নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

রোদের ফোঁটা

আমি সাধারণ মুসলমানদের মধ্যে একজন ...

রোদের ফোঁটা

আমি সাধারণ মুসলমানদের মধ্যে একজন ...

রোদের ফোঁটা › বিস্তারিত পোস্টঃ

কেন আমার ইসলাম অধ্যয়ন করা উচিত?

২৩ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৯:৩৬

উজবেকিস্তানে অনেক বৎসর আগে একটি শিশু বালক অন্ধ হয়ে জন্মেছিল। তার মাতা, যিনি ছিলেন একজন সত্যিকারের মু’মিনা, আশা হারাননি আল্লাহ্‌র রহমত থেকে- যাঁর কাছে রয়েছে ছোট্ট শিশুটিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে দেয়ার শক্তি। তিনি তার সন্তানের দৃষ্টিশক্তির জন্য ক্রমাগত দোয়া করে যেতে লাগলেন। আর কিছু বছরের মধ্যেই বালকটি তার দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেল।



তিনি হয়েছিলেন বিধবা, আর বালকটি হয়েছিল এতিম। তিনি তার সন্তানকে নিয়ে মক্কাতে গিয়েছিলেন যাতে সে ইসলাম ধর্মের শিক্ষা লাভ করতে পারে। তিনি তার সন্তানকে আলেম-ওলামাদের সানিদ্ধে থাকার আয়োজন করেছিলেন, এবং এরই থেকে বালকটি হাদিস শাস্ত্রের শিক্ষা লাভ করতে শুরু করল। তিনি রাসুলুল্লাহ( সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সহীহ হাদিস সংগ্রহের জন্য দূর দুরান্তের গ্রামে-গঞ্জে সফর করতেন। তিনি যে কোন হাদিস গ্রহণ করার পূর্বে দু’রাকাত সালাত আদায় করে নিতেন। তাঁর মাতা তাঁর নাম রেখেছিলেন- মুহাম্মাদ ইবনে ইসমাইল। আমরা আজ তার পরিচয় জানি সেই কিতাবের মাধ্যমে, যার সংকলন তিনি করেছিলেন, যে বইটির স্থান সত্যতার দিক থেকে রয়েছে কোরআনের পরেইঃ সহীহ আল-ইমাম-আল-বুখারি!



অন্য কোন এক জায়গায়, অন্য কোন এক সময়ে, বাগদাদের হিমশীতল বাতাস জাগিয়ে তুলে অন্য আরেকটি বালককে। ফজরের বেশ আগেই তার মা তাঁকে গরম কম্বলে জরিয়ে নিতেন ও আঁধারের মাঝে তাঁকে নিয়ে এগিয়ে যেতেন, এবং এটা নিশ্চিত করতেন সে যেন নিরাপদে মসজিদে পৌঁছে যায়। ফজরের পর তিনি সে সময়ের বিখ্যাত আলেমদের কাছে হাদিস অধ্যয়ন করতেন, আর তাঁর মা তাঁর অপেক্ষায় থাকতেন। সূর্যাস্তের বেশ কিছু সময় পরে, তাঁর মা তাঁর সাথে বাইরে দেখা করতেন এবং তাঁরা একসাথে হেঁটে বাসায় ফিরতেন। তিনি সত্যিকার অর্থে একজন সফল মা ছিলেন, কারণ তাঁর সন্তান বড় হয়ে মুসলিম উম্মতের একজন ইমাম হলেন, সেই ইমাম যিনি আহাম্মদ ইবনে হাম্বাল নামে প্রসিদ্ধ। (মানাকিব আহ্মাদ, ইবনে আল-জওজি)।



ইমাম সুয়ুতি তাঁর প্রথম বই, তাফসির বিসমিল্লাহ্‌ আর-রাহমান আর-রাহিম, লিখেছিলেন যখন তিনি ছিলেন মাত্র দ্বিতীয় শ্রেণীতে!





প্রিয় ভাই ও বোনেরা, কেন আমাদের ইসলাম এর এই তারকাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করা উচিত?



ইনশ”আল্লাহ আমরা যে বিষয়টি শিখবো তা অন্য কোন কিছুর মত নয়। এই শিক্ষা হছে আল্লাহ তা’লার প্রদত্ত আইন যা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছেন নবীরা। রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর এই সম্পদের সংরক্ষণ ও সুরক্ষা করা আমাদেরই দায়িত্ব। এটি এমন একটি কাজ যা মনোযোগী ও পরিশ্রমী ভাই ও বোনদের ছাড়া সম্ভব নয়-যারা প্রস্তুত রয়েছেন সারাবেলা ও লম্বা রাত অধ্যয়ন করতে, অনুধাবন করতে এবং অন্যদের শিখাতে।



প্রতিটি ইসলামিক পুনরুভ্যুত্থান কোন একটি বিষয়ের উপর প্রতিষ্ঠিত। কিছু পুনরুভ্যুত্থান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আবেগের উপর, কিছু হয়েছে রাজনীতির উপর। আপনি কি জানেন যখন দুর্দশার বাতাস বইবে তখন কোনটি দৃঢ়তার সাথে দাঁড়িয়ে থাকবে? এটি হবে সেটাই যার গঠন হয়েছে সেই সুশিক্ষার উপর যার ভিত্তি হল আল্লাহ তা’লার কথা ও রাসুলাল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নত।



একদা এক সৎ লোক সমুদ্র সৈকতে দাঁড়িয়ে প্রত্যক্ষ করছিল-কিভাবে সমুদ্রের ঢেউ একটি মাছকে ডানে বামে ও উপরে নিচে আছড়ে ফেলছিল। লোকটি সিদ্ধান্ত নিলো যে তার মাছটিকে বাঁচাতে হবে। সে সমুদ্রে ঝাঁপিয়ে পড়ে মাছটির লেজ ধড়ে ফেললো। এরপর সে কূলে ফিরে মাছটিকে সৈকতে ছুঁড়ে মারল- এবং সন্তুষ্ট হোল এই ভেবে যে সে মাছটিকে বাঁচাতে পেরেছে!







প্রিয় ভাই ও বোনেরা,

যখন আমরা আল্লাহ্‌র পথ কোনটা সেটা জানা ছাড়াই আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির জন্য কাজ করতে যাই, তখন বেশিভাগ সময়ই আমরা এই লোকটির মতই কাজ করি।



আমরা বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তির যুগে বাস করছি। আমাদের ঘরে আজ প্রতিটি কোণা আলোকিত- অথচ মাত্র গতকালই আমাদের পূর্বপুরুষেরা পড়তেন চাঁদের আলোয়। এতটা সহজতার কারণে আমাদের ইলম আরও সমৃদ্ধ হওয়া উচিত নয় কি? অবশ্যই উচিত। কিন্তু তা হয়নি।



প্রিয় ভাই ও বোনেরা, আমরা জানি যে যখন একটা কিছুর পুরষ্কারটা অনেক বড়, তা অর্জন করতে যে দায়িত্বের প্রয়োজন, সেটাও অনেক বড় হওয়া উচিত। আর এর কারণেই, আমরা দেখতে পাই সেই বিশাল পুরষ্কার যার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে সেইসব আলেম ও ইসলামের ছাত্রদের প্রতি-কারণ এর পেছনে প্রয়োজন অনেক কঠিন পরিশ্রম।



আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে কেহ (দ্বীনের) ইল্ম অর্জনের উদ্দেশ্যে বের হবে, আল্লাহ্‌ তা’আলা তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দিবেন”-মুসলিম।



শায়খ আব্দুর রাহমান আস-সাদি বলেছেন, “যে পথই একজন বেছে নিক না কেন, হোক সেটা শারীরিক পরিশ্রমের মাধ্যমে বা অন্য কোন ভাবে, সেটি যদি তাকে ইল্ম অর্জন করতে সাহায্য করে, তাহলে সে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর সেই বাণী মেনে চলছে- “যে কেহ (দ্বীনের) ইল্ম অর্জনের উদ্দেশে বের হবে, আল্লাহ্‌ তা’আলা তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দিবেন।”



রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের বলেছেন যে যখন কেউ ইসলাম এর শিক্ষা অন্বেষণ করার জন্য বের হয়, এটা হল একটা সঙ্কেত যে আল্লাহ্‌ তাকে ভালবাসেন এবং তিনি তার জন্য উভয় জগতের মঙ্গল চান।



মুওয়া’উইয়া ইবনে সুফিয়ান (রহঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “আল্লাহ্‌ তা’আলা যার ভাল চান, তাকে তিনি ফিকাহ এর ইল্ম দান করেন।”



আর আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের বলেছেন যে ন্যায়পরায়ণ আলিমরা আল্লাহর কাছে এমন এক জায়গা পাবেন যেটি পর্যন্ত অন্য কেউ পৌঁছাতে পারবে না, এবং তারা হলেন রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর কাজের উত্তরসূরি- আল্লাহ্‌র বাণী এই পৃথিবীতে পৌঁছে দেয়ার জন্য।



আল্লাহ্‌র রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “ একজন এবাদতকারির (আবেদের) কাছে একজন আলেমের গুরুত্ত্ব ততখানি যতোটা একটি পূর্ণ চন্দ্রের গুরুত্ত্ব অন্যসব তারাদের কাছে। এবং নিশ্চয়ই আলেমরাই হলেন নবীদের উত্তরাধিকারী। নিশ্চয়ই নবীরা দীনার বা দিরহাম রেখে যাননি, বরং রেখে গিয়েছেন ইলম। কাজেই যে কেউ তা গ্রহণ করবে, সে অর্জন করবে এক বরকতময় (যথেষ্ট) অংশ”।–সাহীহ, আবু দাউদ, তিরমিজি ও ইবনে মাজা হতে বর্ণিত।







ইসলামের ইল্ম অর্জনকারীদের অবস্থান এমন পর্যায় পৌঁছে যে আল্লাহ্‌ (জাল্লা-শানুহু ওয়া তাকাদ্দাসাত আসমা’উহু) এবং ফেরেশতারা তার জন্য দোয়া করেন! আবু উমামাহ থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ ও তাঁর ফেরেশতারা, এমনকি গর্তের পিপীলিকা ও সমুদ্রের মাছেরাও তার জন্য দোয়া করে যে অন্যকে ভাল কিছু শিক্ষা দেয়।”- , সাহীহ, তাবারানি হতে বর্ণিত।





রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)ও তাদের জন্য দোয়া করতেন। তিনি বলেছেন, যেমন বর্ণনা করেছেন জায়িদ ইবনে সাবিত (রহঃ), “ আল্লাহ্‌ তাকে আলো ( এবং সুখ ও চেহারার সৌন্দর্য) দান করুক যে আমাদের থেকে একটি হাদিস শুনেছে ও মুখস্ত করে রেখেছে যতক্ষণ না সে অন্য কারো কাছে তা পৌঁছে দেয়।“- সাহীহ, তিরমিজি হতে বর্ণিত।







ইমাই বুখারি গ্রহণ করতেন যার থেকে-এরকম একজন হাদিসের আলেম, হিশাম ইবনে আম্মার একটি ঘটনা বর্ণনা করেন যেটি ঘটেছিল যখন তার বয়স ছিল আট। তিনি বলেন, “আমার বাবা একটি ঘর বিক্রয় করে দিয়েছিলেন যাতে আমি হজ্জে যেতে পারি (ও দ্বীন ইসলাম শিক্ষা করতে পারি)। যখন আমি মদিনা পৌঁছলাম, আমি ইমাম মালিকের শিক্ষাদান কর্মসূচীতে গেলাম। তিনি তাঁর ছাত্রদের মাঝে রাজার মত বসে ছিলেন। লোকেরা তাকে প্রশ্ন জিজ্ঞেশ করতো আর তিনি উত্তর দিতেন। আমি যখন ভিড়ের মাঝে প্রবেশ করলাম ও আমার প্রশ্ন করার পালা এলো, আমি বললাম, “হাদ্দিথনী (পড়ে শুনান)!” তিনি বললেন, “তুমিই বরং পড়”। আমি বললাম, “না, আপনি হাদ্দিথনী!” ইমাম মালিক বললেন, “না তুমি পড়!” যখন আমি পাল্টা তর্ক করতে লাগলাম, তিনি আরেকজন ছাত্রকে নির্দেশ দিলেন-“এই ছেলেটার সাথে যাও আর তাকে ১৫ বার আঘাত কর!” সেই ছাত্রটি আমাকে বাহিরে নিয়ে গেল ও ১৫ বার একটি লাঠি দিয়ে আঘাত করলো আর এরপর আমাকে ইমাম মালিকের কাছে ফেরত নিয়ে গেল। আমি বললাম, “আপনি আমার সাথে জুলুম (অন্যায়) করেছেন! আমার বাবা বাড়ি বিক্রি করে আমাকে আপনার কাছে পাঠিয়েছেন, যাতে আমি আপনার শিক্ষাদানে অংশগ্রহন করতে পারি এবং ইল্ম হাসিল করে সম্মানিত হতে পারি। আর আপনি কিনা কোনরকম দোষ ছাড়াই আমাকে ১৫ বার আঘাত করলেন! আমি আপনাকে ক্ষমা করব না!” ইমাম মালিক বললেন, “এই জুলুমের প্রায়শ্চিত্ত কি হতে পারে?” আমি জবাবে বললাম, “ আপনার পক্ষ হতে আমাকে ১৫টি হাদিস শোনাতে হবে, এটিই হল প্রায়শ্চিত্ত”। তখন ইমাম মালিক আমাকে হাদিস পড়ে শোনাতে শুরু করলান এবং একে একে ১৫টি হাদিস পড়লেন। তিনি থামতেই আমি বললাম, “আমাকে আরও মারুন এবং আরও হাদিস শোনান”। আমি মালিক হাসলেন ও বললেন, “ যাও।”– ইমাম আধ দাহাবির মা’রিফাত আল-কুররা’ আল-কিবার বই হতে।







সময়ের প্রথম হতেই ভাল কাজ সম্পাদনকারী ও মন্দ কাজ যারা করে তাদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হয়ে আসছে- আদম(আঃ) বনাম শয়তান, মুসা (আঃ) বনাম ফেরাউন, মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বনাম আবু জাহেল। আজও সেই প্রতিযোগিতার সমাপ্তি ঘটেনি। চিন্তা করে দেখুন- মন্দ কাজকারিরা কতটুকু পরিশ্রম করছে আর আমরা এর বদলে কি করছি?



ওমর (রাদিয়াল্লাহু আনহু) একবার বললেন, “আমি গুনাহগারের জলদ ( শক্তি ও বদ আগ্রহ) হতে ও খোদাভীরুর অলসতা হতে আল্লাহ্‌র নিকট আশ্রয় চাই”। সুবহানআল্লাহ, যেন তিনি সেই সময়ের কথাই অবলোকন করছিলেন যে সময়ে আমরা আজ বাস করছি।





আমরা কি করে রাত্রিতে ২টি রাকাত সালাত আদায় করতে অলসতা বোধ করি, যখন এই দুনিয়ার মানুষ সারা রাত কাটায় সিনেমা দেখে, যার মধ্যে এমনও রয়েছে যেগুলির অনুবাদ (সাবটাইটেল) স্ক্রীনের নিচ থেকে পড়তে হয়? আমরা কিভাবে ২টি ঘন্টা পড়তে অলসতা বোধ করি, যেখানে এই দুনিয়ার মানুষ- যারা আরও আরও কামাই করতে চায় যাতে তারা তাদের গুনাহের কাজ চালিয়ে যেতে পারে- দিনের পর দিন তারা সারা রাত্র জেগে তাদের পরীক্ষার জন্য পড়তে পারে? আমরা কেন অল্প কিছু টাকা দিয়ে একটি ইসলামিক বই কিনতে পিছিয়ে যাই, যেখানে এই দুনিয়ার মানুষ শত থেকে হাজার টাকা খরচ করে চলেছে তাদের গুনাহের পিছে?



কি সমস্যা? হয়েছেটা কি আমাদের?



তাদের কথা শুনুন যারা আমাদের আগে এসেছেন। এক ফকিহ বলেন, “ অনেক বছর ধরে আমি হারিশা ( এক প্রকার মিষ্টি খাদ্য) খেতে চাচ্ছিলাম, কিন্তু পারছিলাম না কারণ তা শুধুমাত্র বিক্রয় হতো আমার ক্লাস চলাকালীন সময়ে”।



ইমাম সু’বাহ বলেন, “যদি আমি কখনও গ্রামের রাস্তা ধরে কাউকে দৌড়াতে দেখতাম তাহলে আমি দুটি মাত্র কথা চিন্তা করতাম- হয় সে পাগল আর না হয় হাদিসের ছাত্র!”



আর ইবনে আল-জওযি বলেন, “আমি সমাজের এর চেয়ে দুঃখজনক ঘটনা আর দেখিনি যখন একজনের কাজ করে যাওয়ার সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও সে কাজ করা থামিয়ে দেয়”।













প্রিয় ভাই ও বোনেরা-কিভাবে আমরা এই অবস্থার পরিবর্তন করতে পারি? চলুন এই বিষয়গুলো অনুধাবন করার চেষ্টা করি-



প্রথমত, আমাদের ইসলাম শিক্ষার ব্যাপারে আন্তরিক হতে হবে। আমরা এই দ্বীন শিখছি -প্রথমত নিজেকে মূর্খতা থেকে বাঁচাতে, এরপর অন্যদের বাঁচতে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে।



আপনি কি জানেন সহীহ বুখারি এবং আরও অন্যান্য অনেক হাদিস গ্রন্থের প্রথম হাদিসটির ব্যাপারে? এটি কোন কাকতলীয় ব্যাপার নয় যে এই গ্রন্থগুলোর প্রথম হাদিসটিই হল- “ নিশ্চয়ই প্রতিটি কাজ নির্ভর করে (এর বিচার হবে) তার নিয়তের উপর”। আলেমরা আমাদের দ্বীন-শিক্ষার পথের প্রথম হতেই আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন যে, প্রথম পাতা হতেই আমাদের দ্বীন শিক্ষার উদ্দেশ্য হতে হবে আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি।





আল্লাহ্‌ আমাদেরকে তাঁর জন্য যা কিছু করা হয় তাতে অকপট ও আন্তরিক হতে আদেশ দিয়েছেন-



“ তাদেরকে এ ছাড়া অন্য কোন হুকুমই দেয়া হয়নি যে, তারা আল্লাহ্‌র ইবাদাত করবে খাঁটি মনে একনিষ্ঠ ভাবে তাঁর অনুগত হওয়ার মাধ্যমে”।- আল বায়্যিনাহ, ৫।





রাসুলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “যে কেউ আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির জন্য অধ্যয়ন করে, সে যদি দুনিয়ার একটি অংশও চায়, সে কিয়ামতের দিন জান্নাতের সুগন্ধও পাবে না”।–সাহীহ, আহমেদ ও তিরমিজি দ্বারা বর্ণিত।



ইবনে আব্বাস বলেন, “ নিশ্চয়ই মানুষ (আল্লাহ্‌র তরফ হতে) নিরাপত্তা পাবে তাঁর নিয়ত অনুযায়ী (যে কাজ করার জন্য মানুষ সংকল্প করে)।



এবং নিয়তের(সঙ্কল্পের) এই ব্যাপারটি কোন সোজা ব্যাপার নয়। সুফিয়ান আথ-থওরি বলেন, “আমি আমার নিয়তের মত এতোটা বিপ্লবী আর অন্য কিছুর সুশ্রষা করিনি”। আল-খাতিব আল- বাগদাদির লিখা আল-জামি’লি আখলাক আল-রাওয়িই বই হতে গৃহীত।



ইমাম ইবনে জামাহ এর উপদেশ শুনুন যদি জানতে চান কিভবে নিয়ত শুদ্ধ করবেন-“ দ্বীন ইসলামের অধ্যয়ন করার সত্যিকার ও আন্তরিক নিয়ত হল আপনি যা কিছু করবেন তা আল্লাহ্‌কে খুশি করার উদ্দেশ্য নিয়ে করতে হবে। আপনি যা কিছু শিখছেন তার উপর আমল করার সঙ্কল্প থাকতে হবে, শরিয়ত কে উত্থান করানোর উদ্দেশ্য থাকতে হবে, আশা থাকতে হবে যে এই ইল্ম আপনার হৃদয়ে আলো জ্বালাবে, আপনার আত্মার পরিশুদ্ধী ঘটাবে ও আপনাকে কিয়ামতের দিন আল্লাহ্‌ তা’লার কাছাকাছি নিয়ে যাবে। দুনিয়াবি কোন বস্তু প্রাপ্যের উদ্দেশ্যে দ্বীন শিক্ষা করা যাবে না- যেমন নেতৃত্ব বা পরিচিতি অথবা ধনদৌলত। এটা এইজন্য শিক্ষা করা যাবে না যাতে আপনি আপনার সহকর্মীদের কে দেখাতে পারবেন, বা মানুষ আপনাকে সম্মান করবে এবং জমায়েতগুলোতে আপনাকে প্রধান আসনটি দিবে, ইত্যাদি”। ইমাম ইবনে জামাহ্ এর লিখা তাদকিরাত আস সামি’ ওয়াল মুতাকাল্লিম হতে গৃহীত।



দ্বিতীয়ত, আমাদের বুঝতে হবে যে আমরা শয়তানের সাথে একটি চলমান যুদ্ধের মধ্যে আছি, এবং সে চায় না যে আমরা এই শিক্ষা লাভে সফলকাম হই। আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেন-



“তুমি যখন কুরআন পাঠ করবে তখন অভিশপ্ত শয়তান থেকে আল্লাহ্‌র নিকট আশ্রয় চাইবে”। আন-নাহল, ৯৮।





আপনি যা কিছু ভাল করতে চান শয়তান তাঁর মুখে বসে যায়। রাসুল্লুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের বলেন, “শয়তান আদম সন্তানের সকল (ভাল কাজের) পথে বসে যায়। শয়তান তাঁর পথে বসে গিয়েছিল যখন তিনি ইসলামের পথ নিলেন এব শয়তান তাকে বললো, “ কিভাবে আপনি আপনার বাপ-দাদার ধর্ম ছেড়ে দিচ্ছেন?” কিন্তু তিনি তাকে অমান্য করলেন এবং মুসলিম হলেন। শয়তান তাঁর হিজরতের পথে বসে গেল ও বললো, “কিভাবে আপনি আপনার মাটি ও আপনার আকাশ ছেড়ে চলে যাচ্ছেন?” কিন্তু তিনি তাকে অমান্য করলেন এবং হিজরত করলেন (মক্কা হতে)। তারপর সে তাঁর জিহাদের পথে বসে গেল ও বললো, “আপনি কেন জিহাদ করবেন? এ তো শুধু আপনার সম্পদ ও শরীরের শক্তি ব্যায় করবে। আপনি মারা পরবেন, আপনার স্ত্রী অন্য কাউকে বিবাহ করবে, এবং আপনার সম্পত্তি (অন্যদেরকে) ভাগ করে দেয়া হবে”। কিন্তু তিনি তাকে অমান্য করলেন ও জিহাদে গেলেন”। আল্লাহ্‌র রাসুল এরপর বলেন, “ যে কেউ এটি করে, আল্লাহ্‌র দায়িত্ব তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানোর!”





শয়তান আপনার চেহারায় কি করে বসবে-



সে আপনাকে বলবে আগামীকাল পড়, যখন আগামীকাল আসবে, তখন আবার বলবে আগামীকাল পড়। কালক্ষেপণ (গড়ি-মসি করা) শয়তানের পক্ষ হতে আসে!



শয়তান আপনাকে বলবে যে আপনি এখন ব্যাস্ত এবং আপনার জীবনের পরের দিকে আপনি দ্বীন ইসলাম শিক্ষার জন্য সময় বের করে নিবেন। বিয়ের পরে, পড়ালেখা শেষ করার পরে, চাকুরী পাওয়ার পরে। জীবন পার হয়ে যেতে থাকবে এবং এই “পরে”ও অনন্তকাল ধরে চলতে থাকবে।



শয়তান আপনাকে বলবে উম্মতের অবস্থা এখন হারিয়ে গিয়েছে এবং আপনার এই শিক্ষা কোন কাজেই আসবে না,

সুতরাং সময় নষ্ট করা ঠিক না। এর মোকাবেলা করুন তা দিয়ে- যা আপনি দেখেছেন রাসুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও যারা আমাদের আগে এসেছেন তাঁদের জিহাদ ও শিখিয়ে যাওয়া বিষয় হতে।



শয়তান আপনাকে বলবে যে যথেষ্ট পরিমাণ আলেম রয়েছে, তোমার কোন প্রয়োজন তাঁদের কাছে নেই।

এর মোকাবেলা করুন এই যুক্তি দিয়ে যে আলেমরা মৃত্যুবরণ করবেন, ইলম যদি আগামি প্রজন্মের কাছে না পৌঁছায়, তা এই সমাজের মধ্যেই মারা পরবে। মুসলমানের সংখ্যা হল ১.৪ বিলিয়ন, কিন্তু যেই সমস্যাটা সবসময় দেখা দেয় তা হচ্ছে- যথেষ্ট পরিমাণ শিক্ষক ও আলেম নেই। সকলেই হচ্ছে একেকজন রাখাল এবং সকলকেই তাঁর নিজস্ব পালের দায়িত্ব নিতে হবে!



তৃতীয়ত, আমাদের কখনও আল্লাহ্‌র কাছে দোয়া করার কথা ভোলা উচিত নয়- যাতে তিনি তাঁর রহমত আমাদের উপর বর্ষিত করেন যেন আমরা তাঁকে সন্তুষ্ট করার জন্য ইসলাম শিক্ষায় সফলকাম হই।



আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেন-



“যখন আমার বান্দাগণ আমার সম্পর্কে তোমার নিকট জিজ্ঞেস করে, আমি তো (তাদের) নিকটেই, আহবানকারী যখন আমাকে আহবান করে আমি তাঁর আহবানে সাড়া দেই”। আল- বাকারা, ১৮৬।



আসুন আমরা আল্লাহ্‌র দরবারে এখনি দোয়া করি যাতে তাঁর দ্বীন এবং তাঁর শরিয়ত শিক্ষার এই প্রচেষ্টায় আমরা সফল হই, আন্তরিকভাবে শুধুমাত্র তাঁর সন্তুষ্টির জন্য। এবং যাতে তিনি তাঁর রহমত আমাদের উপর বর্ষণ করেন যাতে আমরা আমাদের সঙ্কল্পে সফলকাম হই। নিশ্চয়ই তাঁর রয়েছে সবকিছু করার সামর্থ্য ।



আমিন।





লেখকঃ মুহাম্মাদ আল-শরিফ

আল মাগরিব ইন্সটিটিঊট

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:১৮

পাগলাগরু বলেছেন: এত্ত বড় গল্পরে ভাই। একটু ছোটো কইরে লিখেন

২৩ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:২৬

রোদের ফোঁটা বলেছেন: ভুল বুঝলেন, ভাই।

এটা কোন গল্প না।

আশা করি, ভুল সংশোধন করবেন।

২| ২৩ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:৩৩

পোসেইডন বলেছেন: পুড়োটা পরলাম, প্রথমে একবার ইগনোর করে যেতে চাইছিলাম বড় দেখে, কিন্তু পড়েই মনে পড়ল আজ সকালেই হূমায়ূন আহমেদের বিশাল একটা উপন্যাস এক বসায় পড়তে পারলে এটা কেন পড়তে পারব নাহ, এটা নিশ্চয়ই শয়তানের কূমন্ত্রনা, সাথে সাথে পড়লাম।

ঈন শা ল্লাহ লেখাটী কাজে আসবে।

২৪ শে মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৬

রোদের ফোঁটা বলেছেন: ইন শা আল্লাহ, ভাই।

আল্লাহ আমাদেরকে তওফীক দিক। আমীন!!!

৩| ২৩ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ১০:৫৫

দিশার বলেছেন: ভাই দ্বীন আর সরিয়ত শিক্ষা তো করতেসে লক্ষ লক্ষ মাদ্রাসার ছেলে পেলে . কি উপকার হচ্ছে দেশ জাতি ও দুনিয়ার মানুষের ?

২৪ শে মার্চ, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৫৯

রোদের ফোঁটা বলেছেন: তাদের গুণাহের বোঝা আপনাকে বইতে হবে না। আপনি আপনারটা আগে ভাবুন।

আশা করি, বুঝতে পারবেন।

৪| ২৪ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ২:৪৪

পোসেইডন বলেছেন: দিশার ভাই অত্যন্ত্য সুন্দর একটা প্রশ্ন করেছেন। এই প্রশ্নের জবাব পেতে হলে আপনাকে যেতে হবে আজ থেকে ঠিক ২০০ বছর পিছনের ইতিহাসে।
আমাদের মাদ্রাসা শিক্ষা ব্যবস্থা কি ছিল আর ব্রিটিশ রা এসে এই শিক্ষা ব্যবস্থাকে কি করেছে তা দেখতে হবে।
কিভাবে জ্ঞানীগুণী মক্তবের শিক্ষক দের সরিয়ে প্রতিবন্ধীদের সেখানে পাঠানো হল তাও দেখতে হবে।

সেই ব্যবস্থা আজো আমরা সংস্কার করতে পারি নি। ২০০ বছরের কলংক আজো আমরা মুছতে পারি নি। আর নতুন প্রজন্ম আমাদের সেই ভুলটার দিকেই বার বার এখন লজ্জা দিচ্ছে কেন আমরা পারলাম না।

৫| ২৪ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৩:১০

দিশার বলেছেন: ভাই ২০০ বছর আগে কি ছিল একটু জানাবেন প্লিজ। নামাজে হাত পেতে বাদতে হবে না বুকে, দাসী সহবত করার অনুমতি আসে কি নাই . মেন্দি দেয়া সুন্নত কি না . বেতের নামাজ কয় ওয়াক্ত। এগুলা নিয়ে তর্ক বিতর্ক শিখে লাভ কি ? একে অন্যকে মুরতাদ নাস্তিক ঘোষণা দেয়া ছাড়া কোনো কাজে আসবে ?

২৪ শে মার্চ, ২০১৩ রাত ৮:০৩

রোদের ফোঁটা বলেছেন: আশা করি, কাজে আসবে।

আপনি, আমি হয়ত একা পৃথিীবীটা বদলে দিতে পারব না। শুধু নিজ নিজ পরিবারকে বদলে দিন। সমাজ এমনিতেই বদলে যাবে ইন শা আল্লাহ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.