নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সূর্য থেকে অসম্ভব শক্তিশালী আলোকরশ্মি চাঁদের উপর পড়ে। সে চাঁদ কিছুদিন জোছনা বিলায় আমাদের মাঝে।অমাবস্যায় কেউ চাঁদকে ভুলে যায় না।অপেক্ষা করে জোছনা ফিরে আসার ।সূর্য না হই ,মাঝে মধ্যে জোছনা হতে চাই।অমাবস্যায় হাহাকার হতে চাই মানব মনে।

আলমগীর জনি

গল্প বলি

আলমগীর জনি › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্পঃ খুনী

২১ শে মার্চ, ২০২১ রাত ১১:৪৫


গত ৫ ঘন্টা যাবত ছেলের রুমে দরজা বন্ধ করে ভেতরে বসে আছেন সারাফাত উল্লাহ। ঘরের ভেতর এই ৫ ঘন্টা যাবত সারাফাত উল্লাহ আর উনার মৃত ছেলে ছাড়া আর কেউ নাই।

আরাফাত, সারাফাত উল্লাহর একমাত্র ছেলে। ক্লাস সেভেনে পড়ছিল।কিন্তু আজকে সকাল থেকে নিশ্চিত হওয়া গেল যে আরাফাতকে আর স্কুলে যেতে হবে না।কাল রাতে আরাফাতকে যখন দ্বিতীয়বার বকাবকি করছিলেন তখনো সারাফাত উল্লাহ জানতেন না আগামীকাল সকালে আর ছেলেকে স্কুলে যেতে হবে না। আরাফাতের অবশ্য স্কুলে যেতে আপত্তি ছিল না। আরাফাত তার প্রাইভেট টিউটরের বাসায় যেতে চায় নি শুধু।

আরাফাতের মৃত্যুর সংবাদ যখন পাওয়ার কথা ছিল সারাফাত উল্লাহ তখন সাংগঠনিক বা সামাজিক কাজে ব্যস্ত ছিলেন। সংগঠন বলতে নিজের রাজনৈতিক দল আর সামাজিক বলতে এলাকার যাবতীয় বিচার-আচার বা সামাজিক কোন অনুষ্ঠান। এলাকার যত সামাজিক অনুষ্ঠানই হোক তাতে অবধারিত ভাবে থাকেন সারাফাত উল্লাহ। তিনি একজন বিশিষ্ট সমাজসেবক বটে!

দুপুর বেলা আরাফাতের মা যখন কল দিয়েছিলো তখন দুইবার কেটে দেয়ার পর তৃতীয়বার কল ধরেন সারাফাত উল্লাহ।উত্তরপাড়ার হালিম মিয়ার মেয়ে কোথাকার কোন ছেলের সাথে পালাতে গিয়ে ধরা পড়ে। সকাল ১০ টা থেকেই এই বিচার নিয়ে ব্যস্ত উনি। তখনো কোন সুরাহা করতে পারেন নি। মেয়ের বাবা হালিম মিয়া চান না মেয়েকে এই ছেলের সাথে বিয়ে দিতে। আবার মেয়ে বাবাকে চায় না।বাবাকে চায় না মানে ঐ ছেলের সাথে চলে যেতে চায়। মেয়ে যেভাবেই হোক ঐ ছেলেকে বিয়ে করতে চায়।নিজের আপন সন্তানকে আটকাতে পারছেন না হালিম মিয়া।হালিম মিয়া এক পর্যায়ে বলেই দিলেন, যা । এদিকে সারাফাত উল্লাহ কোনভাবেই এই বেয়াদবি মেনে নিচ্ছেন না। এক পর্যায়ে হালিম মিয়াকেই দোষ দিলেন মেয়েকে আদবকেতা শেখায় নি বলে।

এগুলো নিয়ে ব্যাপক দেনদরবারের মাঝেই ফোন দেন আরাফাতের মা মহুয়া বেগম।

ফোনটা রিসিভ করেই সারাফাত উল্লাহ ধমকের স্বরে বলে উঠলেন, কেউ মরসে? এতবার কল দিচ্ছ কেন?

আরাফাতের মা কোন কথা বলেন নি। কারণ ততক্ষণে জ্ঞান হারিয়ে মাটিয়ে পড়ে যান আরাফাতের মা মহুয়া বেগম। কোন কথা না শুনে কলটা কেটে দেন সারাফাত উল্লাহ।মহুয়া বেগম অদ্ভুত চরিত্রের মানুষ। সারাফাত উল্লাহ যেখানে সবসময় আগুন হয়ে থাকেন মানে উত্তেজিত থাকেন, মহুয়া বেগম সেখানে প্রচন্ড শান্তশিষ্ট।

যদিও সারাফাত উল্লাহ এর কিছুক্ষণ পরই বাসায় ফিরেন।বাসায় ফিরেই দেখেন বাসাভর্তি মানুষ।উনাকে দেখে সবাই রাস্তা ছেড়ে দিচ্ছিল।জায়গা পেয়ে সারাফাত উল্লাহ দ্রুত ঘরের ভেতর প্রবেশ করলেন। বাবাকে সামনে আসতে দেখেই ছোট মেয়ে মৌলি বাবাকে জড়িয়ে ধরল। আর বিড়বিড় করে বলছিল আব্বা, আরাফাত এটা কি করল। ও আব্বা, আব্বা গো। আব্বা, আরাফাত এটা কি করল।

পাতলা পাঞ্জাবি ভেদ করে ভেতরের সেন্ডু গেঞ্জি ভিজে তারপরই তিনি মেয়ের চোখের জল টের পাচ্ছিলেন। নিজের তিন সন্তানদের মধ্যে এই প্রথম কোন সন্তান বাবাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদল।কেউ যখন কাউকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে তখন বুঝা যায় সে অনেক আপন।মানুষ সাধারণত তার খুব আপন মানুষ ছাড়া কাউকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে না।

খুব ছোটবেলায় আরাফাত বাবাকে জড়িয়ে ধরে খুব কান্না করতো। আচ্ছা, সেটা কি হিসাবে রাখা উচিত হবে? হিসাবে না রাখলে তো সারাফাত উল্লাহ কখনোই আর আরাফাতের চোখের জলের স্পর্শ পাবে না!

মেয়ের পিঠে হাত বুলিয়ে দিয়ে উনি এবার আরাফাতের ঘরের দিকে এগিয়ে গেলেন। একটা সাদা কাপড়ে আরাফাতকে আপাদমস্তক ঢেকে রাখা। উনি রীতিমতো স্তব্ধ হয়ে গেলেন। আস্তে আস্তে এগিয়ে গেলেন।মুখের দিকের কাপড়টা উঠিয়ে দেখলেন তার একমাত্র ছেলে আরাফাত শুয়ে আছে।আরাফাত যে মারা গেছে এটা এখনো বিশ্বাস করতে পারছেন না তিনি।

গতকাল বিকালে রাস্তার মোড়ে আরাফাত সারাফাত উল্লাহর বন্ধু আজমতের নামে বিচার দিয়েছিল। আজমত আরাফাতের বাসায় গিয়ে অংক করে আর আজমত সারাফাত উল্লাহর স্কুল জীবনের বন্ধুও।

আরাফাত আর আজমতের কাছে অংক করতে যাবে না। কারণটা শুনতেই সারাফাত উল্লাহ রাগে গজগজ করতে থাকলো। তবে এই রাগ মোটেও নিজের বন্ধু আজমতের জন্য না। রাগটা নিজের ছেলে আরাফাতের উপর। আজমত মোটেই এমন কিছু করতে পারে না তার ছেলের সাথে। আরাফাত আজমতের কাছে আর পড়তে চায়না বলেই এমন বাজে নালিশ করছে।ছেলেকে স্ট্রেইট বলে দেন আর যদি এমন কিছু শুনেন তাহলে ছেলের খবর আছে।আর বলে দিলেন কালকে সকালে পড়তে না গেলে ছেলের গায়ের চামড়া তুলে ফেলবেন তিনি। এসব কথা লোকে জানলে তার মান সম্মান থাকবে? আজমত ভালো লোক।খুব ভালো অংক করায়। সারাফাতের ছেলে বলেই আলাদা করে সকালে আরাফাতকে পড়ায়।

সারাক্ষণ আরাফাতের এই কথাগুলো মনে পড়ছে তার। সারাফাত উল্লাহ শুধু ভাবছেন তিনি কি করবেন। সারাফাত উল্লাহ তার বন্ধু আজমতকে ফোন দিলেন। আর বললেন, তুই যা করেছিস তা ঠিক করিস নাই। আমি জীবনেও কল্পনা করি নি এমনটা।

আজমত কোন কথা বলছে না। আজমত ধরা পড়ে গেছে। এদিকে সারাফাত উল্লাহ বুঝতে পারলেন, আসলে আরাফাত সত্য কথা বলেছিল।কিন্তু তাই বলে ছেলেটা আত্মহত্যা করে ফেলবে?

পাঁচ ঘন্টা ভাবার পর সারাফাত উল্লাহ নিশ্চিত হলেন আরাফাত আত্মহত্যা করে নি। তাকে হত্যা করা হয়েছে। হত্যা মামলার প্রধান আসামী আজমত। আর তার সহযোগী বিশিষ্ট সমাজসেবক সারাফাত উল্লাহ।

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে মার্চ, ২০২১ সকাল ৯:৩২

ইসিয়াক বলেছেন: গল্পের থিম সমসাময়িক বিষয় কিন্তু উপস্থাপন আরও ভালো ভাবে হতে পারতো। অবশ্যই এটা আমার নিজস্ব মতামত। সামনে আপনার আরো লেখা পড়তে চাই।
লিখতে থাকুন।
শুভ কামনা।

২৩ শে মার্চ, ২০২১ ভোর ৪:২৭

আলমগীর জনি বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। অবশ্যই সামনে আরো লেখা পাবেন। আপনার মূল্যবান কমেন্ট আশা করব।

২| ২২ শে মার্চ, ২০২১ সকাল ১০:৩১

কবিতা ক্থ্য বলেছেন: অসাধারন গল্প।

২৩ শে মার্চ, ২০২১ ভোর ৪:২৮

আলমগীর জনি বলেছেন: অনেক অনেক ধন্যবাদ আপনাকে

৩| ২২ শে মার্চ, ২০২১ সকাল ১১:৩৯

রাজীব নুর বলেছেন: গল্প ভালো হয়েছে।

২৩ শে মার্চ, ২০২১ ভোর ৪:২৮

আলমগীর জনি বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই

৪| ২২ শে মার্চ, ২০২১ দুপুর ১:১২

মোহামমদ কামরুজজামান বলেছেন: "লুক্কায়িত যৌন হয়রানি" - ছেলে-মেয়ে সবার জন্যই এক মূর্তিমান আতংকের নাম। সমাজের সম্মানিত বা এমন অনেকের কাছ থেকে এমন অপ্রত্যাশিত ঘটনার মুখোমুখী হয়ে কত ছেলে-মেয়ের জীবনে যে স্থবিরতা নেমে আসে বা কত প্রাণ যে অকালেই ঝরে যায়,তা আমাদের অজানই থেকে যায়।

তবে এ বিকৃত রুচির মানুষের বোধোদয় হয়না।

২৩ শে মার্চ, ২০২১ ভোর ৪:২৮

আলমগীর জনি বলেছেন: সত্য

৫| ২২ শে মার্চ, ২০২১ দুপুর ১:৫২

নেওয়াজ আলি বলেছেন: এমনই হচ্ছে এখন।

২৩ শে মার্চ, ২০২১ ভোর ৪:২৯

আলমগীর জনি বলেছেন: এখনও হচ্ছে আগেও হতো।

৬| ২৩ শে মার্চ, ২০২১ রাত ১২:৪১

কল্পদ্রুম বলেছেন: আরাফাত,সারাফাত,আজমত নামগুলো আর একটু চিন্তা করে ব্যবহার করলে ভালো হতো।একই বাক্যে পরপর থাকায় পড়তে কিছুটা অসুবিধা হয়েছে।এছাড়া ভালো লেগেছে।

৭| ২৩ শে মার্চ, ২০২১ ভোর ৪:২৯

আলমগীর জনি বলেছেন: সামনে চেষ্টা করব। আপনাকে ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.