![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
প্যারেন্টস ডে তে আমি চাচাকেই আসতে বলি সব সময় কিন্তু গত দুইবার চাচা আসতে পারেন নি । তাই বলে তিনি বাবাকে পাঠাবেন সেটা আমি ভাবতেও পারি না। আমার চাচা ডাক্তার। ঢাকা শহরের নামকরা ডাক্তার তিনি। যখনই তিনি প্যারেন্টস ডে তে আসেন তখন বন্ধু সমাজে আমার আলাদা একটা কদর থাকে। চাচা আসার সময় সমসময়ই দামি পারফিউম আর অনেকগুলো চকলেট আর কিছু দামি গিফট নিয়ে আসেন। আমার বন্ধুরাও অপেক্ষায় থাকত কখন আমার চাচা আসবে। কিন্তু বাবা প্যারেন্টস ডে তে আসার পরই বন্ধু সমাজ আমার আসল রূপ দেখতে পায়। কারণ সেদিন বাবা একটা লুঙ্গি আর পাঞ্জাবী পরে এসেছিল আর আমার জন্য এনেছিল মায়ের হাতে বানানো কিছু নাড়ু আর আমাদের নিজেদের গরুর দুই লিটার দুধ। আমি মোটেই অবাক হই নি বাবার কাণ্ডজ্ঞান দেখে। এই ভয়টাই আমি পেতাম সব সময়। আমার ভয়টাকেই সত্য বানিয়ে ছাড়লেন বাবা। আমি আধুনিক যুগের আধুনিক ছেলে কিন্তু আমার বাবা এখনো গেঁয়োই রয়ে গেছেন।
চাচাকে ফোন দিলাম ।দিয়ে বললাম, তুমি পরেরবার প্যারেন্টস ডে তে এসে দেখা করে যাবে। চাচা বললেন, আমি ব্যস্ত থাকি রে, বাবা। আমি বললাম , তুমি আসবে আর কিছু শুনতে চাই না আমি । আমাদের ফোনে কথা বলার জন্য নির্দিষ্ট সময় ছিল তাই চাইলেই আমি চাচাকে ফোনে সব বলতে পারতাম না ।
পরের একটা প্যারেন্টস ডে তে চাচা আসলেন। আসার পর আমি চাচাকে বেশ বকলাম আর বললাম , তুমি আমার চাচা না ।আমার জন্য তোমার কোন টান নাই ।চাচা বললেন , ব্যস্ত থাকি রে বাপ । চাইলেই আসতে পারি না। আর তোর বাবাকে তো বলিই আসতে ।সমস্যা কোথায়। আমি বলললাম , সমস্যাটা তো বাবাই। তুমি জানো বাবা লুঙ্গি পরে চলে এসেছিল এখানে? চাচা বললাম , ওহ এজন্য তোর প্র্যাস্টিজ পাংচার? আমি লজ্জা পেয়ে গেলাম ।আমি বললাম,আসলে ব্যাপারটা তা না । চাচা বললেন ,ব্যাপারটা আসলে তাই । আমি রাগ করে বসে থাকলাম । আমি তারপর বললাম,প্লিজ তুমি আসতে না পারলে বাবাকে পাঠিয়ো না । আমার একটা মান সম্মান আছে বন্ধুদের কাছে । সবাই জানে আমার চাচা ডাক্তার। অনেক টাকা পয়সা আমাদের। সেখানে আমার বাবা আমার জন্য নিয়ে আসে গরুর দুধ আর কিছু নাড়ু। এগুলা বাসায় বসে খাওয়া যায়। এই শহরের বন্ধুদের কি এসব দেখানো যায় ? তুমি চিন্তা করে দেখো আমার মান সম্মান কই গিয়ে ঠেকলো। আর বাবা তো শুদ্ধ ভাষায় কথাই বলতে পারে না । এমন জায়গায় এসব হাস্যকর শোনায়।
আমি যখন কথা বলছিলাম তখন চাচা এক নাগাড়ে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল । চাচা থুতনিতে হাত দিয়ে আমার কথা শুনছিলেন। আমি এক নাগাড়ে বলেই যাচ্ছিলাম ।এক সময় আমার চোখ দিয়ে পানি ঝরছিল । চাচা কিছু বলছিলেন না তখন । একটু পর আমার কাছে আসলেন। তারপর বললেন , যে সন্তান তার বাবার পরিচয় দিতে লজ্জাবোধ করে সে কি? এরপর বললেন, আজকের পর থেকে তোর সব কাগজ পত্রে তোর বাবার নামের জায়গায় আমার নাম লিখে দিবি। তোর আর ঐ আনস্মার্ট বাবার সন্তান হয়ে থাকা লাগবে না । এখন থেকে আমিই তোর বাবা। কি এবার ঠিক আছে ? আমি কিছু বলতে চাইলাম তার আগে একবার ভেবে নিলাম আমি আমার চাচাকে বাবা ডাকছি । নাহ আমি কোনভাবেই ভাবতে পারছি না এটা। এটা কি কোনভাবেই সম্ভব?
চাচা আমাকে আবার বললেন , কি সমস্যার সমাধান হয়েছে ? আমি কিছু বলতে যাব এমন সময় চাচা আবার বললেন, ধর, তোকে একটা বন্দুক আর একটা বুলেট দিলাম । তোর সামনে দুইজন মানুষ । একজন তোর স্মার্ট চাচা আর একজন তোর আনস্মার্ট বাবা। তোকে বলা হলো এই দুইজনের একজনকে গুলি করতে হবে । করতেই হবে এছাড়া আর কোন অপশন নাই। তুই কাকে গুলি করবি ? তোকে আমি পাঁচ মিনিট সময় দিলাম ।ভাব যে, তোকে একজনকে গুলি করতেই হবে। দুইজনের জন্য আলাদা আলাদা চিন্তা করবি । আমি বললাম, চাচা তুমি বেশি সিরিয়াস হয়ে যাচ্ছ। এটা এতো সিরিয়াস কিছু না । আমি শুধু বলেছি তুমি আসলে ভালো হয় । আর বাবাকে আমি ঘৃণা করি এটা আমি বলিনি । চাচা বললেন, বাবাদের ভালবাসতে হয় না । কিছু জিনিস থাকে বাই ডিফল্ট। কিন্তু সেটা বুঝতে হয়তো সময় লাগে । বাবা মা কি জিনিস এটা বুঝতে সময় লাগে। যখন বুঝতে পারবি তখন দেখবি এর চেয়ে প্রিয় আর দামি কিছু নাই । তুই যেটা বলেছিস সেটা ভালো কিছু না । দিনশেষে তোর আনস্মার্ট বাবাটাই তোর বাবা।আমরা অবাক হলে বা হঠাত বলে উঠি ওরে বাবা! আমরা ওরে চাচা বলি ?
চাচা এবার কথা না বাড়িয়ে বললেন, বল, কাকে গুলি করবি । আমি তখন ভাবছিলাম। চাচাকে গুলি করলে আসলে আমার কিছু যাবে আসবে না । কিন্তু বাবাকে আমি গুলি করি কিভাবে? আমি একবার ভাবতে লাগলাম । তারপর এক মিনিট পরই বললাম , চাচা উত্তরটা তুমি জানো । চাচা বললেন তুই তোর মুখেই বল। আমি বললাম, গুলিটা তুমিই খাবে। বলতে গিয়ে চাচাকে জড়িয়ে ধরলাম । চাচা বললেন, বাবা যতই আনস্মার্ট তিনি বাবাই । আর অন্য সব মিথ্যা। একটা মায়া। দিনশেষে তুই তোর বাবার কাছেই যাবি । আমাকে তুই কাছে পেলে ভালো কিন্তু একবার ভাব, যদি বাবাকে কাছে না পাস? কেমন লাগবে ? আশা করি এর পর থেকে প্যারেন্টস ডে তে তোর বাবা না থাকলে তোর মন খারাপ হয়ে যাবে ।একটা কথা মনে রাখবি সন্তান কখনো তার বাবার চেয়ে স্মার্ট হতে পারে না ।
২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১:১৭
আলমগীর জনি বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকেও ।
২| ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ২:৩৩
রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্ট টি পড়ে ভালো লাগলো।
২৭ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ দুপুর ১:৪৯
আলমগীর জনি বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই ।
©somewhere in net ltd.
১|
২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সকাল ১০:২৬
তানজীর আহমেদ সিয়াম বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার লেখার জন্য

আজ আমি যা , তা আমার বাবার জন্যই