৭১ থেকে ২০১৩

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ রাত ১:৫১

আমার আতঙ্ক

মুহাম্মদ হাসান ইমাম

[অধ্যাপক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়]



যেদিন একটা যুদ্ধ আমাকে পড়ার টেবিল থেকে

ছিটকে ফেলে দিলো অজ পাড়াগাঁয়ে -

আমি মিলিটারির ভয়ে ধান ক্ষেতে মুখ বুজে পড়ে থাকলাম,

আর, সেদিন থেকে এদেশের মাটি নিয়ে আমার উৎকন্ঠার শুরু।



এক সময় যুদ্ধ শেষ হলে, আহলাদ আর প্রত্যাশা

বড় বেশী বাড়াবাড়ি শুরু করে,

মূলতঃ পুরাতন ছাঁচে দানা বাঁধে ভাঙা সমাজের কাদামাটি,

নতুন নামে পুরাতন ফর্মায় ইটের আকার যেমন

পুড়তে থাকে ভাটায়।



আমার আতঙ্ক বাড়তে থাকে ক্রমশ

যখন দেখি - দ্রব্যমূল্য মানুষকে নষ্টালজিক করছে,

যখন দেখি - হঠকারি বিরোধিতায় পিছিয়ে যাচ্ছে রাষ্ট্র,

ফরাসী বিপ্লব-পরবর্তী নৈরাজ্য পিছু নিচ্ছে,

মোটকথা পশ্চাতমুখীনতা খুঁড়তে থাকে -

যুদ্ধকালীন মূল্যবোধের নিজস্ব কবর।



এক রাতে ভয় আর আতঙ্কে গাছে উঠে যাই

নেকড়েদের দূরত্ব আঁচ করবার জন্য;

তাই দেখে প্রতিবেশীরা আস্ত পাগল ঠাওড়ালো!



এক সময় অতীত অনিবার্য হয়ে ওঠে

পদানত করে প্রত্যাশিত ভবিষ্যত;

আমার দুঃস্বপ্ন বাস্তবত ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়ে

আমি স্বপরিবারে সমাধিস্থ হই বার বার,

প্রতিদিন নিহত হই প্রতিটি বোমার শব্দে

মিছিলের শ্লোগানে

ধর্মঘটে, সংঘর্ষে,

এমনকি নিরুপায় হরতালে।



কারণ

যোদ্ধারা অস্ত্রহীন দাড়িয়ে থাকে

অথবা জমা দিয়ে ট্রেনিং, কিনেছে টেন্ডার

বৈরী সময়ের সাথে সখ্যতা বেড়েছে অনেকের;



আমার আতঙ্ক নিয়ে হাসে এ্যাকটিভিষ্ট

বন্ধু-বান্ধবী, দলবাজ সমস্ত মানুষ।

এ্যালপ্রাজোলাম দিয়ে হাসে ডাক্তার

আমি বোঝাতে পারি না, অপমৃত্যুর ভয় কতটা ভয়াবহ!



আঁটাশ বছর ধরে সন্দেহ ক্রমাগত খেয়েছে

সাহসের ভিত্ ;

প্রত্যয়ের দৃঢ়তা

সংশয়হীন আগামী দৃশ্যপট।



আমার এ ক্ষত কোন ভেষজে সারিয়ে তুলব?

মাটিতে মুখ লুকানো ছাড়া আর কি করার আছে?

প্রতিবাদহীনতা অথবা অহেতুক আতঙ্কে

আমার কোন লজ্জা নেই।

কারণ,

শত্রুর সাথে অনেক বীরের নিঃসংকোচ অবস্থান

আমাকে দিন-রাত পীড়িত করে;

নিরস্ত্র ঘৃণার বাংকারে সাহসের স্বপ্ন দেখে যাই।



*** *** *** *** *** *** *** *** *** ***

স্যার, আপনার এই কবিতার শেষে কিছু একটা যোগ করতে প্রচন্ড ইচ্ছে করছে ২০১৩ সালের ভাষার এই মাসে এসে... ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আপনার এই শিষ্যের বাড়তি প্রচেষ্টাকে...

*** *** *** *** *** *** *** *** *** ***

২০১৩, ফেব্রুয়ারী

সেদিন

শাহাবাগের উত্তাল আন্দোলন

আবার আমাকে টেনে হিচড়ে নিয়ে এলো প্রজন্ম চত্তরে

পিচঢালা উত্তপ্ত রাজপথে, কাধে কাধ

মুষ্টিবদ্ধ হাত, এতো ভিড়

ঘামের নয়, সবার গায়ে মাটির গন্ধ।



আমি লাখো যৌবনের স্লোগানে হারিয়ে গেলাম

এই বৃদ্ধ বয়সে আর ভয় পেলাম না-

মুখও লুকাইনি, মুষ্ঠিবদ্ধ হলো আমারও হাত

কণ্ঠ থেকে ছিটকে বের হলো সেই স্লোগান

পদ্মা-মেঘনা-যমুনা, তোমার-আমার-ঠিকানা।

০ টি +১/-০