নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

সাহিত্য, সংস্কৃতি, কবিতা এবং সমসাময়িক সামাজিক বিষয়াদি নিয়ে গঠনমুলক লেখা লেখি ও মুক্ত আলোচনা

ডঃ এম এ আলী

সাধারণ পাঠক ও লেখক

ডঃ এম এ আলী › বিস্তারিত পোস্টঃ

বস্তিবাসী সেই অগ্নিকন্যাকে নিয়ে লেখা একটি কাব্যগাথা

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৫৫


ঢাকার আকাশ তখন ধুলোমাখা সন্ধ্যার রঙে ছিল ডেকে
বস্তির সরু গলিতে শিশুদের কান্না
নর্দমার স্রোতের মতো দীর্ঘশ্বাস ফেলে
সেই অন্ধকার জন্মঘরে প্রথম আলো দেখেছিল
এক বস্তিবাসী কন্যা শিরিন
এখনো এক অচেনা নাম
যার ভেতর একদিন পুরো বস্তির ভাগ্য
নড়বড়ে হয়ে উঠবে জেগে
যা নগরবাসির কাছে
এখনো কল্পনাহীন ।

তার জন্মের দিনটিতে
টিনের চালা কাঁপছিল ঝড়ের চাপে
আর তার মা বলছিল
এই মেয়ে আগুনের ভেতর দিয়েও হাঁটতে পারবে।
কেউ বিশ্বাস করেনি
বস্তিতে কেউ জন্মালেই
ভাগ্য যেন আগেই লিখে রাখে
পরাজয়ের কালি।
কিন্তু শিরিনের চোখে ছিল
অদ্ভত এক আলো
যেন আলোহীন শহরের বুকেও
সে পথ খুঁজে নিতে জানে।

দশ বছর বয়সেই শিরিন বুঝে যায়
পেটের ক্ষুধার ভাষা
আর সমাজের নির্লজ্জ শ্রেণিভেদ
মা বাসন মাঝায়, বাবা রিকশায়
তারও হাতে ঝাড়ু বালতির ওজন
শৈশবের খেলনাকে ভুলিয়ে দেয়।

যে ছেলেমেয়েদের হাতে খেলনা গাড়ি
তারা জানেও না যে বস্তিবাসী কন্যা
শিরিন কখনো খেলনার নামও শুনেনি,
যে প্লেটে ভাতের অর্ধেক ফেলে দেওয়া
সেই বাকি খাবারই
শিরিনের সারা দিনের খাদ্যের যোগান।

গুলসানের বড় বাড়িতে কাজে গিয়ে
শিরিন প্রথম দেখে
শহর শুধু রাস্তা নয়
দুটি ভিন্ন ভিন্ন দেশ
একদিকে উঁচু দালান
অন্যদিকে বস্তির দগদগে লড়াই।

এভাবেই
কষ্টের ওপর কষ্ট
শেখার ওপর শেখা
শিরিন বড় হতে থাকে
এক অনাঘ্রাত প্রাচীন যোদ্ধার মতো।

বয়স যখন ষোল ছুঁই ছুঁই
বস্তির গলিতে গানের মতো আসে
শহিদুল
রিকশাওয়ালা
কিন্তু হৃদয় ছিল ভোরের রোদের মতো স্বচ্ছ।

তাদের প্রেম ছিল
রুটি-ভাগাভাগির মতো সরল
শিতের রাতে এক কম্বল ভাগ করার মতো নিঃস্ব
তবু অঢেল
ঝড়ের রাতে হাতে হাত রেখে থাকা
আর ভবিষ্যৎ নামের স্বপ্নটাকে
শোঁ শোঁ বাতাসে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা
কিন্তু সুখ কখনো দীর্ঘস্থায়ী হয়নি
এই শহরের ধুলো-বিধ্বস্ত মানুষের কাছে।

ডেঙ্গু জ্বরে শহিদুল চলে গেলো
মুখে রেখে শেষ কথা
শিরিন , তুই লড়তে থামিস না…
তুই অনেককে পথ দেখাবি।

শিরিনের কোলের শিশুটি তখন
মাত্র আট মাসের
রিনা
মায়ের চোখে তখন
জ্বলে ওঠে অন্য আগুন
যা প্রেমের মৃত্যু থেকেও
বেশি উগ্র, বেশি জীবিত।

নগর রঙ্গমঞ্চে বেঁচে থাকার যুদ্ধ
ভাবনা একটাই
সেকি বস্তিবাসী অগ্নি কন্যা
হতে পারবে কোনদিন
যে বস্তির গলি ঘুরে ঘুরে
হালিমার নাইট শিফট
সুফিয়ার ফুটপাথের চায়ের দোকান
মিতুর সেলাই মেশিনের ঝনঝন
আর আয়েশার চাপাতির দোকান
সবার সাথেই দুটি কথা বলে
হার না মানার কথা শুনাতে।

প্রতিদিন সকালে
সে রিনাকে রেখে যায়
বস্তির স্কুল-ঘরে
যেখানে বাঁশের বেঞ্চ
চকের ধুলো
আর শিক্ষকও প্রায়ই না-থাকা
তার জীবনের নতুন অধ্যায়।

ধুলো উড়তে থাকা ঢাকা শহর
শিরিনের সামনে
একটা বিশাল রঙ্গমঞ্চের মতো
যেখানে ধনী-গরিব
দুই চরিত্রই অভিনয় করে
এক নাটকে
যার নাম অসাম্য আর বঞ্চনা।

কিন্তু শিরিন বুঝে যায়
কেবল নিজের বাঁচা নয়
এই লড়াইয়ের ভেতর আছে
অন্য নারীদের স্বপ্ন।

হালিমার চোখে রাত জমে থাকে
সুফিয়ার হাত ফেটে যায়
গরম কেটলির দগদগে দাগ
মিতুর স্বামী তাকে মারে
তবু সে সেলাই দেয়না ছেড়ে
শিরিন দেখে
নগরীর অদম্য শক্তি এরাই।

করিল বস্তিতে ভয়াল আগুন শেষে
যেথায় শুধু টিনের সরু খাঁজ
শিরিনের ঘর ছাইভস্ম,
নেই আর বাঁচার সাজ।

গায়ে ধোঁয়ার দগ্ধ গন্ধ
চোখে রিনার জন্য ভয়
খোলা মাঠে রাত কাটে
মা-মেয়ের অঘুম রাত
আগুনে সব হারিয়ে রিনার প্রশ্ন
হামরা এলা কোনঠে যামো ?

বস্তির টিনের চালা যখন জ্বলে যায়
লেলিহান আগুনে
শিশুরা ভয়ে কাঁপে
নারীরা চিৎকার করে
অন্ধকার গলিতে দৌড়াদৌড়ি।

শিরিন তখন
শুধু নিজের ঘর নয়
সব ঘরের পাশে দাঁড়ায়
রিনাদেরকে নিয়ে যায় দুরে
সে টিন টেনে ধরে
বালতি সাজায়
মানুষ বাঁচায়
গর্ভবতী আয়েশাকে কাঁধে করে
আগুনের ধুম্র থেকে আনে তুলে।

সেই রাতে
পুরো বস্তি দেখেছিল
শিরিনের চোখে এক নতুন জ্যোতি।
সে যেন শুধু এক নারী নয়
বরং এক সম্ভাবনার নেতৃত্ব।

পরদিন ভোরে ফেরে তারা
ভাঙা টিনের থা’ন
কাচা মাটির নিচে তখনো আগুনের উত্তাপ
তবু শিরিন চিনে নেয় তার ছোট্ট খুপরি ঘর
স্বপ্নগুলোর ছাইকে বুকে বেঁধে বলে
অগ্নি কন্যা হয়ে বাঁচতে হবে এবার ।

ঘটনা পরম্পরায় শক্তিতে বুক বেধে
শিরিন ভাবে তারা নীজেরাই
সংগঠিত ভাবে গড়তে পারে
বস্তিবাসী নারীদের দল
কোনটার নাম হবে ‍আগুনের ফুলকি,
কোনটা ঝড়দল,
কোনটা শক্তি-বৃত্ত,
বৃষ্টি, অগ্নিকাণ্ড, স্বাস্থ্যঝুঁকি,
বিদ্যালয়
সব নিয়েই তার পরিকল্পনা।

নগরবাসী দেখতে পারবে তাকিয়ে
এই বস্তির ভেতরে
নারীদের জাগরণ
যেন এক মহাবিস্ফোরণ।

ঢাকার রাত এখনো শব্দে-শ্বাসে ভার
দালানের আলো এখনো বস্তির ঘরে পৌঁছায় না
তবু শিরিন জানে
একদিন রিনা বড় হবে
একদিন বস্তির সব শিশুই
আরও বড় স্বপ্ন দেখতে পারবে।

শিরিন ভাবে এক অগ্নি কন্যা হয়ে
প্রতিদিন হাটবে
উত্তরার মোড় থেকে
ধানমন্ডির অলিগলি পর্যন্ত
চাকরি নয়
দায়িত্বের পথে।

নারীদের হাসি
শিশুদের স্কুলব্যাগ
বৃষ্টির রাতে
কাদার ওপর দাঁড়ানো সুরক্ষাগৃহ
এসকলই তার নতুন নির্মাণ ভাবনা
শহর জানুক বা না-জানুক
তাদের ঘামের ভেতর
লুকানো আছে এক মহাকাব্যের সুর।

যেখানে ৩কোটি ৬০ লক্ষ্যের
মহানগরীতে থাকা প্রায়
২৫ লক্ষ বস্তিবাসী নারী
উঠে দাঁড়াতে পারে
আগুনের ভেতর থেকে
ধুলোমাখা দিনগুলোকে
অসীম সাহসের আলোয় সাজিয়ে।

সেখানে রাতে রিনা ঘুমিয়ে গেলে
নিঃশব্দে আঁধার ঘরে বসে শিরিনের
চোখের ভেতর আগুনের মতো ভাসে
বাঁধ ভাঙ্গা গানের মত একটি বাক্য
কেউ যেন অভাবের কারণে হেরে না যায়
ধুলোতেও যদি গাছ জন্মাতে পারে
তবে বস্তির নারীরাও পারবে।

এটাই যেন শিরিনের প্রতিশ্রুতি
এটাই অগ্নিকন্যার মহাকাব্য
এমনই হোক বস্তিনারীর জাগরণ
যেন হয় আগুনের ফুলকির মতন
যেন সকলেই পায় বাঁচার জন্য
সম-অধিকার আর সন্মান ।

ছবি সুত্র : গুগল অন্তরজাল

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:১৪

রাজীব নুর বলেছেন: বিশ্বাস কবিতা!
ভালো কবিতা।
একটা বানান ভুল পেয়েছি।

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৯

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:



কবিতা ভাল হয়েছে জেনে ভাল লাগল ।
বানান ভুল নিঃসন্দেহে লেখাকে দুর্বল করে, কিন্তু সবকিছুর মতো এরও আছে কিছু আশ্চর্যজনক উপকারিতা রয়েছে
যা আমাদের ভাববার সুযোগ দেয়। নিচে বানান ভুলের উপকারীতার একটি বিবরণ দিলাম, যা কাউকে কোন লেখায়
বানান ভুল ধরার আগে দু’বার ভাবতে বাধ্য করতে পারে ।

বানান ভুল সাধারণত একটি ত্রুটি হিসেবে বিবেচিত হয়, কিন্তু এর মাঝেও আছে এক অনন্য সৃজনশীলতা ও
মানবিকতা। ভুল বানান কখনো কখনো ভাষাকে নতুন পথে নিয়ে যায় নতুন শব্দ, নতুন অভিব্যক্তি, এমনকি
নতুন ভাবের জন্ম দেয়। ভাষার ইতিহাসে এমন বহু শব্দ আছে যা শুরুতে ভুল ছিল, পরে সেগুলোই গ্রহণযোগ্য
হয়ে গেছে।

প্রথমত, বানান ভুল মনে করিয়ে দেয় ভাষা জীবন্ত। মানুষ লিখছে বলেই ভুল হচ্ছে; আর মানুষ যখন লেখে,
তখন তার চিন্তা, আবেগ, তাড়াহুড়া বা উৎসাহের ছাপও লেখা শব্দে জায়গা করে নেয়। এই মানবিক দিকটা
ভাষাকে আরও উষ্ণ করে তোলে।

দ্বিতীয়ত, ভুল বানান লেখককে শেখায়। ভুল না হলে শেখার জায়গাটাই সংকুচিত হয়ে যেত। প্রতিটি ভুল বানান
নতুনভাবে জানার একটি সুযোগ হয়ে আসে। তাই এক অর্থে ভুলই আমাদের সঠিক পথে এগিয়ে দেয়।

তৃতীয়ত, ভুল বানান সৃজনশীলতার দরজা খোলে। অনেক সময় ভুল হয়ে যাওয়া শব্দটি এতটাই শ্রুতিমধুর বা অর্থবহ
হয় যে সেটি নতুন শব্দ হিসেবেই প্রতিষ্ঠা পেতে পারে। ভাষার বিবর্তনে ভুল শব্দের অবদান কম নয়।

সর্বোপরি বানান ভুল আমাদের মনে করিয়ে দেয় সমালোচনা করার আগে সহানুভূতি জরুরি। ভুল ধরে দেওয়া সহজ,
কিন্তু বুঝে বলা কঠিন। কেউ ভুল করলে তা ধরে দেওয়ার আগে যদি মনে রাখা যায় যে ভুল করা শিখবার অংশ,
তাহলে ভাষা আরও বন্ধুসুলভ, আর যোগাযোগ আরও সুন্দর হয়ে উঠবে।

তাই বানান ভুল ত্রুটি হলেও তা শুধুই ত্রুটি নয়; এটি শেখার, বিকাশের এবং নতুন ভাবনার সোপান। তাই কোন
লেখার ভুল বানান দেখলে তা ধরিয়ে দেয়ার আগে একবার নয়, দু’বার ভাবা উচিত এটা সমালোচনা না সহযোগিতা,
যাহোক বানান ভুল ধরে দেয়ার বিষযটি ভাষাকে সমৃদ্ধ করার জন্য সহায়ক ।

ধন্যবাদ সহযোগীতা করার জন্য।

শুভেচ্ছা রইল

২| ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৩০

বাজ ৩ বলেছেন: সুন্দর কাব্যগাথা।পূর্বেরটা কি হলো ভাই! :||

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪৯

ডঃ এম এ আলী বলেছেন:


কাব্যগাথা সুন্দর হয়েছে শুনে ভাল লাগল ।
এডিট করতে গিয়ে ভুলবশত মুছে ফেলুন বাটন চেপে দিয়েছি ।
যাহোক নতুন করে শিরোনাম দিয়ে ফিরিয়ে এনেছি ।

শুভেচ্ছা রইল

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.