নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

“ কাউকে জ্ঞান বিতরণের আগে জেনে নিও যে তার মধ্যে সেই জ্ঞানের পিপাসা আছে কি-না। অন্যথায় এ ধরণের জ্ঞান বিতরণ করা হবে এক ধরণের জবরদস্তি। জন্তুর সাথে জবরদস্তি করা যায়, মানুষের সাথে নয়। হিউম্যান উইল রিভল্ট। ” -আহমদ ছফা ।

আহমেদ রুহুল আমিন

“ মানূষের জীবনকাল মাত্র দুই দিনের যার একদিন যায় স্বপ্ন দেখতে- একদিন যায় স্বপ্ন ভাঙ্গতে ” ।

আহমেদ রুহুল আমিন › বিস্তারিত পোস্টঃ

\'৭১\' গাঁথা (**)-আহমেদ রুহুল আমিন।

১৬ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ বিকাল ৩:৪৭

'৭১' গাঁথা (**)

‘প্রজন্ম যতো 'একাত্তুরের’ তোমরা শোন,
হাজার রাতে লেখা সেই কাহিনী,
`সোনামতি` গ্রামটির বুকে এসে একদিন-
বুটপায়ে নেমেছিল ‘পাকবাহিনী’ ।
তখনো ভাঙ্গেনি গ্রামবাসীদের ঘুম –
লাল আভায় ভরেছিল লক্ষ বুলেট,
শত গ্রামবাসীর বুক ঝাঁঝরা করে
রঞ্জিত হয় আরো শত `বেয়নেট` ।
আগুনের উৎসবে ছিলনা কিছু-
`অবোধ পশু` আর `বৃদ্ধ-শিশু` ;
'ঝলশানো জীবনের' সেই- পোড়া বাতাস,
সোনামতি থেকে আজো মুছে যায়নি ।।
পুতুল বিয়ের সেই মেহেদী হলুদ-
স্বপ্নে বিভোর ছিল একটি বোন,
লেলিহান শিখা ভাঙ্গে স্বপ্নেরই ঘোর,
বেছে নিল শেষ পথ ‘আত্মহণন’ ।
কতো মা-বোন সেদিন হলো লাঞ্ছিত-
ভাগ্যের দ্বার ভেঙ্গে হলো বঞ্চিত;
এ মাটির তরে তাঁরা বীরাঙ্গনা,
রক্তের দায় শোধে বীর-সেনানী ।।
হাজার ভোরের ন্যায় সেদিনের ভোরে
'লাখো মসজিদে' হলো ভোরের আজান,
ফজরের নামাযে মুসল্লিদের-
কাতারে দাঁড়িয়েছিল আমার 'বাজান' ।
সেই কথা আজো মোরা কেমনে ভুলি-
নামাজের কাতারেও চললো 'গুলি' ,
মনের গহীণে ভাসে 'বাজানের' স্মৃতি,
‘গণকবর’ আছে কালের স্বাক্ষ্যখানি ।।
কালজয়ী সেই 'সিন্দবাদের' মতো-
টগবগে রক্তের ছিল এক ভাই ,
যুদ্ধের শিবিরে ট্রেনিং শেষে-
শত্রুর মোকাবেলায় করলো লড়াই ।
সেই ভাইয়ের তরতাজা রক্তের ঋণ-
শোধে হলো দেশ আজ মুক্ত স্বাধীন ;
লাখো বীর-শহীদের আত্মত্যাগে,
'হায়েনামুক্ত' আজ স্বদেশখানি ।।
সেই 'সোনামতি গাঁয়ে' সূর্য-রঙ্গিণ-
স্বপ্নের জাল বুণে আজো মানূষ,
সেই গাঁয়ের আকাশের নীল সীমানায়
উড়ে চলে `হায়েনাদের` নষ্ট ফানুস ।
সেই কথা আজ তোদের কেমনে বলি-
বিকৃত মূখে মোদের শুধুই ‘বুলি’ ,
আত্মত্যাগী সেই ‘স্বজনকুলে’
'শোধরানো জীবনের' দেয় হাতছানি ।।

(**) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ নামের রাষ্ট্রটির জন্ম ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে; বিস্ফোরণ, বারুদ আর রক্তের ফোয়ারার ঠিক মাঝখানে। ভূমিষ্ট হবার পর নয়টি মাস অপেক্ষা করতে হয়েছে তাকে - বিশুদ্ধ বাতাসে নিঃশ্বাস নিতে। এই নয়টি মাস ভুলে যাবার নয়, এই নয় মাসে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে যা ঘটেছে তাকে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড বিবেচনা করেছে বিশ শতকের সবচেয়ে নৃশংস পাঁচটি গণত্যার একটি হিসেবে, জাতিসংঘের হিসেব অনুযায়ী এই হত্যার মাত্রা ছিল প্রতিদিনে ছয় হাজার থেকে বারো হাজার মানুষ যার সামষ্টিক পরিমান তিরিশ লক্ষ কিংবা তার চেয়েও বেশি। এই নয়টি মাসে ধর্ষণ এবং আরো অসংখ্য ধরণের শারীরিক ও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন প্রায় সাড়ে চার লক্ষ বাঙালি নারী। গণহত্যা কিংবা মানবতাবিরোধী অপরাধের মতো বিশ্বজুড়ে ঘৃণ্য অপরাধগুলোর যতগুলি প্রকরণ রয়েছে তার প্রায় সবক'টি সংঘটিত হয়েছে ১৯৭১ সালের মার্চ থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ে।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে বাংলাদেশে ইতিহাসের নৃশংসতম গণহত্যা চালানো হয়। ২৫শে মার্চের কালোরাতে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর শুরু করা অপারেশন সার্চলাইট নামক ধ্বংসযজ্ঞ বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভের পূর্ব পর্যন্ত চলে এবং এ নয় মাসে বাংলাদেশি কিছু ঘাতক দোসরদের সহায়তায় বিপুল পরিমাণ বাঙ্গালি হত্যা করা হয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে কত মানুষ প্রাণ হারিয়েছে তা নিয়ে গণমাধ্যমে বিভিন্ন রকম পরিসংখ্যান প্রচলিত রয়েছে। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন এনাসাইক্লোপেডিয়া ও বইতে এই সংখ্যাটিকে ২,০০,০০০ থেকে শুরু করে ৩০,০০,০০০ পর্যন্ত উল্লেখ করা হয়েছে। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধে শহীদের সংখ্যাটিকে ৩০,০০,০০০ হিসেবে অনুমান করা হয়। যুদ্ধের সময় প্রায় এক কোটি শরণার্থী ভারতে আশ্রয় গ্রহণ করে, যারা সে সময় দেশত্যাগ না করলে হয়তো গণহত্যার শিকার হত। স্বাধীনতা লাভের প্রাক্কালে ১৪ ডিসেম্বর রাজাকার আল-বদর ও আল-শামস বাহিনী পাকিস্তান আর্মির নির্দেশে বাংলাদেশের প্রায় ৩০০ জন বুদ্ধিজীবীকে - যাদের মধ্যে রয়েছেন শিক্ষক, ডাক্তার, প্রকৌশলী, শিল্পী, কবি, সাহিত্যিক, বিজ্ঞানী - ধরে নিয়ে যায় এবং নির্মমভাবে হত্যা করে। পাকিস্তানের পদলেহী বাংলাদেশী বিশ্বাসঘাতক রাজাকারের দল ডিসেম্বরের শুরুতেই যুদ্ধের পরিণতি বুঝতে পেরে স্বাধীনতার ঠিক আগে আগে সুপরিকল্পিতভাবে এ হত্যাকান্ড ঘটায়। বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে তারা সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের অগ্রগতির পথ বন্ধ করে দেয়াই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য। ১৪ ডিসেম্বরে নিহত বুদ্ধিজীবীদের লাশ বিভিন্ন গণকবরে ফেলে আসা হয়, যার মধ্যে রায়েরবাজার বধ্যভূমি অন্যতম (বর্তমানে এ বধ্যভূমিতে বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধ গড়ে তোলা হয়েছে)। ঢাকা এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় পরবর্তী সময়ে বেশ কিছু গণকবর ও বধ্যভূমির সন্ধান পাওয়া গেছে এবং মাঝে মাঝেই এমন নতুন বধ্যভূমি আবিষ্কৃত হচ্ছে (উদাহরণস্বরূপ ঢাকায় অবাঙ্গালি অধ্যুষিত এলাকায় ১৯৯৯ সালের আগস্ট মাসে একটি কূপের ভেতর গণকবরের সন্ধান পাওয়া যায়) ঢাকায় অবস্থিত আমেরিকান কনসুলেটের আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের স্টেটস ডিপার্টমেন্টে পাঠানো টেলিগ্রামেও যুদ্ধ শুরুর রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও সাধারণ জনতার ওপর চালানো নৃশংস হত্যাকান্ডের উল্লেখ রয়েছে ।

(**)পঞ্চগড় জেলায় মুক্তিযুদ্ধ :

সীমান্ত পরিবেষ্টিত ও ভৌগলিক অবস্থানের দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ পঞ্চগড়ে মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময় জুড়ে সংঘটিত হয়েছে ব্যাপক যুদ্ধ।দেশের মোট ০৪টি মুক্তাঞ্চলের মধ্যে পঞ্চগড় জেলায় রয়েছে একটি। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় এ মুক্তাঞ্চলটি যুদ্ধের গতি প্রকৃতি নির্ণয়ে ও পরিকল্পনা প্রণয়নে অবিস্মরণীয় ভূমিকা রাখেছে।পঞ্চগড়ের ইতিহাসে ১৯৭১ সালে ১৭ই এপ্রিল একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। এই দিন পাক- বাহিনী দখল করে নেয় পঞ্চগড়। জ্বালিয়ে দেয় সাজানো গুছানো পঞ্চগড় শহর এবং হত্যাযজ্ঞ চালায় নির্বিচারে।

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে পঞ্চগড় জেলা ৬নং সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত ছিল। মুক্তিযুদ্ধের সময় এই সাব সেক্টরটির বে-সামরিক উপদেষ্টা হিসাবে দাযিত্ব পালন করেছিলেন তৎকালিন প্রাদেশিক পরিষদের সংসদ সদস্য এ্যাড.সিরাজুল ইসলাম ।

এ্যাড.সিরাজুল ইসলাম, এ্যাড.কমরউদ্দিন আহমেদ(এম এল এ), এ্যাড. মোশারফ হোসেন চৌধুরী (এম এল এ), কাজী হাবিবর রহমান,আব্দুল জব্বার সহ প্রমুখের নেতৃত্বে সে সময় মুক্তিযোদ্ধারা সংঘঠিত হবার পর ভারত থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিয়েছিলেন। সেই সময় এই এলাকায় ৭টি কোম্পানীর অধীনে ৪০টি মুক্তিযুদ্ধ ইউনিট পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। মুক্তিযোদ্ধা কোম্পানী কমান্ডারদের মধ্যে মাহবুব আলমের নাম উল্লেখযোগ্য। অন্যান্য কমান্ডাররা হলেন, মোঃ মতিয়ার রহমান, মোঃ তরিকুল ইসলাম,মোঃ মোকলেছার রহমান, মোঃ দুলাল হোসেন, আব্দুর রহমান এবং আব্দুল গণি। এ ছাড়া বাংলাদেশ লিবারেশন ফোর্স (বি এল এফ) এর আঞ্চলিক কমান্ডার ছিলেন বিশিষ্ট ছাত্র নেতা নাজিম উদ্দীন আহমেদ।

১৯৭১ এর নভেম্বর মাসের ২৮ তারিখে মিত্র বাহিনীর সহযোগিতায় মুক্তিবাহিনী পাক সেনাদের উপর বেশ জোরালো ভাবে আক্রমন করে বসে। সেদিনের সেই ঝড়ো আক্রমের মধ্যে দিয়েই ১৯৭১সালের ২৯শে নভেম্বর পাক হানাদারসেনাবাহিনী মুক্ত হয় এ অঞ্চল। সম্পূর্নভাবে স্বাধীনতার স্বাদ সেদিনই প্রথম পেয়ছিলো এই তৎকালীন ঠাকুরগাঁও মহকুমার অন্তর্গত এই থানাটির মানুষেরা।

(**) তথ্য সূত্র ও ছবি : বাংলাদেশের উইকিপিডিয়া ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.