নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একটা বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন নিয়ে, আমি প্রান্তিক জনতার কথা বলতে এসেছি...!

অগ্নি সারথি

একটা বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন নিয়ে, আমি প্রান্তিক জনতার কথা বলতে এসেছি.......!

অগ্নি সারথি › বিস্তারিত পোস্টঃ

বনজীবীদের সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না- পর্ব এক

০১ লা নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:২২



পেশায় আমি একজন গবেষক। গবেষনা করে পেট চালাই আরকি। হঠাত করেই অফিসের স্বল্প একটা নোটিশে আমাকে কয়রা যেতে হয়। কয়রা হল খুলনা জেলার কয়রা উপজেলার সদর ইউনিয়ন। খুলনার উপজেলা হলে কি হবে, এটি খুলনা শহর থেকে মোটামুটি ১২০ কিলোমিটার দূরে সুন্দরবনের পাশের একটা উপজেলা। দূরত্ব এখানে ব্যাপার না, ব্যাপার হল রাস্তা ঘাট। রাস্তা খারাপ হওয়ার কারনে ঢাকা থেকে কয়রা সেভাবে ভাল কোন বাস আসেনা। যদিও ২/১ টা আসে সেগুলোর অবস্থা খুলনা-কয়রা সড়কের মতই। বিগত কয়েক বছর ধরে আমার অফিস এই কয়রা ইউনিয়নে একটা গবেষনা কাজ করে আসছে। সেই সুবাদে আমারো দুই বছর ধরে এখানে আসা। এবার আসার আগে হোন্ডা এক্সিডেন্ট করার কারনে হাতে আমার প্রচন্ড ব্যাথা হয়। কিন্তু কয়রা আসার লোভ আমি সামলাতে পারলাম না। আর তাই হাতে একটা ব্যান্ডেজ জাতীয় (যেটা হাত শক্ত করে ধরে রাখে প্লাস্টারের মত, নাম জানি না) কি একটা পেচিয়ে নিয়ে দিলাম ছুট।



প্রথম গন্তব্য খুলনা। খুলনা থেকে তারপর যাব কয়রা। উঠে পড়লাম গ্রীন লাইনে সকাল সাড়ে নয়টায়।



ফেরি ঘাটে ভয়াবহ জ্যাম থাকার কারনে খুলনা শহরে গিয়ে পৌছালাম রাত সাড়ে আটটায়। এত রাতে আর কোথাও না গিয়ে একটা হোটেলে গিয়ে উঠলাম। ফ্রেশ হয়ে চলে গেলাম জিরো পয়েন্টে হোটেল ডুমুরিয়াতে। এরশাদের হোটেল। আমার খুব প্রিয় একটা হোটেল (আমার প্রিয় একজন মানুষের সাজেস্ট কৃত)।

সেখানে খেলাম চুই ঝাল দিয়ে রান্না করা গরুর মাংস, ভাত এবং টক দই। আহ! এখনো যেন জিভে লেগে আছে। রাতটা কোন রকম হোটেলে কাটিয়ে দিয়ে পরের দিন সকালে উঠে একটা মাইক্রো বাস ভাড়া করে রওনা দিলাম কয়রার উদ্দ্যেশে। মাইক্রোর ড্রাইভার যাবেন পাইকগাছা পর্যন্ত। কয়রা পর্যন্ত যেতে কেউ রাজী হলেন না। দীর্ঘ তিন ঘন্টা রাস্তার সাথে যুদ্ধ করে পৌছালাম পাইকগাছা। পাইকগাছায় এসে দেখি মাঙ্গলিক শোভাযাত্রা। সেদিন ছিল জন্মাষ্টমী।







যাই হোক মাইক্রো থেকে নেমে এবার উঠলাম বাসে। কয়রা এখান থেকে আরো ৬০ কিলোমিটার। শরীর একদম ই চলছিল না। তবু উপায় নেই যেতেই হবে। বাসে উঠার পর শুরু হল তুমুল বৃষ্টি। বাস ছাড়লো, বাসে উঠার পাক্কা এক ঘন্টা পর। বাস ও চলতে থাকল আর আমি বাস থেকে প্রাকৃতিক দৃশ্য উপভোগ করতে থাকলাম লাফাতে লাফাতে। দুই ঘন্টা পর আমি কয়রা এসে পৌছাইলাম। এসেই বরাবরের মত আবারো একই ঝামেলায় পড়লাম। থাকার সমস্যা। এখানে যে তিনটা হোটেল আছে আসলে এগুলোতে কোন মতেই থাকা যায় না। কোন ভাবেই না। গত বার আমি এখানে ব্র্যাকের একটা গেস্ট হাউস আছে সেটাতে ছিলাম। এবারো সেটাতেই গিয়ে নক করলাম। তারা এবার আর আমাকে এলাও করছেন না। শুধু একটা রাত থাকতে দেবেন বলে জানান। আমিও সানন্দে রাজী হলাম। কারন কালকের কথা কালকে হবে। ফ্রেস হয়ে চলে গেলাম নূর এর হোটেলে। সেখানে গিয়ে খাবার দাবার খেয়ে খোজ পেলাম প্রশিকার একটা গেস্ট হাউজের। রাতেই গিয়ে তাদের সাথে কথা বলে পরের দিন সকালে ঘুম থেকে উঠেই সব কিছু নিয়ে গিয়ে উঠলাম প্রশিকাতে। কারন আমাকে আবার গ্রামে যেতে হবে। নাস্তা করে রওনা দিলা একেবারে সুন্দরবনের কাছ ঘেষা গ্রাম ৩ নং কয়রার উদ্দ্যেশে। এবার বাহন মোটর সাইকেল। মোটর সাইকেল আর ভ্যান গাড়ি আর নসিমন ছাড়া এখানে আর তেমন কিছু চলে না। মোটর সাইকেলে যেতে যেতে দেখলাম এক লোক বাজার থেকে সুন্দরবনের দুটো কাইর মাছ কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। আমাকে চেনেন তিনি। আসলে এখানে আমাকে অনেক মানুষই চেনেন। সন্তানের মত স্নেহ পাই আমি এদের কাছ থেকে।



গ্রামে ঢুকলাম। ঢুকার পর একটা বছরে গ্রামের অনেক পরিবর্তন দেখলাম আমি। গত বছর আমি যখন এসেছিলাম তখন এই এলাকায় কোন চাষ বাস হত না। আইলার কারনে মাটি লবনাক্ত হওয়ায় তা চাষের অনুপুযুক্ত ছিল। কিন্তু এবার মানুষ চাষ বাস শুরু করেছে। সব থেকে যেটা বেশি লাগিয়েছে তা হল সবজী। নিজের বাড়ির এমন কোন জায়গা নাই যেখানে তারা সবজী লাগান নি। কারন গত বছর তারা অনেক চড়া দামে সবজী খেতেন। আমি তাদেরকে এমন ও উদ্ভিদ খেতে দেখেছি যেটা তারা গরু ছাগলকেও খাওয়াতেন না।











ঝিলিঘাটা বাজারে যাবার রাস্তাটা এবার কিছুটা মেরামত করা হয়েছে। গত বছর তো যাওয়াই যেত না। এবার সামান্য সমস্যা হলেও পুরোটা সময় মোটর সাইকেলে বসেই গিয়েছি।



ঝিলিঘাটা বাজারে গিয়েই প্রথমে যে লোকটার দেখা মিলল সে হচ্ছে আমাদের নজরুল ভাই। তিনি এই বাজারের একমাত্র মিষ্টান্ন বিক্রেতা।



তার মিষ্টি বানানোর একটা বিশেষত্ব আছে। সে মিষ্টি তৈরি করে দুধ ছাড়াই। তাকে যখন গত বছর আমি জিজ্ঞেস করি যে দুধ ছাড়া কেন মিষ্টি বানান। উত্তরে সে বলেছিল- দুধ দিয়ে মিষ্টি বানালি, ও মিষ্টি খাবি কিডা? আইলার সময় এই এলাকার গরু ছাগল সব নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারনে এখানে দুধের দাম আর সোনার দাম সমান তাই নজরুল ভাই মিষ্টি বানান গড়া দুধ, ময়দা আর চিনি দিয়ে যেখানে ময়দার পরিমানটাই বেশি থাকে।





যখন নজরুল ভাইর সাথে কথা বলছিলাম তখন একজন চিংড়ি নিয়ে যাচ্ছিলেন। আমি সেই লোককে দাড় করিয়ে চিংড়ির ছবি তুললাম।







নজরুল ভাইয়ের সাথে কথা শেষ করে আমি চলে যাই আমার কাজে। রাস্তায় যাকেই দেখি সেই আমার পরিচিত। আসলে কি আমার দেশের বাড়ি এখান থেকে যোজন যোজন কিলোমিটার দূরে, দিনাজপুরে। এরপর ও এখানকার মানুষজন আমার কত চেনা। কত পরিচিত। সবাই আমাকে কতটা স্নেহ, কতটা সম্মান করে। এখানে আমি কারো সন্তান, কারো ভাই। আমার ভাবতেই কেন জানি চোখে পানি চলে আসে।

(চলবে)

মন্তব্য ২৮ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২৮) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:০০

কুমার মিজান বলেছেন: sundor

০১ লা নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:২৯

অগ্নি সারথি বলেছেন: ধন্যবাদ মিজান ভাই।

২| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৩৩

আমাবর্ষার চাঁদ বলেছেন: অসাধারন বর্ননা......... সাথে সুন্দর ছবি...

০১ লা নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৩০

অগ্নি সারথি বলেছেন: ধন্যবাদ। আশা করি সাথে থাকবেন বাকী পর্ব গুলোতেও।

৩| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:১৮

নীল-দর্পণ বলেছেন: সুন্দর ছবি

০১ লা নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৩০

অগ্নি সারথি বলেছেন: ধন্যবাদ। আমি আসলে সুন্দর ছবি তুলতে জানিনা।

৪| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৩৩

নির্বাসিত শব্দযোদ্ধা বলেছেন: বর্ণানা সুন্দর ছবি সুন্দর না :|

০১ লা নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৩৫

অগ্নি সারথি বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইজান, আমার মূল উদ্দেশ্য হল আইলা পরবর্তী সময়ে সেই সকল স্থানের বনজীবিদের বাস্তব চিত্র তুলে ধরা। আর তাই সেখানে ছবি খুব বেশি গুরুত্বপূর্ন মনে হয় নাই, আর ব্লগে লিখব এই ভাবনাতেও ছবি গুলা তোলা হয় না। তুলেছিলাম যেন মাঝে মধ্যে নিজে থেকে স্মৃতি রোমন্থন করতে পারি। আর ছবি তোলাতে আমি ভিষন অপটু এটা আমি অকপটে স্বীকার করি। যাই হোক আশা করি পরবর্তী পর্ব গুলোতেও সাথে থাকবেন।

৫| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:০১

ওবায়েদুল আকবর বলেছেন: ওখানোকার মানুষের পানি কিনে খেতে দেখে খুব খারাপ লেগেছিল। স্থানীয়দের দাবি ফারাক্কা আর চিংড়ীর ঘের নামক জঞ্জাল যদি না থাকত তাহলে এক বর্ষায়ই আইলার লবণাক্ততা দূর হয়ে যেত। হায়রে মানুষ, নিজের ভোগ বিলাস নিশ্চিত করার জন্য নিজেই নিজের ভবিষ্যতকে হুমকির মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে!!!

০১ লা নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৩৮

অগ্নি সারথি বলেছেন: ধন্যবাদ আকবর ভাই। বুঝলাম আপনি সেখানে গিয়েছিলেন। আপনি জেনে খুশি হবেন যে, এখন কিন্তু লবন কমার পথে। এবার প্রচুর ধান লাগাতে আমি দেখেছি কৃষকদের। গতবার ও লাগাইছিল কিছু কিন্তু বন্যায় সব নষ্ট হয়ে গিয়েছিল।

৬| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:২৫

সামুর ভক্ত বলেছেন: পোস্ট ভালো হইছে ।

০১ লা নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৩৫

অগ্নি সারথি বলেছেন: ধন্যবাদ।

৭| ০১ লা নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৪২

ময়না বলেছেন: valo laglo. somoy hoile uttor bedkashi aishen, aro valo lagbe.

০১ লা নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৫৩

অগ্নি সারথি বলেছেন: জি আমি উত্তর বেদকাশির আংশিক কিছু জায়গায় গিয়েছি। ঝিলিঘাটা বাজারের ব্রীজের ওইপার টাই কিন্তু উত্তর বেদকাশি ইউনিয়ন তাইনা? এছাড়া কাছারী বাড়ি, কাঠকাটা এসব জায়গাতেও আমি গিয়েছি। অনেক ধন্যবাদ ময়ন্া। আপনি কি উত্তর বেদকাশিতে আছেন?

৮| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:১৭

ভারসাম্য বলেছেন: ভাল লাগছে পড়তে। অনুসরণ করা শুরু করলাম। :)

০২ রা নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:১৯

অগ্নি সারথি বলেছেন: ধন্যবাদ ভারসাম্য।

৯| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৯

সরকার আলী বলেছেন: ঝিলিঘাটা বাজারে যাবার মেরামত করা রাস্তাটা পছন্দ হয়েছে। কারণ-

এরকম রাস্তায় বেখেয়ালী হয়ে দুর্ঘটনার সম্ভাবনা একেবারেই নাই:P

০২ রা নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৪:৩৯

অগ্নি সারথি বলেছেন: ধন্যবাদ। আমি জানিনা আপনার ছবিটা ঝিলিঘটা যাবার রাস্তার কিনা তবে এটা অনুমান করতে পারি যে এক বছর আগে ঝিলিঘাটার রাস্তারও অবস্থা এমন ছিল।

১০| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:০৯

মাইবম সাধন বলেছেন: দারুণ দাগ কেটেছে...

০২ রা নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৩৩

অগ্নি সারথি বলেছেন: ধন্যবাদ মাইবম সাধন। যদি সত্যিই দাগ কেটে থাকে তবে আমি স্বার্থক। আসলে একজন লেখকের কাছে এর চেয়ে বেশি আর কিছু হতে পারে না।

১১| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৫:৫৬

পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: বাংলার অনন্য সুন্দর স্থান এ ভ্রমন এবং গবেষণার মূল্যবোধে আপনাকে ধন্যবাদ ।

০২ রা নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৩৪

অগ্নি সারথি বলেছেন: আপনাকে ধন্যবাদ, এত কষ্ট করে এত বড় লেখা পড়ার জন্য।

১২| ০২ রা নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৬:৪১

েবনিটগ বলেছেন: ++

০২ রা নভেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৩৫

অগ্নি সারথি বলেছেন: ধন্যবাদ েবনিটগ।

১৩| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:১৪

রুয়াসা বলেছেন: অসাধারন। আপনি এত চমৎকার লিখেন কিভাবে? আমাকে যদি বলা হয় সামু ব্লগে আপনার প্রিয় ব্লগার কে তবে আমি বলব আপনি। আপনার লেখা এক ভাবে আমাকে দৃশ্যপটে নিয়ে গিয়ে হাজির করে, জানেন। ধন্যবাদ এমন সুন্দর একটা সিরিজ তৈরির জন্য।

০৩ রা নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:২৪

অগ্নি সারথি বলেছেন: ধন্যবাদ রুয়াসা। আমি জানিনা আমি কেমন লিখি, শুধু যা দেখি, শুনি, অনুভব করি, আমি স্বপ্নি তাই গল্পে রুপ দেই আরকি। সামু ব্লগে এমন কয়েকশত ব্লগার আছেন যারা আসলেই অনেক চমৎকার লেখেন। আমি সেখানে অতি তুচ্ছ। তবে কেউ একজনের প্রিয় ব্লগার হতে পেরে আসলেই নিজেকে ধন্য মনে হচ্ছে।

১৪| ১৭ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৩৬

অদ্বিতীয়া আমি বলেছেন: ভালো লাগলো , খুলনা ছিলাম একসময় , তাই ভালো লাগাটা একটু বেশি ।

১৭ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১০:৪৪

অগ্নি সারথি বলেছেন: ধন্যবাদ অদ্বিতীয়া

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.