নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

একমাত্র বিরোধী পক্ষ!!

*কুনোব্যাঙ*

তফাত যাও সব ঝুঁট হ্যাঁয়!

*কুনোব্যাঙ* › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার বর্ণমালা

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ৩:৪৪



গত পহেলা জানুয়ারি একটা পুকুর ভিউ কফিশপে বসেছিলাম। কাছেই এক ভদ্রমহিলা ফোনে কথা বলছিলেন, কান পাততে না চাইলেও ভদ্রমহিলার কথাগুলো আপনা থেকেই আমার কানে চলে আসছিলো। যা বুঝলাম ভদ্রমহিলা একজন শিক্ষিকা এবং অপর প্রান্তে রয়েছে তাঁর এক ছাত্র যে কিনা থার্টি ফার্স্টের পার্টি করতে গিয়ে কোন অনলাইন ক্লাস বা এসাইনমেন্ট মিস করেছে। ভদ্রমহিলা তাঁর ছাত্রকে পাশ অথবা আরেকবার সুযোগ দিতে নাজার, এসব নিয়েই কথোপকথন। পুরো কথোপকথন হচ্ছিলো ইংরেজিতে। আমি যা বুঝলাম তা হলো ইংরেজি ভাষায় মধ্যে প্রচুর বাংলা শব্দ ঢুকে গেছে।

আজ সন্ধ্যার দিকে গিয়েছিলাম একটু ক্ষিলক্ষেত লেকসিটি কনকর্ডে। ফেরার সময় লেকসিটির একটু আগেই একটা ছোট রাস্তার পাশে দেখি কয়েকটি চিতই পিঠার দোকান, ভাবলাম সান্ধ্যকালীন খাবারটা এখানেই সেরে যাই। খেতে খেতেই দেখলাম আমাদের মতোই দেখতে কয়েকগ্রুপ ছেলেমেয়ে রাস্তাটা দিয়ে গেলো আসলো তারা সবাই নিজেদের মধ্যে কথা বলছে ইংরেজিতে। কৌতুহলী হয়ে চিতই খালাকে জিজ্ঞাসা করলাম ঐদিকে কি কাশ্মীরী বা নেপালি স্টূডেন্টদের কোন হোস্টেল আছে বা বিদেশিরা থাকে এমন জায়গা আছে। খালা উত্তর দিলো, না। কেন জিজ্ঞাসা করেছি খালা সেটা বুঝতে পেরে আরো বলে, ওরা আমাদের মতোই এদেশীয়।

সিলেটের ডাউকি বর্ডার পার হলেই ওপারের সব খাসিয়ারা সবাই ইংরেজিতে কথা বলে এমনকি নিজেদের মধ্যেও। আপনি গেলে না চাইতেও কোন সুকন্ঠী গায়িকা আপনাকে দু'চারটি ইংরেজি গান শুনিয়ে দিতে পারে। সবার ঘরে বাইরে দোকানে অফিসে গাড়িতে ম্যানইউ চেলসি আর্সেনাল লিভারপুল ক্লাবের পতাকা সুভেনির জানান দিচ্ছে কে কোন দলের সাপোর্টার। নিজেদের ভাষার সাথে সাথে খাসিয়ারা তাদের নিজেদের সংস্কৃতিও প্রায় হারাতে বসেছে। আস্ত সুপারি দিয়ে পান খাওয়া ছাড়া তেমন কোন মৌলিক সংস্কৃতি খাসিয়াদের মধ্যে সেভাবে দেখা যায় না।

আমার বউ আমার বাচ্চাকে প্রমিত বাংলা শেখানোর চেষ্টা করছে খুব। আমি বলি দরকার কি! টাংগাইল গাজীপুরের টানে কথা বললে সমস্যা কোথায়, মাতৃভাষাই তো। তাছাড়া এখন আমরা যাকে প্রমিত বাংলা বলি এর আয়ু সম্ভবত এরইমধ্যে ফুরিয়ে এসেছে। কলিকাতা যখন বাংলা অঞ্চলের প্রধান শহর হিসেবে আত্মপ্রকাশ করলো তখন বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের মিলনের আলাদা একটা ভাষা তৈরি হলো, চলিত ভাষায় সেখানেই গোড়াপত্তন যাকে বর্তমানে আমরা প্রমিত বাংলা বলেও চিনে থাকি। ঢাকা শহরেও বাংলার ব্যবহার ও উচ্চারণের আলাদা একটি ধরণ এরই মধ্যে তৈরি হয়ে গেছে। মানি আর নাই মানি ভবিষ্যৎ বাংলার মূল স্রোত সম্ভবত এটাই। যদিও দু'একজন আপকামিং বুদ্ধিজীবী আলাদা ধরনের শব্দ ও উচ্চারণ ও বাক্য তৈরির চেষ্টা করছেন কিন্তু সেটা কোনভাবেই সাসটেইনেবল না। ভাষার গতি দু'চারজন বা দু'চারশ জনের উপর নির্ভর করে না। ভাষা লোকজ। বড়জোড় হিন্দি ভাষাতে ফার্সি অক্ষর জুড়ে দেয়া যায় শুধু!

ইচ্ছে ছিলো বা এখনও আছে আমার বাচ্চাকে বাংলা মধ্যমেই পড়াতে। কারণ বাংলা একটি পরিপূর্ণ ভাষা এবং মাতৃভাষা, অনুভূতি প্রকাশে মাতৃভাষার চাইতে ভালো কোন ভাষা হতেই পারেনা। তাছাড়া কাজ চালানোর জন্য কোন বিদেশি ভাষা শিখতে খুব বেশি সময়েরও প্রয়োজন হয় না। কিন্তু গোল বাঁধিয়েছে এখনকার শিক্ষানীতি। এই শিক্ষানীতিটা দেখলেই এখানে এন্থনি গ্রামসির ছায় নয়, পুরো গ্রামসিকেই দেখতে পাই। গ্রামসির রাজনৈতিক দর্শন, সমাজ দর্শন, মুসোলিনীর ক্ষপড়ে পড়ে বেচারা জীবনটা জেলখানাতেই কাটিয়ে দিলো এর কারণে ব্যক্তি গ্রামসি ও তাঁর রাজনৈতিক এবং সমাজ দর্শনের প্রতি ব্যক্তিগতভাবে আমার ভালোলাগা আছে। কিন্তু কি কারণে জানি একজন শিক্ষা দার্শনিক হিসেবে গ্রামসিকে আমার কোনভাবেই পছন্দ নয়। এখনকার শিক্ষানীতিটা যখন দেখি তখনই মনে হয় সেখান থেকে গ্রামসি ফিচকি হাসি দিয়ে আমাকে বলছে, দ্যাখ তুই আমার শিক্ষানীতি পছন্দ না করলে কি হইবো তোর বাচ্চার আমার দেখানো রাস্তাতেই পরাশুনা করতে হইবো। কেমন কেমন জানি লাগে!

যাইহোক, আমার নিজের ভাষা নিয়ে কোন ফ্যাসিনেশন নাই। ভাষা বহতা নদীর মতো, সময় ঠিক করবে তার গন্তব্য কোথায়। আমার সব ফ্যাসিনেশন সব আবেগ সব ভালোবাসা বর্ণমালাকে ঘিরে। একারণেই হয়তো নিজের পোস্ট বা বাংলা জানা কারো পোস্টের কমেন্টে ইংরেজি শব্দও লিখি বাংলা বর্ণমালা দিয়ে। বর্ণমালাই সার্বভৌমত্ব। বর্ণমালা সমৃদ্ধ জাতির উপর দীর্ঘমেয়াদী আগ্রাসন চালানো অত্যন্ত কঠিন এবং প্রায় অসম্ভব।

দেশপ্রেম বোধ আমার আমার মধ্যে নেই। কেউ না মানলেও বা জায়গা দিতে না চাইলেও পুরো দুনিয়াটাকেই আমি আমার নিজের ঘরবাড়ি মনে করি। তারপরও আমার জাতিসত্তার যে জিনিষকে খুব গভীর থেকে অনুভব করতে পারি সেটি হলো আমার বর্ণমালা।

শামসুর রাহমান আমার বর্ণমালাকে 'দুঃখিনী' বলায় তাঁর উপর রাগটা আমার কোনদিন যাবে না!

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ভোর ৪:০৪

চাঁদগাজী বলেছেন:


সব তো বললেন ভাষা নিয়ে, শেষে বর্ণমালার জন্য কি দোয়া খায়ের করতে চাইলেন?

২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ ভোর ৪:১২

*কুনোব্যাঙ* বলেছেন: দোয়া খায়ের এখনও পুরাপুরি ঠিক করিনাই। ব্যাপারটা নিয়া চিন্তাভাবনায় আছি সম্মিলিত করবো নাকি একা একা করবো।

২| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সকাল ৮:০৬

নুরুলইসলা০৬০৪ বলেছেন: আমার মনে হয় শামসুর রাহমান এই অর্থে বলেছেন যে,একসময় বাংলা হরফগুলোকে আরবি হরফে পরিবর্তনের একটা ষড়যন্ত্র চলছিল হয়তো সেই অর্থে বলেছেন।আবার হতে পারে ভাষাই যদি হারিয়ে যায় তবেতো হরফ গুলোও হারিয়ে যাবে।

৩| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সকাল ৯:২০

জুন বলেছেন: আমরা এক সময় যে ভাষায় কথা বলতাম তা এই জেনারেশনের ছেলে মেয়েদের কাছে অনেকটাই হারিয়ে গেছে কুনো। খেয়েচি গিয়েচি বলি নাই। কিন্ত আজকাল যা শুনি হয় ভুল ইংরেজি নয়তো কি এক অদ্ভুত এক ভাষা। আসলেই বর্নমালা হারিয়ে না গেলেই হলো। আজ পেপারে দেখলাম পার্বত্য চট্টগ্রামের কোন আদিবাসীদের ভাষা হারিয়ে যাচ্ছে। ওরাও একদিন দুঃখিনী বর্নমালা নিয়ে কবিতা লিখবে হয়তো।
সেদিন টিভিতে হিন্দি গানের চ্যানেল ছেড়ে ঘরের কাজ করছি। হঠাৎ একটা গানের কলি কানে ভেদে আসলো। মেয়েটা গাইছে "তু সফট হার্টেড মুন্ডা, ম্যায় চিজ করারি"।। কি অদ্ভুত ব্লেন্ড এক ভাষার সাথে আরেক ভাষার অবাকই হোলাম।

৪| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সকাল ৯:২৯

আহমেদ জী এস বলেছেন: *কুনোব্যাঙ*





আসলেই কথা বলতে গিয়ে আমার বর্ণমালাগুলো আজকাল যেখানে সেখানে খাবি খেতে থাকে। বাংলিশ কথা তো আছেই আছে বাংলা লেখাতে বানানেও বর্ণমালার ভুল । ভাষাটা মায়ের বলেই মনে হয় অযত্ন বেশী। মায়ের মতোই অনাদরে পড়ে থাকা শুধু......

অনেকদিন পরে শীতনিদ্রা ভেঙে।

৫| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ সকাল ৯:৩২

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: হুম..

বাংলিশ. হিংলিশ আর ডিজে গং ভাষার অলরেডি তেরোটা বাজিয়ে ফেলেছে!
শক্ত নীতিমালা ছাড়া বুঝি ফেরানো সম্ভব নয়।
একটা প্রজন্ম অলরেডি অভ্যাস্ত হয়ে গেছে!

জুনাপুুর শোনা ব্লেন্ডিং গানেরইতো এখন রমরমা!
স্যাটেলাইট যখন ঘরের কোনায় কোনায়, তখন স্বজাত্য রক্ষা, সংস্কৃতি রক্ষায় অবশ্যই দৃঢ় হতে হবে।
এবং পরিপূর্ণ দিক নির্দেশনা ছাড়া বিচ্ছিন্ন উদ্যোগে সাময়িক বাহবা মিললে, শেষপর্যণ্ত তা ফলপ্রসু হবে না।

+++

৬| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১২:৪২

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: অনেক রাষ্ট্র তথা জাতির নিজস্ব বর্ণমালা নেই আমাদের আছে এটা অত্যন্ত গর্বের বিষয়।

৭| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ১২:৫৮

রাজীব নুর বলেছেন: ২ নং মন্তব্য কারীর সাথে একমত।

৮| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ দুপুর ২:২৪

হাসান মাহবুব বলেছেন: বিশ্বায়নের যুগে অনেক ভাষা, অনেক রীতি ইত্যাদি ঢুকে যাবে, তবে এর ফলে যদি বাংলা ভাষার শব্দ আর রীতিগুলি হারিয়ে যায় তবেই হবে বিপদটা। বাংলা ভাষার ভিত অবশ্য অনেক শক্তিশালী।

৯| ২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২১ রাত ৮:০৪

মা.হাসান বলেছেন: ইংরেজি ভাষায় মধ্যে প্রচুর বাংলা শব্দ ঢুকে গেছে। =p~
চমৎকার বলেছেন।
বড় ভাষার কাছে ছোট ভাষা মার খাচ্ছে। এটা স্বাভাবিক। কোলকাতায় বাংলা কোনঠাসা। আকাশ উম্মুক্ত হবার পর বাংলাদেশের গ্রামের লোকেও অল্পস্বল্প হিন্দি বলতে পারে। ইংরেজি না হিন্দি কে জয়ি হবে বলা কঠিন। আমি এদের খিচুড়িকেই এগিয়ে রাখবো। এটা রাগ বা অভিমানের কথা না, শুরু থেকেই ভাষার পরিবর্তন চলছেই, মেনে নিতে হবে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.