নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

:):):)(:(:(:হাসু মামা

:):):)(:(:(:হাসু মামা › বিস্তারিত পোস্টঃ

কমরেড মুজফ্ফর আহমদ ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশের সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম অগ্রদূত

২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ৭:২০


কমরেড মুজফ্ফর আহমদ ছিলেন ভারতীয় উপমহাদেশে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম অগ্রদূত এবং বঙ্গে সেেই আন্দোলনের প্রতিষ্ঠাতা। ১৯১৭ সালে রাশিয়ায় জার শাসনের অবসান ঘটে এবং লেনিন স্টালিনের নেতৃত্বে সমাজতান্ত্রিক অভ্যুত্থান সফলতা লাভ করে। রাশিয়াতে পৃথিবীর প্রথম সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠিত হয়। এর ঢেউ খুব দ্রুত অন্য সব দেশে ছড়িয়ে পড়ে। তৎকালীন ভারতেও ব্যতিক্রম হয়নি। ১৯২০ সালের ১৭ অক্টোবর তারিখে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের অঙ্গরাজ্য উজবেকিস্তানের রাজধানী তাসখন্দে ভারতের সর্বপ্রথম সমাজতান্ত্রিক দল গঠিত হয়। গঠন করেছিলেন বাঙালি নেতা মানবেন্দ্র নাথ রায়। তার মাত্র একমাসের মধ্যে বঙ্গদেশেও সমাজতান্ত্রিক দল গঠিত হয়। সেই সংগঠনের পুরোধা ছিলেন মুজফ্ফর আহমদ। অর্থাৎ বাংলাদেশ এবং পশ্চিমবঙ্গে সমাজতান্ত্রিক আন্দোলন তার হাত ধরেই যাত্রা শুরু করে।

মুজফ্ফর আহমদ ১৮৮৯ সালের ৫ই আগস্ট বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত চট্টগ্রাম জেলার সন্দ্বীপের মুসাপুর গ্রামে এক দরিদ্র কিন্তু অভিজাত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম মনসুর আলি এবং মা'র নাম চুনাবিবি। চুনাবিবি তার বাবার দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন। মনসুর আলি সন্দ্বীপের এক স্বল্প আয়ের মোক্তার ছিলেন। তার দাদা আর নানার নাম ছিল যথাক্রমে মুহম্মদ কায়েম এবং রেশাদ আলী । পারিবারের আর্থিক অবস্থা ভাল না থাকায় কৈশোরে মুজফফর আহমদকে চাষাবাদের কাজেও সাহায্য করতে হয়েছিল। বহির্মুখি মুজফ্‌রর আহমদকে গৃহমুখী করার উদ্দেশ্যে পারিবারিক চাপ প্রয়োগে ১৯০৭ সালে তাকে বিয়ে দেওয়া হয়। তার স্ত্রীর নাম হাফেজা খাতুন। নিয়মিত সাংসারিক জীবন তিনি পালন করেননি। ১৯৩৫ সালে নজরবন্দি থাকার সময় ১৪ বছর পর পরিবারের সাথে দেখা হয়। সে সময় তিনি তার একমাত্র কন্যা আফিকা খাতুনের সাথে কবি আবদুল কাদিরের সঙ্গে সন্দ্বীপে বিয়ে দেন।

মুজফফর আহমদ তার শিক্ষা জীবন শুরু করেন বাংলা ভাষা শিক্ষার দ্বারা। ১৮৯৭ সালে তিনি গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৮৯৯ সালে তিনি হরিশপুর মিডল ইংলিশ স্কুলে পরে কাগিল হাইস্কুল ভর্তি হন। পিতার মোক্তারি ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর স্কুল থেকে তার নাম কেটে দেয়া হয়। সে সময় মাদ্রাসা শিক্ষা অবৈতনিক হওয়ায় তিনি মাদ্রাসায় লেখাপড়া শুরু করেন। ১৯০৫ সালে পিতার মৃত্যুর সময় তিনি নোয়াখালীর বামনী মাদ্রাসায় পড়ছিলেন। পিতার মৃত্যুর পর মুজফ্ফর আহমদ কিছুকাল বরিশালে গৃহশিক্ষকতা করেন। তারপর তিনি আবার নিজ গ্রামে ফিরে স্কুলে ভর্তি হন।১৯১০ সালে তিনি কাগিল হাইস্কুল ছেড়ে নোয়াখালী জেলা স্কুলে চলে যান। ১৯১৩ সালে সেখান থেকে মেট্রিকুলেশন পাশ করেন। ১৯১৩ সালে তিনি পশ্চিম বঙ্গের হুগলি কলেজে ভর্তি হন, কিন্তু সেখানে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হওয়ায় তিনি সে বৎসরই চলে যান বঙ্গবাসী কলেজে। সেই কলেজ থেকে আই এ পরীক্ষা দিয়ে অকৃতকার্য হন এবং সেখানেই তার লেখাপড়ার ইতি ঘটে। ১৯১৩ থেকেই তিনি কলকাতার অধিবাসী। সন্দীপের কাগিল হাইস্কুলে পড়ার সময়ই মুজফফর আহমদের সাংবাদিকতায় হাতে খড়ি হয়। মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামবাদী সম্পাদিত 'সাপ্তাহিক সুলতান' পত্রিকায় সন্দীপের স্থানীয় খবর পাঠাতেন।

১৯১১ সালে কলকাতায় অবস্থানরত বিভিন্ন মুসলিম ছাত্রের উদ্যোগে বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সমিতি গঠিত হয়। কলকাতার ৩২ কলেজ স্ট্রিটে এ সাহিত্য সমিতির অফিস ছিল। ১৯১৮ সালে সমিতির উদ্যোগে বের হয় বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য পত্রিকা। ১৯১৮ সালে সমিতির সব সময়ের কর্মী হিসেবে তিনি এর অফিসেই থাকা শুরু করেন। তিনি ছিলেন সমিতির সহকারী সম্পাদক। পত্রিকার কাজ পরিচালনার সময় চিঠিপত্রের মাধ্যমে তার কবি কাজী নজরুল ইসলামের সাথে পরিচয় হয়। ১৯২০ সালের শুরুর দিকে ৪৯ নম্বর বেঙ্গল রেজিমেন্ট ভেঙ্গে দেওয়া হলে নজরুলের সৈনিক জীবনের অবসান ঘটে এবং তিনি কলকাতায় মুজফ্ফর আহমদের সাথে সাহিত্য সমিতির অফিসে থাকতে শুরু করলেন।

সক্রিয় রাজনীতিতে যোগদানের পূর্বে মুজফ্ফর আহমদ কিছুদিন চাকুরীতে নিয়োজিত ছিলেন। বাংলা সরকারের ছাপাখানায় মাসিক ত্রিশটাকা বেতনে তিনি চাকুরী করেছিলেন। বাংলা সরকারের অনুবাদ বিভাগেও তিনি মাসিক পঞ্চাশ টাকা বেতনে একমাস উর্দু থেকে বাংলায় অনুবাদ করার কাজে চাকুরী করেন। একমাস তিনি প্রেসিডেন্সী বিভাগের স্কুলসমূহের ইনস্পেক্টর হিসেবেও কাজ করেন। কলেজে পড়ার সময় খিদিরপুর জুনিয়র মাদ্রাসায় তিনি শিক্ষকতা করেন আর একমাস ছুটিতে তিনি কলকাতা সিটি কর্পোরেশনে কাজ করেন। ১৯০৬ সাল থেকে ১৯০৮ সালের অধিকাংশ সময় তিনি কোন না কোন লোকের বাড়িতে গৃহ শিক্ষকতা করে থাকা-খাওয়া অথবা অর্থ রোজগার করতেন।

কৈশোরে সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ না করলেও ১৯১৬ সাল থেকে মুজফ্ফর আহমদ বন্ধুদের সাথে বিভিন্ন রাজনৈতিক আলোচনা, সভা-সেমিনার-মিছিল যোগদান প্রভৃতি শুরু করেন। ১৯১৯ সালে জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে কলকাতার অনুষ্ঠিত আন্দোলনে তিনি অংশগ্রহণ করেন। ১৯২০ সালে বঙ্গীয় খেলাফত কমিটির সদস্য মনোনিত হলেও তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন। ১৯২০ সালের শুরুতে তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে রাজনীতিই হবে তার জীবনের মূল পেশা। তিনি কাজী নজরুলের সাথে ঠিক করেন একটি ভিন্ন ধর্মী বাংলা দৈনিক বের করার। এ বিষয়ে তারা ফজলুল হক সাহেবের পরবর্তীতে শেরে বাংলা সাথে দেখা করেন। হক সাহেব তার নিজের টাকায় পত্রিকা বের করার প্রস্তাব করেন। ১৯২০ সালের ১২ জুলাই মুজফ্ফর আহমদ ও কাজী নজুরল ইসলামের যুগ্ম সম্পাদনায় "নবযুগ" নামক সান্ধ্য পত্রিকা বের হয়।

মুজফ্ফর আহমদের ছাত্রাবস্থায় বাংলায় সন্ত্রাসবাদী আন্দোলনের শুরু হয়। এ সম্পর্কে তিনি লিখেছেন, সন্ত্রাসবাদী আন্দোলন শুধু হিন্দু আন্দোলন ছিল না, আসলে তা ছিল বর্ণ হিন্দুদের আন্দোলন। তার মতে, একধরনের রোমাঞ্চের জন্য শিক্ষিত যুবকেরা তাতে অংশ নিলেও তার পিছনে ছিল একটা গভীর নৈরাশ্য। যদিও তিনি সেই আন্দোলনের জন্য জীবন উৎসর্গকারীদের শ্রদ্ধা করতেন। অন্যদিকে মুসলীম লীগ এবং কংগ্রেসকে তিনি ধনীক শ্রেণীর স্বার্থে ধনীক শ্রেণীর রাজনৈতিক দল বলে মনে করতেন। কংগ্রেসের ঘোষণা পত্রে ধর্ম নিরপেক্ষতার কথা বলা থাকলেও এ দল ধীরে ধীরে হিন্দু জাতীয়তাবাদের বিশ্বাসী নেতাদের কর্তৃত্বাধীন হয়ে পড়ে। মুসলিম লীগের অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে অসাম্প্রদায়িক হলেও ধর্মকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করতেন। মূলতঃ ভারতীয় উপ-মহাদেশের রাজনীতিতে হিন্দু সুবিধাভোগী শ্রেণীর একাধিপত্যকে রোধ করার জন্যই মুসলিম সুবিধাভোগী ও ভোগেচ্ছুদের রাজনৈতিক দল মুসলিম লীগের জন্ম হয়।

তার পিতার পেশা মোক্তারি হলেও তার পরিবার ছিল মূলতঃ কৃষক পরিবার। তাছাড়া তাদের গ্রামের অর্থনীতিও ছিল কৃষিভিত্তিক। কলকাতা জীবনের শুরু থেকেই নাবিকদের সাথে তার ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের কারনে শ্রমিক শ্রেণীর দুঃখ-দুর্দশার সাথে তিনি পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন। সে সময় সন্দীপের অনেক লোক কলকাতা বন্দরে কাজ করতেন। আধুনিক শিক্ষা, সাহিত্য ও সাংবাদিকার আকর্ষণ এবং বুদ্ধিজীবিদের সাহচার্য লাভ কাতে ধর্মনিরপেক্ষতা ও কৃষক-শ্রমিক শ্রেণীর মুক্তির রাজনীতিতে আগ্রহী করে তুলেছিল। ১৯১৭ সালে রুশ বিপ্লবের সাফল্য তাকে উদ্দীপ্ত করে। ১৯২১ সালে থেকে তিনি মার্কসবাদ চর্চা ও মার্কসবাদী রাজনীতিতে আত্মনিয়োগ করেন।

তথ্যসূত্র

কমরেড মুজফ্ফর আহমদ (স্বরণ গ্রন্থ); পৃষ্ঠা: ৪
মুজফ্ফর আহমদ - "আমার স্মৃতিকথা"; পৃষ্ঠা: ১-২
মুজফফর আহমদ - "আমার স্মৃতিকথা"; পৃষ্ঠা:৫
মুজফ্ফর আহমদ- "আমার স্মৃতি কথা"; পৃষ্ঠা: ২৬
মুজফ্ফর আহমদ-"আমার স্মৃতি কথা"; পৃষ্ঠা: ২৪-২৫
মুজফ্ফর আহমদ, কাজী নজরুল ইসলাম: স্মৃতি কথা, ১ম বাংলাদেশ সংস্করণ; পৃষ্ঠা: ৬৭
মুজফ্ফর আহমদ, আমার জীবন পৃষ্ঠা: ১০

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ৮:৩৭

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: এরা জাতিকে ভালো কিছু দিয়ে যেতে পারেনি দু' একটি বিক্ষিপ্ত কথা ছাড়া!

বাংলাদেশে এদের চিন্তা চেতনা মানুষ দেখেছে, বাহিনী গঠন কর, থানা আক্রম ন কর, খুন, রাহাজানি শেষে নদী বা চরে আত্ম গোপন করে থাক, অনেকটা লাদেনের তোরাবোর পাহাড়ের স্টাইলের মত।

২| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ৮:৩৭

চাঁদগাজী বলেছেন:


খুবই বড় ধারণার মানুষ ছিলেন; কলোনিয়েল যুগে মানুষ পড়ালেখার সুযোগ পাননি; তিনি ততকালীন সময়ের জন্য অনেক প্রগ্রেসিভ ছিলেন।

লেখার জন্য ধন্যবাদ

৩| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ৮:৪৩

চাঁদগাজী বলেছেন:



@শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) ,

কারণে অকারণে চারিদিকে ঢিলা ছুড়ে দেখছেন? কমরেড মোজাফ্ফর সেই যুগে মার্কসকে বুঝার চেস্টা করেছেন; এ যুগে এসে আপনি বুঝতে পারেছেন না; আপেক্ষিকভাবে উনার কত পেছন আছেন?

৪| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ৮:৪৫

লেখা পাগলা বলেছেন: কমরেড মুজফ্ফর আহমদ সম্পর্কে অনেক না জানা কথা জানা হলো। লেখাটির জন্য্ অনেক ধন্যবাদ ।

৫| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ সকাল ৯:২২

মামুন ইসলাম বলেছেন: চমৎকার পোস্ট।

৬| ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:০৭

শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: ;) চাঁদ গাজী-

ভূতের মুখে রাম রাম! :#)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.