নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আদনান সৈয়দ

আদনান সৈয়দ। জন্ম : ঢাকা। পেশাঃ ফাইনানসিয়াল এনালিষ্ট এবং প্রফেশনাল বিজনেস প্লানার। যুক্তরাষ্ট্র থেকে এমবিএ। নেশা: লেখালেখি ও সাংবাদিকতা। বর্তমানে বাংলাদেশের একটি প্রতিষ্ঠানে পরামর্শক হিসেবে কর্মরত। মেইল: [email protected]

আদনান সৈয়দ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক সংঘাত এবং কিছু ভবিষ্যৎ আতংকের পদধ্বনি!!

১৯ শে মার্চ, ২০১৩ সকাল ১১:০৪



ইদানিং খুব ভয়ে ভয়ে প্রতিদিনের খবরের কাগজের পাতা উল্টাই। সর্বত্র আঁতকে উঠার মত সব খবর! প্রায় প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্নরকম নাশকতায় পাখির মত মানুষ মারা যাচ্ছে। হিন্দু বাড়িতে আগুন দেওয়া হচ্ছে, পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে তাদের বসত বাড়ি আর সেই সাথে পুুড়িয়ে মারা হচ্ছে মানুষটাকেও। সত্যি বলতে এখন একজন মানুষের মৃত্যু যেন কোন বিষয়ই নয়। প্রতিদিনই মৃত্যুর খবর কানে আসছে। হরতালের নাম করে গাড়িতে এবং ট্রেনে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে, চলছে সর্বাত্বক ব্যাপক ভাংচুর, খুন, জখমসহ মানবতাবিরোধী অপরাধ। চলছে চালক সহ গাড়িতে পেট্রল বোমা ছুড়ে আগুন লাগিয়ে দেওয়ার মত নাশকতার ব্যাপক আয়োজন। প্রতিদিন লাশ হয়ে মানুষ ঘরে ফিরছে। আত্বীয় স্বজনদের কান্নায় এখন বাাংলার আকাশে নীরব অশ্রু। সে দিন খবরে দেখলাম চট্টগ্রামের একজন সাধারন শ্রমিকের জিহ্বা কেটে হত্যা করা হয়েছে। কি ছিল তার অপরাধ? হ্যাঁ, সে যুদ্ধ অপরাধীদের বিচার চেয়েছিল। আর এর শাস্তি হিশেবে শিবিরের ক্যাডাররা তার কান কেটে, জিহ্বা কেটে খুন করেছে। খুন হচ্ছেন বাংলাদেশের কর্তব্যরত পুলিশ। খুনের পাশাপাশি চলছে আমাদের জাতীয় সার্বভৌমত্বের প্রতি চরম হুমকি আর অপমানের নির্লজ্জ মহড়া। বাংলাদেশের পতাকায় আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে, দেশের বিভিন্ন স্থানে শহীদ মিনার ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে, পুলিশ মারা হচ্ছে, নিরীহ মানুষদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গুম করা হচ্ছে। প্রিয় পাঠক, এ কিসের আলামত? ১৯৭১ সালের পাকিস্তানীদের দোসর জামাতে ইসলামীর সেই সময়ের ভুমিকার সাথে আজকের জামাত-শিবিরদের তান্ডবের হুবুহু মিল খুজে পাওয়া কি যায় না? খুব অবাক হয়ে লক্ষ্য করি আজ স্বাধীনতার বিয়াল্লিশ বছর পর আমাদের অনেক কষ্টে অর্জীত স্বাধীন বাংলাদেশের গায়ে খামচে ধরছে সেই পুরনো হিং¯্র শকুন। যে সাম্যবাদী চিন্তা আর প্রত্যয় নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ নামে একটি দেশের জন্ম হয়েছিল আজ সেই দেশের স্বাধীনতা হুমকির সম্মুখিন। শুধুমাত্র ধর্ম এর দোহাই দিয়ে এই দেশে মন্দির,মঠের মত ধর্মীয় জায়গা পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে? এ কোন রাজনীতি? কে জানে হয়তো খুব শিগগিরই সেই ৭১ এর মতই রাস্তায় রাস্তায় মানুষের লুুঙ্গি খুলে হিন্দু মুসলমান সনাক্তকরন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যাবে? চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে এর জন্যই কি বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল? বলি, ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্ত আর আাড়াই লক্ষ মা বোনের ইজ্জত এর বিনিময়ে পাওয়া এই স্বাধীনতাকে ধমক দেওয়া কি এতই সহজ? জানতে ইচ্ছে করে, বাংলাদেশ জামাতে ইসলামি হোক আর যেই দলই হোক তারা এত স্পর্ধা পায় কোথা থেকে?



বাংলাদেশের চলমান রাজনীতি যে ভোটের রাজনীতি এই বিষয়ে কারো কোন দ্বিমত থাকার কথা নয়। যদি তাই না হত তাহলে জামাত ইসলামের মত যুদ্ধপরাধী দলকে নিয়ে দেশের প্রধান বিরোধী দল এত মাখামাখি করতে পারত না। মোট কথা হল আমাদের বর্তমান রাজনীতির সংজ্ঞ্যানুযায়ী ’দেশের উর্ধ্বে দল’। আর সে কারনেই যে কোন ভাবে ক্ষমতায় যেতে নোংরা রাজনীেিততে সিদ্ধ হস্ত আমাদের দেশের বর্তমান এই রাজনৈতিক নেত্রীবৃন্দ। বর্তমানে আমাদের দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে প্রতি সপ্তাহে গড়ে দুইতিন দিন করে হরতালের ডাক পরছে। আর সেই সাথে হরতালের নামে মানুষ হত্যা ও সন্ত্রাসী কাজকারবার যেন এখন একটি ছেলেখেলায় পরিনত হয়েছে। যে বাংলাদেশ আর মাত্র কুড়ি/পঁিচশ বছরের মধ্যেই সিংগাপুর বা থাইল্যান্ডের মত এশিয়ার অন্যতম উন্নত একটি দেশে পরিচিতি পেতে যাচ্ছিল সেই দেশকে এখন বিশেষ একটি চিহ্নিত দল আরেকটি আফগানিস্তান বানানোর গভীর ষড়নন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে। ধীরে ধীরে আমাদের বিনিয়োগ বাজারে এখন রীতিমত ধ্বস নামতে শুরু করেছে। বিদেশী বিনিয়োগ কারীরা আমাদের দেশে বিনিয়োগের উপর তাদের আস্থা হারিয়ে ফেলছে। আমাদের দেশের বিজ্ঞ রাজনৈতিক নেত্রীবৃন্দরা বিষয়টি ভাববার সময় পাচ্ছেন কি? ইদানিং দেখছি বলা নেই কওয়া নেই খুব সাধারন কারনেই ’হরতাল’ ডাকা হচ্ছে। বলি, এটাকি মামার বাড়ির আবদার? আমরা আমরা না হয় সাধারন ছা পোষা মানুষ। হরতালের দিন অনেক কষ্টে পায়ে হেটে অফিসে যাই । কারন মাস ফুরুলেই আমাদের বেতন প্রয়োজন। সেই বেতনে সংসার চলে। আর সাথে সাথে দেশটাও বাঁচে। দেশের অর্থনীতির চাকা শক্ত হয়। একজন দিনমুজুরের কথা ভাবুনতো! যার প্রতিদিনের শ্রমের পয়সায় দিন চলে সেই শ্রমিক তার সংসারটা চালায় কিভাবে? আফসোস এই যে এই সাধারন হিসেব নিকেশটাও আমাদের দেশের রাজনৈতিক নেতারা বুঝেন না বা বুঝতে চান না। তবে যারা রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে হরতালকে বেছে নিয়েছেন তাদের উদ্ধেশ্যে দুটি কথা বিনয়ের সাথে বলতে চাই। আপনারা কি সত্যি মনে স্বতফুর্ত হয়ে এই আম জনতা আপনাদের যখন তখন ডাকা হরতাল পালন করে যাচ্ছেন? আপনাদের বলব খোজ নিয়ে দেখুন রাস্তায় মহড়া দেওয়া আপনাদের পালিত মাস্তানদের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য অথবা গাড়ি ভাংচুরের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কিংবা নিজের জানমাল হেফাজতে রাখার জন্যেই মানুষ হরতালের দিন ঘর থেকে বেড় হতে ভয় পান। অন্য কোন কারনে নয়।



এবার একটি ভবিষ্যত আতংকের কথা বলতে চাই। আগেই বলে নেই আমাদের এই দেশে ইসলাম এসেছে সূফিবাদের উপর ভর করে। সে কারনেই এই বাংলার মাটি পীর পয়গম্বরদের পদধূলায় সমৃদ্ধ হয়েছে। এই বাংলাদেশে হিন্দুরা এসেছে, বৌদ্ধরা এসেছে, মুসলমানরা এসেছে এবং অনেক পরে খৃষ্টান ধর্ম এসেছে। আর সে কারনেই বাংলাদেশ হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খৃষ্টানদের কে নিয়েই সমৃদ্ধ একটি দেশে। মোট কথা বাংলাদেশের মুসলমানদের আলাদা একটি সাম্যবাদি পরিচয় আছে। সে জন্য বাংলার মুসলমান আর আফগানিস্তানের মুসলমান কিন্তু এক বস্তু নয়। কিন্তু স্পষ্টতঃ বাংলাদেশের এই সাম্যবাদী শক্তিকে ভেঙে দেওয়ার জন্য ওহাবী চক্র বেশ তৎপর হয়ে কাজ করে যাচ্ছে। ধর্মকে পূঁজি করে বা ইসলামের নাম ভাঙিয়ে একদল ধর্ম ব্যাবসায়ীরা ফায়দা লুটতে উঠে পরে লেগেছে। এটা কিসের লক্ষন? আমরা চাই না বাংলাদেশ একটা তালেবানের রাষ্ট্রে পরিনত হোক। সেদিন আমার বার বছরের ভাগ্নে খুব উদ্বেগ আর দুঃখের সাথে আমাকে বলল যে টিভিতে তার প্রিয় একটা বিজ্ঞাপণ ’সহি মোবাইল নামার’ নাকি পরিবর্তন করে ফেলা হয়েছে। খুব অবাক হয়ে দেখতে পেলাম যে ’সহি মোবাইল নামা’ অক্ষরগুলো সুকৌশলে অস্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। কেন এমন করা হয়েছে? এই বিজ্ঞাপনটিও সেই ওহাবিদের রোষানলে পরেছিল নিশ্চয়ই? এসব কিসের আলামত! সেদিন এক ডকুমেন্টরিতে দেখছিলাম তালেবানরা প্রথম দিকে আফগানিস্তানের মানুষদের দাড়ি কত টুকু লম্বা তা পরীক্ষা করে দেখার জন্যে কোকের বোতল (এক লিটার মাপের) দাড়ির পাশাপাশি রেখে এর উচ্চতা মাপতে শুরু করেছিল। অর্থাৎ কোকের বোতল দাড়িমাপক যন্ত্র হিসেবে ব্যাবহৃত হয়েছিল। সব দেখে শুনে মনে হচ্ছে বাংলাদেশও বুঝি সেই একই পথে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশকে আরেকটি পাকিস্তান বা আফগানিস্তান বানানেরা ঘৃন্য ষড়যন্ত্রে একটি দল মেতে উঠেছে?



মনে রাখতে হবে আমাদের সাম্যবাদী চিন্তাই আমাদের সবচেয়ে বড় অহংকারের ঠিকানা। সব ধর্মের লোকদের নিয়েই আজকের এই বাংলাদেশ। এই চেতনা বোধ আমাদের একদিনে হয়নি। হাজার বছরের বাংলার সংস্কৃতি, চিরায়ত ধর্মের ভালোবাসার বাণী আমাদের সে কথাটাই বার বার স্বরণ করিয়ে দেয়। ভুলে গেলে চলবে না এই দেশ আউল বাউল পীর ফকিরদের দেশ। আমাদের দেশের মানুষ সহজ সরল ধর্মপ্রাণ মানুষ। এখানে ভোরের আলো ফুটার সাথে সাথে যেমন বাউল গানের একতারায় সুর বেজে উঠে পাশাপাশি কীর্তনের মোহনীয় সুরে সন্ধ্যায় সূর্য ডুবতে শুরু করে। এই চেতনা বোধটাকে নিয়েই আমরা নতুন প্রজন্মরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চাই। রাজনৈতিক সব রকম ষড়যন্ত্র থেকে বাংলাদেশ মুক্তি পাক। মুক্তিযুদ্ধের মত পবিত্র একটি যুদ্ধের বিনিময়ে পাওয়া এই বাংলাদেশ বুক উচিয়ে পৃথিবীর বুকে বেঁচে থাকুক এই আমাদের একমাত্র প্রার্থনা। বাংলাদেশ চীরজীবি হোক।





মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.