নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার সম্পর্কে বলার কিছু নেই ।

শেষ কক্ষপথের ইলেক্ট্রন

নিজেকে বিশ্বাস করি । নিজের কাজ কে বিশ্বাস করি । আমি ভালোবাসি নিজেকে আমি ভালোবাসি হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রীস্টান উপজাতি কে ভালোবাসি । আমি বাঙ্গালীকে ভালোবাসি ।আমি বাঙ্গালীর স্বাধীনতাকে ভালোবাসি । আমি ভালোবাসতে ভালোবাসি ।

শেষ কক্ষপথের ইলেক্ট্রন › বিস্তারিত পোস্টঃ

কিছু কথা

০৮ ই মার্চ, ২০১৩ সকাল ৯:১৮

বাইরের পরিবেশটা আজ একটু অচেনা লাগছে ।

কোথায় কোথায় পরিবর্তনের স্পর্শ লেগেছে ভাবছি ।

হুম,জানালার সামনের উইলো গাছটায় আজ কিছু

পাতা গজিয়েছে । ইরানী গোলাপের গাছটাও পানির

অভাবে কেমন যেন নেতিয়ে পড়েছে ।

কয়েকদিন আগে বেশ বড় একটা গোলাপ

ধরেছিলগাছটাতে ।আজকে তার

ঝরে যাওয়া পাপড়িগুলো ছাড়া দেখতে কেমন যেন

অস্বস্তি লাগছে ,

যেন আমার প্রতীকী ছবি ।



এখানে আমি মামার কাছে থাকি । মামার

বাড়িটা যেখানে-সেখান থেকে ওয়েলিংফোর্ড

শহরে যেতে ৩০ মিনিটের বেশি লাগে না তবু

শহরে বেশি একটা যাওয়া হয় না । এর থেকে টেমস

নদীর পাড়ে ঘুরতে যাওয়াই বেশি পছন্দ আমার ।

ওটা এখন প্রায় রুটিন হয়ে গিয়েছে ।

মামার বাড়িটা আসলে উনি মামীর

বদৌলতে পেয়েছিলেন,মামী বৃটিশ ছিলেন ।

বাড়িটা দেখতে অনেকটা টালী দেওয়া বৌদ্ধ

মন্দিরের মত ।সামনে একটা বাগান,ফুলের বাগান ।

বাগানে অনেক ফুল ফোটে । মাঝে মাঝে মিষ্টি গন্ধ

নাকে এসে লাগে । কিন্তু আমি তা সহ্য

করতে পারি না ।

যখন খারাপ লাগা গুলো আমায় আঘাত করে তখন

মারুতিটা নিয়ে টেমসের পাড়ে চলে যাই ।

একটা নির্দিষ্ট জায়গা আছে নদীর পাড়ে,আমার

পছন্দ করা ।

একটু শান্ত ।এখানে বসে অতীতের

কথা ভাবতে ভালোই লাগে । মাঝে মাঝে মনে হয়

আমি এখানে সেই আগের মত কারো জন্য

অপেক্ষা করছি,যেমনটা প্রায়ই করতাম লেকের

পাড়ে বসে মারিয়ার জন্য ।

টেমসের স্বচ্ছ জল আমার দিকে তাকিয়ে যেন

বিদ্রুপের হাসি হাসে ।হাসবেই তো । যারকোথাও

সফলতা নেই তার জন্য পৃথিবী নয়,এটা আমি বুঝেছি ।



আম্মা ফোন করে প্রায়ই কান্নাকাটি করে । ওনার

সাথে কথা বলা আজকাল তাই কমিয়ে দিয়েছি । পাক

না হয় একটু কষ্ট,এখন থেকেঅভ্যাস করুক । তারার

দেশে চলে গেলে তখন তার শোকটা সহ্য

করতে সুবিধা হবে ।

মারিয়া নাকি অনেক কেঁদেছিল,আমার মেডিকেল

রিপোর্টের কথা শুনে । ও মেয়েটা এখনও বাচ্চাই

রয়ে গেলো ।এখনও আমাকে ফোন করে একা একা ওর

স্বপ্নগুলোরকথা অনর্গল বলতে থাকে-আমি ভাল

হয়ে যাবো,আমাদের ছোট্ট

একটা বাড়ি হবে,সারাদিন দুজনে গল্প করব

ইত্যাদি ।

আমি ওর কথাগুলো শুনি,বাধ্য বাচ্চার মত।কিছুই

বলি না । অজান্তে দু ফোঁটা পানি চশমার গ্লাস

দুটো ভিজিয়ে দেয় ।

মারিয়াকে মাঝে মাঝে জিঙ্জ্ঞেস করতে ইচ্ছা করে,

এত ভালোবাসো ক্যানো আমাকে?এ ভালোবাসার দাম

যে পৃথিবী দিতে পারবে না,পৃথিবী বড় নিষ্ঠুর । আর

জিঙ্জ্ঞেস করা হয় না,তার আগেই ওপাশ

থেকে ফোঁপানোর শব্দ পাই ।

মাঝে মাঝে মেইল করে ও আমাকে জোকস পাঠায়,আর

মন খারাপ করতে না করে । মন খারাপ তো চাইলেও

করতে পারিনা । পরিচিত মুখগুলোর এত

ভালোবাসা কজন পায়?না হয় সেটা বেশিদিন ভোগ

করতে পারবো না,তবু পেয়েছি তো ।।



বাবার কথা খুব মনে পড়ে । লোকটার

ভালোবাসা কোনদিন বাইরে প্রকাশ পায়নি ।

স্কলারশিপ নিয়ে এখানে চলে আসার

আগে ফাইজলামি করে বাবাকে একটা ফেসবুক

আইডি খুলে দিয়েছিলাম ।

বলেছিলাম সারাদিন তোমার

প্রোফাইলে যেয়ে বসে থাকব আর চ্যাট করব ।তখন

আমাকে একটা আদরমাখা ধমক দিয়েছিল বাবা ।

আজকে হঠাত্ মোবাইলে এলার্ট আসল । দেখলাম

বাবা ফেসবুকে মেসেজ দিয়েছে- "চিন্তা করিসনা ,

তোর কিচ্ছু হবে না ।"

বাবা বোঝে না যে আমি বড় হয়েছি অনেক ।

মিথ্যা স্বান্তনা কেন দাও আমাকে?

তাওআবার আমার মন ভালো করার জন্য ফেসবুকে ঢুকে ।

অথচ তুমি ফেসবুকের মানেই জানতেনা ।



আমি জানি বাবা লিউকেমিয়া কাকে বলে-বাচ্চাদের

মত আচরণ করা কি এ বয়সে তোমার মানায়?

তুমি আমাকে কত ভালোবাসো সে তো আমি জানি ।

টাকা চাইলে কোনদিন হাত দিয়ে দাও নি ।বলেছো-

"যা লাগবে পকেট থেকে নিয়ে যা ।"

আমি বলতাম- "একটু মডার্ণ হতে পারলে না তুমি?এ যুগে কেউ পকেটে টাকা রাখে?মানিব্যাগ

কিনলে কি হয়!"

আবার সেই ধমক..... "রোজগার

করে কিনে দিস,দেখবো কত পারিস ।।"

আম্মা সেদিন বলল বাবা নাকি একটা সুন্দর

মানিব্যাগ কিনেছে । সেটা টেবিলে পড়ে থাকে ।

তার ভিতরে সবসময় কিছু টাকা রাখে বাবা ।

তুমি যতই চেষ্টা কর না কেন বাবা,মডার্ণ হতে পার

নি ।হেরে গেছো ছেলের কাছে ।



ছোট একটা ভাই আছে আমার । একদিন ফোন

করে বলেছিল,- "ভাইয়া লিউকেমিয়া কি অনেককঠিন রোগ?"

আমি বলেছিলাম - "না ।"

ও আমাকে তখন বলল-

"আম্মাকে তাহলে আমি কাঁদতে মানা করব,শুধু শুধু কেউ কাঁদে নাকি?তুমি তোভালো হয়ে যাবা ।"

হুম.. বলেই লাইনটা কেটে দিতে হয় আমাকে ।

রুমে ঢুকে আজ চোখের সব জল বিসর্জন দিলাম ।

এদের ছেড়ে আমি থাকতে পারব তো?আচ্ছা মানুষ

মারা যায় ক্যানো?বেঁচে থাকলে কি ক্ষতি হত?

মারা গেলে কি আবার এদের

মাঝে ফিরে আসতে পারব?

প্রশ্নগুলো মাথায় ঘুরতে থাকে । তখনই

বাইরে তাকিয়েঝরে যাওয়া ইরানী গোলাপটার

শেষাংশ আবার দেখতে পাই ।।

ঈশ্বরকে চিত্কার করে প্রশ্ন করতে ইচ্ছা করে-

-ঈশ্বর !এই মানুষগুলো কি পাপ করেছিলো আমাকে একটু

ভালোবাসতে গিয়ে যে তোমার তা সহ্য হল না....!!

সে জবাব টা তুমি অন্তত দাও।

জানি... এ জবাব তুমিও দিতে পারবে না;

কখনও না ! কখনও না ! কখনও না !





(অনেকদিন আগে ফেসবুকে লেখা একটা জঞ্জাল মার্কা গল্প। হঠাৎ শেয়ার করতে ইচ্ছা হল)

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.