নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আজবছেলে

আমি সত্যিই আজব ছেলে

আজবছেলে › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমি কলেজ জীবন যেরকম আশা করেছিলাম, সেটা ঠিক সে রকম হল না ! ২য় পর্ব [কিভাবে নাটক বানাতে হয় !-অধ্যায়-৩]

০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:৪৭


আগের পর্ব

সকাল।

আমি আর রাতুল পাশাপাশি হেটে যাচ্ছি। রাতুল বারবার আমার দিকে তাকালেও আমি সেটা ভ্রুক্ষেপও আনছি না।

“মামা এমন সাইলেন্ট মেরে থেকো না তো, ” রাতুল বলে উঠল।

আমি রাতুলের কথা না শোনার ভান করলাম।

“আরে মামা কালকে রাতে কি হয়েছে তা ভুলে যাও মনে কর একটা দুঃস্বপ্ন দেখেছ এই যা!”

এবার রাতুলের দিকে কড়া চোখে তাকাতে বাধ্য হলাম। রাতুল আমার দিকে তাকিয়ে চুপ মেরে গেল। আমরা দুজন চুপ করে হাটতে লাগলাম।

গতকাল রাতে আপি আর লায়লা আপু এসে আমার উপর তান্ডব চালিয়ে গেছে। রাতুলের ভাষায় অবশ্য এটাকে একটা দুঃস্প্নও বলা যায়!

তারা দুজন আমার বাড়িওয়ালা মারফত জানতে পেরেছে একটা মেয়ে আমাদের বাসায় দুপুরে এসেছে এবং তার কলেজ ড্রেস আমাদের বারান্দায় ঝুলতে দেখা গেছে।

বর্তমান যুগ আধুনিক যুগ। মানুষের চিন্তা-ভাবনাও মনে হয় অনেক এগিয়ে গেছে!

আমাদের বাড়িওয়ালা তিনি আধুনিক চিন্তা করে আমার আপিকে জানাল। আর সন্ধ্যায় আপি আর লায়লা আপু এসে আমার উপর তাণ্ডবলীলা চালিয়েছে। কপাল ভালো তারা খালি হাতে ছিল, ডান্ডা-ফান্ডা নিয়ে আসেনি!

আমি আর সেটা নিয়ে আলোচনা করতে চাই না, কারন দুঃখের জিনিষ বেশীক্ষন মনে রাখতে নেই। অবশ্য এই কথা আমার না সুমনার। সুমনা মাঝেমধ্যে অনেকটা দার্শনিক টাইপের কথা বলে যদিও তাকে দেখে তা মনে হয় না।

“মামা, ভুলে যাও গতকালের কথা, আল্লাহর কাছে শোকর আদায় কর যে ওই দুইজনের মাইর খেয়েও তুমি এখন দুই পায়ে দাঁড়িয়ে আছো।”

নির্ঘাত আমার সাথে মজা নিচ্ছে!

গতকাল তারা যখন আমার উপর তাণ্ডবলীলা চালাচ্ছিল রাতুল নিজের রুমে গিয়ে চুপচাপ বসে ছিল। ঘটনা ঘটার পর সে এমনভাব করল যেন কিছুই হয়নি!

রাতুলের কথায় কান না দিয়ে আমি সামনের দিকে হাটতে লাগলাম। এখন ওর কথা শোনা মানে কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা লাগানো।

কলেজের গেটে ঢোকা মাত্রই আমার পিছন থেকে রাতুল বলে উঠল, ” আরে সুমনাপু হাপাচ্ছ কেন?”

পিছনে তাকিয়ে দেখলাম গতকালের ঘটনার হোতা সুমনা দাঁড়িয়ে হাপাচ্ছে।

“না তোদের দেখে দৌড় দিলাম,” সুমনা বড় বড় শ্বাস ফেলতে লাগল।

“ডাক দিলেইতো হত,” রাতুল বলে উঠল।

“সমস্যা নাই।”

“তা আমাদের দেখে দৌড়ে আসার কারন কি?” এবার আমি জিজ্ঞেশ করলাম।

“না, কালকের কথা নিয়ে…”

“কিসের কথা?” সুমনার কথা শেষ হবার আগেই আমি জিজ্ঞেশ করলাম।

সুমনা আমার দিকে গোলগোল চোখে তাকিয়ে থাকল। সে যেন আমার প্রশ্ন বুঝতে পারল না।

“ওই ওই, কিসের কথা হয়েছিল দুইজনের মাঝে, হ্যা?”

আমি কিছু না বলে সামনের দিকে হাটতে লাগলাম। সুমনা দৌড়ে এসে আমার হাত চেপে ধরে বলল, “ওই কই যাও, আগে আমার কথার জবাব দাও।”

“ও লা লা লা!” রাতুল বলে উঠল, “এখনই হাত ধরাধরি পর্যায়ে চলে গেল!”

সুমনা কড়া চোখে রাতুলের দিকে তাকিয়ে বলল, “আগে এটার মামলা শেষ করি তারপর তোকে ধরব, খুব কথা বের হচ্ছে।”

রাতুল কিছু না বলে মানে মানে সরে পড়ল।আমি কিছু বললাম না রাতুল আসলেই একটা বেঈমান!

সুমনা আমার হাত এখনো ধরে আছে। আমি তার দিকে তাকিয়ে বললাম, “আমার হাত ছাড়ো।”

বলতে দেরী ছাড়তে দেরী হল না। সুমনা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইল।

“আর কেও জানে যে নাটক সম্পর্কে তোমার ধারনা নেই?”

“কে বলছে আমার নাটক সম্পর্কে ধারনা নেই,” তারপর একটু থেমে, “আসলে আমি নাটক অনেক দেখি, কিন্তু নাটক কিভাবে বানায় তার সম্পর্কে ধারনা নেই।”

“ওই একই কথা,” আমি তার কথা পাত্তা না দিয়ে বললাম,“কেউ জানে কি?”

“না, জানেনা, ভাবছি নুশরাতকে বলব।”

“দরকার নেই, জানলে ঘটনা অনেক জটিল হয়ে যাবে তাই কাউকে না বলাই ভালো।”

“কেন?” সুমনা জোর গলায় বলে উঠল।

“আমাদের কারো সমস্যা হবে না, কিন্তু নাটক তৈরী করার সময় তো আমরা ছয়জন না আরো লোকজন আছে। তাদের হয়তো সমস্যা হবে।”

“হুম, তার এখন কি করব?”

“চুপ করে আমার কথা মত কাজ করতে থাক তাহলে হয়ে যাবে।”

“ওকে,” সুমনা বলে উঠল, “আমি তোমাকে বিশ্বাস করলাম রানা।”

“হুম, চল ক্লাস শুরু হওয়ার সময় হয়ে গেছে।”

এই বলে আমি সামনে হাটা শুরু করলাম। সুমনাও আমার পিছে পিছে আসতে লাগল।

*

রানা হয়তো গতকাল রাতে কি হয়েছে সেটা বলতে চাইবে না। রাতুলও সেটা সহজে বলতে চাইবে না। যদি কৌতুহলী হয়ে থাকেন তাহলে বলে দিচ্ছি আমি।

সুমনা চলে যাওয়ার পর রানা আর সবসময়ের মত বিকেলটা কাটাচ্ছিল। মাঝে মধ্যে সে একা একা এদিক সেদিক ঘুরতে গেলেও আজকে তার চরম আলসেমি লাগায় সে বাসা থেকে বের হয়নি। বই পড়ে আর ঘুমিয়ে সে বিকেল্টা পার করল। অবশ্য এর মাঝে রাতুল এসে নিজের রুমে ঢুকে পড়ল। তারপর সে ঢুকে যায় নিজের গেমসের জগতে। রাতুল তার মামার ভাবভঙ্গি কিছুটা বুঝে। মানে কখন রানার সাথে কথা বলা যাবে আর কখন বলা যাবে না। সে তাই রানার সাথে তেমন কথা বলেনি।

শান্ত বিকেল এইভাবে চলে গেল।

সন্ধার পর রুনা মানে রানার আপি অফিস থেকে বাসায় এসে পড়েন। রাতুল বুঝতে পেরেছিল যে তার খালার আসার সময় হয়ে গিয়েছিল, কিন্তু সে গেমসের এমন জায়গায় এসে গিয়েছে যে সেখান থেকে সেভ করে উঠে আসা অসম্ভব। তখনই কলিং বেল বেজে উঠল। রাতুল তাড়াতাড়ি করে কম্পিউটার বন্ধ করে বই নিয়ে বসল।

রাতুলের বসতে বসতে শুনতে পেল, টাশ, টাশ…

মানে কাউকে পেটানো হচ্ছে। মামার কিছু হয়েছে মনে করে রাতুল ছুটে গেল। নিজের রুম থেকে বের হয়ে সে যা দেখল তা সে কোনোদিনও ভুলতে পারবে না। তার রুনা খালা আর তার বান্ধবী লায়লা দুজনই রানাকে গদাম গদাম করে মারছে। দুজনই রাতুলকে দেখে জিজ্ঞেশ করল, “কোনো সমস্যা?”

“না,” রাতুল এই বলে চুপচাপ নিজের রুমে গিয়ে দরজা আটকিয়ে দিল।

*

আর অন্যান্য দিনের মত করেই রানার দিনটা যাচ্ছিল। বিকেলবেলা সে ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিল। ঘুম হচ্ছে রানার সবচেয়ে প্রিয় জিনিষ। তার মতে এটা হচ্ছে প্রকৃতির দেয়া সেরা একটা উপহার। তার ঘুম ভাঙ্গল একদম সন্ধার আগে। রাতুলের রুমে উকি মেরে দেখল সে এখনো গেমস খেলায় ব্যাস্ত তাই সে তেমন কিছু বলল না। রান্নাঘর গিয়ে সে নিজের জন্য কড়া করে এক চা তৈরী করল।

চায়ের মগে চুমুক দিতে দিতে রানা চিন্তা করতে লাগল দুপুরের কথা। মেয়েটা মনে হয় আসলে অনেক বোকা। তা না হলে একা এক ছেলের বাসায় আসে কিভাবে?

রানা সুমনার কথা ভাবতে লাগল।

অন্য যে কোনো মেয়ে হলে অন্তত বেশ কয়েকবার চিন্তা করত। সে কি এইসব চিন্তা করেনি?

হয়তো বা ঝোকের বশে এইসব করে সে, এটা মনে মনে বলে হেসে উঠল রানা।

মাত্র দুই কি তিনমাস হয়েছে সে এই কলেজে এসেছে। তার মধ্যেই অনেক কিছু ঘটনা ঘটে গেছে। যেটা তার স্কুল জীবনের দশ বছরেও ঘটেনি।

না ঘটেছে, তবে সেটা কলেজে ঘটে যাওয়া ঘটনার তুলনায় শিশূ।

মনে হয় এক বছরের বেশী হবে ঘটনাটা, মনে মনে বলে উঠল রানা।

রানা চুপ করে দাঁড়িয়ে কি যেন ভাবতে লাগল।



কলিং বেলের আওয়াজে রানার চমক ভাঙল। সে মগের দিকে তাকাল, চা ঠান্ডা হয়ে গিয়েছে। সে এক ঢোকে চা শেষ করে দরজার দিকে গেল। নির্ঘাত আপি এসেছে মনে হয়। সে দরজা খুলে দেখল আপি আর লায়লা আপু গরম চোখ করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। কিছু জিজ্ঞেশ করার আগেই তারা দুজন রানার উপর ঝাপিয়ে পড়ল।

রানা এখন নীল-ডাউন হয়ে কান ধরে আছে, আর মাত্র দুইহাত দূরে রুনা আর লায়লা দুজনই গম্ভীরভাবে চেয়ারে বসে আছে।

“হ্যা এবার ঘটনাটা বল,” রুনা বলে উঠল।

মাইর দিয়ে এখন কারন জিজ্ঞেশ করা হচ্ছে, রানা এটা মনে মনে বলে উঠল। এই কথা যদি সে এখন সরাসরি বলে তাহলে আজকে সে দাড়ানোর উপযুক্ত থাকবে না।

“আমার ক্লাসমেট বাসায় এসেছিল…”

“তারপর।”

“সে বাথরুমে গেল ভুল করে শাওয়ার ছেড়ে দিল, ভিজে গেল তাই তার জামা বারান্দায় শুকাতে দিল।”

“হুম আর কিছু?”

“না।”

“সত্যি?”

“হ্যা, অবশ্যই আমাকে কি এতই খারাপ মনে হয়!” রানা জোর গলায় বলে উঠল।

দুজনই চুও করে গেল।

“তা মেয়েটা কে? সুমনা নাকি?” এবার লায়লা জিজ্ঞেশ করল।

“হ্যা।”

“ওই মেয়েটা যে কিনা রানার সাথে সবসময় লেগে থাকত ?” রুনা জিজ্ঞেশ করল।

“হুম, তবে সেটা আগের কথা এখন তাদের মধ্যে ভাল বোঝাপড়া আছে,” লায়লা বলল।

“ও, তাহলে দেখতে হয় মেয়েটা কেমন?”

“খারাপ না, ভালই কিউট সে।”

ওই, ওই, আমি কিন্তু সামনে আছি, রানা মনে মনে বলে উঠল।

রুনা এবার রানা দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকাল, বলে উঠল, “আচ্ছা তুই কি ওই মেয়ের সাথে লাইন মারার চেষ্টা করছিস নাকি?”

“না,” রানা জোর গলায় বলে উঠল, “সে শুধুমাত্র ক্লাসমেট।”

“ও, তাই নাকি?” লায়লা মাঝখান থেকে বলে উঠল, “কিন্তু কলেজে তো মনে হয় এক জোড়া ঘুঘু…”

“ওই লায়লা আপু…”

রুনা রানার কথা শেষ করতে দিল না, তাড়াতাড়ি চেয়ার লাফ দিয়ে রানার কলার চেপে ধরল তারপর জিজ্ঞেশ করল, “তুই কি ওই মেয়ের ব্যাপারে সিরিয়াস।”

রানা তার বোনের চোখে কি দেখল সে জানি না, তবে তখন সে বলে উঠল, “না, আমি সিরিয়াস না। সে শুধুই ক্লাসমেট।”

“তাই যেন হয়।”

এই বলে রুনা নিজের রুমের দিকে গেল। লায়লা হতভম্ব খেয়ে গিয়েছিল, সেটা সে তাড়াতাড়ি কাটিয়ে রুনার পিছনে পিছনে গেল।

রানাও কিছু বললনা তার শরীর ব্যাথা করছেনা বরং জ্বলছে। সে তেতো মুখ করে রান্নাঘরের দিকে গেল। এখনো রাতের খাবার তৈরী করা হয়নি।

*

কলেজের গেট পার হয়ে কিছু দূর এসেছি, তখন সুমনা আমার পাশে এসে দাড়াল তারপর ব্যাগ থেকে এক দিস্তা খাতা বের করল। খাতাটা যে কি হতে পারে সেটা সম্পর্কে আমার ভালো ধারনা ছিল।

“এটা নাটকের স্ক্রিপ্ট, পড়ে নিও।”

আমি কিছু না বলে সেটা হাতে নিলাম। সুমনা আমার দিকে একটু ভালো করে তাকিয়ে বলে উঠল, “দেখে মনে হচ্ছে গতকাল রাতে ঘুম ঠিক মত হয়নি।”

“সেটা তোমার চিন্তার বিষয় না।”

“ক্লাস ফাকি দিয়ে ঘুমানোর মতলব আছে নাকি?”

আমি চুপ করে রইলাম।

“কি ব্যাপার বলছ না কেন?”

“আজকে তোমাকে মনে হয় ক্লাস মিস দিতে হবে।”

“মানে?”

সুমনা জোর গলায় জিজ্ঞেশ করে উঠল।

“নাটক কিভাবে বানাতে হয় সেটাতো শিখতে হবে!”

এই বলে আমি জোরে হাটা শুরু করলাম। সুমনা একটূ দাঁড়িয়ে তারপর আমার পিছে পিছে আসতে লাগল।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:০৯

মহান অতন্দ্র বলেছেন: হুম ভাল ।

২| ০৯ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:১৮

প্রামানিক বলেছেন: ভাল লাগল। ধন্যবাদ

৩| ২২ শে আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১:১৬

শিব্বির আহমেদ বলেছেন: ভাইডি
নতুন লেখা নাই কেন ?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.