একজন হুমায়ূন আহমেদ - কথার জাদুকর

০৩ রা আগস্ট, ২০১৩ রাত ১:২৭

আমার বইয়ের সাথে সখ্য গড়ে উঠে ছোটবেলা থেকেই । বিভিন্ন রূপকথার বই থেকে শুরু করে কমিকস কোনটাই বাদ যায়নি । চাচা চৌধুরী , বিল্লু , সাবু এইগুলো ছিল আমার পছন্দের চরিত্র । রুপকথার মধ্যে ছিল সিন্ডারেলা সহ আরো অনেক চরিত্র । তবে যখন বড় হতে থাকি তখন থেকে আরো বইয়ের সাথে পরিচয় হতে থাকে । তিন গোয়েন্ধা বই গুলোও ছিল আমার প্রিয় । তবে বই পড়া ব্যাপক পরিবর্তন হয় যখন হাতে বড় বড় লেখকদের বই আসতে থাকে । ছোটবেলায় কমিকস কিনে দেয়ার জন্য বায়না ধরতাম বইয়ের দোকান গুলোতে গেলে । কিন্তু কমিকস গুলো পড়া শেষ হলে সে গুলোর হদিস খুব একটা পাওয়া যেত না । যদি পাওয়াও যেত তবে কমিকস এর অবস্থা হত করুন । তাই আস্তে আস্তে করে কমিকস বাদ দিয়ে আমাকে কিনে দেয়া শুরু হল বড় বড় লেখকদের বই । রবীন্দ্রনাথের বই , জীবনানন্দ দাস এর কবিতার বই গল্প পড়া শুরু করলাম আমি । কিন্তু আমার পড়ার ব্যপক পরিবর্তন হয় যখন আমি হুমায়ূন আহমেদ এর বই পড়া শুরু করি । হুমায়ূন আহমেদের মাঝে যে চুম্বকের মতো পাঠক কে আকর্ষিত করে রাখার ক্ষমতা ছিল – সেই জালে আমিও আটকে গেলাম । তার বই পড়া শুরু করলে শেষ না করে উঠা হয়নি কখনোই । বরং এমনও দিন গেছে নাওয়া খাওয়া বাদ দিয়ে একটার পর একটা হুমায়ূন আহমেদের বই পড়ে গেছি । এর জন্য কম বকাও শুনতে হয়নি ! তবুও কিন্তু আমি বই বাদ দিয়ে খেতে যায়নি । যখন বই পড়ার ঝোঁক উঠে তখন সবার ক্ষেত্রে এমনই হয় আমার বিশ্বাস ! তার সৃষ্ট চরিত্র গুলোর মধ্যে হিমু , মিসির আলী , শুভ্র , রূপা চরিত্রগুলো আজীবন মানুষকে কথার মায়ার জালে আটকে রাখবে । বাস্তবে না থাকলেও মানুষের মাঝে কিন্তু আজীবন থাকবেন হুমায়ূন আহমেদ । এতো আগে হুমায়ূন আহমেদ চলে যাবেন আমি কিন্তু ভাবিনি । তার চলে যাওয়ায় যে শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছে তা কিন্তু এবারের ২০১৩ বইমেলাতেই বোঝা গেছে । কোথায় যেন কি নেই কি নেই এমন অবস্থা । বইমেলা চলছে কিন্তু তার মাঝে রয়েছে একধরণের শূন্যতা - এটা আমার কাছে মনে হয়েছে । তার অন্তত আরো বিশ - পঁচিশ বছর বেছে থাকা উচিত ছিল । কিন্তু তা তো আর হল না । আমাদের দেশের মানুষকে কাঁদিয়ে তিনি যে চলেই গেলেন । তার চলে যাওয়া শুধু চলে যাওয়া নয় – এ যে বাংলা সাহিত্যকে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অভিভাবক শূন্য করে চলে যাওয়া । বাংলার সাহিত্যর রাজপুত্রের মহাসমারোহে যাত্রা শুধু যাত্রা নয় – কোটি ভক্তকে তার নতুন বই হাতে পাবার আকাঙ্ক্ষাকে শূন্যর কোঠায় চলে যাওয়া । পরবর্তী প্রজন্ম এটা বুঝতে পারবে না যে একটা হিমু , মিসির আলীর নতুন গল্পের জন্য একটা বছর অপেক্ষা করার মাঝে কি আগ্রহ আমাদের মাঝে কাজ করেছে । তারা হয়ত নতুন চরিত্রের মাঝে ডুবে থাকবে – কিন্তু একটা নতুন হিমু গল্প আর কিন্তু আসবে না ।

১ টি +০/-০