নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

:):):)(:(:(:হাসু মামা

:):):)(:(:(:হাসু মামা › বিস্তারিত পোস্টঃ

লবণ পানি কীভাবে বাংলাদেশী নারীদের গর্ভপাতের কারণ হয়ে উঠেছে

২৭ শে নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:৪৭


বাংলাদেশের উপকূলের একটি ছোট্ট গ্রামে গর্ভপাতের হার অনেক বেশি বেড়ে গেছে বলে গবেষকদের নজরে পড়েছে। আরো গবেষণার পর সেই গবেষকরা সিদ্ধান্তে পৌঁছান যে এরজন্য জলবায়ু পরিবর্তন প্রধান কারণ হতে পারে।মেয়েরা ছেলেদের চেয়ে অনেক ভালো। ছেলেরা কথা শোনে না, তারা বেপরোয়া, মেয়েরা অনেক বেশি শান্ত হয়।সেই গ্রামের একজন বাসিন্দা ৩০ বছরের আলমুন্নাহার, যার তিনটি ছেলে রয়েছে, তবে তার একটি মেয়ের জন্য আকাঙ্ক্ষা রয়েছে। যখন তিনি ভাবতে শুরু করেছিলেন যে তার হয়তো এবার মেয়ে সন্তান হতে যাচ্ছে, তখন তার গর্ভপাত হয়ে যায়।তিনি হচ্ছেন এই গ্রামের আরো অনেক নারীদের একজন, যারা গর্ভপাতের কারণে তাদের পেটের সন্তান হারিয়েছেন।

যদিও গর্ভপাত একেবারে অস্বাভাবিক কোন ঘটনা না কিন্তু বিজ্ঞানীরা অন্যসব এলাকার বাসিন্দাদের তুলনায় সেই এলাকার মানুষের
মধ্যে গর্ভপাতের সংখ্যা বৃদ্ধির হার দেখতে পেয়েছেন। গবেষকদের বিশ্বাস জলবায়ু পরিবর্তন এর প্রধান কারণ।আলমুন্নাহারের গ্রাম ফাইল্লাপাড়া যাওয়াটা বেশ কষ্টকর ব্যাপার। শুকনো মৌসুমে চিংড়ি ঘেরের পাশ দিয়ে সরু পথ ধরে যেতে হয়। আর বর্ষার সময়ে যেতে হয় সাগরের মাঝ দিয়ে। পুরো গ্রামটিকে দেখে মনে হবে, কাদার ওপর যেন মাটির একটি ঢিবি যেখানে কিছু ঘরবাড়ি আর মুরগির খাঁচা আছে।আলমুন্নাহার বলছেন এখানে কিছুই জন্মে না।নব্বুইয়ের দশক পর্যন্ত এই এলাকায় ধান চাষ করা হতো। যদিও তাতে খুব একটা লাভ হতো না কিন্তু লোকজনের দিন চলে যেতো।কিন্তু পানি আর লবনাক্ততা বাড়ার কারণে এই গ্রামবাসীদের চিংড়ির ঘের অথবা লবণ চাষে মনযোগ দিতে হয় । এখন সেখানে খুব সামান্যই ধানের ক্ষেত দেখা যায়।আর এটা জন্য জলবায়ু পরিবর্তনের ফলাফল বলে
বলছেন আন্তর্জাতিক উদরাময় রোগ গবেষণা কেন্দ্রের (আইসিডিডিআর,বি) একজন বিজ্ঞানী ডঃ মানজুর হানিফি ।তার মতে
এসব জমির ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দেখা যাচ্ছে কিন্তু শরীরের ওপর যে প্রভাব পড়ছে তা দেখতে পাওয়া যায় না।

গত ৩০ বছর ধরে কক্সবাজারের চকোরিয়ায় স্বাস্থ্য বিষয়ক একটি নজরদারি করে আসছে আইসিডিডিআর যেখানে ওই এলাকার বাসিন্দাদের অনুরোধ করা হয়েছিল যেন তারা স্বাস্থ্য বিষয়ক ছোটখাটো পরিবর্তনও সনাক্ত করেন।গত কয়েক বছরে অনেক পরিবার
বন কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে সমতল এলাকা ছেড়ে বনের পাহাড়ি এলাকায় বসতি তৈরি করেছেন।এরকম একজন কাজল রেখা, যিনি তার স্বামী এবং দুই সন্তানকে নিয়ে বছর আগে পাহাড়ি এলাকায় চলে এসেছেন। তিনি বলছেন এই বাড়ি করার জন্য আমরা ২ লাখ ৩০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়েছি। কারণ ওখানে পানির কারণে আমার সন্তানদের সবসময়েই জ্বর লেগে থাকতো বিশেষ করে বন্যার পরে যখন ঘরবাড়ি ভেজা থাকতো। এখানে জীবন অনেক সহজ।অর্থনৈতিক কারণে অভিবাসী হওয়া এই পরিবারগুলোয় অন্যদের তুলনায় ভালো আছে। তারা ভালো চাষাবাদ করছে স্কুল এবং চাকরি ক্ষেত্রের কাছাকাছি থাকতে পারছে। তাদের স্বাস্থ্যও তুলনামূলকভাবে ভালো।

২০১২ সাল থেকে ২০১৭ সালের মধ্যে ১২, ৮৬৭ জন গর্ভবতী নারীকে শুরু থেকে সন্তান হওয়া পর্যন্ত নজরদারিতে রেখেছে আইসিডিডিআর,বি, যাদের মধ্যে উপকূলীয় এবং পাহাড়ি এলাকার নারীরা রয়েছে।সংস্থাটি দেখতে পেয়েছে যে, পাহাড়ি বা উঁচু এলাকায় বসবাসকারী নারীদের তুলনায় উপকূলীয় এলাকায়, সমুদ্রের ২০ কিলোমিটারের মধ্যে বসবাসকারী নারীদের গর্ভপাত হয়ে যাওয়ার প্রবণতা বেশি, যার হার ১১ শতাংশ।আপাতত পার্থক্যটি কম বলে মনে হলেও, সমুদ্রের কাছে সমতলে থাকা নারীদের মধ্যে
এই প্রবণতা বাড়ছে।

তবে মতলব নামের আরেকটি এলাকায় দেখা গেছে, চকোরিয়ায় যেখানে এই হার ১১ শতাংশ মতলবের নারীদের মধ্যে সেটি ৮ শতাংশ।বিজ্ঞানীরা মনে করছেন তারা যে পানি খাচ্ছেন তার মধ্যে কী পরিমাণ লবণ রয়েছে তার ওপর এই পার্থক্যটি নির্ভর করছে।
মেরু অঞ্চলের বরফ গলে যাওয়া এবং পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। এসবে সামান্য একটি পরিবর্তন সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়িয়ে দিতে পারে।

যখন সমুদ্রের উচ্চতা বাড়ে তখন লোনা পানি নদী এবং ওপরের স্রোতের ভেতর ছড়িয়ে পড়ে, একসময় যা মাটিতে মিশে যায়। এমনকি এটি মাটির নীচের পানির সঙ্গেও মিশে যায় এবং পরিষ্কার পানিকে দূষিত করে তোলে। কুয়া বা নলকূপের মাধ্যমে সেই পানি পান করেন গ্রামবাসীরা।যেমন ফাইল্লা গ্রামের নলকূপ থেকে যে পানি বের হয়, তা খানিকটা লালচে ধরণের, লবণাক্ত। কিন্তু এই পানি খাওয়া ছাড়া গোছল বা রান্নাবান্নায় ব্যবহার করা ছাড়া গ্রামবাসীর আর কোন বিকল্প নেই।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী, কোন ব্যক্তির প্রতিদিন ৫ গ্রামের বেশি লবণ খাওয়া উচিত না। কিন্তু চকোরিয়ায় উপকূলীয় এলাকার মানুষজনকে প্রতিদিন ১৬ গ্রাম লবণ খেতে হচ্ছে, যা পাহাড়ি এলাকার মানুষজনের তিনগুণ বেশি।যুক্তরাজ্যের মতো উন্নত দেশগুলোয় অনেক বছর ধরে লবণ খাওয়ার বিরুদ্ধে সচেতনতা তৈরির চেষ্টা করছেন অধিকার কর্মীরা। এর ফলে হাইপার টেনশন, স্ট্রোকের ঝুঁকি বৃদ্ধি, হার্ট অ্যাটাক গর্ভবতী নারীদের গর্ভপাত হওয়ার ঝুঁকির কথা বলেছেন।কিন্তু এই বাংলাদেশী পরিবারগুলোর কোন ধারণা নেই, পানির কারণে তারা কতটা স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে আছেন। যদি তা তাদের জানাও থাকতো তাদের সামনে কোন বিকল্পও নেই।

৫০ বছরের জান্নাত আরা বলছেন লবণ ফসলের জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু এখানেই আমরা পুরো জীবন কাটিয়েছি। আমরা গরীব অন্য কোথাও যাবার সামর্থ্য নেই। তার প্রতিবেশী, ২৩ বছরের শারমিন অবশ্য এই এলাকা থেকে চলে যেতে চান।কারণ তিনি অনিশ্চিত তার দুই সন্তানের জন্য ফাইল্লাপাড়ায় কী ভবিষ্যৎ রয়েছে। '' জীবন খুব কঠিন এখানে,'' তিনি বলছেন। এসব সত্ত্বেও, আরেকটি সন্তান নেয়ার পরিকল্পনা করছেন তিনি।

এই মুহূর্তে বলা যায় শারমিন বা আলমুন্নাহারের গর্ভপাতের হালকা সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু যদি কোন পদক্ষেপ নেয়া না হয়, তাহলে ডঃ হানাফি বলছেন এটা আরো সমস্যা তৈরি করবে, যেহেতু বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দিনে দিনে বাড়ছে।বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণে যেসব দেশ সবচেয়ে ঝুঁকিতে রয়েছে, বাংলাদেশ তার অন্যতম।

২০০৫ সালের সুনামির পর অনেক এলাকায় কৃষি জমি এবং পরিষ্কার পানি নষ্ট হয়ে গেছে, সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে ফ্লোরিডায় পরিষ্কার পান দূষিত হয়ে পড়েছে। কিন্তু চকোরিয়ায় মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের যে প্রভাব দেখা যাচ্ছে, তা বেশ অভিনব।
জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ঠেকাতে অনেক টাকা খরচ করা হচ্ছে, কিন্তু তার প্রায় কিছুই গবেষণার পেছনে ব্যয় হচ্ছে না। জনসাধারণের স্বাস্থ্যের ওপর কী প্রভাব পড়ছে তা দেখা হচ্ছে না। সবাই শুধু পরিবেশের বিপর্যয় নিয়ে কথা বলছে, কিন্তু কেউ জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি বিবেচনায় আনছে না।বলছেন ডঃ হানাফি।

তথ্যসূত্রঃ খবর বিবিসি


মন্তব্য ১০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:০৭

ঋণাত্মক শূণ্য বলেছেন: বেশ চিন্তার বিষয়। কিন্তু চিন্তাটা করবে কে? আর কেউ সেধে চিন্তা করলেও সমাধানের পথে হাটবে কে?

২৭ শে নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৩৩

:):):)(:(:(:হাসু মামা বলেছেন: তবুও ভাই সমাধানের পথ খুঁজতে হবে।

২| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৩৪

সম্রাট ইজ বেস্ট বলেছেন: এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণের উপায় কী?

২৭ শে নভেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৫২

:):):)(:(:(:হাসু মামা বলেছেন: সকল সমুদ্রবাসীর জন্য নিরাপদ ও মিঠাপানির ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

৩| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:০৬

সেলিম৮৩ বলেছেন: একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় অাপনি তুলে ধরেছেন। অাগে এটুকু জানতাম, অতিরিক্ত লবণ খেলে নানারকম শারীরীক জটিলতার সৃষ্টি হয়।

২৮ শে নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:০৩

:):):)(:(:(:হাসু মামা বলেছেন: ধন্যবাদ।

৪| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:১৫

রাজীব নুর বলেছেন: আমাদের দেশ হলো সমস্যার দেশ। এদেশে সমস্যার শেষ নেই।
পোড়া কপাল আমাদের।

২৮ শে নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:০৪

:):):)(:(:(:হাসু মামা বলেছেন: ধন্যবাদ গুরু ভাই। দেখছি সকাল থেকেই ইদানিং ব্লগ গরম করা পোস্ট আসছে।

৫| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:৩৩

আর্কিওপটেরিক্স বলেছেন: পড়লাম।

২৮ শে নভেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৩:০৫

:):):)(:(:(:হাসু মামা বলেছেন: ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.