২৯৭
✔ রুগ্ন ও দুর্বল পশুর কুরবানী
মাসআলা : ২৪. এমন শুকনো দুর্বল পশু, যা জবাইয়ের স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে না তা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়। -জামে তিরমিযী ১/২৭৫, আলমগীরী ৫/২৯৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৪
✔ দাঁত নেই এমন পশুর কুরবানী
মাসআলা : ২৫. যে পশুর একটি দাঁতও নেই বা এত বেশি দাঁত পড়ে গেছে যে, ঘাস বা খাদ্য চিবাতে পারে না এমন পশু দ্বারাও কুরবানী করা জায়েয নয়। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৫, আলমগীরী ৫/২৯৮
✔ যে পশুর শিং ভেঙ্গে বা ফেটে গেছে
মাসআলা : ২৬. যে পশুর শিং একেবারে গোড়া থেকে ভেঙ্গে গেছে, যে কারণে
মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সে পশুর কুরবানী জায়েয নয়। পক্ষান্তরে যে পশুর অর্ধেক শিং বা কিছু শিং ফেটে বা ভেঙ্গে গেছে বা শিং একেবারে উঠেইনি সে পশু কুরবানী করা জায়েয। -জামে তিরমিযী ১/২৭৬, সুনানে আবু দাউদ ৩৮৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৪, আলমগীরী ৫/২৯৭
✔ কান বা লেজ কাটা পশুর কুরবানী
মাসআলা : ২৭. যে পশুর লেজ বা কোনো কান অর্ধেক বা তারও বেশি কাটা সে পশুর কুরবানী জায়েয নয়। আর যদি অর্ধেকের বেশি থাকে তাহলে তার কুরবানী জায়েয। তবে জন্মগতভাবেই যদি কান ছোট হয় তাহলে অসুবিধা নেই। -জামে তিরমিযী ১/২৭৫, মুসনাদে আহমদ ১/৬১০, ইলাউস সুনান ১৭/২৩৮, কাযীখান ৩/৩৫২, আলমগীরী ৫/২৯৭-২৯৮
✔ অন্ধ পশুর কুরবানী
মাসআলা : ২৮. যে পশুর দুটি চোখই অন্ধ বা এক চোখ পুরো নষ্ট সে পশু কুরবানী করা জায়েয নয়। -জামে তিরমিযী ১/২৭৫, কাযীখান ৩/৩৫২, আলমগীরী ২৯৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৪
✔ নতুন পশু ক্রয়ের পর হারানোটা পাওয়া গেলে
মাসআলা : ২৯. কুরবানীর পশু হারিয়ে যাওয়ার পরে যদি আরেকটি কেনা হয় এবং পরে হারানোটিও পাওয়া যায় তাহলে কুরবানীদাতা গরীব হলে (যার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়) দুটি পশুই কুরবানী করা ওয়াজিব। আর ধনী হলে কোনো একটি কুরবানী করলেই হবে। তবে দুটি কুরবানী করাই উত্তম। -সুনানে বায়হাকী ৫/২৪৪, ইলাউস সুনান ১৭/২৮০, বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৯, কাযীখান ৩/৩৪৭
✔ গর্ভবতী পশুর কুরবানী
মাসআলা : ৩০. গর্ভবতী পশু কুরবানী করা জায়েয। জবাইয়ের পর যদি বাচ্চা জীবিত পাওয়া যায় তাহলে সেটাও জবাই করতে হবে। তবে প্রসবের সময় আসন্ন হলে সে পশু কুরবানী করা মাকরূহ। -কাযীখান ৩/৩৫০
✔ পশু কেনার পর দোষ দেখা দিলে
মাসআলা : ৩১. কুরবানীর নিয়তে ভালো পশু কেনার পর যদি তাতে এমন কোনো দোষ দেখা দেয় যে কারণে কুরবানী জায়েয হয় না তাহলে ওই পশুর কুরবানী সহীহ হবে না। এর স্থলে আরেকটি পশু কুরবানী করতে হবে। তবে ক্রেতা গরীব হলে ত্রুটিযুক্ত পশু দ্বারাই কুরবানী করতে পারবে। -খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩১৯, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬, ফাতাওয়া নাওয়াযেল ২৩৯, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৫
✔ পশুর বয়সের ব্যাপারে বিক্রেতার কথা
মাসআলা : ৩২. যদি বিক্রেতা কুরবানীর পশুর বয়স পূর্ণ হয়েছে বলে স্বীকার করে আর পশুর শরীরের অবস্থা দেখেও তাই মনে হয় তাহলে বিক্রেতার কথার উপর নির্ভর করে পশু কেনা এবং তা দ্বারা কুরবানী করা যাবে। -আহকামে ঈদুল আযহা, মুফতী মুহাম্মাদ শফী রহ. ৫
✔ বন্ধ্যা পশুর কুরবানী
মাসআলা : ৩৩. বন্ধ্যা পশুর কুরবানী জায়েয। -রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৫
✔ নিজের কুরবানীর পশু নিজে জবাই করা
মাসআলা : ৩৪. কুরবানীর পশু নিজে জবাই করা উত্তম। নিজে না পারলে অন্যকে দিয়েও জবাই করাতে পারবে। এক্ষেত্রে কুরবানীদাতা পুরুষ হলে জবাইস্থলে তার উপস্থিত থাকা ভালো। -মুসনাদে আহমদ ২২৬৫৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২২-২২৩, আলমগীরী ৫/৩০০, ইলাউস সুনান ১৭/২৭১-২৭৪
✔ জবাইয়ে একাধিক ব্যক্তি শরীক হলে
মাসআলা : ৩৫. অনেক সময় জবাইকারীর জবাই সম্পন্ন হয় না, তখন কসাই বা অন্য কেউ জবাই সম্পন্ন করে থাকে। এক্ষেত্রে অবশ্যই উভয়কেই নিজ নিজ যবাইয়ের আগে ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ পড়তে হবে। যদি কোনো একজন না পড়ে তবে ওই কুরবানী সহীহ হবে না এবং জবাইকৃত পশুও হালাল হবে না। -রদ্দুল মুহতার ৬/৩৩৪
✔ কুরবানীর পশু থেকে জবাইয়ের আগে উপকৃত হওয়া
মাসআলা : ৩৬. কুরবানীর পশু কেনার পর বা নির্দিষ্ট করার পর তা থেকে উপকৃত হওয়া জায়েয নয়। যেমন হালচাষ করা, আরোহণ করা, পশম কাটা ইত্যাদি।সুতরাং কুরবানীর পশু দ্বারা এসব করা যাবে না। যদি করে তবে পশমের মূল্য, হালচাষের মূল্য ইত্যাদি সদকা করে দিবে।-মুসনাদে আহমদ ২/১৪৬, নায়লুল আওতার ৩/১৭২, ইলাউস সুনান ১৭/২৭৭, কাযীখান ৩/৩৫৪, আলমগীরী ৫/৩০০
✔ কুরবানীর পশুর দুধ পান করা
মাসআলা : ৩৭. কুরবানীর পশুর দুধ পান করা যাবে না। যদি জবাইয়ের সময় আসন্ন হয় আর দুধ দোহন না করলে পশুর
কষ্ট হবে না বলে মনে হয় তাহলে দোহন করবে না। প্রয়োজনে ওলানে ঠান্ডা পানি ছিটিয়ে দেবে। এতে দুধের চাপ কমে যাবে। যদি দুধ দোহন করে ফেলে তাহলে তা সদকা করে দিতে হবে। নিজে পান করে থাকলে মূল্য সদকা করে দিবে। -মুসনাদে আহমদ ২/১৪৬, ইলাউস সুনান ১৭/২৭৭,রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৯, কাযীখান ৩/৩৫৪, আলমগীরী ৫/৩০১
✔ কোনো শরীকের মৃত্যু ঘটলে
মাসআলা : ৩৮. কয়েকজন মিলে কুরবানী করার ক্ষেত্রে জবাইয়ের আগে কোনো শরীকের মৃত্যু হলে তার ওয়ারিসরা যদি মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানী করার অনুমতি দেয় তবে তা জায়েয হবে। নতুবা ওই শরীকের টাকা ফেরত দিতে হবে। অবশ্য তার
স্থলে অন্যকে শরীক করা যাবে। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৯, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২৬, কাযীখান ৩/৩৫১
✔ কুরবানীর পশুর বাচ্চা হলে
মাসআলা : ৩৯. কুরবানীর পশু বাচ্চা দিলে ওই বাচ্চা জবাই না করে জীবিত সদকা করে দেওয়া উত্তম। যদি সদকা না করে তবে কুরবানীর পশুর সাথে বাচ্চাকেও জবাই করবে এবং গোশত সদকা করে দিবে।-কাযীখান ৩/৩৪৯, আলমগীরী ৫/৩০১, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৩
✔ মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানী
মাসআলা : ৪০. মৃতের পক্ষ থেকে কুরবানী করা জায়েয। মৃত ব্যক্তি যদি ওসিয়ত না করে থাকে তবে সেটি নফল কুরবানী হিসেবে গণ্য হবে। কুরবানীর স্বাভাবিক গোশতের মতো তা নিজেরাও খেতে পারবে এবং আত্মীয়-স্বজনকেও দিতে পারবে। আর যদি মৃত ব্যক্তি কুরবানীর ওসিয়ত করে গিয়ে থাকে তবে এর গোশত নিজেরা খেতে পারবে না। গরীব-মিসকীনদের মাঝে সদকা করে দিতে হবে। -মুসনাদে আহমদ ১/১০৭, হাদীস ৮৪৫, ইলাউস সুনান ১৭/২৬৮, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬, কাযীখান ৩/৩৫২
✔ কুরবানীর গোশত জমিয়ে রাখা
মাসআলা : ৪১. কুরবানীর গোশত তিনদিনেরও অধিক জমিয়ে রেখে খাওয়া জায়েয।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪, সহীহ মুসলিম ২/১৫৯, মুয়াত্তা মালেক ১/৩১৮, ইলাউস সুনান ১৭/২৭০
✔ কুরবানীর গোশত বণ্টন
মাসআলা : ৪২. শরীকে কুরবানী করলে ওজন করে গোশত বণ্টন করতে হবে। অনুমান করে ভাগ করা জায়েয নয়।-আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৭, কাযীখান ৩/৩৫১
মাসআলা : ৪৩. কুরবানীর গোশতের এক তৃতীয়াংশ গরীব-মিসকীনকে এবং এক তৃতীয়াংশ আত্মীয়-স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীকে দেওয়া উত্তম। অবশ্য পুরো গোশত যদি নিজে রেখে দেয় তাতেও কোনো অসুবিধা নেই। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪, আলমগীরী ৫/৩০০
✔ গোশত, চর্বি বিক্রি করা
মাসআলা : ৪৪. কুরবানীর গোশত, চর্বি ইত্যাদি বিক্রি করা জায়েয নয়। বিক্রি করলে পূর্ণ মূল্য সদকা করে দিতে হবে। -ইলাউস সুনান ১৭/২৫৯, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৫, কাযীখান ৩/৩৫৪, আলমগীরী ৫/৩০১
✔ জবাইকারীকে চামড়া, গোশত দেওয়া
মাসআলা : ৪৫. জবাইকারী, কসাই বা কাজে সহযোগিতাকারীকে চামড়া, গোশত বা কুরবানীর পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া জায়েয হবে না। অবশ্য পূর্ণ পারিশ্রমিক দেওয়ার পর পূর্বচুক্তি ছাড়া হাদিয়া হিসাবে গোশত বা তরকারী দেওয়া যাবে।
✔ জবাইয়ের অস্ত্র
মাসআলা : ৪৬. ধারালো অস্ত্র দ্বারা জবাই করা উত্তম।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৩
✔ পশু নিস্তেজ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করা
মাসআলা : ৪৭. জবাইয়ের পর পশু
নিস্তেজ হওয়ার আগে চামড়া খসানো বা অন্য কোনো অঙ্গ কাটা মাকরূহ। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৩
✔ অন্য পশুর সামনে জবাই করা
মাসআলা : ৪৮. এক পশুকে অন্য পশুর সামনে জবাই করবে না। জবাইয়ের সময় প্রাণীকে অধিক কষ্ট না দেওয়া।
✔ কুরবানীর গোশত বিধর্মীকে দেওয়া
মাসআলা : ৪৯. কুরবানীর গোশত হিন্দু ও অন্য ধর্মাবলম্বীকে দেওয়া জায়েয।-ইলাউস সুনান ৭/২৮৩, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০০
✔ অন্য কারো ওয়াজিব কুরবানী আদায় করতে চাইলে
মাসআলা : ৫০. অন্যের ওয়াজিব কুরবানী দিতে চাইলে ওই ব্যক্তির অনুমতি নিতে হবে। নতুবা ওই ব্যক্তির কুরবানী আদায় হবে না। অবশ্য স্বামী বা পিতা যদি স্ত্রী বা সন্তানের বিনা অনুমতিতে তার পক্ষ থেকে কুরবানী করে তাহলে তাদের কুরবানী আদায় হয়ে যাবে। তবে অনুমতি নিয়ে আদায় করা ভালো।
✔ কুরবানীর পশু চুরি হয়ে গেলে বা মরে গেলে
মাসআলা : ৫১. কুরবানীর পশু যদি চুরি হয়ে যায় বা মরে যায় আর কুরবানীদাতার উপর পূর্ব থেকে কুরবানী ওয়াজিব থাকে তাহলে আরেকটি পশু কুরবানী করতে হবে। গরীব হলে (যার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয়) তার জন্য আরেকটি পশু কুরবানী করা ওয়াজিব নয়।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬, খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩১৯
✔ পাগল পশুর কুরবানী
মাসআলা : ৫২. পাগল পশু কুরবানী করা জায়েয। তবে যদি এমন পাগল হয় যে, ঘাস পানি দিলে খায় না এবং মাঠেও চরে না তাহলে সেটার কুরবানী জায়েয হবে না। -আননিহায়া ফী গরীবিল হাদীস ১/২৩০, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২১৬, ইলাউস সুনান ১৭/২৫২
✔ নিজের কুরবানীর গোশত খাওয়া
মাসআলা : ৫৩. কুরবানীদাতার জন্য নিজ কুরবানীর গোশত খাওয়া মুস্তাহাব। -সূরা হজ্ব ২৮, সহীহ মুসলিম ২২/১৫৯, মুসনাদে আহমদ, হাদীস ৯০৭৮, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪
✔ ঋণ করে কুরবানী করা
মাসআলা : ৫৪. কুরবানী ওয়াজিব এমন ব্যক্তিও ঋণের টাকা দিয়ে কুরবানী করলে ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। তবে সুদের উপর ঋণ নিয়ে কুরবানী করা যাবে না।
✔ হাজীদের উপর ঈদুল আযহার কুরবানী
মাসআলা : ৫৫. যেসকল হাজী কুরবানীর দিনগুলোতে মুসাফির থাকবে তাদের উপর ঈদুল আযহার কুরবানী ওয়াজিব নয়। কিন্তু যে হাজী কুরবানীর কোনো দিন মুকীম থাকবে সামর্থ্যবান হলে তার উপর ঈদুল আযহার কুরবানী করা জরুরি হবে। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৩, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৫, বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৫, ইমদাদুল ফাতাওয়া ২/১৬৬
✔ নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে কুরবানী করা
মাসআলা : ৫৬. সামর্থ্যবান ব্যক্তির রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকে কুরবানী করা উত্তম। এটি বড় সৌভাগ্যের বিষয়ও বটে। নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী রা.কে তার পক্ষ থেকে কুরবানী করার ওসিয়্যত করেছিলেন। তাই তিনি প্রতি বছর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পক্ষ থেকেও কুরবানী দিতেন। -সুনানে আবু দাউদ ২/২৯, জামে তিরমিযী ১/২৭৫, ইলাউস সুনান ১৭/২৬৮, মিশকাত ৩/৩০৯
✔ কোন দিন কুরবানী করা উত্তম
মাসআলা : ৫৭. ১০, ১১ ও ১২ এ তিন দিনের মধ্যে প্রথম দিন কুরবানী করা অধিক উত্তম। এরপর দ্বিতীয় দিন, এরপর তৃতীয় দিন। -রদ্দুল মুহতার ৬/৩১৬
✔ খাসীকৃত ছাগল দ্বারা কুরবানী
মাসআলা : ৫৮. খাসিকৃত ছাগল দ্বারা কুরবানী করা উত্তম। -ফাতহুল কাদীর ৮/৪৯৮, মাজমাউল আনহুর ৪/২২৪, ইলাউস সুনান ১৭/৪৫৩
✔ জীবিত ব্যক্তির নামে কুরবানী
মাসআলা : ৫৯. যেমনিভাবে মৃতের পক্ষ থেকে ঈসালে সওয়াবের উদ্দেশ্যে কুরবানী করা জায়েয তদ্রূপ জীবিত ব্যক্তির পক্ষ থেকে তার ইসালে সওয়াবের জন্য নফল কুরবানী করা জায়েয। এ কুরবানীর গোশত দাতা ও তার পরিবারও খেতে পারবে।
✔ বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তির কুরবানী অন্যত্রে করা
মাসআলা : ৬০. বিদেশে অবস্থানরত ব্যক্তির জন্য নিজ দেশে বা অন্য কোথাও কুরবানী করা জায়েয।
✔ কুরবানীদাতা ভিন্ন স্থানে থাকলে কখন জবাই করবে
মাসআলা : ৬১. কুরবানীদাতা এক স্থানে আর কুরবানীর পশু ভিন্ন স্থানে থাকলে কুরবানীদাতার ঈদের নামায পড়া বা না পড়া ধর্তব্য নয়; বরং পশু যে এলাকায় আছে ওই এলাকায় ঈদের জামাত হয়ে গেলে পশু জবাই করা যাবে। -আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৮
✔ কুরবানীর চামড়া বিক্রির অর্থ সাদকা করা
মাসআলা : ৬২. কুরবানীর চামড়া কুরবানীদাতা নিজেও ব্যবহার করতে পারবে। তবে কেউ যদি নিজে ব্যবহার না করে বিক্রি করে তবে বিক্রিলব্ধ মূল্য পুরোটা সদকা করা জরুরি। -আদ্দুররুল মুখতার, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০১
✔ কুরবানীর চামড়া বিক্রির নিয়ত
মাসআলা : ৬৩. কুরবানীর পশুর চামড়া বিক্রি করলে মূল্য সদকা করে দেওয়ার নিয়তে বিক্রি করবে। সদকার নিয়ত না করে নিজের খরচের নিয়ত করা নাজায়েয ও গুনাহ। নিয়ত যা-ই হোক বিক্রিলব্ধ অর্থ পুরোটাই সদকা করে দেওয়া জরুরি। -ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০১, কাযীখান ৩/৩৫৪
✔ কুরবানীর শেষ সময়ে মুকীম হলে
মাসআলা : ৬৪. কুরবানীর সময়ের প্রথম দিকে মুসাফির থাকার পরে ৩য় দিন কুরবানীর সময় শেষ হওয়ার পূর্বে মুকীম হয়ে গেলে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব হবে। পক্ষান্তরে প্রথম দিনে মুকীম ছিল অতপর তৃতীয় দিনে মুসাফির হয়ে গেছে তাহলেও তার উপর কুরবানী ওয়াজিব থাকবে না। অর্থাৎ সে কুরবানী না দিলে গুনাহগার হবে না। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৬, ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৪৬, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৯
✔ কুরবানীর পশুতে ভিন্ন ইবাদতের নিয়তে শরীক হওয়া
মাসআলা : ৬৫. এক কুরবানীর পশুতে আকীকা, হজ্বের কুরবানীর নিয়ত করা যাবে। এতে প্রত্যেকের নিয়তকৃত ইবাদত আদায় হয়ে যাবে।-বাদায়েউস সানায়ে ৪/২০৯, রদ্দুল মুহতার ৬/৩২৬, আলমাবসূত সারাখছী ৪/১৪৪, আলইনায়া ৮/৪৩৫-৩৪৬, আলমুগনী ৫/৪৫৯
✔ কুরবানীর গোশত দিয়ে খানা শুরু করা
মাসআলা : ৬৬. ঈদুল আযহার দিন সর্বপ্রথম নিজ কুরবানীর গোশত দিয়ে খানা শুরু করা সুন্নত। অর্থাৎ সকাল থেকে কিছু না খেয়ে প্রথমে কুরবানীর গোশত খাওয়া সুন্নত। এই সুন্নত শুধু ১০ যিলহজ্বের জন্য। ১১ বা ১২ তারিখের গোশত দিয়ে খানা শুরু করা সুন্নত নয়। -জামে তিরমিযী ১/১২০, শরহুল মুনয়া ৫৬৬, আদ্দুররুল মুখতার ২/১৭৬, আলবাহরুর রায়েক ২/১৬৩
✔ কুরবানীর পশুর হাড় বিক্রি
মাসআলা : ৬৭. কুরবানীর মৌসুমে অনেক মহাজন কুরবানীর হাড় ক্রয় করে থাকে। টোকাইরা বাড়ি বাড়ি থেকে হাড় সংগ্রহ করে তাদের কাছে বিক্রি করে। এদের ক্রয়-বিক্রয় জায়েয। এতে কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু কোনো কুরবানীদাতার জন্য নিজ কুরবানীর কোনো কিছু এমনকি হাড়ও বিক্রি করা জায়েয হবে না। করলে মূল্য সদকা করে দিতে হবে। আর জেনে শুনে মহাজনদের জন্য এদের কাছ থেকে ক্রয় করাও বৈধ হবে না। -বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৫, কাযীখান ৩/৩৫৪, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০১
✔ রাতে কুরবানী করা
মাসআলা : ৬৮. ১০ ও ১১ তারিখ দিবাগত রাতে কুরবানী করা জায়েয। তবে রাতে আলোস্বল্পতার দরুণ জবাইয়ে ত্রুটি হতে পারে বিধায় রাতে জবাই করা অনুত্তম। অবশ্য পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা থাকলে রাতে জবাই করতে কোনো অসুবিধা নেই। -ফাতাওয়া খানিয়া ৩/৩৪৫, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩২০, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২৯৬, আহসানুল ফাতাওয়া ৭/৫১০
✔ কাজের লোককে কুরবানীর গোশত খাওয়ানো
মাসআলা : ৬৯. কুরবানীর পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসাবে দেওয়া জায়েয নয়। গোশতও পারিশ্রমিক হিসেবে কাজের লোককে দেওয়া যাবে না। অবশ্য এ সময় ঘরের অন্যান্য সদস্যদের মতো কাজের লোকদেরকেও গোশত খাওয়ানো যাবে।-আহকামুল কুরআন জাস্সাস ৩/২৩৭, বাদায়েউস সানায়ে ৪/২২৪, আলবাহরুর রায়েক ৮/৩২৬, ইমদাদুল মুফতীন
✔ জবাইকারীকে পারিশ্রমিক দেওয়া
মাসআলা : ৭০. কুরবানী পশু জবাই করে পারিশ্রমিক দেওয়া-নেওয়া জায়েয। তবে কুরবানীর পশুর কোনো কিছু পারিশ্রমিক হিসাবে দেওয়া যাবে না। -কিফায়াতুল মুফতী ৮/২৬৫
✔ মোরগ কুরবানী করা
মাসআলা : ৭১. কোনো কোনো এলাকায় দরিদ্রদের মাঝে মোরগ কুরবানী করার প্রচলন আছে। এটি না জায়েয। কুরবানীর দিনে মোরগ জবাই করা নিষেধ নয়, তবে কুরবানীর নিয়তে করা যাবে না। -খুলাসাতুল ফাতাওয়া ৪/৩১৪, ফাতাওয়া বাযযাযিয়া ৬/২৯০, আদ্দুররুল মুখতার ৬/৩১৩, ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/২০০
©somewhere in net ltd.