![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সূর্যোদয়ের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত সেহরী খাওয়াঃ
সেহরী খাওয়ার শেষ সময় হইল সুবহে সাদিক উদয় হওয়া। এই শেষ সময় পর্যন্ত সেহরী খাওয়া বিলম্বিত করাই সুন্নাত-রাসূলের আদর্শ। তিনি সেহরী খাইবার জন্য যেমন তাকীদ করিয়াছেন, তেমনি উহা বিলম্বিত করার জন্য-শেষ মুহুর্তে খাওয়ার জন্যও-উৎসাহ দান করিয়াছেন। সুবহে সাদিক উদয় হওয়ার বহু পূর্বে—প্রায় মধ্যরাত্রে সেহরী খাওয়া ইসলামে পছন্দনীয় কাজ নয়। ইহাতে আল্লাহ ও রাসূলের সন্তোষ নিহিত নাই। ইহাতে রাসূলের অনুসৃত ও আচরিত রীতি অনুসরণ হয় না। রাসূলে করীম (স) তাকীদ করিয়াছেনঃ
تسحروا في اخر الليل )طبراني،(
তোমরা রাত্রির শেষদিকে সেহরী গ্রহণ কর।
হযরত আদী ইবনে হাতিম (রা) হইতে বর্ণিত হইয়াছে, তিনি বলিয়াছেন, রাসূলে করীম (স) আমাকে নামায ও রোযা (পালনের নিয়ম-কানুন) শিক্ষা দিয়াছেন। তিনি বলিলেন, নবী করীম (স) এইভাবে ও এই নিয়মে নামায পড়িয়াছেন। আর তিনি বলিয়াছেনঃ) তোমরা রোযা রাখ। যখন সূর্য অস্তমিত হয়, তখনই তোমরা খাও, পান কর, যতক্ষণ পর্যন্ত তোমার সামনে সাদা সুতা কালো সুতা’ হইতে স্পষ্টরূপে পৃথক হইয়া না যায়। আর রোযা থাক ত্রিশ দিন, তবে উহার পূর্বে যদি তুমি চাঁদ দেখিতে পাও, তাহা হইলে তখনি রোযা ভঙ্গ)। এই কথা শুনিয়া আমি সাদা ও কালো দুইটি পশম সম্মুখে রাখিয়া উহার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখিলাম। কিন্তু উহাতে আমার নিকট কিছুই স্পষ্ট হইল না। পরে এই কথা রাসুলে করীমের নিকট পেশ করিলাম। তিনি শুনিয়া হাসিয়া উঠিলেন এবং বলিলেনঃ হে হাতীমের পুত্র। (তুমি যাহা বুঝিয়াছ তাহা নয়, আসলে) উহা রাত্রির অন্ধকার কালো হইতে দিনের শেত-ঔজ্জ্বল্য প্রকাশিত হওয়া মাত্র।-মুসনাদে আহমদ
ব্যাখ্যাঃ
নামায ও রোযা ইসলামের ইবাদত সমূহের প্রধান দুইটি স্তম্ভ। যাকাত ও হজ্জ তো ধনী লোকদের কর্তব্য, কিন্তু নামায ও রোযা মুসলমান মাত্রের উপরই চিরস্থায়ী ফরয। নবী করীম (স) অন্যান্য ইবাদতের ন্যায় নামায-রোযার নিয়ম-কানুন বিস্তারিতভাবে শিক্ষা দিয়াছেন। শিক্ষা দিয়াছেন মুখে বলিয়া এবং নিজে কাজ করিয়া। আলোচ্য হাদীসে রোযার কথাই প্রধান; রোযার পদ্ধতি শিক্ষাদান প্রসঙ্গে তিনি বলিয়াছেনঃ সকাল হইতে রোযা রাখিতে শুরু কর। আর রোযা শেষ হইবে সূর্যাস্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে। অতঃপর সারারাত্রি ধরিয়া খাওয়া-দাওয়া অবাধে চলিতে পারিবে। এই খাওয়া-দাওয়ার শেষ সময়ই হইল পরবর্তী দিনের রোযা শুরু করার প্রথম মূহূর্ত। উহাই সেহরী খাওয়ার শেষ সময়। সেহরী খাওয়ার শেষ সময় ও রোযা শুরু করার প্রথম সময় বুঝাইবার জন্য। কুরআন মজীদে বলা হইয়াছেঃ
ফজরকালের কালো সুতা হইতে সাদা সুতা যখন স্পষ্টরূপে পৃথক হইয়া দেখা দিবে-তখন পর্যন্ত।
হাদীসের বর্ণনাকারী আদী ইবনে হাতিম বলেন, কুরআনের এই কথাটিই রাসূলে করীম (স) আমাকে বলিলেন। আমি ইহাকে শাব্দিক অর্থেই গ্রহণ করিয়াছিলাম এবং কালো ও সাদা পশম রাখিয়া এই কথার যথার্থতা বুঝিতে চেষ্টা করিয়াছিলাম। কিন্তু আসলে ইহা আমার বুঝিবার ভুল। আসলে ‘সাদা সুতা’ ‘কালো সুতার কথা নয়। ইহা হইল প্রভাত-আলো ও রাত্রির অন্ধকার অর্থাৎ রাত্রির অন্ধকার কালো হইতে দিনের শেতশুভ্র আলো যতক্ষণ না স্পষ্টভাবে ফুটিয়া উঠে ততক্ষণ খাওয়া-দাওয়া চলিতে পারিবে। আর যখনই তাহা স্পষ্ট হইয়া উঠে, তখনই খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করিতে হইবে এবং রোযা রাখা শুরু করিতে হইবে। আমার বােকামির কথা জানিতে পারিয়া নবী করীম (স) হাসিলেন ও আমাকে আসল কথাটি ভালোভাবে বুঝাইয়া দিলেন।
হযরত হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান (রা) বর্ণিত এক দীর্ঘ হাদীস হইতে জানা যায়, তিনি রাসূলে করীম (স)-এর সহিত সেহরী খাইয়াই মসজিদে নামায পড়িতে গিয়াছেন। একজন শ্রোতা তাঁহাকে জিজ্ঞাসা করিলেনঃ
প্রভাত উদয় হওয়ার পরই কি এই কাজ করিয়াছেন?
জওয়াবে তিনি বলিলেনঃ
হ্যাঁ, উহা প্রভাত উদয়কালেই ছিল, তবে তখনও সূর্য উদয় হইয়া যায় নাই। -মুসনাদে আহমদ
এই হাদীস হইতে জানা গেল, সুবহে সাদিক উদয় হওয়ার পরও সেহরী খাওয়া চলে এবং চলে সূর্যোদয়ের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত, যখন দিনের ঔজ্জ্বল্য চতুর্দিককে উদ্ভাসীত করিয়া তোলে এবং অন্ধকারের অস্পষ্টতা কিছুমাত্র বাকী থাকে না। একটি হাদীসের শব্দ হইলঃ
সেই সময়টা ছিল দিন, তবে পার্থক্য শুধু এতটুকু যে, তখনও সূর্যটা উদিত হয় নাই। একটি হাদীসে বর্ণিত হইয়াছে, জুর ইবনে হুবাইশ হযরত হুযাইফা (রা) কে জিজ্ঞাসা করিলেনঃ
আপনারা রাসূলে করীম (স)-এর সঙ্গে ঠিক কোন সময়ে সেহরী খাইয়াছেন? জওয়াবে তিনি বলিলেনঃ
সময়টা ছিল দিন। তবে তখনও সূর্য উদয় হয় নাই। হযরত আবু হুরাইয়া (রা) হইতে বর্ণিত, নবী করীম (স) বলিয়াছেনঃ
তোমাদের কেহ যদি এমন সময় ফজরের আযান শুনিতে পাও যখন তোমাদের কেহ পাত্র হাতে লইয়া খাদ্য গ্রহণ করিতেছে, তাহা হইলে সে যেন সে পাত্র থেকে প্রয়োজন মত খাদ্য গ্রহণ সম্পূর্ণ না করিয়া উহা রাখিয়া না দেয়। আমার বলিয়াছেনঃ
ফজর উদয় হওয়ার সময়ও খাদ্য গ্রহণের জন্য সাহাবীগণ অনুমতি দিতেন।
হযরত আনাস (রা) হইতে বর্ণিত, তিনি দেখিয়াছেন, রাসূলে করীম (স) ও জায়দ ইবনে সাবিত (রা) রোযার নিয়্যতে সেহরী খাইয়াছেন। অতঃপর দুই রাক'আত নামায পড়িয়াছেন। তাহার পর মসজিদে গিয়াছেন। আর তখনই ইকামত বলা হইয়াছে।
হযরত আবু বকর (রা) সালেম ইবনে উবাইদকে বলিতেনঃ
তুমি আমার ও ফজর উদয় হওয়ার মাঝখানে আড়াল হইয়া দাঁড়াও যেন আমি সেহরী গ্রহণ করিতে পারি। অপর বর্ণনায় বলা হইয়াছে, হযরত আবু বকর (রা) বলিতেনঃ
তোমরা দরজা বন্ধ করিয়া রাখ যতক্ষণ আমার সেহরী খাওয়া শেষ না হয়।
এই পর্যায়ের হাদীসসমূহ মোট ১১ জন সাহাবী থেকে বর্ণিত। ইহাদের বিপরীত কোন বর্ণনা নাই। অন্য কথায় হাদীস হইতে স্পষ্ট ও অকাট্যভাবে প্রমাণিত হইল যে, সূর্যোদয়ের পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত সেহরী খাওয়া চলে। তবে ইহাই শেষ সময়, পানাহারের অনুমতি প্রাপ্ত সময়ের শেষ সীমান্ত কিন্তু সর্বক্ষেত্রেই সীমান্তকে এড়াইয়া চলা এবং ইহার পূর্বেই খাওয়া-দাওয়া শেষ করাই উত্তম।
( সূত্রঃ হাদীস শরীফ, মাওলানা আবদুর রহীম, সাহরী অধ্যায়)
©somewhere in net ltd.