![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বন-জঙ্গল, বৃষ্টি-কাদায় গায়ে সেই একই শার্ট। লাল আর ছাইরঙা বড় চেকের এই হাফহাতা শার্টটি গা থেকে যেন খুলতেই চান না মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট আবু কায়সার ফজলুল কবির। পানিতে ভিজলে রোদে শুকিয়ে আবার গায়ে চড়ান।
এটি ফজলুল কবিরের লাকি শার্ট বা সৌভাগ্যের জামা। নিজে ভাবতেন বটেই, সহযোদ্ধাদের কাছেও চাউর হয়ে গিয়েছিল—এই জামাটি সৌভাগ্যের প্রতীক। আর কেনই বা সেটা বিশ্বাস করা হবে না? এই শার্ট গায়ে থাকা অবস্থায় কোনো যুদ্ধই যে হারেননি লেফটেন্যান্ট ফজলুল কবির আর তাঁর সঙ্গের মুক্তিযোদ্ধারা!
২৭ বছরের সেই টগবগে তরুণ এখন একাত্তর বছরের অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল। প্রথম আলোকে বললেন, ‘মনে পড়লে এখনো আশ্চর্য লাগে। অল্প বয়স থেকেই মনে হতো, লাল রংটা আমার জন্য সৌভাগ্যের। এই ধারণা জন্মেছিল আগের বেশ কিছু ঘটনার জন্য।’
ফজলুল কবির তখন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ফোর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে চাকরি করেন। ২৭ মার্চ পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে যখন বিদ্রোহ শুরু করেন, সে সময় গুটি কয়েক পোশাকের সঙ্গে এই শার্টটিও ছিল। ‘শার্টটির রং উজ্জ্বল হওয়ায় আমি এটির ওপরে জ্যাকেট পরতাম। এই শার্ট গায়ে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে এসেছি অনেকবার,’ বললেন ফজলুল কবির।
মে কি জুন মাসের একদিনের ঘটনা। কুমিল্লার সীমান্ত এলাকা ধনপুরের সাব সেক্টর কমান্ডার তখন ফজলুল কবির। এখানকার একটা পাকিস্তানি চৌকি তিনি রেকি করতে যান লেফটেন্যান্ট মাহবুবুর রহমান, হাবিলদার মান্নান ও একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকে সঙ্গে নিয়ে। অলিখিত নিয়ম ছিল—যে পথে যাবে, সেই একই পথে ফেরা চলবে না। কিন্তু এই নিয়ম ভেঙে ফেলেন তাঁরা। ফেরার পথে পাকিস্তানি সেনাদের অতর্কিত আক্রমণে পড়েন। একটা ছোট্ট খালের ওপর মরা গাছ ফেলে সেতু তৈরি করা ছিল। সেটা পার হওয়ার সময় বৃষ্টির মতো ছুটে আসতে থাকে গুলি। ‘কিছু না ভেবেই আমরা খালের কাদা পানিতে লাফিয়ে ক্রল করে এগিয়ে যেতে শুরু করি। একটু এগিয়েই জঙ্গলের দিকে দৌড়ে যাবার সময় আবার ঝাঁকে ঝাঁকে বুলেট। শোঁ শোঁ শব্দ হচ্ছে। আমরা দৌড়াচ্ছি, তবে গায়ে কোনো গুলি লাগছে না। রূপকথার মতো বেঁচে ফিরলাম সেদিন। সেদিনও গায়ে লাকি শার্ট!’ আরেক দিন একটা গুলি এসে জ্যাকেট ফুটো করে বেরিয়ে যায়। ভেতরে জামাটা একদম অক্ষত।
এই শার্টটি শুধু ফজলুল কবিরের সৌভাগ্যের প্রতীকই নয়, এটি আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথারও এক অনন্য স্মারক। এই শার্ট আমাদের মনে করিয়ে দেয় আরেকটি শার্টের কথা। উনসত্তরে গণ-আন্দোলনের শহীদ আসাদের শার্ট। ‘আসাদের শার্ট আজ আমাদের প্রাণের পতাকা’—কবি শামসুর রাহমান অমর পঙ্ক্তিতে অম্লান করে রেখেছেন সেই শার্ট।
ফজলুল কবিরের সৌভাগ্যের জামাটি আমাদের বিজয়ের পতাকা হয়ে অনুপ্রেরণা জোগাবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। সেটি এখন ঠাঁই পেয়েছে ঢাকা সেনানিবাসে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জাদুঘর ‘বিজয় কেতনে’।
©somewhere in net ltd.
১|
০৯ ই ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:৫৫
প্রামানিক বলেছেন: ফজলুল কবিরের সৌভাগ্যের জামাটি আমাদের বিজয়ের পতাকা হয়ে অনুপ্রেরণা জোগাবে প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে। সেটি এখন ঠাঁই পেয়েছে ঢাকা সেনানিবাসে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি জাদুঘর ‘বিজয় কেতনে’।
ধন্যবাদ