নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি শেষ রাতের অবহেলিত চাঁদ। যাকে ইচ্ছায় অনিচ্ছায় সমাজের বেশির ভাগ মানুষ দেখতে পারে না। ঘুমের দোহাইয়ে সবাই আমার সাথে প্রতারণা করে। আর আমি সমাজ জাগতে জাগতে তে-পান্তরে হারিয়ে যায়।

আধার আমি

বাবা, আমি তোমাকে শিখিয়েছি, কিভাবে প্রজাপতির মত উড়তে হয়। বদ্ধ পুকুরে কিভাবে ছোট্ট হাতে কঙ্কর চালতে হয়। কিভাবে বড়দের শ্রদ্ধা করতে হয়। বাবার কোলে বসে কিভাবে চুপিচুপি গল্প শুনতে হয়। বাবার হাত ধরে কেমনে ছোট্ট পায়ে রাস্তার ধারে হাটতে হয়। তুমি আমাকে ব্যাকুল চোখে তালাশ করছো কিন্তু পাচ্ছো না। বাবা তোমার হতভাগা পিতাকে মাফ করে দিও। তোমাকে আমাকে নিয়ে একটি সুন্দর স্বপ্ন গড়ব বলেই এই দুরে পালিয়ে থাকা।

আধার আমি › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইটভাটার শ্রমিক থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র........

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:১৪



কোনো প্রেমের স্বার্থক গল্প নয়, এটি ইটভাটার শ্রমিক থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থক ছাত্রের বেদনার ছত্র, কষ্টের গল্প, হতাশার সুর।

রাতের অন্ধকারে দু’জনে বসে বসে যে গল্পের সূচনা হয়েছিলো সেটি এমন কষ্টের হবে সেটি তখনো ভাবিনি। লালাভো চোখের অব্যক্ত ভাষায় যখন উনি বলছিলেন ভাই জানেন ইদানিং আমি খুব হতাশ হয়ে যাচ্ছি। কিছু ভালো লাগে না।

-কেন ভাই ?
-জানি না, তবে এমন হয়নি কখনো....জীবনে এত কষ্টের বোঝা মাথায় নিয়েছি অথচ এখন আর পারছি না ভাই। এতদিন আমার যে গল্পের কথা কাউকে বলা হয়নি সেটি আজ আপনাকে বলব।

সারাদিন কর্মব্যস্ততার শেষে বসে বসে উনার গল্প শুনব এমন মানসিকতা আমার ছিলো না। কিন্তু যখন উনি বললেন, জানেন আমি যখন প্রাইমারির ছাত্র তখন ইটভাটায় কাজ করতাম।

দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীটের এক ছাত্রের মুখে এমন কথা শুনে আমার ক্লান্তি রাতের আধারে হারিয়ে গেল। তারপর মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনে গেলাম কিভাবে ইটভাটার দুইটাকার শ্রমিক থেকে ঢাবির ছাত্র হওয়ার অপ্রকাশিত ইতিহাস।

-বাবা-মায়ের অভাবের সংসারে আমাকে ইটভাটায় কাজ করা লাগত। বাসায় এসে পড়ার জন্য কুপি ছিলো না। পড়াশুনা বেশি করতাম না। মাঝে মাঝে অজান্তেই পড়তে বসতাম তবে কুপিতে নয় কলম পুড়িয়ে হালকা আগুনের নিভুনিভু আলোতে।

ক্লাসে যেতাম না। টাকার অভাবে পরীক্ষা দিতে যায়নি পরে স্যার এসেছে, টাকার সমস্যার কথা বলেছি। স্যার বলেছে পাগল মাত্র ৬০ টাকার জন্য পরীক্ষা দিতে যাসনি! চল পরীক্ষা দিতে হবে। টাকা আমি দিয়ে দেব। ক্লাস থ্রি থেকে রোল এক হয়। তারপর প্রতিটি ক্লাসেই এক রোল হওয়া সুবাদে স্কুল এবং এলাকাবাসীর কাছে আমি জনপ্রিয় হয়ে উঠি

কিন্তু অভাবটা আমার কাছে বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠে। এভাবে চলতে চলতে দশম শ্রেণির টেস্ট পরীক্ষায় এ প্লাস এবং শ্রেণিতে প্রথম স্থান অধিকার করি। এরপরে নজরে আসি আমার এক বংশগত চাচার। উনি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিচার ছিলেন।

উনি আমার বাবাকে বললেন, ও যেন আর ইটভাটা বা শ্রমিকে কাজে না যায়। চাচা তাৎক্ষণিক বাবা মা’র হাতে ২,০০০ টাকা দেয় আমার পড়াশুনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য। আরো বললেন, যদি আমি ভালো রেজাল্ট করতে পারি তাহলে সরকারি বৃত্তি পাব। কোনো খরচ লাগবে ন।

এসএসসি পরীক্ষা শেষ করলাম। গোল্ডেন প্লাস পেলাম। চাচা খুশি হলো। সবাই খুশি হলো। চিন্তা শুধু আমার যে এরপর কি হবে?

--তার এই গল্প শুনে আমি এতটাই নিস্তব্ধ ছিলাম যে কোন ভাষা এ ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে হয় আমার মাথা তা সায় দিল না। শুধু এতটুক বললাম, তারপর?

--তারপর চাচা আমাকে ঢাকার একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে এইচএসসি পড়ার জন্য ভর্তি করে দিলেন। । আশা বৃত্তি পাব। প্রথমে ভেবেছিলাম বৃত্তির টাকায় আমি পড়া-লেখা চালিয়ে যাচ্ছি, পরে জেনেছি চাচায় টাকা দিচ্ছে। কারণ উনি অনেক চেষ্টা করেছিলেন একটি বৃত্তির জন্য, কিন্তু পারেননি।

এদিকে চাচার চাকরিও শেষের পথে। চাচার ব্যাংকে কিছু নগদ ক্যাশ আর শেয়ার মার্কেটের ইনভেস্ট ছিলো ১৪ থেকে ১৫ লাখ।

আমার এইচএসসি পরীক্ষার সময়ে চাচা হজে গেলেন। পরীক্ষা দিলাম গোল্ডেন প্লাস পেলাম।

এর মাঝে শেয়ার কেলেংকারির ঘটনায় চাচা একবারে নিঃশ্ব হয়ে গেলেন। উনি হজে থাকতেই আমার বিশ্ববিদ্যালয়ে এডমিশনের সময় এল। টাকার অভাব তখনো আমার সাথে আন্তরিক। আমাকে ছেড়ে যায়নি। আমার পরিবারকে ছেড়ে যায়নি। কাজের জন্য তখন আমি আরএফএল কোম্পানির একটি কারখানায় বোতল সাজিয়ে রাখার কাজে যায়।

আমার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানার পর একদিন আমাকে ধমকালেন। তারপর জেলা শহরে একটি কোচিংয়ে ভর্তি হলাম। তবে কোচিংয়ে নিয়মিত যেতে পারিনি অর্থাভাবে।

ভর্তি ফরম কেনার সময় এল। কোন কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য ভর্তি ফরম নেব তা বুঝে উঠতে পারছিলাম না। চাচা হজে। তারপর উনি আবার শেয়ার কেলেংকারিতে সব খুইয়েছেন। চাচার বাবা অর্থাৎ আমার দাদা তখন খুবই অসুস্থ। চিকিৎসায় প্রচুর খরচ।

অর্থাভাবে মাত্র ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ে দুটি ফরম কিনলাম। খ এবং ঘ। বাড়ি বসে বসে ভাবি আমাকে আর কি করতে হবে। এর মাঝে চাচা জানতে পারে আমি মাত্র ঢাবিতেই ফরম তুলে বসে আছি। তারপর ঐদিন ছিলো রাজশাহীতে ভর্তি ফরম তোলার শেষ দিন। আমার এক আত্মীয়ের কাছ থেকে টাকা নিয়ে রাজশাহীতে ফরম নিলাম।

ঢাবিতে ভর্তি পরীক্ষা দিলাম। ভালো হলো। মনে বিশ্বাস হলো আমি চান্স পাব। তারপরও আত্মীয় স্বজনদের কথামত গেলাম রাজশাহীতে।

রাজশাহীতে এক ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার পর জানতে পারি আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খ ইউনিটে চান্স পেয়েছি। মেরিট লিস্টে আছি। সিরিয়াল ৫৬৫(আমার আসলে মনে নেই কত বলেছিলেন, এর আশপাশেই হবে)।

তারপর শুরু হলো আরেক বিড়ম্বনা। ভর্তির জন্য টাকা পাব কোথায়? আমার আম্মু কান্নাকাটি শুরু করল। কোথাও টাকার ব্যবস্থা হলো না। পরের দিন ভর্তি হতে ঢাবিতে যেতে হবে। এর মাঝে আমার ভূমিদস্যু চাচার কাছে জমি বিক্রি করতে চায়লো বাবা-মা। চাচা রাজি হলো, কিন্তু ঐদিন উনি টাকা দিতে রাজি হলেন না।

আমার, আম্মুর চিন্তা বেড়ে গেল। কান্নাকাটি শুরু করলেন। তারপর পাশের এক চাচা ঘটনা জানাতে পেরে আমার চাচাকে বললেন। তারপর টাকার ব্যবস্থা হয়েছিল। তবে চাচা না অন্য কেউ দিয়েছিল সেটি আমার এখন মনে নেই। তারপরের ভর্তি হলাম ঢাবিতে। আজ চার বছর চলছে। শেষ বর্ষ অনার্সের।

হতাশা আর কষ্টের বোঝা এখন যেন অনেক বেশি হয়ে গেলো। কিছু ভালো লাগছে না। আমার এখন এমন অবস্থা যে ইনকামের নিম্নতম একটি পথ না ধরলে আমাকে যেন মরতে হবে। কিছু ভালো লাগে না ভাই..............

আমার সারা জগতের সব ভাষা বুকের গহীনে ঘর বাঁধল। আমি আর সেই ইটভাটার শ্রমিক এই সময়কে এমন ভারি করে তুলবো সেটি রাতের কালো অন্ধকারেরা একটু আগেই বুঝেনি।
প্রিয় পাঠক, জীবন যুদ্ধে জয়ী হতে অত্যন্ত মেধাবী এই ভাইয়ের জন্য আপনাদে আশির্বাদ, দোয়া চাই........

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:২৫

প্রামানিক বলেছেন: অনেক কষ্টের জীবন।

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:২৬

আধার আমি বলেছেন: হুম, বাস্তবিকই অনেক কষ্টের ভাইয়া।

২| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:০৬

হাসান মাহবুব বলেছেন: রূপকথা নেমে আসুক এই জীবনযোদ্ধার ওপর। মুছে যাক সব গ্লানি।

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:০৯

আধার আমি বলেছেন: আপনার কথায় সত্য হোক।

৩| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৩২

স্পর্শিয়া বলেছেন: আপনার সফলতা কামনা করি। প্রতিটা যুদ্ধে আপনি সফল হন।

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৪০

আধার আমি বলেছেন: আপনার প্রার্থনা কবুল হোক।

৪| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৪৮

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: এতটুকু পথ এসে এখনতো হতাশ হবার সময় নয়!

দৃষ্টিটা আরেকটু খুলে চারপাশে দেখলেই অনেক অনেক পথ আছে.. আমার এক বেয়াই অংকে সেইরাম ভাল- তার মাসিক লাখ টাকার ইনকামের শুনলে অনেকেরই চোখ কপালে ওঠে। তার ঘরে এসে পড়ার জণ্য ছাত্ররা লাইন দিয়ে বসে থাকে!

একজন মেধাবীরতো হতাশ হবার সময় কই?

তাঁকে আশার বানী শোনান দৃঢ়তায়।

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:০৩

আধার আমি বলেছেন: জি ভাই, ভাইয়াকে আশার বাণী যতটুকু সম্ভব শুনিয়েছি। আসলে উনিও অনেক কষ্ট করে পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছেন। জীবনটা অদ্ভুত কষ্টের।

৫| ২৬ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:১৯

হোসেন মালিক বলেছেন: এইরকম কি আসলেই হয় নাকি?

২৬ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৩২

আধার আমি বলেছেন: এখানে এক চুলও মিথ্যা বা রস মেশানো নেই , সবটুকু বাস্তব।

৬| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:০১

একুশে২১ বলেছেন: লেখাটা পড়লাম এবং নিজের দিকে তাকালাম। এতটা লজ্জিত হলাম নিজের প্রতি এই ভেবে যে ছিঃ আমার হাতে একটা জব থাকতেও আমি মনের দিক থেকে খুশি ছিলামনা?

২৮ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৪২

আধার আমি বলেছেন: অল্পতে খুশি হওয়া সর্বোত্তম বলে মনে করি।

৭| ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:৪৭

অগ্নি সারথি বলেছেন: জীবন যুদ্ধে নিরন্তর সংগ্রাম করে যাওয়া মেধাবী সৈনিকটির প্রতি সশ্রদ্ধ লাল সালাম। জয় হোক সংগ্রামী জনতার।

২৮ শে নভেম্বর, ২০১৫ বিকাল ৪:৪৩

আধার আমি বলেছেন: জয় হোক

৮| ২৮ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১১:৫২

রক্তিম দিগন্ত বলেছেন: সত্যি কথা বলতে এইটাকে আমার একটা গল্পই মনে হয়েছে।

বাস্তবতাটা এতটা সোজা না। কারণ আমি ঐরকম লাইফটা লিড করেছি এখনও করছি। হয়তো কিছুটা উন্নতি হয়েছে। এমন রূপকথা সাহায্য ছাড়া অসম্ভব।
আর সবচেয়ে বড় কথা বাস্তবে এতটা ধৈর্য্য কারোরই নেই।

রাগ করবেন না - আমার কাছে লেখাটাকে নিছক গল্প ব্যতিত কিছু মনে হয়নি।

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:১৬

আধার আমি বলেছেন: ভাই এখানে এক চুলও আমি নিজ থেকে তৈরি করিনি। একবারে বাস্তব।

৯| ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২৮

সুমন কর বলেছেন: গল্পগুলো সত্যি হয়ে উঠুক.....

ভালো লাগা রইলো।

০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:১৮

আধার আমি বলেছেন: এটা একদম বাস্তব ঘটনা। আমি অবশ্য ভাইয়ের নাম পরিচয় দিতাম কিন্তু দেয়নি কারণ উনি এই গল্পগুলো উনার কোনো বন্ধুমহলেও করেননি। আর উনার বন্ধুরাও এতটা জানেন না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.