নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

দেখি, শিখি, লিখি

আল রাহমান

আমি স্বপ্ন দেখি। সত্য সুন্দর আলোর পথে চলতে চাই। লিখতে চাই অন্য রকম কিছু।

আল রাহমান › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প / জরিনা খাতুর সুখ-দুঃখ

১১ ই আগস্ট, ২০০৯ সকাল ১০:৫২

এক মগ চিনিপানা দীর্ঘ চুমুকে শেষ করে দারুণ তৃপ্তি পেল জরিনা খাতু। সারা দিনের কান্তি যেন একনিমিষে দূর হলো তার। এরপর পান্তাভাতের থালাটি টেনে নিল সে। অল্প লবণদানা মেশাল দ্রুত হাতে। ঘরের পাশে লাগানো গাছ থেকে একটু আগে তুলে আনা দুটি ধান্যমরিচ ধুয়ে নিল গামলায়। এক কামড় মরিচ আর এক গ্রাস ভাত। এভাবে পেটে জামিন দিয়ে শেষ করল ইফতার-পর্ব। রাতে আর খেতে হবে না। একেবারে সেহেরি পর্যন্ত নিশ্চিন্ত। বিয়ের পর থেকে এভাবে চলছে ফিবছর। কারও বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই তার। ছেলেরা বড় হলে একদিন কষ্টের শেষ হবে-এমন আশাতেই দিন কাটে আর রাত পোহায় জরিনা।

ভাঙা বাড়িতে আট ছেলেমেয়ে নিয়ে বড় সংসার তার। স্বামী আবুল থাকে শহরে। চাকরি করে বেসরকারি কোম্পানিতে। প্রতি সপ্তাহে দুদিনের জন্য বাড়িতে আসে। দিনে বাড়ির আশপাশের জমিতে কোদাল চালায়, শাকসবজি লাগায়। রাতে জরিনার উর্বর শস্যক্ষেতে কয়েক কোপ দিয়ে কান্ত-শ্রান্ত আবুল ঘুমিয়ে পড়ে। কিন্তু মাস শেষে বেতনের টাকা তুলে দেয় বউয়ের হাতে। তারপর আর কোনো চিন্তা নেই মানুষটার। ছেলেদের মানুষ করা, ঘরে-বাইরে সব কাজ সামলে নেওয়ার দায়িত্ব জরিনার। পাকিস্তানআমলে সাড়ে তিন কাস পড়া জরিনা খাতু মোটামুটি সংসারের ঘানি টানছে ভালোভাবেই। মাঝে মাঝে ঝড়-তুফান যে আসেনি তা নয়। সৎ দেবর-ননদরা কম জ্বালায়নি তাকে। পরে যখন ছেলেরা বড় হচ্ছে তখন নিজের ভাইয়েরাও শুরু করে জ্বালাতন। ছিল মুরুব্বিআমলের জায়গা-জমিসংক্রান্ত সমস্যা। জরিনা ছোট্ট মনে বুঝতে পারে শ্বশুরবাড়ি আর বাপের-বাড়ি সবখানেই ঠকানোর চেষ্টা চলছে। এমন পরিস্থিতিতে জায়গা-জমির আশা ছেড়ে দেওয়াই হবে বুদ্ধিমানের কাজ। স্বামী বেঁচে থাকলে, ছেলেরা বড় হলে অনেক জায়গা-জমি জোড়ানো যাবে। সামান্য সম্পত্তির জন্য সে বড় কোনো ঝুঁকি নেওয়ার কথা ভাবতেই পারেনি। স্বামীর সঙ্গে পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেয় তারা সম্পত্তির দাবি জানাবে না। কারও কাছে চাইবেও না সম্পত্তি। নিজেরা অনুন্নত একটি বাড়িতে সামান্য ভিটে কিনল। সঙ্গে পুকুরের অংশসহ। আর পড়শিরা তো ছিলই শোষণের তালে, ঠকানোর কাজে ব্যস্ত। অবশ্য সবাই যে খারাপ তা নয়। ভালোও ছিলেন। তবে তাঁদের সংখ্যা কম, হাতে গোনা যায় এমন। জরিনা উপস্থিত বুদ্ধিতে ঘরে-বাইরে সামাল দিয়েছে কোনোভাবে। মা-বাবার দোয়া আর আবুলের øেহ-মমতায় সামলে নিয়েছে সব কিছু। মাসিক খরচের টাকা জমিয়ে, ভালোমন্দ খেয়ে না খেয়ে কিছু টাকা সঞ্চয়ও করেছে সে। জমি কিনেছে দুকানি। হালের বলদ কিনেছে দুটি। একে একে এটা সেটা কত কী-ই না সংগ্রহ করল সংসারের প্রয়োজনে। ছেলেদের পড়াশোনার দিকটিও বাদ যায়নি। ঘরে মাস্টার রেখে ছেলেদের পড়িয়েছে।

বড় ছেলে আবদুল অষ্টম শ্রেণীর বার্ষিক দেওয়ার আগেই বিদেশ চলে গেছে। কার্তিক মাস এলে বছর পুরোবে। এখনো তেমন সুবিধা করতে পারেনি। সে হাতচিঠিতে লিখেছে দোয়া করার জন্য, একটি ভালো চাকরি জোটাতে চেষ্টা করছে। জরিনা চেয়েছিল ছেলেকে উচ্চশিক্ষিত করবে। কিন্তু পারিবারিক বন্ধু আদিল চাচার পরামর্শে ছেলেকে বিদেশ পাঠিয়ে দিয়েছে। তখন শোনা গিয়েছিল মধ্যপ্রাচ্যে ভীষণ কড়াকড়ি হয়ে যাচ্ছে। তারা আর বাংলাদেশ থেকে অদক্ষ শ্রমিক হিসেবে লোক নেবে না। কমপক্ষে এসএসসি পাস করতে হবে এবং ভালো আরবি-ইংরেজি না জানলে সেখানে থাকতে পারবে না। এসব শোনার পর সংসারের ভবিষ্যৎ চিন্তা করে আবদুলকে দ্রুত বিদেশ পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ভাগ্যিস লাখখানেক টাকা সঞ্চয় করেছিল সে। ধারদেনা করে কোনো রকমে নগদ এক লাখ ২০ হাজার টাকায় ভিসা আর ২২ হাজার টাকার টিকিট কিনে জরিনা অল্প বয়সে বিদেশ পাঠিয়েছে ছেলেকে।

মেজ ছেলে আজিজুল মাদ্রাসায় পড়ে। তার শখ বড় মাওলানা-ওয়ায়েজিন হওয়ার। ছোটবেলা থেকে ওয়াজ মাহফিলের প্রতি আগ্রহ ছিল। এক হাজার, দুহাজার টাকা হাদিয়ার বিনিময়ে ওয়াজ করতে আসা মাওলানাদের সুমধুর কণ্ঠ তাকে মুগ্ধ করত। ওয়াজের পাগল আজিজ ছুটে যেত এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে। এমনকি উপজেলা সদরে পর্যন্ত। সে সুন্দর করে কাজী নজরুল ইসলামের লেখা নাত-গজল-ইসলামি কবিতা মাইকে পরিবেশন করে সুনাম অর্জন করেছিল। এসব ভেবে জরিনা সিদ্ধান্ত নিয়েছে আজিজকে মাদ্রাসায় পড়িয়ে বড় আলেম বানাবেন। সে এ বয়সেই দু-চার টাকা আয় করে মায়ের হাতে তুলে দিচ্ছে। একটি মুরগি জবাই করলে দুটাকা, গরু-ছাগল হলে ২০-৫০ টাকা, কবর জেয়ারত করলে ১০ টাকা, কোরান খতম দিলে ৪০০-৫০০ টাকা পায়। কোনো অবস্থাপন্ন মানুষ ইন্তেকাল করলে আজিজ টাকা পায় বেশি-তাহলিল পড়ানো আর কবর পাহারা দিতে হয় তাকে। তখন সাকুল্যে তিন হাজার টাকাও এনে দেয় মাকে। যদিও সংসারে টাকার খুব দরকার তারপরও মা বলে, `তুই পড়াশোনায় মন দে। তোকে অনেক বড় আলেম হতে হবে।'

সেজ থেকে ছোটরা ধুলোবালি মেখে মাটিতে গড়াগড়ি দিয়ে বড় হচ্ছে। সব সন্তানই কমবেশি পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বেড়ানো স্বাস্থ্যকর্মীরা বলেছে ডাক্তার দেখাতে হবে। বেশি সন্তান নেওয়ায় মৃদু বকাঝকাও দিয়েছে তারা জরিনাকে। বুদ্ধিমতী জরিনা সবই বোঝে-বেশি সন্তান মানে বেশি ঝামেলা। বেশি বেশি টাকা খরচ। কিন্তু আগেতো কেউ বলেনি-`ছেলে হোক মেয়ে হোক দুটি সন্তান যথেষ্ট।' তখন তো আর অজপাড়াগাঁয়ে স্বাস্থ্যকর্মীরা আসতেন না। ঘরে ঘরে ছিল না বেতার-টেলিভিশন আর মোবাইল ফোনের ছড়াছড়ি। ছিল না কনডম, পিল, বড়ি, লাইগেশন-জন্মনিয়ন্ত্রণের এত সব আয়োজন।

সে যাই হোক, প্রথম দিকে মুরুব্বিরা স্বাস্থ্যকর্মীদের দেখলে তেড়ে আসতেন। এখন অনেক সহনীয় মনোভাব তাঁদের। কারণ উপকার পাচ্ছেন। প্রথম দিকে স্বাস্থ্যকর্মীরা পরামর্শ দিয়েছিল কাঁচাপায়খানা বা খোলা পায়খানা ব্যবহার না করতে। যেখানে সেখানে বাচ্চাদের মলমূত্র ত্যাগের সুযোগ না দিতে। পায়খানা থেকে এলে সাবান বা ছাই দিয়ে ভালো করে বাচ্চাদের হাত ধুইয়ে দিতে। তারা আরও বলেছে ঘন ঘন পাতলা পায়খানা হলে দেরি না করে আধাসের পানিতে একমুঠো গুড় বা চিনি আর এক চিমটি লবণ মিশিয়ে বাচ্চাদের খাওয়াতে হবে।

ইতিমধ্যে জরিনার মা-বাবা, শ্বশুর-শাশুড়ি দুনিয়া থেকে চলে গেছেন। বিয়ের কিছু দিনের মধ্যে চিরবিদায় নিয়েছে জরিনার বড় মেয়েটিও। কিডনি রোগে ভুগেছিল মেয়েটি। অনেক চেষ্টা করেছে মেয়েকে বাঁচাতে। টাকা-পয়সার দিকে তাকায়নি আবুল আর জরিনা। শহরের বড় ডাক্তারের কাছে নিয়েছিল। ডাক্তারের পরামর্শে বড় হাসপাতালে চিকিৎসাও করিয়েছে। কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না। একদিন শেষ রাতে পরানপাখি উড়ে যায় মেয়ের। জরিনার শ্বশুর ও মেয়ের নামাজে জানাজায় ইমামতি করে আজিজ। শোককে শক্তিতে পরিণত করে তারা।

কয়েক বছরেই দিন পাল্টে গেছে। বদলে গেছে অনেক কিছু। তথ্যপ্রযুক্তির ছোঁয়া লেগেছে ঘরে-বাইরে সব জায়গায়। এখন সবাই বদলে নিচ্ছে নিজেকে। অনেকটা ভেঙে গড়ার মতো। এখন জরিনা খাতু প্রতিদিন একবার মোবাইলে কথা বলে আবদুলের সঙ্গে। ঘরের দুয়ারে আসে রিকশা, ট্যাক্সি। মাসের বাজার একসাথে উপজেলা সদর থেকে করে আনে আবুল। জরিনা খাতুকে আগের মতো উদয়াস্ত খেটে খেতে হয় না। গা-গতরে চর্বি জমছে তার। আগের রোগা ছেলেমেয়েরা এখন দেখতে হয়েছে বেশ। সবাই পড়াশোনা নিয়ে ব্যস্ত। পড়শিরা সম্মান করে। আত্মীয়রা আবার কিনারঘেঁষছে। দেবর-ননদেরা আগে কাছে ভিড়ত না। এখন আবার কাছে ভিড়ে। শ্বশুরের পুকুরের মাছ, গাছের কাঁঠাল-এটা সেটা আনে-পাঠায়। বাড়িতে এলে বসে। চা-পানি খায়। ঈদে বড় ভাইকে পাঞ্জাবি দেয় একটা। আর বলে, `বাবা মারা যাওয়ার পর সবাই বলছে বড় ভাইকে দেখতে বাবার মতো লাগে।'

আরও কয়েক বছর পর আবুল অবসর নিল। হাতে অনেক টাকা। জরিনা দেখল সব কিছুর দাম বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে। গ্রামগঞ্জেও প্রচুর পাকা দালান গড়ে উঠছে। মানুষের মুখে মুখে ফিরছে `লোহার দাম বাড়ছে', `সিমেন্টের দাম বাড়ছে', `শ্রমিকের মজুরি বাড়ছে' ইত্যাদি। তার মাথায় আসে এবছর ঘর বানালে যে খরচ পড়বে কয়েক বছর পরে তা দ্বিগুণ হয়ে যাবে। আবার স্বামীর সঙ্গে পরামর্শ করল ঘর বানানোর ব্যাপারে। স্বামী অনুমতি দিলে শুরু হলো ঘরের কাজ। মাত্র এক বছরেই ঘর তৈরি হলো। যদিও বৈদ্যুতিকসামগ্রী লাগানো আর পলেস্তারার কিছু কাজ বাকি আছে এখনো।

সেই ঘরে দেবর-ননদ আর আত্মীয়স্বজনের আসা-যাওয়া বেড়ে গেল। একদিন ছোট দেবর এসে বলল, `আমরা সব ভাই বসে জায়গা-জমিগুলো ঠিক করে নিলে হতো না।' জরিনা বলল, `শ্বশুর আব্বা বেঁচে থাকতে আমরা বলে দিয়েছি কিছু নেবো না। এখন আবার এসব কথা কেন? আপনার বড়ভাই (আবুল) অসুস্থ। উনি বেঁচে থাকা অবস্থায় আপনাদের নামে জমির রেজিস্ট্রি নিয়ে নেন। উনার অবর্তমানে ছেলেরা কী করে ঠিক আছে।' অমনি দেবর বলল, `আমার ভাইপুতেরা তেমন নয়। আমরা একই রক্তের। তাদের আমার বাবার মতো কোনো লোভ নেই। আপনি অন্য বাপের। আপনার কথা আলাদা। আপনি লোভী হলেও হতে পারেন।' শুনে গা জ্বলে জরিনার। গা জ্বলে সবার। এ সংসারটা তিলে তিলে গড়ে তুলেছে জরিনা। তার সংসারে, তার ঘরে বসে মুখের ওপর এমন কথা। কেঁদে কেঁদে বুক ভাসানো ছাড়া আর কী করার আছে তার। নাওয়া খাওয়া ছেড়ে দেয় সে। চারদিকে জায়গা জমির দাম বাড়ছে। ঘরে ঘরে দুবাইওয়ালা। সবার হাতে টাকার বান্ডিল। সবাই চায় জমি কিনে টাকা গেড়ে রাখতে। কিন্তু কে বেচবে জমি। মানুষ বাড়ছে। চাহিদা বাড়ছে। আয় বাড়ছে। কিন্তু জমি যেটুক ছিল তা আরও কমছে। অস্বাভাবিক দাম তো বাড়বেই-এটা স্বাভাবিক। এখন জমি-ভিটে পাকাপোক্ত করতে চায় দেবররা। জরিনা ভয় পায়। কারণ ছোট দেবর শহরে গিয়ে মেজ, সেজ-সব দেবরকে উল্টো বুঝিয়ে সম্পর্ক নষ্ট করবেই করবে। সবাই মিলে জরিনার বাড়া ভাতে ছাই দেবে। এ ব্যাপারে জরিনার অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে। মনে মনে বলে `ইন্নাল্লাহা মাআস সোয়াবেরিন।'

আবার রমজান আসে। ঘরের সবাই রোজা রাখে। এখন ইফতারিতে যুক্ত হয়েছে ছোলা, পেঁয়াজু, লেবুর শরবত, মুড়ি, খেজুর, চিঁড়া-কলা ইত্যাদি। আজিজ কম্পিটার শিখে শহর থেকে আসার সময় হালিম, লাচ্ছা সেমাই আনে। সুখের হাওয়া বইছে জরিনার সংসারে।

তেমনি এক রোজায় ডাকঘর থেকে খবর আসে চালানি এসেছে। সেখান থেকে বুঝে নিতে হবে। সঙ্গে টাকাও নিয়ে যেতে হবে দেড় হাজার। সবাই ভাবছে ব্যাপারখানা কী। গিয়ে দেখে জরিনার নামে এসেছে বিশাল এক কার্টন। শুল্ক বাবদ এসেছে প্রায় দেড় হাজার টাকা।

ডাকঘর থেকে বাসায় ছাড়িয়ে আনা হলো কার্টন। খোলার পর সবাই খুশি। সবার জন্যই আছে না কিছু না কিছু। আবুল আর আজিজের জন্য পাঞ্জাবির কাপড়, শ্যাম্পু, টুথপেস্ট, লাক্স সাবান, জরিনার জন্য দুটি শাড়ি, জায়নামাজ, তসবিহ, মেসওয়াক, মেয়েদের জন্য গজ কাপড়, বোরকার কাপড়, একটি চার্জলাইট এবং বড় একটি দেয়ালঘড়ি। সাথে সবার জন্য আলাদা আলাদা ঈদকার্ড আর চিঠি। আবদুল ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়েছে আর দোয়া চেয়েছে। সবার খুশির মাঝেও চোখে পানি এসেছে জরিনার। কান্না লুকাতে সে চলে যায় ছাদে। তার চোখে ভাসে বাপের বাড়ির গুদাম ঘরে আবদুলের পাঠানো ঘড়ির মতো অবিকল একটি ঘড়ি টিক টিক টিক করে চলত আর ঘণ্টা বাজত এক ঘণ্টা পরপর। একদিন সেই ঘড়িটি কৌতূহলবশত খুলে দেখার সময় চড় মেরেছিল আবদুলের সেজ মামা। বলেছিল, ‘জানিস এটার দাম কত? তোদের চৌদ্দগুষ্টি কোনো দিন কিনতে পারবে?' দৌড়ে গিয়ে নিজের আঁচলে ঢেকেছিল ছেলেকে পরম মমতায়। এখন আবদুল অনেক বড় হয়েছে। জরিনা খাতুর ভাবনায় ছেদ পড়ে মাগরিবের আজান শুনে। পড়িমরি করে নিচে নেমে আসে সে। তার আগেই খাওয়ার টেবিলে থরে থরে ইফতার সাজিয়ে রেখেছে জরিনা খাতুর মেয়েরা। শরবতের গ্লাসে চুমুক দিয়ে সে ভাবে সংসারটা অনেক দিন আগলে রেখেছে সে। এবার বিশ্রামের পালা। তার মেয়েরাই সব দেখে শুনে রাখতে পারবে। আবদুল আর আজিজের বউ এনেই মুক্তি নিতে হবে তাকে।

এদিকে, আজিজ কামিল পাস করেও ভালো কোনো মাদ্রাসায় চাকরি জোটাতে না পেরে হতাশ হয়ে পড়েছে। এখন আর আগের মতো পাড়ায় পাড়ায় ওয়াজ মাহফিল হচ্ছে না। ঘরে ঘরে ক্যাসেট বাজে ওয়াজের। রেডিও-টেলিভিশন আর পাড়ার মসজিদগুলোতে এত বেশি ওয়াজ হচ্ছে যে কেউ মিলাদও পড়াচ্ছেন না। সব দিক বিবেচনা করে আজিজ জরিনাকে বলছে বিদেশ পাঠিয়ে দিতে। এদেশে পড়ে থেকে কোনো লাভ নেই। সেখানে গিয়ে টাকা কামিয়ে এসে দেশে মাদ্রাসা, এতিমখানা আর পাঠাগার স্থাপন করে ছেলেদের বিজ্ঞানভিত্তিক কর্মমুখী শিক্ষার ব্যবস্থা করবে সে। মা ভাবছে কথাটা আবদুলকে বুঝিয়ে বলবে কি না। ভাবনার কারণটা হলো-ছেলেটা বিদেশে গেছে কতগুলো বছর পেরিয়ে গেল। কিছু টাকা জমিয়েছে বিয়ের খরচের জন্য। এখন তাকে আজিজের ভিসার কথা বলা উচিত হবে?





মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই আগস্ট, ২০০৯ দুপুর ২:২৫

মিয়া মুস্তাফিজ বলেছেন: আল রহমান তুমার লেখা পড়লাম। শুরুর দিকে খুবই ভালো ছিলো। মনে হচ্ছিল রবিন্দ্রনাথের ছোট গল্প পড়ছিনাতো? পরে মনে হলো মানিক বন্দোপাধ্যায় পড়ছি আবার আখতারুজ্জামান ইলিয়াছের কথা মনো হলো। বিশেষ করে এই উপমাটি আমার দারুণ ভালো লেগেছে।

"রাতে জরিনার উর্বর শস্যক্ষেতে কয়েক কোপ দিয়ে কান্ত-শ্রান্ত আবুল ঘুমিয়ে পড়ে"

কিন্তু একটু পরেই কেমন যেন দিকভ্রান্ত পথিকের মতো মনে হলো তোমাকে। কারণ অনেকগুলো চরিত্র কেমন যেন অযাচিতভাবে ডুকে পড়েছে। আমি আসলে জানিনা কোথায় ব্যাপার টা। আবার মনে হলো এটা একটা উপন্যাস হয়ে যাচ্ছে। গলপ নয়। তাই বলি তোমার এই গল্পটা আমার কাছে না পল্প না উপন্যাস। তবে আমি তোমার সেই উপমাটি বহুদিন মনে রাখতে পারব।

২| ১৩ ই আগস্ট, ২০০৯ দুপুর ১২:৩৩

আল রাহমান বলেছেন: প্রিয় মুস্তাফিজ। প্রথমে আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা। আপনার মন্তব্য আমাকে প্রাণিত করেছে। কী চমৎকার সাহিত্য সাহিত্য ভাব। অনেক খুশি হলাম।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.