নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একটা বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন নিয়ে, আমি প্রান্তিক জনতার কথা বলতে এসেছি.......!
গত পর্বের লিংকঃ
জাতিস্বরের হারানো অধ্যায়(পর্ব-১)
জাতিস্বরের হারানো অধ্যায়(পর্ব-২)
জাতিস্বরের হারানো অধ্যায়(পর্ব-৩)
মাথার ঝিম ঝিম ভাবটা তীব্র থেকে তীব্রতর হতে হতে প্রচন্ড ব্যাথায় রুপ নিয়েছে। ঠাস করে ফেটে যেতে চাইছে কিন্তু মাথা এখন ব্যাথায় মনসংযোগ করতে পারছে না কিছুতেই। অপরাধ বোধটার সাথে একটা নিশ্চিত ভয়ও জুটে গিয়েছে মনে। চরম এমনেশিয়াতে ভুগছি এটা পরিস্কার। আর এটাও নিশ্চিত যে রুমু নামের কেউ একজন ৫/৬ টা বছর আমার জীবনের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে ছিল। ভয়টা এখানেই, কেন তাকে আমি কোন ভাবেই কোথাও আবিস্কার করে উঠতে পারছিনা! আমি কি পাগল হয়ে যাচ্ছি? জানিনা তবে নিজের প্রতি ঘৃনা শুরু হয়ে গেছে প্রচন্ড। হয়তোবা মেয়েটা আমাকে পাগলের মত ভালবাসত, আর আমি তাকে কখনোই ভালবাসি নাই শুধু একটা নারীদেহের লোভে অভিনয় করে চলেছিলাম প্রতিনিয়ত। যখন দায়িত্ব নেবার প্রশ্ন এসে যায় তখন হয়তোবা আমি নির্বাক আর পাথরের মত শক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। হয়তোবা তার অকাল মৃত্যুর জন্য আমি ই দায়ী। হয়তোবা, হতে পারে অনেক কিছুই। কারন আমি পুরুষ। আমি ঈশ্বর। আর আমি যদি দায়ী না-ই হই তাহলে কি করে পারলাম আমি তার মৃত্যুর ক্ষত না শুকাতে না শুকাতেই, মাত্র দেড়/দুই বছরের মাথায় আরেকজনের সাথে ঘর বাঁধতে?
হঠাত করে খুব পরে যেতে ইচ্ছে করছে কিন্তু তার আগে এমন একজন পরিচিত মানুষ খুঁজে বের করা দরকার, যে আমার পুরো ঘটনা গুলোর আদ্যোপান্ত জানে। আমার পরিচিত অনেকের কাছ থেকে শুনেই যেহেতু রুমুকে আবিস্কার করার তাগিদ অনূভব করেছি সেহেতু এমন মানুষ খুঁজে বের করা খুব মুশকিল কিছু হবে না। আর আদ্যোপান্ত জানা বলতে বন্ধুর বিকল্প কেউ নাই।
ঢাকা শহরে প্রিয় বন্ধু হিসেবে যে কজন কে জানতাম অপু ছাড়া তাদের আর কারো কোন খবর জানিনা। জানার প্রয়োজন ও সেভাবে বোধ করি নাই কখনো। আসলে মানুষ যত বড় হতে থাকে তত সে যৌক্তিক মানুষে পরিনত হতে থাকে। অপু ঠিক বন্ধু ছিল না। ছিল ছোট ভাই। উঠতি বয়সের দূরন্ত পোলাপানের জন্য এই ‘ছোট ভাই’ আর ‘ভাই’ টার্ম টা বেশ সম্মানের। শুরুর দিকটায় তারা একজনকে গুরু তথা ভাই হিসেবে ধারন করে এরপর নিজের গন্ডা গন্ডা শিষ্য তথা ছোট ভাই তৈরি করে কিংবা করতে চায়। যারা তার কিঞ্চিত আদর্শের অনুসারী হয়। এই ভাই-ছোট ভাই সম্পর্কটা বেশ চমৎকার একটা সম্পর্ক যার কাছে নতজানু হয়েছে যুগ যুগ ধরে চলে আসা বন্ধুত্ব নামক সম্পর্কটাও। এতে সম্পর্ক নামের অটুট একটা বন্ধন আছে, শ্রদ্ধা ভক্তি আছে, আনূগত্য আছে, দায় বদ্ধতা আছে, আছে বন্ধুত্য।
ডেনমার্কে, অপুকে স্কাইপ নামক যোগাযোগ মাধ্যমে বার বার ফোন দিয়ে পাওয়া যাচ্ছিল না। প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতায় সারা বিশ্ব এখন মানুষের দোরগোড়ায়। মুহুর্তে যোজন যোজন মাইল দূরত্বকে প্রযুক্তি নিয়ে এসে দিয়েছে তার হাতের নাগালে। অথচ সবে এস এস সি পাশ করা আমি যখন ঢাকায় এসে হোস্টেলে থাকা শুরু করলাম তখন ঢাকা থেকে দিনাজপুর মাত্র সাড়ে চারশ কিলোমিটার রাস্তাকে কখনোই বিশ্বাস করে উঠতে পারতাম না। মনে হত আচ্ছা কখনো যদি যমুনা ব্রিজটা ভেঙ্গে পড়ে যায় তখন কি আর কখনো আমার বাড়ি ফেরা হবে? বাড়ি ফেরা আমার আজো হয় নি। জীবন যুদ্ধে স্বজন হীন হয়ে আমি সেই থেকে আজো লড়ে চলেছি সারা দুনিয়ার সাথে। মাঝখানে ১৫ টি বছর।
মোবাইল ফোনহীন, হোস্টেলের সেই দিনগুলোয় মা আমাকে চিঠি লিখত। কুরিয়ারে একটা চিঠি আসতে সময় লাগত প্রায় ৫ দিন। রুমের দরজা লাগিয়ে আমি মা’র সেই চিঠি পড়ে চলতাম বার বার। হাজার বার। পড়তাম আর কাঁদতাম। কখনো বা গন্ধ নিতাম, আমার মা’র গন্ধ। চিঠিগুলোর উত্তর লিখতে গিয়ে চোখের পানিতে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা নষ্ট হলেও মাকে কখনোই জানতেও দিতাম না যে আমি খারাপ আছি। কিন্তু আমার মা ঠিক বুঝে যেত। কলিজার টুকরার চিঠি পেয়ে সেও ঝরঝর করে কাদত। তারপর এল মোবাইল ফোনের যুগ। বাড়ির পাশের বাজারে শরিফুলে পল্লী ফোনের দোকান। দোকানের সামনে ‘পল্লীফোন’-মোবাইল টু মোবাইল লেখা বিশাল সাইনবোর্ড। প্রতি মিনিট ৭ টাকা। আমার বাবার এত স্বামর্থ্য ছিল না যে একটা মোবাইল সেসময় কিনে ফেলবে। ঢাকা থেকে আমি শরিফুলকে ফোন দিতাম। শরিফুল একটা ভ্যানগাড়ি পাঠিয়ে দিত আমাদের বাসায়। ভ্যানে চরে আমার মা বাজারে আসত। শরিফুল মিসকল দিত আমার ফোন দেয়া নাম্বারে। দোকানদার আমার আদেশে কল ব্যাক করত। আমাকে দিতে হত প্রতি মিনিট ৫ টাকা আর ওখানে ইনকামিং এর জন্য আমার মা’কে প্রতি মিনিট ২ টাকা করে দিতে হত। কথা বলতে বলতে প্রায় সময় ফোন কান থেকে নামিয়ে আমি টাইম চেক করতাম এবং ঠিক ৫৮/৫৯ সেকেন্ডে ফোন কাটার চেষ্টা করতাম। ০০ হয়ে গেলে দোকানদার আবার পরবর্তী মিনিটের টাকা রেখে দিত আর তখন আফসোসের কোন সীমা থাকত না।
(চলবে)
১৬ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১০:৩২
অগ্নি সারথি বলেছেন: ধন্যবাদ। আশা রাখি সামনের পর্ব গুলোতেও সাথে থাকবেন।
২| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১১:০০
রুয়াসা বলেছেন: চমতকার। বিশেষ করে ভাই-ছোট ভাই টার্মটা দারুন আর মা বিষয়টা অনেক আবেগী।
১৬ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১১:০৬
অগ্নি সারথি বলেছেন: ধন্যবাদ রুয়াসা।
©somewhere in net ltd.
১| ১৬ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ৮:৫০
মাহমুদুর রহমান সুজন বলেছেন: ভাল লাগল ভাই গল্পটা।