নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একটা বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন নিয়ে, আমি প্রান্তিক জনতার কথা বলতে এসেছি...!

অগ্নি সারথি

একটা বৈষম্যহীন সমাজের স্বপ্ন নিয়ে, আমি প্রান্তিক জনতার কথা বলতে এসেছি.......!

অগ্নি সারথি › বিস্তারিত পোস্টঃ

নজরবন্দীঃ শুধুই কি প্যারা-সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার? নাকি একই সাথে একটা নলেজ পিস!

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১:৪০



নজরবন্দী
আসাদ রহমান
বইয়ের ধরণঃ প্যারা-সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার
প্রচ্ছদঃ জাদিদ
প্রকাশকঃ এক রঙ্গা এক ঘুড়ি প্রকাশনী
প্রকাশকালঃ অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৯

লাগ ভেলকি লাগ! চোখে মুখে লাগ!

শৈশবে যখন আমরা যাদুখেলা দেখতে যেতাম, তখন প্রায়শই যাদুকরকে যাদু খেলায় প্রবেশের পূর্বে 'লাগ ভেলকি লাগ! চোখে মুখে লাগ! প্রভৃতি প্রতীকী যাদুশব্দ আওড়াতে শুনতাম। ধারনা করা হত, যাদুকর একধরনের যাদুমন্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে দর্শকের চোখে মুখে 'ভেলকি' লাগিয়ে দিয়ে দূর্দান্ত সব যাদু খেলা প্রদর্শন করতেন। দর্শকের চোখে লাগিয়ে দেয়া এই ভেলকি-ই হল মূলত নজরবন্দী! নজরবন্দী তথা চোখে ভেলকি লাগিয়ে দেবার মাধ্যমে একভাবে দর্শকের নজর তথা অন্তর্দৃষ্টির যৌক্তিক চিন্তা-ভাবনার পথ রুদ্ধ করে দেয়া হয় এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। ঘটনার পেছনের কারনের সঠিক ব্যাখ্যা না জেনে, নানান ভূল কিংবা অসমাপ্ত ব্যাখ্যায় চালিত হয়ে সমাজের মানুষগুলোও একভাবে তাদের নিজেদের নজরকে তথা বিবেক-বোধ কে রুদ্ধ করে রাখে। সমাজ ব্যাক্তির চোখে ভেলকি লাগিয়ে রেখে, সমাজের প্রয়োজনে, সমাজের মত করে, সত্য নির্মান করে দেয়। সেই সত্যই ব্যাক্তির জীবন দর্শনের একমাত্র পাথেয় হয়ে ওঠে, এর বাইরে গিয়ে ভাবনার অবকাশটুকু তার নষ্ট হয়ে যায়। আর তাই ভূত-প্রেত-অশরীরী, তন্ত্র-মন্ত্র ইত্যাদি কাল্পনিক স্বত্বাগুলো তাদের জীবনে অনেক বেশী জীবন্ত হয়ে ওঠে।

গল্প সংক্ষেপঃ
জুলকারনাইন ইসলাম পেশায় মূলত একজন গবেষক! সমাজ গবেষনার পাশাপাশি, সমাজে বহু প্রাচীন কাল হতে চর্চিত হয়ে আসা যাদুবিদ্যা, তন্ত্র-মন্ত্র, জ্বীন-ভূত, অশরীরী প্রভৃতি বিষয়গুলো তাকে ভীষন ভাবে নাড়া দিয়ে যায়। অপার্থিব এবং অলৌকিক এসব ঘটনার পাশে সশরীরে উপস্থিত থেকে জুলকারনাইন মূলত যাদুবিদ্যা, তন্ত্র-মন্ত্র, জ্বীন-ভূত, অশরীরী ইত্যাদি ঘটনার নেপথ্যের ঘটনাগুলোকে মনোবিদ্যা, বিজ্ঞান এবং ধর্মের আলোকে যোক্তিক বিশ্লেষনের মধ্য দিয়ে অনুধাবন করবার প্রয়াস চালান। আর তাই কোন এক সোমবার, সহকর্মীর নিকট হতে বিশদ ঠিকানা নিয়ে তিনি রওনা হন রুপপুরের উদ্দ্যেশে যেখানে নারায়ন গোস্বামী নামক জনৈক সিদ্ধ পুরুষ প্রতি মঙ্গলবার মাঝ রাতে তার নিজের উপর দেবী ভর করিয়ে তার হাজারো ভক্তকুলের রোগ নিরাময় করেন।

জুলকারনাইনের যাত্রায় বাদ সাধে প্রচন্ড বৃষ্টি এবং যানবাহন অপ্রতুলতা। বাধ্য হয়ে সে মাঝ রাতে আশ্রয় নেয় রুপপুর হতে মাইল ত্রিশেক আগে ঘুমপুর নামক সুনশান, নীরব গ্রাম্য একটা উপশহরে যেখানে তার দেখা মেলে উক্ত বাজারের নৈশ প্রহরী ছোরাব আলীর সাথে। রাত যত গভীর হতে থাকে, পরম ধার্মিক আর অতিথী পরায়ন নৈশ প্রহরী ছোরাব আলীর জ্ঞান-প্রজ্ঞা আর ত্রিকাল দর্শনে হতবাক হয়ে যেতে থাকে ক্লান্ত-শ্রান্ত জুলকারনাইন ইসলাম।

পরের দিন সকাল বেলা ছোরাব আলীকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না বরং বাজারের লোকজন নানান বাক-বিতন্ডায় চোর সন্দেহে জুলকারনাইনকে নিয়ে হাজির করে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের সামনে যেখানে গিয়ে তিনি জানতে পারেন তিনি যেই নৈশ প্রহরী ছোরাব আলীর নাম বারবার বলছেন বছর দশেক আগেই তার মৃত্যু হয়েছে এমনকি ঘুমপুর বাজারে ছোরাব আলীর আত্মাকে ডিউটিরত অবস্থায় দেখা মানুষ শুধু সে একা নয় বরং আরো শত শত মানুষ রয়েছে এই ভূত দেখার তালিকায়।

ইউপি চেয়ারম্যানের মোটর সাইকেল চালক বিধানকে সঙ্গী করে রুপপুর যেতে যেতে, ছোরাব আলীর পুরো ঘটনার মনবৈজ্ঞানিক বিশ্লেষন করতে করতে জুলকারনাইন রুপপুরে সেই সিদ্ধ পুরুষের আশ্রমে পৌছে তো যায় কিন্তু সেখানে গিয়ে ঘটনাগুলো একটার সাথে আরেকটা প্যাঁচ খেয়ে যেতে থাকে। মহামায়ার সাধক সিদ্ধ পুরুষ শ্রী শ্রী নারায়ন গোস্বামী, জুলকারনাইনকে অভিহিত করে একজন সত্য মানুষ হিসেবে যার পথ চেয়ে সে দশটি বছর ধরে প্রতীক্ষা করছে। একজন তান্ত্রিকের মুখ হতে ছোরাব আলীর ঘটনা, বিগ ব্যাং তত্ত্ব, কোয়ান্টাম ম্যাকানিক্স, অটোম্যাটিজম ইত্যাদি বিশ্লেষণ শোনার পর পুরোদস্তুর তালগোল হারিয়ে রুপপুর থেকে পালিয়ে যায় গবেষক জুলকারনাইন। তবে তার পালিয়ে যাওয়া নিছক পালিয়ে যাওয়া ছিলনা, সে আবারো রুপপুরে ফেরে এবং সকল সমাধান হাতে করেই!

ন জ র ব ন্দী গল্পে লেখক চেষ্ঠা করেছেন, হাজার বছর ধরে চর্চিত হয়ে আসা যাদুবিদ্যার নেপথ্যের সত্য উদঘাটনের নিমিত্ত্বে একজন সত্যিকারের তান্ত্রিকের খোঁজ জারি রেখে সমাজের মানুষের ভৌতিক তথা অতি-প্রাকৃতিক অভিজ্ঞতাগুলোর মনো-বৈজ্ঞানিক ব্যখ্যা-বিশ্লেষন হাজির করবার। গল্পের পুরোটা সময় চেষ্ঠা করা হয়েছে, গল্পের ভেতরে একটা আকাংক্ষা তৈরি করে পাঠককুলের জানাজানির স্তর তথা জ্ঞান ভান্ডার সমৃদ্ধ করবার। আর এ কারনেই গল্পের সাথে সঙ্গত ভূত-জ্বীন, তন্ত্র-মস্ত্র, স্বপ্ন ব্যাখ্যা, নিম্ন বর্গীয় মানুষের গল্প, সুফিজম, কমিউনিজম, পদার্থ বিদ্যা, এবং আরো বিস্তর বিস্তর তথ্যের সন্নিবেশ ঘটেছে।

থ্রিলারটি যত বেশী না মস্তিষ্ক প্রসূত তার থেকে অনেক বেশী গবেষণালব্ধ! প্রত্যেকটা ঘটনা এবং চরিত্রের ভেতর দিয়ে যাওয়ার পর-ই এটি একটা গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করা হয়েছে। একই সাথে এটি খুবই সুখপাঠ্য একটি গ্রন্থ, যার শব্দ এবং বাক্য চয়নে সর্বদা মনযোগী থাকবার পাশাপাশি প্রাঞ্জলতা পরিহার করে পুরো ঘটনাগুলোর একটা সাবলীল বয়ানের প্রচেষ্ঠা চালানো হয়েছে।

একবার হলেও নজরবন্দী পড়ে দেখা উচিত! অন্তত জানাজানির স্তরটা বৃদ্ধি করবার জন্যে হলেও!

মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১:৪৪

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: সুন্দর।+

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:১০

অগ্নি সারথি বলেছেন: ধন্যবাদ সেলিম ভাই! দেখা হচ্ছে বই মেলাতে আবার।

২| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:০৭

তারেক_মাহমুদ বলেছেন: শুভ কামনা।

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:১০

অগ্নি সারথি বলেছেন: ধন্যবাদ ভ্রাতা!

৩| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:২৯

রাজীব নুর বলেছেন: দেখা হবে বইমেলাতে।

৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:৫০

অগ্নি সারথি বলেছেন: জ্বি ভাই! ব্লগ ডে'তে আপনাকে না পেয়ে খুব হতাশ হয়েছিলাম।

৪| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ বিকাল ৩:৩৫

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: প্যারা-সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার বা সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার সম্পর্কিত বই বাংলা ভাষায় খুব কম বের হয়েছে। মনে হচ্ছে পড়ে দেখতে হবে। আমার আবার এগুলোর উপর কৌতূহল আছে।

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৮:৫৯

অগ্নি সারথি বলেছেন: আশা করি হতাশ হবেন না!

৫| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৯ রাত ১১:১৭

কাতিআশা বলেছেন: খুব ভাল লাগল আপনার রিভিউ টা!..সুযোগ পেলে বইটি পড়তে হবে!

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ৯:০০

অগ্নি সারথি বলেছেন: ধন্যবাদ!

৬| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সন্ধ্যা ৬:৫৩

গরল বলেছেন: অভিনন্দন ও শুভকামনা রইল।

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১০:১৫

অগ্নি সারথি বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই!

৭| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৯ সকাল ১০:১১

খায়রুল আহসান বলেছেন: বইটা যেমন হোক আর তেমন হোক, আপনার উপস্থাপনাটা বেশ সুন্দর হয়েছে। এবং কৌতুহলোদ্দীপকও বটে!
পোস্টে প্লাস + +

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.