নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
“ মানূষের জীবনকাল মাত্র দুই দিনের যার একদিন যায় স্বপ্ন দেখতে- একদিন যায় স্বপ্ন ভাঙ্গতে ” ।
একটি জীবনঘনিষ্ঠ গল্প । উত্তরবঙ্গের একটি জেলা শহরে খুব কাছ থেকে দেখা একটি নিম্নবিত্ত পরিবারের নানা উত্থান পতনের এই কাহিনী এই সমাজে- যাদের কেউ খোঁজখবর রাখেনা বা কোনদিন কেউ খোঁজখবর রাখার চেষ্টাও করেনি .... !
এটি একটি বড়গল্প, তাই ধারাবাহিকভাবে পর্ব আকারে সামু‘র সম্মানীত পাঠকদের জন্য পোস্ট করলাম ।
(পর্ব-৩)
সারাদিন বেচাবিক্রি করে রাতের বেলা দোকানের বেচে যাওয়া মিষ্টি-মন্ডা ও অন্যান্য সামগ্রী ভ্যানে তুলতে যাবে এমন সময় মনে হলো ভোর বেলার সেই ভাড়বিড়ালের বাচ্চা দু‘টোকে বাড়িতে নিয়ে যাবে কিন্তু বাঁধ সাধে কেনুমিয়া । বুনো বিড়াল যে পোষ মানেনা সেটা সে আজ নুতন জানলো । বাপের ধমকে আর ভাড়বিড়ালের বাচ্চাগুলো নিতে পারেনা । আলেয়া প্রচন্ড মনখারাপ করে সে রাতে বাড়িতে রাতের খাবার না খেয়েই শুয়ে পড়ে । এই নিয়ে বাপ-বেটির মধ্যে মান অভিমানের পালা শেষ হয় পরের দিন যখন তার বাবা ভিতরগড় মডেলহাট বাজার থেকে নুতন জামা ও সেন্ডেল এনে তার হাতে দেয় । কিযে আনন্দ লাগে তার । বিকেলবেলা তাড়াতাড়ি দোকান থেকে বাড়ি ফিরে নুতন জামা-স্যান্ডেল পড়ে নদীর ধারে এমনিতে ঘুরতে যেয়ে দেখে কামরুল অবাক বিস্ময়ে তার দিকে চেয়ে আছে । কেন যেন আজ কামরুলের চোখে তাকাতে পারলোনা সে । একদৌড়ে বাড়িতে চলে আসে সে ।
কিছুদিন পর মেয়ে বড় হয়ে যাচ্ছে বলে লোকে সমালোচনা করায় আলেয়াকে আর কেনুমিয়া দোকানে যেতে দেয়না । তার পরিবর্তে কামরুলকেই দোকনে কাজ দেয় স্থায়ীভাবে । থাকা-খাওয়া ফিরি দিনশেষে বিশটাকা হাজিরা । তার মামার বাড়িতেই রাত থাকা । হোটেলের ভাল খাবার ও পকেটের সারের কারণে কিছুদিনের মধ্যে কামরুল পিচ্চি থেকে এক জোয়ান মরদে পরিণত হয় । কেনুমিয়ার বয়স বাড়তে থাকে এবং আস্তে আস্তে কামুর উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে । বড়মেয়ে মরিয়মকেকে বিয়ে দেয় পার্শ্ববর্তী গ্রামে মকর্দমডাংগায় । জামাই চাকরী করে ঢাকার নারায়নগঞ্জের রডমিলে । বিয়ের কিছুদিন পরেই জামাই কুলসুমকে সাথে নিয়ে যায় । এদিকে হঠাৎ করে কেনুমিয়ার বউ মারা যায় শরীরে রক্তশুণ্যতার রোগে ভুগে । তার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ে । এখন দুই মেয়েকে নিয়ে সে কি করবে... ?
..................................................................................................................................................................................................................................................................................................................................................
মা মরার শোক কাটতে না কাটতে মেয়েরা অবাক হয়ে দেখে বাড়িতে তাদের নুতন মা এসেছে । প্রথম প্রথম কিছুদিন মেয়েদেরকে আদরযত্ন করলেও একসময় তাদেরকে আর সহ্য করতে পারেনা এই নুতন মা । এদিকে তার নুতন মায়ের একটি ছেলেও জন্ম নেয় । ওদিকে ছোটবোন রহিমাকে ঢাকায় নিয়ে যায় মরিয়ম । এরইমধ্যে মা মরা মেয়ে বলে গ্রামবাসী ও আনসার চৌকিদারের প্রস্তাবের মাধ্যমে কামরুলের সাথে আলেয়ার বিয়ে দেয়া হয় ।
কিছু দিনের মধ্যে আলেয়ার ঘর আলো করে একটি ছেলে শিশু জন্ম নেয় । গরীবের ঘরে জন্ম নেওয়া সন্তানের ঘটা করে কেউ নাম রাখেনা বলে নাম পড়ে যায় 'বাবু' । ওই নামেই ছেলের নাম হয় । প্রথম প্রথম আলেয়া -কামরুলের সংসার বেশ ভালই চলছিল । হোটেলে বেচা-কেনা হয় বেশুমার । আগে শুধু চা-নাস্তা বিক্রি হতো । এখন পোল্ট্রির ভুনা মাংসের সাথে ভাতও রাখে । এলাকার খেটে খাওয়া নারী- পুরুষেরা হোটেলেই দুপুরের খাবার সেরে নেয় । বাড়ির খাবার নাকি তাদের মজা লাগেনা । হোটেলের নাম লোকে দিয়েছে 'শশুর-জামাই' হোটেল । কিন্তু শ্বশুরের গা সয় বটে, সৎশাশুরীর চোখে সয়না । শশুরের কানে নানা কুমন্ত্রণা দিয়ে কান ভারি করতে থাকে.. । ‘শতকথায় সতির মন টলে’ এই কথার সত্যতা মিলে যখন শশুর-জামাই-মেয়ের মধ্যে দা-কুমড়োর সম্পর্ক তৈরী হতে সময় লাগেনা ভাটি বয়সে উজান বয়সী নুতন বউ পেয়ে কেনু মিয়া যেন আরো চাঙ্গা হয়ে উঠে । বউকে নিয়ে নুতন করে চায়ের দোকানে বসা শুরু করে । ফলস্বরুপ, কামরুল খুব মনে কষ্ট নিয়ে শশুরের দোকান থেকে বের হয়ে কিছুদিন চাবাগানে শ্রমিকের কাজ করে । চাপাতার মূল্য কমার কারণে পোষাতে না পেরে ভজনপুরে পাথর শ্রমিকের কাজ নেয় । কিন্তু খুব খাটুনির কাজ হওয়ায় পাথরের কাজ বাদ দিয়ে আলেয়াকে নিয়ে পঞ্চগড় শহরের তুলারডাঙ্গায় বাসাভাড়া নেয় । পঞ্চগড় শহরের একটি ভাতের হোটেলে কাজ নেয় সে আর আলেয়া কামাতপাড়ায় একজন কলেজ শিক্ষক তথা প্রফেসারের বাসায় ঠিকা কাজ নেয় । প্রফেসারের বউ আবার প্রাইমারী স্কুলের শিক্ষক সবাই বলে মাস্টারনি আপা । পিঠেপিঠি দুই ছেলে সন্তানসহ ছিমছাম সুখী পরিবার তাদের । আলেয়ার সুন্দর গোছানো কাজ স্যার -আপার খুব পছন্দ । খুশি হয়ে তারা তাকে নিয়মিত বকশিসও দেয় । আলেয়ার খুব আনন্দ হয় যখন শোলমাছের পোনার মতন তাঁদের ছেলেদুটো'কে স্কুল ড্রেস পরিয়ে সকালবেলা স্কুলে পাঠায় । একইসাথে তার নিজের ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে ঠিক ততটা বিষাদে মন ভারি হয়ে উঠে - ঠিক রোঁদের ফাকে একটুখানি কালোমেঘে ঢাকা আসমানের মতো । তিন বছর বয়সের ছেলে'তো বুঝেনা আলেয়াদের সন্তানদের ভাগ্য সৃষ্টিকর্তা নির্ধারন করেছেন করোতোয়া নদীতে বর্ষায় উজান থেকে ভেসে আসা কচুরীপানার মতো । এই ছেলের ভবিষ্যৎ কি হবে তা ভেবে ভেবে আলেয়া খুবই চিন্তিত । সে কখনোও চায়না ছেলেটা তার স্বামীর মতো মানুষের হোটেলে কাজ করুক ।
ইতিমধ্যে আলেয়া আবারও কনসিপ্ট করে । তার দুঃশ্চিন্তার ভার দিন দিন ভারি হতে থাকে । এই অবস্থায় আপার বাসায় কাজ করে সকালে ও সন্ধ্যাবেলা । রাস্তা সংলগ্ন বাসা হওয়ায় দরজা একটুখানি খোলা পেলে বেওয়ারিশ বিড়ালদের অনুপ্রবেশ আপা সহ্য করতে পারেননা । বিশেষ করে, টাইলস এর মেঝে নোংরা হবে ভেবে বিড়াল কিংবা নোংরা পায়ে কারো ঘরে ঢোকা নিষেধ করা আছে আপার । কিন্তু তার অবুঝ বাবু'তো নাবুঝেই অনেক সময় রুমে ঢুকে পড়ে এতে সে প্রায়ই বিব্রতবোধ করে । সুতরাং ছেলেটি তার কাজের সময়ের পুরোটা সিঁড়ির নীচের খোলা জায়গায় কখনো একা একা কখনো বেওয়ারিশ বিড়ালের সাথে খেলে । একবার সন্ধ্যায় কিচেনরুমে তরকারি কোটায় ব্যস্ত আলেয়া । হঠাৎ লক্ষ্য করে, একটি মা বিড়াল মুখে কিছু নিয়ে দৌড়ে ঘরে ঢুকে আলমারির পাশে রাখা প্লাস্টিকের রেকের তাকে কি যেন রেখে যায়...। কাছে গিয়ে লক্ষ্য করে নরম তুলতুলে গায়ের একজোড়া ধবধবে সাদা বিড়ালছানা । সবেমাত্র চোখ ফুটেছে । হাত দিয়ে ধরতে গেলে ফোঁস করে উঠে তাদের ‘বন্যতা’ জানান দেয় ।
( ক্রমশঃ )
১০ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১০:৩৫
আহমেদ রুহুল আমিন বলেছেন: ঠিক বলেছেন, মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ ।
২| ১০ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ২:০৬
রাজীব নুর বলেছেন: ঘটে যাওয়া ঘটনা।
১০ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১০:৩৬
আহমেদ রুহুল আমিন বলেছেন: ধন্যবাদ.।।
©somewhere in net ltd.
১| ১০ ই অক্টোবর, ২০২০ রাত ১২:০৭
মা.হাসান বলেছেন: বেওয়ারিশ বিড়াল ছানা তাও ফোস করে উঠতে পারে, গরীব মানুষের বাচ্চার তো সে সুযোগও নেই।
নিয়তি।