![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সিলিয়া ( SILEA)
একটা থানায় বসে আছি। থানার নাম জানিনা। থানাটার আদৌ কোন নাম আছে কিনা আমার জানা নেই। আসলে আমি আদৌ কোন থানাতেই আছি কিনা কে জানে?আসার সময় গাড়িতে তুলে চোখের উপরে কালো কাপড় পড়ানো হয়। যেখানটায় বসে আছি,জায়গাটা ঘুটঘুটে অন্ধকার। কেমন যেন অদ্ভূত সোঁদা গন্ধ।মাথার ভিতর শুধু একটা প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে,"আমি এখানে কেন? কোথায় আমি?"
ঘটনার শুরু আজ বিকেলে।দোকান থেকে রিচার্জ করে রাস্তায় ফোন চালাতে চালাতে হাঁটতেছি। হঠাৎ সামনে দুজন বেশ দেহধারী এসে বলল, "আপনাকে আমাদের সাথে যেতে হবে।আমরা অমক সংস্থার লোক। "আমি তখনো বুঝিনি কি ঘটতে যাচ্ছে আমার সাথে। আমি বললাম," দেখুন ভাইজান,আমার তো কাল দিন পর পরীক্ষা,আমি এখন কিভাবে যাই? আর আমার দোষটা কি? যদি বলতেন তবে উপকার হত।" তো ওনারা বললেন ওনাদের সাথে যেতেই হবে। নিজে থেকে গেলে ভাল। না হলে জোর করে নিয়ে যাবার আদেশ আছে। বোঝা গেলো,বেশ উপর মহল থেকেই চাপটা এসেছে। আমিও আর কথা না বাড়িয়ে গাড়িতে গিয়ে উঠলাম। ওঠার পর চোখ কালো কাপড়ে বেঁধে দিল। তারপরতো আমি এখানে।
এতটুকু বুঝতে পারছি, আমাকে একটা চেয়ারের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে।সামনে টেবিল। মাথার ওপরে নষ্ট হওয়া বাল্বের হোল্ডার। যতটুকু বোঝা যায়, কোন জিজ্ঞাসাবাদ এর প্রকোষ্ঠে নিয়ে আসা হয়েছে। কিন্তু বুঝতে পারছিনা,আমার হাত কেন খুলে রাখা হয়েছে আর ফোনটাও বা কেন নিয়ে নেয়া হয় নি। অবশ্য হাত খোলা রেখেও লাভ নেই। পা মেঝের সাথে বিশেষ কায়দায় বাঁধা। এখন শুধু অপেক্ষা করছি,কখন জানতে পারব, আমাকে কেন এখানে নিয়ে আসা হয়েছে? কোথায় আমি?
বাইরে বুটের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। হয়তোবা তারা আসছে। "হে আল্লাহ, যাই হোক, সাহস দাও। "
পর্ব ১
২৬-০৫-১৬
বুঝতে পারছি পিছনে কেও অথবা কয়েকজন আছে। কতজন আছে ঠিক বুঝতে পারছি না। ঘাড় ঘুরিয়ে যে দেখবো, তারও কোন উপায় নেই। চেয়ারটা এমন ভাবে প্রস্তুত করা মাথার দু পাশে,যেন কেও মাথা নাড়াতে না পারে। এখন বেশ খানিকটা ভয় হচ্ছে। মাথাও কাজ করছে না। কি হতে পারে?!
কিছুক্ষন পর কাওকে চলে যেতে শুনলাম। বুটের শব্দ আস্তে আস্তে কমে যেতে লাগল।হঠাৎই আমার কাঁধের উপর কারও হাত অনুভব করে চমকে উঠলাম। ভয় ও পেয়ে গেলাম বেশ খানিকটা। তিনিই প্রথম কথা বললেন। " আহাদ সাহাব, ক্যায়সে হো আপ?"
ভড়কে গেলাম বেশ খানিকটা। আমি কি তবে?? না না, এ কি ভাবে সম্ভব। এত তাড়াতাড়ি? মাথায় জোর খাটাচ্ছি। কিছু মনে পড়ে কিনা। হঠাৎ করে মনে হল, গাড়িতে তুলবার পর আমার ঘাড়ে কিছু একটা কামড় দেয়ার মত হয়েছিল। তারপর ঘুম ঘুম ভাব। "ওহ! শিট! এখন?!! "
পিছনের লোকটি ধীর পায়ে সামনে এসে টেবিলে ওপর বসলেন। একপা আমার বেঁধে রাখা চেয়ারে। আবার ও তিনি প্রশ্ন করলেন। " আহাদ সাহাব, ইতনি মাত সোচো।কুচ নেহি সামাঝ পাওগে! সাবচে বেহতর এহি হোগা কি, আপ হামারে সাথ co operate কারে। "
খানিকটা ধাতস্থ হবার পর, আমি বললাম, " Mr. I cant understand ur language. Will you please speak in english? " উনি বললেন, "Oh sure! I am General Abhay. Chief of special law enforcement bureau (SLEB). আমি বললাম, "Hello Mr. Abhay. Can I know, why I am here? "
উনি কিছুক্ষন কি যেন ভাবলেন। হয়তোবা ভাবছেন, "এই পিচ্চি ছোরা কে কেন তুলে আনছি আমি তো নিজেই জানিনা। এরে কি বলব? " নয়তোবা ভাবছেন, "কারনটা বলা ঠিক হবে কি একে?"
তিনি যাই ভাবুন। আমার ভাবনা তো শেষ হচ্ছে না। ঠিক কি কারণে আমাকে এখানে আনা হতে পারে?
পর্ব ২
২৭/০৫/১৬
অবশেষে কারণটা জানতে পারলাম। ইংরেজীতে আমার দুর্বলতা আর হিন্দী মোটামুটিভাবে না পারার কারণে তাদের ডিপার্টমেন্ট একজন বাঙালী অফিসার কে কথা বলতে দেয়। আর বাঙালী হলে তো আলাদা একটু টান থাকেই।
আমাকে মুলত এখানে নিয়ে আসা হয়েছে যে কারণে তা হল, তারা নাকি সংবাদ পেয়েছে যে আমি গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ এর Secret Investigation and Law Enforcement Agencies (SILEA) এর বেশ উচ্চ পর্যায়ে থেকে কলকাঠি নাড়িয়ে তাদের দেশের বিরুদ্ধে বেশ কিছু অন্যায়ের প্রমাণ সংগ্রহ করেছি। আর এ খবর নাকি সরকারের বেশ উচ্চ পর্যায় থেকেই পেয়েছে।
আমি আসলে অবাক হয়ে যাচ্ছি, আমার মত একজন সাধারণ বললে ভুল হবে অতি সাধারণ বাচ্চা ছেলের প্রতি তাদের এমন ধারণা কেমন করে আসলো। আসলে এদের SLEB এর প্রধান ও ঠিক ব্যাপারটা হজম করতে পারছেন না। সেই জন্যই তারা খানিকটা চিন্তিত। আসলেই তাদের পাওয়া তথ্য সঠিক কিনা।
আমার যতটুকু ভয় করছিল, তা কেটে উঠেছি। আগের স্যাঁতসেতে ঘর থেকে আরেকটা জায়গায় নিয়ে এসেছে। বেশ ভালোভাবে সাজানো গোছানো। তীব্র গরমে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে বেশ আরাম ই পাচ্ছি। ঘুম চলে আসতেছে। এমনিতেই মোটাসোটা মানুষ।
ঘুম নিয়ে আমার এক তত্ত্ব আছে। আমি মোটা তাই ঘুম বেশি ধরে। আবার ঘুম বেশি হয় বলেই আমার স্বাস্থ্য বাড়ে। এইরকম মোটা শরীর নিয়ে যদি ঐরকম একটা সংস্থায় কাজ করতে দিত, তবে বহু মোটাসোটা লোকের কর্মসংস্থান হয়ে যেত। হা হা হা। যাই হোক। এরুপ অদ্ভূত তথ্য দেয়ার জন্য যে দিয়েছে তাকে ধন্যবাদ জানাই। ফ্রী তে ঘুমের মধ্যে হলেও বিমানে তো উঠতে পেরেছিলাম। সত্যিই কি বিমান? নাকি হেলিকপ্টার? নাকি ক্যামনে ?
তাদের আমার সম্পর্কে পাওয়া তথ্যগুলো যাচাইবাছাই করে মনে হল যে সব ভুল। তাই আমার কাছে ক্ষমা চেয়ে আমার বাড়িতে রেখে আসার কথা জানালো। সাথে ক্ষতিপূরণ হিসেবে কিছু পরিমাণ টাকা দিল যেন কাওকে কিছু না বলি। আমি মারলাম এক রামধমক। শালা,ফাইজলামী করস? আইজ কয় তারিখ? আমার পরীক্ষার তো বারোটা বাজায়া দিছস। খানিকটা চুপসে গিয়ে তাদের প্রধান মি আভায় কে ডেকে আনল। তিনি খানিকটা হুমকিই দিলেন মনে হল। যেন কেও কিছু না জানে। আমি আস্বস্ত করলাম। আমার চোখে কালো কাপড় বাঁধা হল। ঘাড়ের কাছে পিপড়ের কামড়ের মত অনুভূতি। আমার ঘুম আসছে। প্রচন্ড ঘুম..............
২৮/৫/১৬
পর্ব- ৪
ওখান থেকে ফিরে আসবার পর আর এসব নিয়ে তেমন কোন ঝামেলা হয় নি। মাথার মধ্যে কেবল একটা প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছিল যে, আমার সম্পর্কে কে তাদের এই তথ্য দিল। খানিক্টা চিন্তাতেই আছি। এদিকে আমার মত ছেলে যে কিনা একদিনো স্কুল মিস দেয়নি সে কিনা পরীক্ষা তে অনুপস্থিত ছিল,তার উপর বাসাতে খোজ করেউ স্যারেরা, ক্লাসমেট রা কোন খোজ পায়নি বলে বেশ চিন্তায় ছিল।স্কুলে আসার পরতো সবার একগাদা প্রশ্ন। কি হয়েছিল আমার।হেন তেন।আমি এখন তাদের কিভাবে বলি কি হয়েছিল। শুধু একটা কথাই বললাম যে, দেখলাম গায়েব হয়ে গেলে কেউ আমায় খোজ করে কিনা।এই কথা বলার পর হেডস্যার মারলেন এক ধমক।আমিও সোজা হয়ে গেলাম।
আমার চোখ যাকে খুজতেছিল তাকে পেলাম আমার বাড়ির পাশের পুকুর ঘাটে।আসার পর থেকে তার সাথে কোন কথা হয়নি। সে আসেওনি আমার আশে পাশে। আব্বুর বকা খাউয়ার শেষ পর্যায়ে যখন বললাম "আব্বু পরে বকা দিয়েননি,আগে আপনার ছেলের বউয়ের সাথে দেখা করে আসি,আব্বু খানিকক্ষণ অবাক হঅঅয়ে তাকিয়ে থাক্লেন।তারপর ওখানেই থাকা আম্মু বলে উঠলেন,"তুমি এখন পর্যন্ত অরুর সাথে দেখা করনাই? তুমি জানো এই দশ দিন তার কি অবস্থা ছিল?খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়ে এসে আমায় জড়িয়ে ধরে কাঁদত। " আব্বু বলে উঠলেন "বসে আছ কোন আক্কেলে? যাও এখনি। " কিন্তু আমি তার বাড়িতে যেয়ে তাকে তখন পাইনি।
তার পাশে যেয়ে বসলাম। আমাকে দেখেও কোন কথা বলল না। একমনে সে পুকুরের পানিতে পা ডুবিয়ে সুর্যাস্ত দেখছে। আমি উঠে যেয়ে তার পাশে বসে তার হাতটা ধরা মাত্রই সে যেন ডুকরে কেঁদে উঠল।ঝাপিয়ে পড়ল আমার বুকে।আমি শুধু অষ্পষ্ট কন্ঠে বলে উঠলাম, "সোনা বউ আমার।" সে যেন আরো আহ্লাদী হয়ে উঠল।এক পর্যায়ে স্বাভাবিক হয়ে উঠার পর বলল "কেন করছ এসব ঝুঁকির কাজ। আমার কত চিন্তা হয় তুমি বোঝনা?তোমার যদি কিছু হয়ে যেত? আমার এত অল্প বয়সে বিধবা হবার কোন ইচ্ছা নাই।এর পর যত কিছুই হোক হয় আমাকে সংগে নিবা নাইলে যেখানেই থাকো জানাবা।বুঝছো?" আমি বললাম," অরু সোনা,দেখো, আমি যে কাজটা করছি তা কেন করছি তাতো তুমি জানোই। একটু ঝুঁকি যে নেই তা বলছি না,তবে তেমন কিছু হবে না আমার।আমার এত সকালে বউ রেখে মরার শখ নাই। এখন চল।"
সব কিছু স্বাভাবিক হয়ে আসলে ও আমার মাথা চিন্তাটা ছিলই।আমার কথাটা কেউ জান্তো না।কে এই তথ্য তাদের দিবে?আমাদের সংস্থায় আমার বয়সি ছেলে মেয়ের সংখ্যা প্রায় বিশজন।সর্বোমোট সদস্য মোটে ১০০.. এই একশ জনকে এমন ভাবে কাউন্সেলিং করা, ট্রেনিং দেয়া যে, যেকোন পুর্ণ বয়স্ক যোদ্ধাদের সাথে লড়াই করবার সামর্থ্য আছে।আমাদের আছে অত্যন্ত্য মেধাবি এবং সাহসী সাথী।আমি বেশ উচ্চ পর্যায়েই আছি। বলা চলে দ্বিতীয় পর্যায়।আমাদের যে ইউনিট এখানেই সকলেই ছাত্র।সরকার থেকে পৃষ্ঠপোষকতা করে। পরিকল্পনার দিক্টা আমি দেখছি।
কিছুদিন আগে একটা খবর আসে যে পার্শ্ববর্তী দেশ একটা গোপন মিশন হাতে নিয়েছে।সেটার উপরই কাজ করছিলাম।সব কিছুই প্রায় গুছিয়ে এনেছি। আপাতত কিছুদিন চুপচাপ থাকতে হবে।এরমাঝে খবর দাতা দেশদ্রোহী কে খুঁজে বের করতে হবে। অনেক কাজ।এজন্য একটু কাজ করতে হবে আমার। পরেরদিন সকলের সাথে কথা বলার ব্যবস্থা করলাম। আমাদের একটা বিশেষত্ব হচ্ছে আমারা কেউ সবাইকে একসাথে একই কথা বলি না।এক এক করে বলি। তো সবার সাথে কথা বলার পর কিছুক্ষন সবাই মিলে এমনি আড্ডা দেয়া হল। অনেকদিন পর এভাবে একত্রিত হলাম। এরই মাঝে আমাদের কম্পিউটার ডিপার্টমেন্ট এর অদ্র হাসান সকলে মোবাইল ট্যাপ করার ব্যবস্থা করে ফেলেছে বলে খবর পেলাম।এর আগে এসবের প্র্যোজন পড়েনি। কারন আমাদের পরিচয় কেউ জান্তো না।সকল্কে বিশ্বাসের বলেই দেশের জন্য এখানে কাজ করতে নেয়া হয়েছিল। একটা কথা প্রায়ই বলা হত,নিজেরা যদি নিজেদের বিশ্বাস না করি অন্যরা আমাদের অবিশ্বাসের সুযোগ নেবেই।
খবরটা পেলাম দুদিন পর। অদ্র ফোন করে জানাল তার নাম।আমি শুধু তাকে বললাম যেন কিছুতেই পালাতে না পারে আর কিছু জানতে ও না পারে।চলে গেলাম সিলিয়ার হেডকোয়ার্টারস এ।জসীমকে বেধে রাখা হয়েছে চেয়ারের সাথে।কিছু বললাম না আর। উপর মহলে জানিয়ে ওকে স্পেশাল জেলে পাঠানোর ব্যবস্থা করলাম।আপাতত ঝামেলা শেষ।এবার আসল খেলা শুরু হবে।
এদিকে অরুকে নিয়ে খানিক্টা টেনশনে আছি। মেয়েটা আজকাল হুটহাট পাগলামি করে বসে।এই মনে হল রাত বিরাতে ফোন দিয়া বলবে" তুমি এক্ষুনি আমাদের বাসায় আসো।এক্ষুনি।আমি দরজায় দাঁড়ায় আছি।না গেলে কপালে দুঃখ আছে। " আবার বলবে" এই গোয়েন্দা, দেখতো আমার চোখে কি দেখিস?" আবার ফোন দিয়ে কান্নাকাটি শুরু করে দিয়ে বলবে "আমার এখন কথা বলতে ইচ্ছা করতেছে আর আইস্ক্রীম খেতে ইচ্ছে করতেছে।নিয়ে ছাদে চলে আয়।" মাঝে মাঝে ভাবি আব্বু আম্মু কি জন্যে যে এত অল্প বয়সে আমার জীবন বিয়ে দিয়ে তামাতামা করার ব্যবস্থা করল। আবার খানিক পরেই তাদের ধন্যবাদ জানাই যে, তাদের জন্যি আমি আজ আমার অরুকে পেয়েছি।
(চলবে...)
©somewhere in net ltd.