নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
“ মানূষের জীবনকাল মাত্র দুই দিনের যার একদিন যায় স্বপ্ন দেখতে- একদিন যায় স্বপ্ন ভাঙ্গতে ” ।
ছেলেটার ডান হাতের কব্জী ছাড়ছেনা দীর্ঘক্ষণ পাকসেনার হাবিলদার মুন্সিখান । ডান কাধে ঝোলানো চাইনিজ স্টেনগান যাতে ডান হাত ওয়েট নিয়ন্ত্রণে ব্যস্ত ।
আবারো বলে-
: বলো - তোম মুক্তি হ্যায়।
: না স্যার, হাম মুক্তি নেহি হ্যায়, হাম ঠাকুরগাঁওকা পিটিআই ছে ট্রেনিং কিয়্যা হ্যায় ।
: সাস বাতকে বলো, তোমহারা মুক্তিফৌজ দোস্ত কাহা কাহা হ্যায়।
: হাম জানেগা নেহী......
প্রায় পনের-বিশ মিনিট পাকা সড়ক হাটার পর গ্রামের একমাত্র স্কুলঘরটির পেছনের কাচা রাস্তায় ডানদিকের গ্রামের দিকে মোড় নেয়। কিন্তু কিছুতেই হাত ছাড়ছেনা।
গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। বর্ষা আরম্ভ হবে মনে হচ্ছে কেননা, এখন আষাঢ় মাস। সামনে পরিত্যক্ত যুগিবাড়ির বিশাল সাইজের মাটির চুলো যাতে শামুকের খোল পুড়িয়ে চুন বানানো হয়েছে গত কযেকদিন আগেও। এখন বৃষ্টির পানির ছিটায় চুলোর খানিকটা গলে পড়েছে। শুনেছে, তার ক্লাসফ্রেন্ড যুগিবুড়ার একমাত্র ছেলে নাজিমও নাকি যুদ্ধে গেছে। এই বেটারা কিভাবে টের পেলো...! যুগিবাড়ির সামনে রাস্তার ধারে ডোবা যা গলাঅব্ধি পানিতে ভর্তি কয়েকটি ব্যাঙ বর্ষাকে স্বাগত জানাচ্ছে, সেখানে একঝটকায় পাকসেনাটিকে ঠেলে ফেলে দিয়ে সোজা দৌড় দিয়ে ঈদগাহ্ ময়দানের সড়ার জঙল ও চাওয়াই নদী পাড় হয়ে পখিলাগা গ্রামের কুদ্দুস মাস্টারের বাড়িতে গিয়ে টের পায় আরেক বিপদসঙ্কুল পরিবেশের। তার হাইস্কুল জীবনের পড়ুয়া পাঁচ-ছয় জন বন্ধু ( যারা অলরেডি ট্রেনিং নিয়ে যুদ্ধ করছে) হুঙ্কার দিয়ে বলে-
: হামরা যুদ্ধের ট্রেনিং করছি, আর তুই বেটা মাস্টারী ট্রেনিং করছিস, তা হুবা নাহায়। আইজে হামার সাথে চল শিলিগুড়িত মুক্তির খাতায় নাম দিয়া ট্রেনিং কর।
: ঠিক আছে ভাইয়া যাম, তার আগে চল যুগিবাড়ির সামনত ডোবাত একটাক ফালাইচু ওইডাক শেষ করে আসি, একদম সময় নাই... চলো...।
এই বলে সবাই নদী পাড় হয়ে দৌড় দিয়ে জঙ্গল-সড়া পাড় হয়ে যুগিবাড়ির সামনে আসলে দেখতে পায় পাকসেনাটি তখন ডোবার পানি খেয়ে নাজুক অবস্থায় পাড়ে বসে হাফাচ্ছে । আর তখনি দুর থেকে ব্রাশফায়ারে তার বুক ঝাঝরা করে দিয়ে নিরাপদ দুরত্বে চলে যায় মুক্তিযোদ্ধারা ।
বন্ধুরা ধন্যবাদ দেয় তাকে । আজই মাকে বলে
বাড়ি থেকে বিদায় নিয়ে সন্ধ্যায় আসবে মুক্তিযুদ্ধে যোগ দিতে- এই বলে সোজা আলপথ ধরে বিকল্প পথে নদী পার হয়ে বাড়ির দিকে যখন রওয়ানা দেয় তখন সবেমাত্র মাথার উপর অস্তগামী সুর্যটা পশ্চিম দিকে হেলে পড়ে লাল গোল কাষার থালার মতো হওয়া শুরু করেছে। যে কাষার থালায় মা সকাল বেলা পান্তা ভাতের সাথে রসুনের কচি ডোগা আর পেয়াজের ঢেপের কুঁচি - হলুদ সরষের ঝাঁঝালো তেলমাখা লাল আলুর ভর্তা বেড়ে দিতো তা এখন খাওয়ার খুব ইচ্ছা জাগছে কেননা, আজকে এই খান শালার পাল্লায় পরে সারাটাদিন পেটে কোন দানা-পানি পড়েনি...।
------------------------
২| ২৭ শে মার্চ, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:১২
আহমেদ রুহুল আমিন বলেছেন: গল্পটি সত্য ঘটনা অবলম্বনে রচিত। পড়ার জন্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। শুভকামনা সততঃ।
©somewhere in net ltd.
১| ২৭ শে মার্চ, ২০২২ দুপুর ১:২৭
রাজীব নুর বলেছেন: পড়লাম। সুন্দর গল্প।