নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আফনানের নিকেশ জগৎ.....।

আফনান আব্দুল্লাহ্

প্রত্যেকটা মানুষের জীবনের গল্প তার আঙ্গুলের ছাপের মতই ভিন্ন। দূর থেকে এক মনে হলেও যতই তার গভীরে যাবে কেউ ততই বৈচিত্রময় বিভিন্নতা পাবে। নিজের জীবনের গল্পে চরে বেড়ানো মানুষগুলো সবাই’ই যার যার জগতে বন্ধী। সহস্র বছর বাঁচতে পারলে পৃথিবীর প্রত্যেকটা মানুষের জীবনের গল্প আমি শুনতাম।নিজের দেখা জগৎ দেখা আদেখা মানুষদের জগতের সাথে গেঁথে নিতেই লিখি এবং আন্যের লিখা পড়ি। কেউ যদি মিথ্যুক বা ভন্ড না হয় তাহলে তার যে কোন ভিন্ন মতের কারন তার চার পাশের ভিন্ন জগৎ, ভিন্ন পরিবেশ, ভিন্ন শিক্ষা। তাই মানুষকে বুজতে হলে তার জগৎটাকে জানতে হবে, তার গল্পগুলো শুনতে হবে।আফনান আব্দুল্লাহ্

আফনান আব্দুল্লাহ্ › বিস্তারিত পোস্টঃ

বেঁচে থাকে মোহাম্মদ শাহ্’রা। মরে যায় আয়লানরা

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২২

১৭৯৯ সালে হাজার পঞ্চাশেক ব্রিটীশ-হায়দ্রাবাদী জোট বাহিনী যখন কর্ণাটকে টিপু সুলতানকে তাঁর হাজার পঁচিশেক সৈন্য সহ ঘিরে ফেললো, তখন সুলতানের ফ্রেঞ্চ মীত্ররা তাঁকে পরামর্শ দিলো গোপন সুড়ঙ্গ পথে পালানোর। সুলতান টিপু জানালেন তিনি ভেঁড়ার মত হাজার বছরের জীবন না নিয়ে সিংহের মত এক দিন বাঁচতে চান। এক দিনই বাঁচলেন। এক জন সাধারণ সিপাহীর মত যুদ্ধ করতে করতেই মরলেন। ব্রিটিশ শত্রু সুলতানের প্রজাদের ঘরে চাবুক হাতে হাজীর হতে পারলো টিপু সুলতান এবং তাঁর বাহিনীর লাশ পার হয়ে ।
.
স্পার্টার রাজা ম্যানালাস প্রায় সোয়া লাখ যোদ্বা নিয়ে দশ বছর ধরে ট্রয় অবরোধ করে রাখলেন। রাজপুত্র এবং প্রধান সেনাপতি হেক্টর রাজ্যের মূল দেয়ালের বাইরে হাজার হাজার সৈন্য নিয়ে প্রতিরোধ করে গেলো শত্রুর। মহাবীর আকিলিসের সাথে মুখমুখি সমরে মারা গেলেন হেক্টর। তাঁর লাশ পার হয়েই স্পার্টা বাহিনী ট্রয়ে প্রবেশ করলো হাতে আগুন আর ছুরি নিয়ে। পুড়িয়ে দিতে পারলো হেক্টরের প্রজাদের সব ঘর।
.
সময় গড়ালো। শাষক দল চালাক হতে লাগলো। পারস্যের বর্বর নাদীর শাহ্, যুদ্বে পরাজীত করলো দিল্লীর সম্রাট মোহাম্মদ শাহ্ কে। নাদীর শাহ্ খুনে বাহিনী নিয়ে পৌঁছে গেলেন দিল্লর প্রজাদের ঘর পর্যন্ত। কিন্তু মোঘল সম্রাটের লাশ তাকে পার হতে হলোনা। বরং ব্যাপক আপ্যায়ন পেলেন পরাজীত মোঘল রাজের। পরে, দিল্লী সম্রাট তাকে সুন্দরী দেহ রক্ষী দিয়ে বীষ খাইয়ে মারতে চাইলেন। মৃত্যর ভূয়া খবর প্রচার করে গন মানুষকে বিভ্রান্ত করে পারস্য বাহিনীর পেছনে লেলীয়ে দিলেন। রাগে অঙ্গার হয়ে নাদীর শাহ্ প্রতিশোধ নিলেন। খাপ থেকে তলোয়ার খুলে তার পীশাচ বাহিনীকে হুকুম করলেন ‘খুন কর। ততক্ষণ পর্যন্ত, যতক্ষণ পর্যন্ত এই তলোয়ার আবার খাপে না ঢুকছে।’
.
২২ মার্চ ১৭৩৯। সকালে ঢোল পিটিয়ে এই গন মৃত্যুদন্ডের রায় দেয়ার মাত্র ছয় ঘন্টার মধ্যে দিল্লীর প্রায় ৩০,০০০ মানুষ (ত্রিশ হাজার মানুষই, শূন্য ভুলে বেশী পড়েনি) স্রেফ জবাই হয়ে গেলো। এর মধ্যে নারী পুরুষ, শিশু, হীন্দু, মুসলিম শীখ, সবই ছিলো। এখনো কোন কুরবানীর ঈদেও দিল্লীতে গরুরও এত রক্ত রাস্তায় পড়ে না।
বিষ্ময়কর হলো, এই হাজার ত্রিশেক গলা কাটা মানুষের মধ্যে কিন্তু দিল্লী সম্রাট মোহাম্মদ শাহ ছিলেন না। তিনি তার রাজ বিলাস নিয়েই বেঁচে ছিলেন। বেঁচে ছিলো তার সৈন্যরাও যাদের ভরন পোষন হতো ঐ মৃত মানুষদের রাজ্বস্বে। বেঁচে ছিলো সেই সুন্দরী রক্ষীতাটিও যাকে নাদীর শাহ ভালোবেসে মুক্ত করে দিয়েছিলেন।
.
ত্রিশ হাজার প্রজার লাশের উপর বসে, দিল্লী সম্রাট মোহাম্মদ শাহ্ বীপুল উপঢৌকণ দিয়ে, যার মধ্যে বিখ্যাত ময়ূর সীংহাসনও ছিলো, ক্ষমা পেলেন নাদীর শাহ্’র। মোঘল রাজ, রাজা হিসেবেই রাজপ্রাসাদে টিকে গেলেন।
.
ট্রয়ের কাল জয়ী যোদ্বা আকিলিস বলেছিলেন- ‘যে কোন যুদ্বেই, বুড়রা বাগাড়ম্বরতা দেখাতে থাকে, আর তরুণরা মরতে থাকে। (Old man talk, young man dies.) এই ইয়াং ম্যান বলতে তখন তিনি বুজিয়ে ছিলেন তরুন যোদ্বাদের। বাংলাদেশে দ্বিতিয় বিশ্বযুদ্বের যে ওয়ার সিমেট্রিগুলো আছে, সেখানকার এপিটাফগুলোর দিকে তাকালেই দেখা যায় মৃতদের গড় বয়স বিশের কৌটায়।
.
আর এখন শাষক গোষ্ঠী আরো আধুনিক হয়েছে। এখনও ওল্ডরাই যুদ্বে কথা বেশি বলে যাচ্ছে। কিন্তু যারা মারা যাচ্ছে তারা আর শুধু ইয়াং না, সো ইয়াং। এমনকি এখনকার যুদ্ধে দেখা যাচ্ছে যোদ্বারা তেমন মারা যায় না। এক জন সৈন্যের মৃত্যু সংবাদের সাথে আসছে অন্তত দশজন বেসামরিক মানুষের মরার খবর। আর এক জন বয়স্ক মানুষের সাথে মারা যাচ্ছে প্রায় দশ বার জন করে শিশু কিশোর।
.
এখন আর সম শক্তির দুই দলকে যুদ্বে জড়াতে দেখা যায় না। প্রচন্ড শক্তির সাথে অসম্ভব দূর্বলের যুদ্ব হচ্ছে। প্রবল প্রতিপক্ষ এখন আর মাটিতেই নামে না। তারা থাকে আকাশে। তাদের লক্ষ থাকে নিজেরা এক জনও না মরার। আর দূর্বল শাষকগুলোর ভরসা হলো তার দেশের সাধারন মানুষেরা সাথে নিজের ঘাঁড়ের বাম পাশের ত্যাড়া রগ। ঢাল তলোয়াড় ছাড়াই লম্বা লম্বা বুলি ছাড়ি সাধারণ মানুষগুলোকে ঢাল হিসেবে ঠেলে দেয় সামনে। আর স্রেফ গালের চাপা ছাড়ি নিজেরে জাহীর করে বিরাট সাহসী মানুষ হিসেবে।
.
এক জন টিপু সুলতান, এক জন হেক্টর সবার আগে নিজে মারা যায়। তার পর তার দেশের মানুষ। আর এক জন সাদ্দাম হোসেন, আগে দেশের মানুষ মরে শ্মশান হলে, তার পর নিজে ধরা পড়ে।
.
দূনিয়া ভরা মোহাম্মদ শাহে। টিপু সুলতান, হেক্টররা সব মরে গেছে।…………..
………. আর তাই বোধ হয় মরে যাচ্ছে আয়লানরা.
.
#Afnan_Abdullah
০৯০৫২০১৫
.
তথ্য়ভান্ডার.........,
--- দিল্লী--খুশবন্ত সিং।
---দ্য়া সোর্ড অব টিপু সুলতান-----ভগওয়ান. এস গিদওয়ানী।
---উইকিপিডিয়া।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.